রেকর্ড রান তাড়ায় টি-টোয়েন্টি সিরিজও বাংলাদেশের
বাংলাদেশ ৭-০ জিম্বাবুয়ে; জিম্বাবুয়ে সফরে স্কোর লাইন এমন করতে না পারায় বাংলাদেশের কিছুটা আফসোস হতে থাকতে পারে। যদিও তা স্থায়ী হওয়ার কথা নয়। জিম্বাবুয়ে সফরে তো কেবল বাংলাদেশেরই শাসন জারি ছিল। ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে স্বাগতিকদের কেবল হারের স্বাদই দিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। একমাত্র টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও নিজেদের করে নিলো বাংলাদেশ।
রোববার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের পর জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ওয়েসলে মাধেভেরে ও রেজিস চাকাভার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। জবাবে ম্যাচ সেরা সৌম্য সরকারের হাফ সেঞ্চুরির পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দায়িত্বশীল ব্যাটিং ও শামীম হোসেন পাটোয়ারীর শেষের ঝড়ে ৫ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া, দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১৫ রান করে জেতা বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রান তাড়া। সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে এটা বাংলাদেশের চতুর্থ সিরিজ জয়, বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয়। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের একমাত্র সিরিজ জয় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১২ সালে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি ওপেনাররা। প্রথম ওভার থেকে ১৩ রান তোলার পর তৃতীয় ওভারে নাঈম শেখকে হারায় বাংলাদেশ। ৩ রান করে ফিরে যান বাঁহাতি এই ওপেনার। সৌম্য সরকারের সঙ্গে যোগ দিয়ে দলের চাপ কাটিয়ে তোলায় মন দেন সাকিব আল হাসান।
এই জুটিতে ছন্দ পায় বাংলাদেশ। ৭.৩ ওভারে ৭০ রানে পৌঁছে যায় সফরকারীরা। সৌম্যর সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়ে থামেন সাকিব। ফেরার আগে ১৩ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২৫ রান করেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটি গড়েন প্রথম টি-টোয়েন্টির পর এই ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া সৌম্য।
সময় উপযোগী ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়া সৌম্য এদিন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলেন। ৪৯ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৮ রান করে আউট হন সিরিজ সেরার পুরস্কার জেতা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। সৌম্য বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহকে বেশি সময় সঙ্গ দিতে পারেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব। ৫ বলে ১৪ রান করে ফিরে যান তিনি।
এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে যোগ দিয়ে ব্যাটিং তাণ্ডব শুরু করেন আগের ম্যাচেই জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলা শামীম। ৩৭ রানের জুটিতে শামীম ১২ বলে করেন ২৬ রান। জয় থেকে ৭ রান দূরে থাকতে আউট হন ৩৪ রান করা মাহমুদউল্লাহ। নুরুল হাসান সোহানকে এক পাশে রেখে বাকি কাজটুকু সারেন শামীম। যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এই সদস্য ১৫ বলে ৬টি চারে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন। জিম্বাবুয়ের ব্লেসিং মুজারাবানি ও লুক জঙ্গুয়ে ২টি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা জিম্বাবুয়েকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার টাডিওয়ানাশে মারুমানি ও ওয়েসলে মাধেভেরে। মারুমানি দেখেশুনে খেললেও খুনে ব্যাটিং করতে থাকেন মাধেভেরে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তাসকিন আহমেদকে টানা ৫টি চার মারেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভার থেকে ৬৩ রান তোলেন তারা। এ সময় অবশ্য থামতে হয় ২৭ রান করা মারুমানিকে। প্রথম উইকেট হারিয়েও জিম্বাবুয়ের রানের গতিতে প্রভাব পড়েনি। উইকেটে গিয়ে তাণ্ডব চালান রেজিস চাকাভা। মাধেভেরে-চাকাভা জুটিতে ১২২ রানে পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে।
ব্যাটকে তরবারিতে পরিণত করা চাকাভাকে ফেরান অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকার। এর আগে মাত্র ২২ বলে ৬টি ছক্কায় ৪৮ রানের ক্যামিও খেলেন স্বাগতিকদের টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। এই ওভারে অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকেও ফিরিয়ে দেন সৌম্য।
কিছুক্ষণ পর সাকিব আল হাসানের শিকারে পরিণত হন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া মাধেবেরে। ডানহাতি এই ওপেনার ৩৬ বলে ৬টি চারে ৫৪ রান করেন। এরপর ডিওন মায়ার্স ২৩ ও রায়ান বার্ল ১৫ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। ২টি উইকেট নেন সৌম্য। এ ছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শরিফুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান একটি করে উইকেট পান।