হাসারাঙ্গার হাসি ম্লান করে জয়ে ফিরলো বাংলাদেশ

খেলা

টিবিএস রিপোর্ট
23 May, 2021, 06:00 pm
Last modified: 23 May, 2021, 09:48 pm
এই জয়টি স্বস্তিই দেবে তামিম, সাকিব, মুশফিকদের। সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১০ ম্যাচ পর জয়ের মুখ দেখলো বাংলাদেশ। সর্বশেষ ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে জিতছিল বাংলাদেশ।

ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছিলেন ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে দলকে পথ দেখিয়ে যাচ্ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ইসুরু ইদানাকে এক পাশে রেখে বাংলাদেশের বোলারদের রীতিমতো শাসন করে খেলে যাচ্ছিলেন তিনি। তার ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে দিক হারিয়ে ফেলা শ্রীলঙ্কা। কিন্তু হাসারাঙ্গাকে বিদায় করে লঙ্কানদের স্বপ্ন ফিঁকে করে তোলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। 

এরপর জয় তুলে নিতে আর সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের। রোববার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৩৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজ, সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজদের দারুণ বোলিংয়ে ২২৪ রানে শেষ হয় সফরকারীদের ইনিংস। এরআগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ তামিম ইকবাল, ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে ৬ উইকেট ২৫৭ রান তোলে। 

এই জয়টি স্বস্তিই দেবে তামিম, সাকিব, মুশফিকদের। সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১০ ম্যাচ পর জয়ের মুখ দেখলো বাংলাদেশ। সর্বশেষ ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে জিতছিল বাংলাদেশ। এরপর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টেস্ট, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা সফরে শুধু হারই সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। অবশেষে জয়ের স্বাদ, সঙ্গে মিললো সুপার লিগের ১০ পয়েন্টও।  

লঙ্কানদের হারানোর স্বাদ ভুলতে বসেছিল বাংলাদেশ। সেই ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতে দলটি। যদিও এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খুব বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি বাংলাদেশের। শেষ তিন বছরে লঙ্কানদের বিপক্ষে ৩টি ওয়ানডে খেলে সবকটিতেই হারে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দুবাইতে এশিয়াকে লঙ্কানদের বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ। ঘরের মাঠেও তাদের বিপক্ষে সর্বশেষ জয় ২০১৮ সালে। জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। 

রোববার টসে জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো না হলেও দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তামিম। এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি লিটন দাস। সাকিব আল হাসানও ইনিংস বড় করতে পারেননি। উইকেটে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ অলরাউন্ডার ৩৪ বলে ২টি চারে ১৫ রান করে আউট হন। 

তামিম ৭০ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৫২ রানের ইনিংস খেলেন। এটা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫১তম হাফ সেঞ্চুরি। এই ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (তিন ফরম্যাট মিলিয়ে) ১৪ হাজার রান পূরণ করেন তামিম। বাঁহাতি এই ওপেনারের আন্তর্জাতিক রান ১৪ হাজার ৫০ রান।

তামিমের ফেরার পরের বলেই আউট হন মোহাম্মদ মিঠুন। এরপর জুটি গড়ে তোলেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই দুই ব্যাটসম্যান যোগ করেন ১০৯ রান। মুশফিক ৮৭ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৮৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন। ওয়ানডেতে এটা তার ৪০তম হাফ সেঞ্চুরি। 

মাহমুদউল্লাহ ৭৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৪ রান করে আউট হন। আফিফ ২৭ ও সাইফউদ্দিন ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। লঙ্কান স্পিনার ধনঞ্জয়া ডি সিলভা সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। দুশমন্থ চামিরা, দানুশকা গুনাথিলাকা ও লক্ষণ সান্দাকান একটি করে উইকেট নেন।

জবাবে ৪১ রানের মধ্যেই দানুশকা গুনাথিলাকা ও পাথুম নিসাঙ্কাকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ ও সাইফউদ্দিন। চাপ সামলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন অধিনায়ক কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। এই জুটি ভাঙেন সাকিব, তার শিকার মেন্ডিস। এরপর শুরু হয় মিরাজের স্পিন ঘূর্ণি। ৮ রানের মধ্যে ৩০ রান করা কুশল পেরেরাসহ ৩টি উইকেট তুলে নেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। 

১০২ রানেই ৬ উইকেটে হারানো দলকে পথ দেখাতে শুরু করেন হাসারাঙ্গা। উদানার সঙ্গে ৬২ রানের জুটি গড়ে তোলেন তিনি। তার ব্যাটে জয়ের পথে এগোতে থাকে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সাইফউদ্দিন বাধায় থামতে হয় তাকে। এরআগে ৬০ বলে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৭৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই অলরাউন্ডার। মিরাজ ৩০ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন। এ ছাড়া মুস্তাফিজ ৩টি, সাইফউদ্দিন ২টি ও সাকিব একটি উইকেট পান।  

কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে এক হাজারি ক্লাবে সাকিব

দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর ইনিংস সামলে নিয়েছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। এই দুই ব্যাটসম্যান দলকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ে জুটিটা দীর্ঘ করা হলো না তাদের। কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে এই জুটি ভেঙেছেন সাকিব। ২৪ রান করে বিদায় নেন মেন্ডিস। 

কুশল মেন্ডিসের উইকেটটি নিয়ে একটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন সাকিব। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে সব ধরনের ক্রিকেটে ১ হাজার উইকেট (৩১০ প্রথম শ্রেণি, ৩২৮ লিস্ট 'এ' ও ৩৬২টি টি-টোয়েন্টি উইকেট) পূর্ণ হয়েছে বাঁহাতি এই স্পিনারের। তার আগে কেবল আব্দুর রাজ্জাক এই কীর্তি গড়েছেন।

ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে এক পাশ আগলে রেখে ব্যাটিং করে যাচ্ছেন কুশল পেরেরা। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ২০ ওভার শেষে ৩ উইকেটে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৮৭ রান। 

মিরাজের পর মুস্তাফিজের আঘাত

সিরিজের প্রথম ওয়ানেডেতে আগে ব্যাটিং করে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। জয়ের পথে থাকতে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিকল্প নেই তামিম ইকবালের দলের সামনে। এ পথে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমানরা। সাবলীল শুরু করেও এই দুই বোলারের বোলিংয়ে বিপদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।

পঞ্চম ওভারের শেষ বলে লঙ্কান ওপেনার দানুশকা গুনালিথকাকে ফেরান মিরাজ। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে গুনাথিলাকাকে থামান ডানহাতি এই অফ স্পিনার। দুই ওভার পরে আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি এই পেসারের শিকার পাথুম নিসাঙ্কা। 

২৫৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দ্রুতই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। ৯ ওভার শেষে ২ উইকেটে সফরকারীদের সংগ্রহ ৪৪ রান। উইকেটে আছেন অধিনায়ক কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.