মেসিকে নিয়ন্ত্রণে রোনালদোর কোচদের কাছ থেকে যে শিক্ষা নিতে পারেন পচেত্তিনো 

খেলা

টিবিএস ডেস্ক
22 September, 2021, 02:25 pm
Last modified: 22 September, 2021, 02:37 pm
ফরাসি রাজধানীতে এসে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় নিচ্ছেন মেসি। তিন ম্যাচ খেলার পর এখনো কোনো গোলের দেখা পাননি এই আর্জেন্টাইন। আর এদিকে মেসি থাকা সত্ত্বেও পেনাল্টির দায়িত্বে বহাল আছেন নেইমারই।

এই মুহূর্তটির জন্যই কি চাকরিচ্যুত হবেন মউরিসিও পচেত্তিনো?

লিঁওর বিপক্ষে ম্যাচ ১-১ গোলে সমতায়। পিএসজির আক্রমণভাগের চার বড় তারকা- লিওনেল মেসি, নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আনহেল দি মারিয়া; সবাই তখনো মাঠে।  

১৫ মিনিট বাকি থাকতে দলে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন ছিল। কোচ মউরিসিও সিদ্ধান্ত নিলেন মেসিকেই বসিয়ে দিবেন। 

পার্ক ডি প্রিন্সেসে নিজের অভিষেক ম্যাচে পুরো সময় খেলতে না পারার ক্ষোভটা মেসি ভালোভাবেই প্রকাশ করলেন। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় কোচের হ্যান্ডশেকও প্রত্যাখ্যান করলেন এই ছয়বারের ব্যালন ডি'অর জয়ী। 

ফরাসি রাজধানীতে এসে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় নিচ্ছেন মেসি। তিন ম্যাচ খেলার পর এখনো কোনো গোলের দেখা পাননি এই আর্জেন্টাইন। আর এদিকে মেসি থাকা সত্ত্বেও পেনাল্টির দায়িত্বে বহাল আছেন নেইমারই।

১৫ মিনিট আগে বদলি হওয়ায় মেসির হতাশাটা তাই কিছুটা আঁচ করা যায়। এই ৩৪ বছর বয়সী ভালোভাবেই জানেন, তার হাতে সময় তেমন বেশি নেই। পিএসজিতে পা রেখেছিলেন মাঠের খেলায় সরাসরি প্রভাব ফেলবেন সে পরিকল্পনা নিয়েই, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে তিন ম্যাচে চার গোল দিয়ে যেমনটা করতে পারছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। 

মেসিকে বসিয়ে দেওয়ার জন্য কোচকে চাকরিচ্যুত করার কোনো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এই মৌসুমে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হবেন পচেত্তিনো তার একটি ভালো ইঙ্গিত এই ঘটনা।  

এই মৌসুমে মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে- বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় ইগোধারী খেলোয়াড়দের তিনজনকে সামলাতে হবে পচেত্তিনোকে। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে, পচেত্তিনোর শৈলী কিন্তু এটা নয়।

সাউদাম্পটনে যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন এই আর্জেন্টাইন কোচ, টটেনহাম হটস্পারেও সে পদ্ধতিই চালিয়ে নিয়ে গেছেন। 

উভয় ক্লাবেই নিজের অবয়বে দল তৈরি করেছেন তিনি এবং এতে সফলও হয়েছেন। পূর্বে কখনোই সুপারস্টারে ভরা রেডিমেড একটি দল তুলে দেওয়া হয়নি তার হাতে। 

তিনি যখন স্পার্সে যোগ দিয়েছেন, হ্যারি কেইন এবং হিউয়েঙ-মিন সন তখনো তারকা হয়ে উঠেননি। কিন্তু এরপরও এই লন্ডনের দলটিকে ধীরে ধীরে উন্নত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। পচেত্তিনোর সময়ে কেনা স্পার্সের সবচেয়ে দামী ফুটবলার হচ্ছেন টঙ্গি এনডম্বেলে (৬ কোটি পাউন্ড), যাকে তেমন ব্যবহারই করতে পারেননি এই আর্জেন্টাইন।  

সোজা কথায়, আগে কখনো খেলোয়াড়দের ইগো নিয়ে মাথা ঘামাতেই হয়নি পচেত্তিনোর। 

চলুন এবার রোনালদোর ক্যারিয়ারে যেসব ম্যানেজার এসেছে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখা যাক। এই পর্তুগিজ তার ইগোর জন্যই সুপরিচিত। যে কোচের অধীনে তিনি খেলছেন সেই কোচ তাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে সেটিকে তিনি কখনোই ভালোভাবে নেন না। 

