‘আমি রাশিয়ান, বাংলাদেশিও’

খেলা

26 October, 2021, 09:50 pm
Last modified: 26 October, 2021, 11:32 pm
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জিমন্যাস্ট হয়ে ওঠা, জিমন্যাস্ট হয়ে উঠতে লড়াই, বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ-খাবার, দেশের জিমন্যাস্টিকসে কিছু করার পরিকল্পনাসহ আরও বিষয় নিয়ে কথা বলেন অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়ী মার্গারিটা মামুন।   

মার্গারিটা মামুন; সাবেক রাশিয়ান অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী জিমন্যাস্ট। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে রিদমিক অলম্পিকে স্বর্ণ জেতেন তিনি। ২৫ বছর বয়সী এই জিমন্যাস্ট রাশিয়ান আবার বাংলাদেশিও। তার প্রয়াত বাবা আবদুল্লাহ আল মামুনের জন্ম রাজশাহী। রুশকন্যা আনাকে বিয়ে করে সেখানেই স্থায়ী হন মামুন।

সব সময়ই বাবার দেশের প্রতি টান অনুভব করেন মার্গারিটা। ১৬ বছর আগে বাবা মামুনের সঙ্গে বাংলাদেশের এসেছিলেন তিনি। বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সেন্ট্রাল সাউথ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস উদ্বোধন করতে দীর্ঘ সময় পর আবার বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।

এবার তার পরিচয় বাংলাদেশিও। বাংলাদেশি পাসপোর্ট বুঝে পেয়েছেন মার্গারিটা। তাতে যেন বাংলাদেশের সঙ্গে টানটা আরও বেড়েছে বিশ্বজয়ী এই জিমন্যাস্টের। বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের টান অনুভব করতে পারেন তিনি, এ দেশের জিমন্যাস্টিকসে কাজ করার পরিকল্পনাও আছে বর্তমানে রাশিয়ার ট্রেইনার হিসেবে কর্মরত মার্গারিটার। মঙ্গলবার বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের সাথে অনেকটা সময় পার করেছেন তিনি; দিয়েছেন টিপস, দেখিয়েছেন নিজের রিদমিক জিমন্যাস্টিকস সৌন্দর্য।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জিমন্যাস্ট হয়ে ওঠা, জিমন্যাস্ট হয়ে উঠতে লড়াই, বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ-খাবার, দেশের জিমন্যাস্টিকসে কিছু করার পরিকল্পনাসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেন মার্গারিটা মামুন।   

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে? দেশ সম্পর্কে কতটা জানেন?

মার্গারিটা মামুন: আমি এখানে আসতে পেরে খুবই রোমাঞ্চিত। আমি এখানে শেষবার এসেছিলাম যখন, আমার বয়স ১০ বছর ছিল। প্রায় ১৬ পর বছর আবার এলাম। আমি আমার পরিবার এবং আমার স্বামীর সঙ্গে এখানে আসতে পেরে অবশ্যই খুব খুশি। সে এখানে প্রথমবারের মতো এসেছে, আমি তাকে আমার দ্বিতীয় জন্মভূমি দেখাতে চাই।

বাংলাদেশি জিমন্যাস্টদের সঙ্গে মার্গারিটা মামুন। ছবি: জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন

টিবিএস: জিমন্যাস্টিকসের প্রতি আপনার ভালোবাসা বেড়েছে কীভাবে? 

মার্গারিটা: ছোটবেলায় খেলাধুলা আমাকে টানতো। রিদমিক জিমন্যাস্টিকস টিভিতে দেখালে আমি পড়াশোনা ছেড়ে টিভির সামনে বসে থাকতাম। আমার ইচ্ছাশক্তি ও পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া সমর্থনের কারণে এতোটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছি। 

টিবিএস: এমন কিছু আছে, যা একজন বাংলাদেশি হিসেবে আপনাকে গর্বিত করে?

মার্গারিটা: অবশ্যই, আমি একজন বাংলাদেশি হিসেবে খুবই গর্বিত। আমার স্কুলে আমিই একমাত্র বাচ্চা ছিলাম যে অর্ধেক বাংলাদেশী এবং অর্ধেক রাশিয়ান। আমি সবসময় এটা মাথায় রেখেছি। বাংলাদেশ সব সময় আমার রক্তে ও মনে মিশে আছে।

টিবিএস: বাংলাদেশিরা যখন আপনার প্রশংসা করেন, কেমন অনুভূতি কাজ করে আপনার মধ্যে?

