শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলে ফেললেন গেইল?
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রস্তুত হয়ে মাঠে ঢুকতে এগিয়ে এলেন হেলমেটের নিচে সানগ্লাস পরা ক্রিস গেইল। বাউন্ডারি রোপের বাইরে তখন দাঁড়িয়ে কাইরন পোলার্ড ও আন্দ্রে রাসেল। দুজন দুই পাশে দাঁড়িয়ে করতালিতে অগ্রজকে ব্যাটিংয়ে পাঠালেন তারা। ৯ বলে ২টি ছক্কায় ১৫ রান করলেন গেইল, এ আর এমন কী স্কোর তার জন্য! তবুও গ্যালারির দর্শকদের উদ্দেশ্যে ব্যাটসহ দুই হাত উঁচিয়ে মাঠ ছাড়লেন ক্যারিবীয় এই ব্যাটিং দানব।
না, অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও দেননি গেইল। কিন্তু তাকে ঘিরে ম্যাচে যে আবহ তৈরি হয়েছিল, সেটা তার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলার বার্তাই দেয়। এ ছাড়া চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেও বলা হচ্ছিল টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সেরা এই ব্যাটসম্যান শেষবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এটাই হয়তো হয়ে যেতে পারে তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
ব্যাটসম্যানের আউট হয়ে হতাশা ঝারার দৃশ্য ক্রিকেটে খুব পরিচিত। কিন্তু ক্রিস গেইল এখানে ব্যতিক্রম। তিনি যেমন চুপচাপ চার-ছক্কার ফুলছুরি সাজিয়ে যান, আউট হওয়ার পরও প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই ফেরিওয়ালার। কিন্তু এই ম্যাচে ঘটলো ভিন্ন ঘটনা। অজি পেসার প্যাট কামিন্সের বলে বোল্ড হওয়ার পর শূন্যে দৃষ্টি রেখে হতাশা প্রকাশ করেন গেইল। শেষ ম্যাচ বলেই যেন এত হতাশা!
যদিও সেই হতাশা ঝেরে ফেলতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় নেন ৪২ বছর বয়সী ক্যারিবীয় এই কিংবদন্তি। সীমানার দিকে এগিয়ে যেতেই বদলে নিলেন চেহারা। হাসিমুখে গ্যালারির দিকে তুলে ধরলেন ব্যাট। প্রস্তুত ছিলেন সতীর্থরা, এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরেন তাকে। এরপর কয়েক কদম, গেইল থেকে সরে আসে ক্যামেরা; যেন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে তার মাঠ ছাড়ার শেষ দৃশ্যটা দেখা হয়ে গেল ক্রিকেটমোদীদের।
শেষ বেলার এই বিশ্বকাপে সময়টা ভালো যায়নি গেইলের। দলের দুঃসময়ে তিনি নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। পাঁচ ম্যাচের কোনোটিতেই গেইলসূলভ ইনিংস দেখা যায়নি। পাঁচ ম্যাচে তার মোট রান মাত্র ৪৫, সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এই ম্যাচের ১৫। ওয়েস্ট ইন্ডিজও হেঁটেছে উল্টো পথে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা ৫ ম্যাচের মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে।
যদিও একটি বিশ্বকাপের বিবর্ণ পারফরম্যান্স তার ক্যারিয়ারে আঁচড়ও কাটতে পারবে না। ব্যাট হাতে বিশ্ব শাসন করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ডের মালা বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৭৮ টি-টোয়েন্টিতে ২টি সেঞ্চুরি ও ১৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৮.১১ গড়ে ১ হাজার ৮৯৯ রান করেছেন গেইল, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
স্বীকৃত টি-টোয়েন্টির হিসাব করলে তার ধারে কাছেও কেউ নেই। ৪৫২টি টি-টোয়েন্টিতে ২২টি সেঞ্চুরি ও ৮৭টি হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৯.৪৯ গড়ে ১৪ হাজার ৩২১ রান করেছেন গেইল। দুইয়ে থাকা কাইরন পোলার্ড ১১ হাজার ৩২৬ রানের মালিক। ক্যারিবীয়দের হয়ে ১০৩ টেস্টে ১৫টি সেঞ্চুরি ও ৩৭টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪২.১৮ গড়ে ৭ হাজার ২১৪ রান করেছেন গেইল। ৩০১ ওয়ানডেতে ২৫টি সেঞ্চুরি ও ৫৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৭.৮৩ গড়ে ১০ হাজার ৪৮০ রানের মালিক তিনি।