‘আত্মবিশ্বাস মিললেও হয়নি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি’

খেলা

11 August, 2021, 09:20 pm
Last modified: 11 August, 2021, 09:26 pm
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কতোটা কাজে আসবে কিংবা কেমন হলো বাংলাদেশের প্রস্তুতি? এমন প্রশ্নে ইতিবাচক উত্তর মিলছে না। এমন ধীর গতির উইকেটে খেলে গিয়ে বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সাবেক অধিনায়ক।

ফরম্যাট যেটাই হোক, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যেকোনো প্রতিপক্ষকে পরীক্ষায় ফেলে। ওয়ানডেতে ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। টেস্টে জয় আছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে আরও প্রমাণিত ঘরের মাঠের বাংলাদেশ কতোটা শক্তিশালী।

পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। যাদের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে একটি জয় ছিল সোনার হরিণ, তাদের বিপক্ষে এমন দাপুটে সিরিজ জয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ও বলা হচ্ছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘনিয়ে আসায় প্রস্তুতির প্রসঙ্গটিও উঠে আসছে।

আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই সিরিজ জয় কতোটা ভূমিকা রাখবে কিংবা বাংলাদেশের প্রস্তুতিটা কেমন হলো? এমন প্রশ্নে ইতিবাচক উত্তর মিলছে না। এমন ধীর গতির উইকেটে খেলে গিয়ে বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সাবেক অধিনায়ক। 

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশের দুই সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও খালেদ মাসুদ পাইলট জানান, সিরিজ জয়ের ব্যাপারটি দারুণ। আত্মবিশ্বাস মিলেছে, যা বিশ্বকাপে কাজে দেবে। কিন্তু এমন উইকেটে খেলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির প্রশ্নে তাদের মত, কেবল বাংলাদেশ নয়, অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তুতিও ভালো হলো না। এমনকি ঘরের মাঠে এমন ধীর গতির উইকেট বানিয়ে জেতার মাসকিতাও সমর্থন করেন না তারা। 

বাংলাদেশের আরেক সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার উইকেটের প্রশ্নে কিছুটা ভিন্ন মত দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়টাকেই সবচেয়ে বড় করে দেখছেন তিনি। তার মতে, জেতার ধারায় থাকাটা খুব জরুরি। বিশ্বকাপে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে হয়তো এমন উইকেট থাকবে না, তবে তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সমস্যা হবে না বলেই তার বিশ্বাস। 

আমিনুল ইসলাম বুলবুল

ফলাফলের দিকে তাকালে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা টি-টোয়েন্টি সিরিজ। র‍্যাঙ্কিংয়ে আমরা দশে আর ওরা উপরের দিকে আছে। ১০ যখন এমন দলকে ৪-১ ব্যবধানে হারায়, এর চেয়ে বড় ফল কিন্তু আশা করা যায় না। দ্বিপাক্ষিক সিরিজের কথা চিন্তা করলে এটা হলো আমাদের খেলা সেরা টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এখন অনেক কথা উঠতে পারে যে, অস্ট্রেলিয়া দুর্বল ছিল। আমাদেরও তো তামিম-মুশফিক ছিল না। ওই আলোচনায় আমি যাব না। আমি এটাকে একটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হিসেবে দেখছি। 

বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করলে কোনো দলের জন্যই এটা ভালো প্রস্তুতি ছিল না। কারণ, বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দলে যারা খেলবে তাদের ৬০ শতাংশই এই দলে ছিল না, এবং যে উইকেটে আমরা খেললাম, আমি বলব না এটা খারাপ; তবে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা চিন্তা করলে আমার মনে হয় না এটা ভালো উইকেট। শুধু মানসিকভাবে এই সিরিজ দারুণ কাজে দেবে। কিন্তু ক্রিকেটীয় দিক থেকে চিন্তা করলে আমার মনে হয় না এটা ভালো প্রস্তুতি ছিল। যে উইকেটে খেলা হয়েছে, এটা সত্যিকারের টি-টোয়েন্টি উইকেট ছিল না, যেখানে ১৫০ রান করা যায় না! মূল কথা, আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, কিন্তু ক্রিকেটীয় প্রস্তুতি খুব একটা হয়নি। 

আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়া আমাদের কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে পারেনি। তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজেও ৪-১ ব্যবধানে হেরেছে। হোমে আমরা সব সময় ভালো দল। কিন্তু বিদেশে জিম্বাবুয়ে ছাড়া আমরা ভালো করি না। ওই চ্যালেঞ্জটা কিন্তু থেকেই গেলো।

এটা ভালো চর্চা নয় (এই ধরনের উইকেট বানিয়ে জেতা)। এ রকম চর্চা যদি আমরা শ্রীলঙ্কা বা আফগানিস্তানের সাথে করি, তাহলে কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয় না; আমরা দেখেছি। সুতরাং সব মিলিয়ে আমাদের উইকেট সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ থাকে। ঘরোয়া ক্রিকেটও এমন হয়। গ্রাউন্ড, টুর্নামেন্ট কমিটি— এদের বসে একটা পরিকল্পনা দাঁড় করানো উচিত যে আমরা কী ধরনের উইকেট বানাবো। কোথায় এবং কেন খেলবো— এ রকম কয়েকটি প্রশ্ন, সেগুলোর কতোটিতে আমরা টিক মার্ক দিতে পারি, তা দেখতে হবে। আমরা যদি এই ধরনের উইকেটে খেলতে থাকি, তাহলে দেশে সফল হবো, কিন্তু বিদেশে সফল হবো না। 

খালেদ মাসুদ পাইলট

অবশ্যই আমি বলব সুন্দর একটা পারফরম্যান্স, দলগত পারফরম্যান্স হিসেবে খুবই ভালো, কালেক্টিভ পারফরম্যান্স। যদিও হাইস্কোরিং ম্যাচ ছিল না, প্রত্যেকটা ম্যাচই লো স্কোরিং। তবে যতটুকু দরকার একটা টিমের জন্য, সে জিনিসটা প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের মধ্যে ছিল। কেউ হয়তো পেরেছে, কেউ পারেনি। তবে শারীরিক ভাষা ভালো ছিল মাঠে ম্যাচ জেতার জন্য।

এটা আমি বলব না যে এই সিরিজ জয়ে খেলাধুলার উন্নতি হয়ে যাবে। কিন্তু খেলাধুলার জন্য মানসিক শান্তিটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দিন শেষে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে ম্যাচ জেতা। ম্যাচ না জিতলে দল বা ক্রিকেটার হতাশ হয়ে পড়ে। আত্নবিশ্বাসটা হারিয়ে যায়। আত্মবিশ্বাস পাওয়ার জন্য আমাদের ম্যাচ জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ। 

আমরা পাঁচটা ম্যাচের মধ্যে একটা হেরেছি। সেটাও হয়তো আমরা জিততে পারতাম, হয়তো এক দুইটা ওভারের জন্য ম্যাচটা মিস হয়ে গেছে কিন্তু এই জয়গুলা দলের জন্য খুব অপরিহার্য ছিল। কারণ, তরুণ যারা যারা আছে দলে, তাদের মধ্য এই সিরিজের পর ধারণা জন্মাবে যে, ভালো করলে আমরা অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারাতে পারি। 

এই সিরিজ দিয়ে আত্নবিশ্বাসের প্রস্তুতি হয়েছে কিন্তু দিন শেষে আপনাকে যখন বিশ্বকাপে খেলতে হবে, সত্যিকারের উইকেটে খেলতে হবে। তখন দৃশ্যটা অন্যরকম থাকবে। ফ্ল্যাট উইকেট, বাউন্স বল, ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলা লাগবে। এরপর আমি মনে করি, বিশ্বকাপে কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে না এ জন্য যে এ রকম উইকেটে আপনি আত্নবিশ্বাস তৈরি করলেন, হয়তো প্রস্তুতি ভালো হলো না। নিউজিল্যান্ডের যে টিমটা আসবে, আমি দেখলাম তাদের বেশিরভাগই নতুন প্লেয়ার, যারা মূল দলে খেলে না। এমন কী বিশ্বকাপ দলের কেউই না। তার মানে তারাও এই সিরিজে টেস্টিং টিম পাঠাচ্ছে। তারাও চিন্তিত। মানে এই স্পিন উইকেটে খেললে তাদেরও প্রিপারেশন খারাপ হবে। যদি হেরে যায়! সেদিক থেকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ভালো হয়নি।