মার্গারিটা: অলিম্পিকের আগে এবং পরে আমি বাংলাদেশিদের কাছ থেকে যে সমর্থন পেয়েছি, তার জন্য আমি সব সময় কৃতজ্ঞ। আমি যখনই মস্কোতে বাংলাদেশিদের দেখি, তাদের জন্য আমার মন ভরে যায়। টোকিওতে এ বছর অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের উপস্থিতির অপেক্ষায় ছিলাম আমি। আমি সব সময় বিশ্বের যেকোনো জায়গায় বাংলাদেশের মানুষকে দেখতে ও দেখা করতে ভালোবাসি। এর আগে কানাডায় বাংলাদেশিরা আমাকে দেখতেই এগিয়ে আসেন, বলেন তারা আমাকে এবং আমার বাবাকে চেনেন।

মার্গারিটার রিদমিক জিমন্যাস্টিকস পারফরম্যান্স। ছবি: সংগৃহীত

টিবিএস: আপনি অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জেতার এক সপ্তাহ পরে আপনার বাবা মারা যান। এটা আপনার জন্য কত বড় ধাক্কা ছিল?

মার্গারিটা: এটা আমাদের পরিবারের জন্য একটি কঠিন সময় ছিল। আমি যখন রিও ডি জেনিরো থেকে ফিরে আসি, তখন বাবা তার হাতে মেডেলটি ধরে ছিলেন। তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন যে আমি স্বর্ণপদক জিততে পারব। কিন্তু আমি দ্রুত আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতাম। বাবাই সব সময় আমার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতেন। 

টিবিএস: বাংলাদেশি খাবার কেমন লাগছে?

মার্গারিটা: বাবা যখন বেঁচে ছিলেন, তিনি বাড়িতে বাংলাদেশি খাবার রান্না করতেন। আমি তার সাথে ঘোরাঘুরি করতাম এবং সেসব খাবার রান্নার জন্য মশলা কিনতাম। তিনি চিকেন ও বিফ বিরিয়ানি খুব ভালো রান্না করতেন। বাংলাদেশি খাবারের মধ্যে আমি পরটা এবং মিষ্টি খেতে ভালোবাসি।

টিবিএস: জিমন্যাস্টিকসে বাংলাদেশের জন্য কিছু করার কোনো পরিকল্পনা আছে?

মার্গারিটা: আমার কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই আপাতত। আমি সবে এখানে এসেছি। তবে আমি নিশ্চিত যে এটি শেষবারের মতো হবে না এবং দেশের সাথে আমার সম্পর্ক মাত্র শুরু হয়েছে। আমি জানি এখানে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস খেলা হয়, তবে আমি বাংলাদেশে রিদমিক জিমন্যাস্টিকস শুরু করতে চাই।

রিও অলিম্পিকে জেতা স্বর্ণপদক হাতে মার্গারিটা মামুন। ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

টিবিএস: বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন থেকে কোচিং অফার পেতে পারেন, এমন কোনো ধারণা পেয়েছেন? 

মার্গারিটা: এই মুহূর্তে আমি এখানে রিদমিক জিমন্যাস্টিকসের কোচ হতে পারব না। কারণ আমাকে ফিরে যেতে হবে। এটা খুবই ধীরগতির খেলা, প্রচুর সময় দিতে হয়। রাশিয়ায় আমার কোচ তার পরিবারের চেয়ে আমার সাথে বেশি থাকতেন। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তবে দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়।

টিবিএস: আপনি বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের জন্য বড় অনুপ্রেরণার নাম। এখানে থেকে কিছু করলে সেটা আরও বেশি উৎসাহমূলক হবে। এটা নিয়ে কোনো ভাবনা আছে আপনার?

মার্গারিটা: আমি রাশিয়ান, আবার বাংলাদেশিও। এখন যেহেতু আমার পাসপোর্ট এবং ভিসা আছে, আমি এখানে প্রায়ই আসতে পারব। তো এটা পরে ভেবে দেখা যাবে। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.