পুরনো গল্পের নতুন মঞ্চায়ন, নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে ফাইনালে পাকিস্তান
বিশ্বকাপের ফাইনাল মানেই সেখানে নিউজিল্যান্ডের জন্য লেখা থাকে দুঃখের কাব্য। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হার মানা কিউইরা ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংলিশ বাধায় আটকে যায়। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও পরাক্রম অজি শাসনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে নিউজিল্যান্ড। নিশ্বাস দূরত্বে গিয়েও সোনালী শিরোপা থেকে যায় দূর আকাশের তারা হয়ে। কিন্তু লড়াইটা যদি হয় সেমি-ফাইনাল আর প্রতিপক্ষ হয় পাকিস্তান? এখানেও সেই কিউই বিষাদের গল্প। এবারও তেমনই হলো, পাকিস্তানের শাসনে উড়ে গেল কিউইরা।
বুধবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমি-ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে পাকিস্তান। এতে দীর্ঘ ১৩ বছরের অপেক্ষা ফুরালো তাদের। ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পর প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠলো পাকিস্তান। অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হলো নিউজিল্যান্ডের। পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে খেলা চারটি সেমি-ফাইনালেই (দুটি ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি) হার মানলো তারা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা নিউজিল্যান্ড শুরুতে দিক হারালেও পরে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেলের দারুণ ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ে ফেরে। যদিও সংগ্রহ বড় হয়নি, ৪ উইকেটে ১৫২ রানে থামে নিউজিল্যান্ড। সেমিতে দুইবারের সাক্ষাতে এটাই অবশ্য কিউইদের সরো সংগ্রহ। জবাবে ম্যাচসেরা মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজমের দুর্বার শুরুতেই জয়ের সুবাস পেতে থাকে পাকিস্তান। হাফ সেঞ্চুরি করে এ দুজন ফেরার পর মোহাম্মদ হারিসের ব্যাটে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় তারা। ৫ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছান বাবররা।
বলা হয়, বড় খেলোয়াড়রা বড় ম্যাচে গিয়ে খেলেন। পাকিস্তানের দুই ওপেনার রিজওয়ান ও বাবর সেটাই আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন। বিশেষ করে বাবর চরম খারাপ সময় পার করছিলেন। গ্রুপ পর্বের পাঁচ ম্যাচে মাত্র ৩৯ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার। কিন্তু ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তিনি দেখা দিলেন কাণ্ডারী হয়ে। আবার রিজওয়ান রান পেলেও ঠিক ছন্দে ছিলেন না। পাকিস্তানের এই ওপেনারও এদিন খেললেন চেনা ছন্দে, তিনিও তুলে নিলেন হাফ সেঞ্চুরি। অথচ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের কারণে এই দুজনকে নিয়ে পাকিস্তানে কতোই না সমালোচনা চলছিল!
ঠিক সময় বেছে, ঠিক জায়গায় এক ইনিংস দিয়ে সব সমালোচকের মুখে কুলুপ এটে দিলেন রিজওয়ান-বাবর। মাঝারি লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে পাকিস্তানকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন তারা। দাপুটে ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৫৫ রান তোলা রিজওয়ান-বাবর উদ্বোধনী জুটিতে ৭৬ বলে ১০৫ রানের জুটি গড়েন। এর মাঝে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৩০তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন বাবর। ১৩তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪২ বলে ৭টি চারে ৫৩ রান করেন তিনি।
কিছুক্ষণ পর রিজওয়ানও পূর্ণ করেন হাফ সেঞ্চুরি। বাবরের মতো তিনিও হাফ সেঞ্চুরি করে সাজঘরে ফেরেন। এর আগে ৪৩ বলে ৫টি চারে ৫৭ রান করেন তিনি। রিজওয়ানের বিদায়ের পর প্রায় একাই পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন মোহাম্মদ হারিস। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে আউট হন ২৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৩০ রান করা হারিস। শান মাসুদের ব্যাট থেকে জয়সূচক রান আসে। নিউজিরল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ২টি ও বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার একটি উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা নিউজিল্যান্ডকে শুরুতেই দিক ভুলিয়ে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ইনিংসের তৃতীয় বলেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফিন অ্যালেনকে ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানের বাঁহাতি এই পেসার। ডেভন কনওয়ের সঙ্গে যোগ দিয়ে অবশ্য এই চাপ কাটিয়ে তোলেন উইলিয়ামসন, তবে রানের চাকা সেভাবে ঘোরেনি তাদের। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন কনওয়ে।
এর আগে ২০ বলে ৩টি চারে ২১ রান করেন তিনি। ৬ ওভারে ৩৮ রান তোলা দলটি অষ্টম ওভারে গিয়ে বড় ধাক্কা খায়। এই ওভারে নিজেই নিজের বলে ক্যাচ নিয়ে গ্লেন ফিলিপসকে ফেরান পাকিস্তানের আরেক পেসার মোহাম্মদ নওয়াজ। ৮ ওভারে ৩ উইকেটে কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৯ রান। দলের হাল ধরা উইলিয়ামসন ও মিচেল আরও দুই ওভার দেখেশুনে খেলেন। ১১তম ওভার থেকে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন এই দুজন। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে চতুর্থ উইকেটে ৫০ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন তারা।
হাফ সেঞ্চুরির একেবারে কাছে গিয়ে আউট হন উইলিয়ামসন। কিউই অধিনায়ক ৪২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ৪৬ রান করেন। ড্যারিল মিচেল শেষ পর্যন্ত দলকে পথ দেখান, শেষ দিকে অবদান রাখেন জিমি নিশাম। ৩৪ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৫৩ রান করেন মিচেল। ১২ বলে ১৬ রান করেন নিশাম। পাকিস্তানের শাহিন আফ্রিদি ২টি ও মোহাম্মদ নওয়াজ একটি উইকেট নেন।