এমন উইকেটে খেলা এই মুহূর্তে আমার কাছে মনে হয় এটা ক্ষতির নয়। অনেকেই হয়তো এটাকে নেগেটিভ ভাবে দেখবে, আমিও অবশ্যই এটাকে নেগেটিভ ভাবে দেখি এ জন্য যে, এভাবে আসলে ক্রিকেট কালচারটা ভালো লাগে না। ক্রিকেট হবে সবার জন্য সমান। কিন্তু আগে বুঝতে হবে, নতুন দলগুলা তাদের হোমের ফল নিয়ে এগোতে চায়। আমাদের উন্নতি করতে হলে ঘরে উন্নতি করতে হবে। ঘরের উন্নতিটাই সবচেয়ে বড় উন্নতি। আমরা বাইরের দলের সাথে স্পিন ট্র্যাকে খেলব আর ডমেস্টিকে ফাস্ট ট্র্যাকে খেলব। তাহলে আমার মনে হয় উন্নয়নটা হবে। আমি যদি ঘরে স্পিন ট্র্যাকে খেলি তাহলে বাইরে উন্নতিটা কীভাবে হবে।

হাবিবুল বাশার

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ ধরাবাহিক ছিল। হয়তো হাই স্কোরিং ম্যাচ হয়নি, তবে আমরা ডমিনেট করে খেলেছি। বাংলাদেশ কেমন পারফরম্যান্স করেছে, সেটা ফলই বলে দিচ্ছে। এর আগে আমরা অস্ট্রেলিয়াকে কখনও টি-টোয়েন্টিতে হারাতে পারিনি। কিন্তু এবার পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে শেষ করেত পেরেছি। তো এটাই সবকিছু বলে দিচ্ছে এই সিরিজটাতে আমরা কতো ভালো ক্রিকেট খেলেছি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এভাবে সিরিজ জেতা অবশ্যই আমাদের অন্যতম সেরা সাফল্য। সাফল্য অনেকই আছে কিন্তু এটা উপরের দিকেই থাকবে। 

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি বললে আরও একটি সিরিজ আমরা পাবো সামনে। নিউজিল্যান্ড পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলতে আসছে। তো ওই সিরিজে যদি আমরা জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি, সেটা অবশ্যই বিশ্বকাপে আমাদের অনেক সাহায্য করবে। 

এমন উইকেটে খেলা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, সেটা আমি দেখেছি। কিন্তু আমার মনে হয় আমরা সব বিষয় নিয়ে একটু বেশি মাথা ঘামিয়ে ফেলি। জিতলেও আমাদের সদস্যা হয়ে যায়, আবার হারলেও সমস্যা থাকে। খুব বেশি ভাবি আমরা। আমার মনে হয় জেতাটা খুব ভালো অভ্যাস। জয়ের ধারায় থেকে যেকোনো বড় টুর্নামেন্টে খেলতে গেলে ভালো হয়। বিশ্বকাপের উইকেট হয়তো এমন হবে না। তবে এখানকার উইকেট যে বেশি খারাপ ছিল তা নয়, একটু ধীরগতির ছিল। বিশ্বকাপের উইকেট এতো ধীর গতির হবে না। বিশ্বকাপের উইকেটে ব্যাটসম্যানরা বেশি সুবিধা পাবে। আর বোলিং তো আমাদের ভালো হচ্ছে। তো আমার মনে হয় না তেমন কোনো সমস্যা হবে আমাদের হবে। জয়ের ধারা নিয়ে বিশ্বকাপে যেতে পারলে তেমন সমস্যা হবে না বলেই আমার বিশ্বাস। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.