সহজ জয়ে সমতায় ফিরলো বাংলাদেশ
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৮৮ রান করেও ১৭ রান হার। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৬ রান তুলেই মিললো সহজ এক জয়। পারফরম্যান্সের এই ওঠানামায় বাংলাদেশের পারফরম্যান্সেও থাকলো পরিবর্তনের ছাপ। আগের ম্যাচে দারুণ লড়েও হেরে যাওয়ার নেপথ্যে ছিল ধারহীন ও অগোছালো বোলিং। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বোলিংয়ে শাসন করেই জিম্বাবুয়েকে হারালো বাংলাদেশ।
রোববার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। চার ম্যাচ পর টি-টোয়েন্টিতে জিতলো তারা। এই ম্যাচ জিতে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরালো নুরুল হাসান সোহানের দল। আগামী ২ আগস্ট সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে একই ভেন্যুতে, একই সময়ে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ম্যাচসেরা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের স্পিন ঘূর্ণিতে এলোমেলো হয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ৩১ রানে ৫ উইকেটে হারানো দলকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান সিকান্দার রাজা ও রায়ান বার্ল। তাদের ব্যাটে ৮ উইকেটে ১৩৫ রান তোলে স্বাগতিকরা। জবাবে লিটন কুমার দাসের হাফ সেঞ্চুরি ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর ব্যাটে ১৭.৩ ওভারে ৭ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমেও বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ব্যর্থ মুনিম শাহরিয়ার। দলীয় ৩৭ রানে ফিরে যান ডানহাতি এই ওপেনার, ৭ রান করেন তিনি। উইকেটে হারানোর প্রভাব অবশ্য বাংলাদেশের ইনিংসে পড়েনি। শুরু থেকেই দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা লিটন ও এনামুল হক বিজয় দ্বিতীয় উইকেটে ৩১ রানের জুটি গড়ে দলকে অনেকটাই এগিয়ে দেন।
এর মাঝে ৩০ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। দারুণ সব শটে ইনিংস সাজানো ডানহাতি এই ওপেনার ৬টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন। ৩ রান পরই বিদায় নেন বিজয়। এই ম্যাচেও টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করতে পারেননি তিনি। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফেরার পর থেকেই নিজের ছায়া হয়ে থাকা টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান ১৫ বলে ২টি চারে ১৬ রান করে আউট হন।
বাকিটা সময় আর ভাবতে হয়নি বাংলাদেশকে। চতুর্থ উইকেটে আফিফ হোসেন ধ্রুব ও নাজমুল হোসেন শান্ত ৫৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। আফিফ ২৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ৩০ ও শান্ত ২১ বলে একটি চারে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন। জিম্বাবুয়ের রিচার্ড এনগারাভা, শন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজা একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে বল হাতে শুরুটা দাপুটে হয় বাংলাদেশের। স্পিন দিয়ে শুরু করান অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। বল হাতে নিয়েই জাদু দেখাতে শুরু করেন ম্যাচসেরা মোসাদ্দেক। ডানহাতি এই অফ স্পিনার প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন রেজিস চাকাভাকে। প্রথম উইকেট হারানোর চাপ কাটিয়ে ওঠারও সুযোগ পায়নি স্বাগতিকরা। এই ওভারের শেষ বলে ওয়েসলে মাধেভেরেকেও সাজঘর দেখিয়ে দেন মোসাদ্দেক।
প্রথম ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যাওয়া জিম্বাবুয়েকে আবারও চেপে ধরেন মোসাদ্দেক। নিজের দ্বিতীয় ওভারে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনের উইকেট তুলে নেন তিনি। সিকান্দার রাজা এক পাশ ধরলেও অন্য প্রান্তে রাজত্ব চালিয়ে যেতে থাকেন মোসাদ্দেক।
বাংলাদেশের বাকি বোলাররাও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে থাকেন। তবে উইকেট নেওয়ার দায়িত্বটি একাই পালন করে যেতে থাকেন মোসাদ্দেক। উইকেট তুলে নেওয়ার ধারাবাহিকতায় নিজের তৃতীয় ওভারে শন উইলিয়ামসকে ফেরান তিনি। আর চতুর্থ ওভারে মিল্টন শুম্বাকে ফিরিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন মোসাদ্দেক, ৪ ওভারে তার খরচা মাত্র ২০ রান।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের দিনে রেকর্ডে নাম উঠে গেছে তার। ডানহাতি এই অফ স্পিনারে নাম বসেছে ইলিয়াস সানি, সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমানদের পাশে। বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ উইকেট নিলেন তিনি, যা যৌথভাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা বোলিং। সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্পিনার ও বোলার হিসেবে বিদেশের মাটিতে ৫ উইকেট নিলেন মোসাদ্দেক।
মোসাদ্দেক তোপে পড়ে ৬.৫ ওভারে মাত্র ৩১ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। তখন মনে হচ্ছি ১০০ রানও হয়তো করতে পারবে না প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দাপুটে জয় পাওয়া দলটি। কিন্তু সিকান্দার রাজার কারণে সেই বিপদে পড়তে হয়নি স্বাগতিকদের। রায়ান বার্লের সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালানো রাজা।
বার্লের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৮০ রানের জুটি গড়েন রাজা, বার্লের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ফেরার আগে ৩১ বলে ৩টি চারে ৩২ রান করেন তিনি। পরের ওভারে রাজাকে ফেরান মুস্তাফিজ। দলের দুঃসময়ে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া রাজা ৫৩ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬২ রান করেন। লুক জংওয়ে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন।
মোসাদ্দেক উইকেট বৃষ্টি নামালেও সবচেয়ে কৃপণ বোলিং করেন শেখ মেহেদি হাসান। ডানহাতি এই অফ স্পিনার ৩ ওভারে মাত্র ১০ রান দেন। মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ৩ রানে এক উইকেট নেন। দেড় বছর পর জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামা হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে ২৪ রানে নেন এক উইকেট। শরিফুল ইসলাম ৪ ওভারে ৩৭ রান খরচায় কোনো উইকেট পাননি।