‘শুধু ক্রিকেটারদের দায় দিলে সামনে আরও খারাপ হবে’- মাশরাফির সতর্কবার্তা

খেলা

টিবিএস রিপোর্ট
04 November, 2021, 10:15 pm
Last modified: 04 November, 2021, 10:19 pm
বাংলাদেশের ক্রিকেটের গঠন ও প্রক্রিয়া, পরিচালনা, ক্রিকেটারদের পরামর্শ দেওয়াসহ অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মাশরাফি। সাবেক ওয়ানডে অধিনায়কের শঙ্কা, ক্রিকেটারদের বলির পাঁঠা বানানো হতে পারে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শেষ বাংলাদেশের। পাওয়ার মধ্যে প্রথম রাউন্ডের দুটি জয়। এর আগে ও পরে কেবলই আক্ষেপ আর হতাশা। সুপার টুয়েলভের সবগুলো ম্যাচ হেরে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এমন ভরাডুবি পারফরম্যান্সের দায় অবশ্যই ক্রিকেটারদের, তবে পুরোটা নয় বলে মনে করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। 

বাংলাদেশের ওয়ানডের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়কের মতে, শুধু ক্রিকেটারদের ওপর দায় চাপালে সামনে আরও খারাপ হবে। যদিও এত বাজে পারফরম্যান্সের পরে ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারটিকেও কঠিন মনে হচ্ছে তার কাছে। 

সুপার লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারের পর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাশরাফি। যেখানে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের গঠন ও প্রক্রিয়া, পরিচালনা,  ক্রিকেটারদের পরামর্শ দেওয়াসহ অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-  

"আরও একটি বিশ্বকাপ শেষ হলো। ৮ ম্যাচ খেলেছি, ২টি জয়, ৬টি হার। প্রথমেই বলে নিই, কোনোভাবেই ক্রিকেটারদের দায় এড়ানোর উপায় নেই। বিশেষ করে যেভাবে আমরা হেরেছি, এত বাজে খেলার পর ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ানো কঠিন। তবে আমার অনুভূতি তো আমার মতোই। আমি বিশ্বাস করি, ওরা হয়তো খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে ইনশা আল্লাহ।

ঠিক এই মুহূর্তে ক্রিকেটারদের উচিত ধৈর্য ধরা ও সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা। কোনো সমালোচনার জবাব দেওয়া উচিত নয়। আশা করি, তারা বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে এবং সঠিক কাজটি করবে।

তবে কিছু ব্যাপার মেলানো প্রয়োজন। সেটা হলো, খারাপ হওয়ার প্রথম দায় অবশ্যই ক্রিকেটারদের। এরপর আর কি কারও দায় নেই? শুধু ক্রিকেটারদের ঘাড়ে চাপিয়ে যদি শেষ করেন, তাহলে মনে রাখবেন, আরও খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। প্রমাণ তো আগেও অহরহ দেখা গেছে! 

আগের অভিজ্ঞতা থেকে এবারও বলে দেওয়া যায়, এখন সামনে কী হবে। হয়তো কাউকে বাদ দেওয়া হবে, কারও ওপর অদৃশ্য রাগ ঝাড়া হবে, রিয়াদকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হবে। সমর্থকরা যে ক্রিকেটারকে পছন্দ করছে না, তার ওপর ঝাল মিটিয়ে সমর্থকদের শান্ত করা হবে। সাংবাদিক ভাইদের নানা কিছু বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। 

আগেও দেখেছি যে, এসব করে একেকটা পক্ষ দাঁড় করানো হয় এবং বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে, সামনের বিশ্বকাপে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরাও ভাই আবেগি মানুষ, এসব দেখে সব ভুলে আশা নিয়ে সামনে তাকিয়ে থাকব। এরপর বিশ্বকাপ আসবে, দেখা যাবে একই ফলের পুনরাবৃত্তি!

তাই, ক্রিকেটারদের দায় দিন, ভালো কথা। সেটা তাদের প্রাপ্য। পাশাপাশি, নিজেরাও বোঝার চেষ্টা করুন যে আপনারাও ব্যর্থ! কারণ, এই পুরো প্রক্রিয়ার অংশ আপনারাও। 

আপনারা অন্যান্যবারের মতা বলতেই পারেন, 'অমুকের জন্য পারিনি, তমুক ব্যর্থ হয়েছে, এ জন্যই পারলাম না।' সেক্ষেত্রে তো দায়টা আপনাদেরও, কারণ উপযুক্ত বিকল্প আপনারা তৈরি করতে পারেননি। সেই দায়িত্ব তো আপনাদের কাঁধেই ছিল আপনাদের তো আগেই বোঝা উচিত ছিল! আপনারা সেটা পারেননি। তাই দয়া করে, সত্যকে আলিঙ্গন করুন এবং নতুনভাবে কাজ শুরু করুন। 

সামনে আরেকটি বিশ্বকাপের দোহাই দিয়ে, ক্রিকেটারদের ক্ষতি না করে প্রক্রিয়াটা ঠিক করুন। দেখবেন, তখন দল আপনা আপনি ভালো খেলবে। দলকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনাদেরই। তাই দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে দায়িত্ব নিয়েই কথা বলা বা কাজ করা আমরা আশা করি।

সবচেয়ে বড় শঙ্কা আমি যা দেখছি, ক্রিকেটারদের বলির পাঁঠা বানিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেওয়া হবে যে, 'আমরা অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা সামনের বিশ্বকাপে বড় ভূমিকা রাখবে।' আসলে এতে ক্রিকেটের কোনো লাভ হবে না। ক্রিকেটার তৈরি ও গড়ে তুলতে আধুনিক ক্রিকেটে প্রক্রিয়াগুলো দেখুন এবং সেগুলো দেশের ক্রিকেটে প্রয়োগ করুন। তাদেরকে যত্ন করুন, হয়তো তারা সামনের পথচলায় আমাদের দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দেবে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে। কারণ একজন প্রপার খেলোয়াড় তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। সবাই না বুঝলেও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট লোকদের এসব বোঝা উচিত। তাই সময় লাগুক, কিন্তু প্রক্রিয়া নতুন করে সাজান। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে খুব বেশি কাজে দেবে না।

দয়া করে এই কথা বলবেন না যে, '২০২২ বা ২০২৩ বিশ্বকাপে এদের দিয়ে হবে না, তাই সব নতুন সুযোগ দিতে হবে।' নতুনদের সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে, তবে তাদের তৈরি করে। আমরা আপনাদের সঙ্গেই আছি, কারণ আমাদের শরীরের প্রতিটি রক্ত কনিকায় শুধু ক্রিকেটই বসবাস করে। দয়া করে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না আশা করি। দূরে থেকেও আমরা আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। আজীবনই তা থাকব।"

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.