তাইজুলের রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে বাংলাদেশের সামনে ছোট লক্ষ্য

খেলা

টিবিএস রিপোর্ট
16 July, 2022, 10:55 pm
Last modified: 17 July, 2022, 02:57 am
প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে দলের লক্ষ্য অল্পের মধ্যে বেধে রাখতে স্পিনাররা কাণ্ডারীর ভূমিকা পালন করেন। যেখানে নেতার ভূমিকায় ছিলেন ২০২০ সালের মার্চের পর প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা তাইজুল।

আগের দুই ম্যাচে স্পিনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভুগিয়েছে বাংলাদেশ। স্পিনারদের দাপুটে পারফরম্যান্সে প্রথম দুই ওয়ানডে দিয়েই সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে স্পিন শক্তি আরও বাড়ায় সফরকারীরা। শরিফুল ইসলামকে বসিয়ে একাদশে নেওয়া হয় তাইজুল ইসলামকে। আর প্রায় আড়াই বছর পর ওয়ানডে ম্যাচে সুযোগ পেয়েই স্পিন জাদুতে ক্যারিবীয়দের ধসিয়ে দিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার, করলেন রেকর্ড গড়া বোলিং। 

শনিবার গায়ানার প্রভিডেন্স ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নিকোলাস পুরানের লড়াইয়ের পরও তাইজুলের স্পিন ঘূর্ণিতে দিক হারিয়ে ৪৮.৪ ওভারে ১৭৮ রানেই অলআউট হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে দলের লক্ষ্য অল্পের মধ্যে বেধে রাখতে স্পিনাররা কাণ্ডারীর ভূমিকা পালন করেন। যেখানে নেতার ভূমিকায় ছিলেন ২০২০ সালের মার্চের পর প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা তাইজুল। বাংলাদেশের বাকি বোলাররাও এদিন দুর্দান্ত বোলিং করেন। 

তাইজুলের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের। ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন বাঁহাতি এই স্পিনার। দশম ওয়ানডে খেলতে নামা তাইজুলের এটাই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। কেবল নিজেরই নয়, বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যেই এটা সেরা বোলিং। 

আগের সেরা বোলিং ছিল আব্দুর রাজ্জাকের। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৯ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। তাইজুলের বোলিং ফিগারটি বিদেশের মাটিতেও বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যেও সেরা। আগের সেরা বোলিং ছিল সাকিব আল হাসানের, ২০১৯ বিশ্বকাপে সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৯ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। 

আগের দুই ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ভালো শুরু করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্পিনে কাবু ক্যারবীয়রা এদিনও শুরুতেই পরীক্ষার মুখে পড়ে। ইনিংসে তৃতীয় ওভারেই স্বাগতিকদের শিবিরে আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের দারুণ ডেলিভারিটি বুঝতেই পারেননি ক্যারিবীয় ওপেনার ব্রেন্ডন কিং। রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ফেরানোর চেষ্টা করলেও তাইজুলের গুড লেংন্থের ফ্লাইট দেওয়া ডেলিভারিটি গিয়ে ভেঙে দেয় ৮ রান করা কিংয়ের স্টাস্প।

দ্বিতীয় ছোবল বসাতেই বেশি সময় নেননি তাইজুল। নিজের পরের ওভারেই তার শিকার আরেক ওপেনার শেই হোপ। বাংলাদেশ স্পিনারের বাতাসে ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিটি সামনের পা এগিয়ে কভারে খেলার চেষ্টা করেন হোপ। কিন্তু তাইজুলের টার্নের কাছে পরাস্থ হন তিনি। পা বেরিয়ে আসায় বল কুড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্টাম্প ভাঙেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। টিভি রিপ্লে দেখে ২ রান করা হোপকে আউট ঘোষণা করেন থার্ড আম্পায়ার।  

১৫ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে মাহ বিপদে পড়ে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপদ আরও বাড়ান একমাত্র পেসার হিসেবে একাদশে জায়গা পাওয়া মুস্তাফিজুর রহমান। পরের ওভারেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে শেমার ব্রুকসকে ফিরিয়ে দেন তিনি। এখান থেকে দিকহারা দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন কিচি কার্টি ও অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। 

শুরুর ধাক্কা সামলে এই জুটি দলকে এগিয়ে নিতে থাকে। ধীর গতিতে রান তুললেও দলকে ছন্দে ফেরান কার্টি-পুরান। চতুর্থ উইকেটে ৬৭ রান যোগ করেন তারা। কার্টিকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে তামিমের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৬৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ রান করেন কার্টি। 

পুরানের সঙ্গে যোগ দিয়ে রভম্যান পাওয়েলও থিতু হয়ে উঠেছিলেন, এই জুটি থেকে আসে ৩৪ রান। কিন্তু তাইজুলের স্পিন ছোবলের কাছে হার মানতে হয় রভম্যানকে। এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরের ফেরার আগে ২৯ বলে একটি ছক্কায় ১৮ রান করেন তিনি। অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বাজতে থাকলেও পুরান নেতার মতো ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকেন। 

রভম্যানের বিদায়ের কিছুক্ষণ পরই কিমো পলকে নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণত করেন তাইজুল। এরপর আকিল হোসেনকে এক পাশে রেখে ঝড় তোলেন পুরান। মেহেদী হাসান মিরাজের করা ইনিংসের ৪০তম ওভারে টানা দুই ছক্কা ও এক চারে ১৪ রান তোলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। আকিল অবশ্য পুরানকে বেশি সময় সঙ্গ দিতে পারেননি। ৮ বলে ১ রান করে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন তিনি। 

উইকেট পড়তে থাকলেও রান তোলায় মনোযোগী পুরান নিজের ছন্দে ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকেন। তার সামনে বাধার দেয়াল তুলতে সক্ষম হন রেকর্ড গড়া বোলিং করা তাইজুল। স্টাম্প উপড়ে পুরানকে নিজের পঞ্চম শিকারে পরিণত করেন তিনি। ফেরার আগে ১০৯ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৩ রান করেন উইন্ডিজ অধিনায়ক। শেষ দিকে রোমারিও শেফার্ড ১৯ ও আলজারি জোসেফ ৭ রান করেন। 

তাইজুলের স্বপ্নের মতো দিনে মোসাদ্দেক সবচেয়ে কৃপণ বোলিং করেন। ডানহাতি এই অফ স্পিনার ১০ ওভারে মাত্র ২৩ রান খরচায় একটি উইকেট নেন। নাসুম ৯.৪ ওভারে ৩৯ রানে ২ উইকেট নেন। মুস্তাফিজ ৯ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। মিরাজ এদিন সবচেয়ে খরুচে ছিলেন, ৮ ওভারে ৬১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন তিনি। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.