ভুলে ভরা বিশ্বকাপে এবারও পাল্টালো না বাংলাদেশের গল্প

খেলা

শান্ত মাহমুদ, অ্যাডিলেড থেকে
07 November, 2022, 03:10 pm
Last modified: 08 November, 2022, 08:55 am
কোহলির ফেইক ফিল্ডিং বিতর্ক কিংবা ভেজা মাঠের 'বাধার' চাইতে নিজেদের মানসিকতাকেই দায়ী করেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শান্তও বলছেন, দল হিসেবে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ; কোনো ব্যক্তির ভুলে নয় বরং দল হিসেবে খেলতে না পারাটাই ছিলো ম্যাচ হারের কারণ।
ছবি: সংগৃহীত

অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে যেতে না পারার আক্ষেপের সাথে সাথে কিছু ইতিবাচক দিকও সাথে নিয়েই দেশে ফিরবে সাকিব বাহিনী। তবে সেমি-ফাইনালের এত কাছে এসেও তা স্পর্শ করতে না পারার আক্ষেপ-হতাশার রেশ কাটতে কিছুটা সময় তো লাগবেই খেলোয়াড় ও ভক্তদের!

তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বে প্রথমবারের মতো দুটি ম্যাচ জয়ের অর্জন সেই হতাশায় ক্ষতে সামান্য হলেও শান্তির প্রলেপ দেবে। এ যেন একটি গ্লাসের অর্ধেক খালি আর অর্ধেক পূর্ণ থাকার সেই উদাহরণকেই মনে করিয়ে দেয়! জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসকে হারানোর হিসাবটা আগেই কষে রেখেছিলেন সাকিব বাহিনীর ভক্তরা, ক্রিকেটীয় শক্তিমত্তার বিচারে বাংলাদেশই ছিলো ফেভারিট। কিন্তু এই দুটি ম্যাচে জয়ের পাশাপাশি স্বপ্ন ছিল ভারত, পাকিস্তান বা দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে যেকোনো একটিকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যাবার লড়াইয়ে থাকবে বাংলাদেশও।

দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বড় ব্যবধানে হারের পর ভারতের বিপক্ষে জয়ের খুব কাছে এসেও শেষ রক্ষা হয়নি। এদিকে পাকিস্তানের কাছেও হার ব্যাটিং ব্যর্থতায়। এ পরাজয়সমূহের পেছনে রয়েছে খুবই ছোট ছোট কারণ, যেগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পুরোনো সঙ্গী। ক্যাচ মিস, ডিরেক্ট থ্রোতে রানআউট মিস, চাপের মুখে ভেঙ্গে পড়া, এক উইকেট হারানোর পরপরই মোমেন্টাম নষ্ট হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়া কিংবা আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর দলের মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া- এ সমস্যাগুলো বাংলাদেশ দলের জন্য নতুন নয়।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো শুরুর পরেও মাত্র ১২৮ রানের টার্গেট দিতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। প্রথম ১০ ওভারে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে ৭০ রান তোলার পর শেষ ১০ ওভারে সাকুল্যে ওঠে ৫৭ রান! অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বিতর্কিত আউটের সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলেছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ওপেনার নাজমুল হাসান শান্তর দাবি- সাকিবের আউটটি অন্যায্য ছিল তা বুঝতে পারলেও ব্যাটসম্যানদের মনোযোগ ঠিকই ছিল। কিন্তু তবুও দলীয় সংগ্রহ ১৪০'র ঘরে না নিয়ে যেতে পারায় হতাশ ব্যাটসম্যানরাও।

ছোট টার্গেট ডিফেন্ড করতে গেলে যে ভালো বোলিংয়ের পাশাপাশি দুর্দান্ত ফিল্ডিংও করতে হয়, সেখানেই ব্যর্থ বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই তাসকিনের বলে রিজওয়ানের সহজ ক্যাচ মিস করেন উইকেটকিপার সোহান। দিনটি যে বাংলাদেশের নয় তা যেন অ্যাডিলেডের আনাচে-কানাচে উচ্চারিত হচ্ছিল! ভারতের বিপক্ষেও ছোট ছোট ভুলেই ম্যাচ হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের। ১৮৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে এক পাশে লিটন দাসের দুর্দান্ত শুরুকে অপর পাশ থেকে আপাতদৃষ্টিতে কোনো সাহায্যই করতে পারেননি নাজমুল হাসান শান্ত। লিটনের রান যখন ২১ বলে ৫০, শান্ত তখন অপর প্রান্তে ১৬ বলে ৭ রান নিয়ে! বড় রান তাড়া করতে নেমে এটি একটু হলেও দলকে চাপে ফেলেছে।

বৃষ্টি আইনে লক্ষ্য যখন নেমে আসে ৯ ওভারে ৮৫ রানে, হাতে তখনও উইকেট ১০ টি। লিটন দাস আউট হওয়ার পরেও সবার ধারণা ছিল বাকি ব্যাটসম্যানরা সামলে নেবেন। কিন্তু সেই পুরনো রোগ আরেকবার নাড়া দেয় ব্যাটিং লাইনআপকে। স্ট্রাইক রোটেট করার বদলে চার-ছয়ে ম্যাচ শেষ করার তাড়নায় একের পর এক উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যের মাত্র ৫ রান আগে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।

ভারতকে আরেকবার বাগে পেয়েও হারাতে না পারার তালিকায় যোগ হয় এই ম্যাচও। কোহলির ফেইক ফিল্ডিং বিতর্ক কিংবা ভেজা মাঠের 'বাধার' চাইতে নিজেদের মানসিকতাকেই দায়ী করেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার মতে, এই ধরনের ম্যাচ কিভাবে জিততে হয় সেটিই এখনো পর্যন্ত শেখেনি তার দল। শান্তও বলছেন, দল হিসেবে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ; কোনো ব্যক্তির ভুলে নয় বরং দল হিসেবে খেলতে না পারাটাই ছিলো ম্যাচ হারের কারণ।

অস্ট্রেলিয়া থেকেও সেই একই মাথাব্যথা নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে অধিনায়ক সাকিব ও তার টিম ম্যানেজমেন্টকে। খুব সামান্য ভুলে এর আগেও এরকম ম্যাচ হারের অভিজ্ঞতা তো নতুন নয়! ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরবর্তী আসর বসার আগে যে সময়টুকু পাচ্ছে দল, তার মধ্যে এই ভুল গুলো দূর করতে খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফরা কী পদক্ষেপ নেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.