যেসব কোচ ম্যান ম্যানেজ করতে, অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে খেলোয়াড়দের দেখভাল করায় পটু, তাদের অধীনে ভালো করেন রোনালদো। যে কারণে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন, জিনেদিন জিদান এবং কার্লো আনচেলত্তির অধীনে সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি, এবং ওলে গুনার সুলশারের অধীনেও হয়তো করবেন। 

এসব কোচের সঙ্গে তুলনা করুন জোসে মরিনহো, রাফা বেনিতেজ, কার্লোস কুইরোজ বা মারিজিও সারির, যাদের সবার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ ছিল রোনালদোর, এবং শেষ পর্যন্ত এদের সবাই বরখাস্ত হয়েছেন অথবা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এরকম বড় ইগোকে সায় দেওয়া উচিত, চ্যালেঞ্জ করা বা উস্কানি দেওয়া উচিত না। 

এর মানে এই নয় যে পচেত্তিনো মেসি, বা নেইমার, এমবাপ্পে, ডি মারিয়া, সার্জিও রামোসের মতো বড় ইগোগুলোকে উস্কে দেবেন বা চ্যালেঞ্জ জানাবেন। তবে এরকম খেলোয়াড়রা সাধারণত পক্ষপাতমূলক আচরণ প্রত্যাশা করেন। প্রত্যাশা করেন যে কোচ তাদের জন্য আলাদা পরিকল্পনা রাখবেন, বাকি খেলোয়াড়দের চেয়ে তাদেরকে আলাদা চোখে দেখবেন। 

কারণ, সত্য হচ্ছে, তারা আসলেই আলাদা। 

রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক সহকারী কোচ পল ক্লিমেন্ট ব্যাখ্যা করেছিলেন কীভাবে রোনালদোর সঙ্গে কথা বলার পর আনচেলত্তি তার পরিকল্পনার খাতা পুরোপুরি ছিঁড়ে ফেলেন, এবং পর্তুগিজ সুপারস্টার নিজেকে যেভাবে উপযোগী করে তুলতে চেয়েছেন সে অনুযায়ী কৌশল সাজান।

ক্লিমেন্ট দ্য অ্যাথলেটিককে বলেন, "খেলোয়াড়রা প্রাক-মৌসুমে আসার আগেই দল কেমন হতে পারে তা নিয়ে পেন্সিলে আঁকা শুরু করেছিলেন কার্লো। ক্রিশ্চিয়ানোকে স্ট্রাইকার হিসেবে রাখা হয়েছিল।

"এরপর ক্রিশ্চিয়ানো কার্লোর কাছে এসে বললেন যে তিনি বামদিকে খেলতে চান। সেখান থেকে ভেতরে এসে পাস তৈরি করতে, ক্রস এবং শট মারতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। কার্লো শুধু বললেন, 'আচ্ছা, তোমাকে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে হবে, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়'। এটা বলে তিনি রোনালদো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করেছিলেন।" 

অন্য কোনো ম্যানেজার রোনালদোর এই আবদারে সায় নাও দিতে পারতেন। কে বস, কে খেলোয়াড় এটা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য কটু কথাও বলতে পারতেন।

দিনশেষে, পদাধিকার বলে দলের উপর সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন থাকার কথা তো কোচেরই। 

কিন্তু আনচেলত্তির সেই সাধারণ জ্ঞানটুকু ছিল যে রোনালদোকে খুশি রাখলে সেটা দলের বাকি সবার এবং তার নিজের জন্যও উপকার বয়ে আনবে। এবং হয়েছিলও তাই। আনচেলত্তির কৌশলের জন্যই পরবর্তীতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। 

মেসির ইগো রোনালদোর মতো সুপরিচিত না। দল-বান্ধব খেলোয়াড় হিসেবেই পরিচিত মেসি। কিন্তু তাই বলে এটা ভাববেন না, নিজের রাজত্ব ছেড়ে দিতে চাইবেন এই আর্জেন্টাইন। তিনি যে এখনও বিশ্বের সেরা এবং বার্সেলোনা ছাড়া অন্য কোথায়ও রাজত্ব করতে পারবেন, সেটি প্রমাণের জন্য মরিয়া হয়ে থাকার কথা মেসির।

সুতরাং এই তারকায় ঠাসা স্কোয়াড থেকে, বিশেষ করে মেসির কাছ থেকে সর্বোচ্চটা বের করে আনতে চাইলে পচেত্তিনোকে প্রথমেই বুঝতে হবে যে তার দলের সেরা খেলোয়াড়দের কথা মেনে নেওয়াটা কোনো দুর্বলতার লক্ষণ না। বরং এটি একটি শক্তি, এবং এ থেকে আপনি কেবল উপকৃতই হবেন। 

যদি পচেত্তিনো সেটা বুঝতে না পারেন, তাহলে পিএসজির এমন কাউকে খুঁজতে হবে যিনি পারবেন।

  • সূত্র: ফক্স স্পোর্টস

 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.