ছুটি পেয়ে বাঁধনহারা তাসকিন-মাহেদীরা
সফরে গিয়ে ঘরবন্দি অবস্থা; এমন অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। করোনাকাল হওয়ায় কঠিন অবস্থা মেনে নিয়েই নিউজিল্যান্ডে ১৪ দিন পার করতে হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। অবশেষে বন্দি দশা শেষ হয়েছে। কোয়ারেন্টিন শেষে কুইন্সটাউনে দুদিনের অনুশীলনের পর শনিবার ছুটি পেয়েছিলেন ক্রিকেটাররা।
ছুটি পেয়ে ক্রিকেটাররা যেন বাঁধনহারা হয়ে উঠলেন। কুইন্সটাউনের নৈস্বর্গীক সৌন্দর্য দিনভর উপভোগ করলেন তামিম, মুশফিক, তাসকিন, মাহেদী, নাঈমরা। টিম ম্যানেজম্যান্টের তত্ত্বাবধানে ক্রিকেটারদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কুইন্সটাউনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। কেবল দর্শনীয় স্থান দেখাই নয়, রোমাঞ্চকর কিছু অভিজ্ঞতারও স্বাক্ষী হয়েছেন ক্রিকেটাররা।
রোমাঞ্চকর সব খেলা-রাইডের জন্য নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডসের কুইন্সটাউন বেশ পরিচিত। বাঞ্জি জাম্পিং, হোয়াইট ওয়াটার রাফটিং, জেট বোটিং, হাইকিং, স্কিইং, স্কাই ডাইভিং, স্নো বোর্ডিংয়ের জন্য পর্যটকরা এখানে ছুটে যান। বাংলাদেশের কয়েকজন ক্রিকেটারও জেট বোটিং, বাঞ্জি জাম্পিং করেছেন।
ছুটির দিনে তাসকিনকে দুঃসাহসিক হয়ে উঠতে দেখা গেল। জাতীয় দলের ডানহাতি এই পেসার জেট বোটিং ছাড়াও বাঞ্জি জাম্পিংয়ে অংশ নেন। পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাসকিন যেন মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে উঠতে চাইলেন। পায়ে-কোঁমড়ে দড়ি বেঁধে উল্টো হয়ে পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ার এই দুঃসাহস অবশ্য বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটার দেখাননি।
জেট বোটিংয়ে তাসকিনের সঙ্গে ছিলেন মাহেদী হাসান, নাঈম শেখ ও টিম ম্যানেজমেন্টের কয়েকজন সদস্য। অন্য একটি বোটে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, আফিফ হোসেন, রুবেল হোসেন, সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনরা।
বাঞ্জি জাম্পিংয়ের মতো জেট বোটিংও রোমাঞ্চকর। শটওভার বোটে দুই পাহাড়ের মাঝের আঁকাবাঁকা নদীপথে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলতে হয়। রোমাঞ্চকর এসব অভিজ্ঞতা নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত তাসকিন। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'অসাধারণ কিছু সময় কাটালাম। অবিশ্বাস্য অনুভূতি। জেট বোটিংয়ে ভয় না লাগলেও বাঞ্জি জাম্পিংয়ে ভয় পেয়েছি। তারপরও দারুণ অনুভূতি। সব সময় সময় এমন সুযোগ হয় না। ছুটির দিনটা দারুণ কাটলো।'
১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের পর এমন একটি দিন যেন তানকিনদের পুরো 'চার্চড আপ' করে দিয়েছে। তাসকিন বলেন, '১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন একটা ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা ছিল। সেটা শেষ করার পর ইতোমধ্যে আমরা দুইদিন অনুশীলন করেছি। আজ আমাদের অফ ডে ছিল। দলের সবাই আমরা কিছু মজার কর্মকাণ্ড করলাম। খুব ভাল লাগছে এবং আশা করি সামনেও অনেক ভালোই যাবে।'
কুইন্সটাউনের আবহাওয়ার দারুণ লাগছে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাঈম শেখের কাছে। তিনি বলেন, 'আমরা কোয়ারেন্টিনে থাকতেও অনুশীলন করেছি। ওখানের উইকেটের চেয়ে এখানে উইকেট অনেক স্বাচ্ছন্দ্যের। আমার কাছে অনেক সহজ মনে হয়েছে। আর আমি এখানে অনুশীলন উপভোগ করার চেষ্টা করছি। এখানে আমি আগেও এসেছি, এখানকার পরিস্থিতি ও আবহাওয়া আমার কাছে অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ। আমি বেশ উপভোগ করছি।'
কুইন্সটাউনের নৈস্বর্গীক সৌন্দর্যর মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল, লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্তরা। নিজেদের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে সৌম্য লিখেছেন, 'সবার সঙ্গে মজার দিন কাটলো। বলতেই হবে, কুইন্সটাউন খুবই সুন্দর জায়গা।'
১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের পর এমন একটি দিন দলের সবাইকে চাঙ্গা করবে বলে মনে করেন নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলের অভিভাবকের ভূমিকায় থাকা জালাল ইউনুস। বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, 'ছেলেরা সবাই আজ নিজের মতো করে সময় কাটিয়েছে। সবাই খুব খুশি। আজকের দিনটির ইতিবাচক প্রভাব সামনে পড়বে। এখানে প্রকৃতি এতোটা সুন্দর, সব কিছুই ভালো লাগে।'
রোববার থেকে আবারও অনুশীলন করবে বাংলাদেশ। ২০ মার্চ ডানেডিনে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে শুরু হবে সিরিজ। ২৩ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে। এই ম্যাচটি হবে দিবা-রাত্রির। ২৬ মার্চ ওয়েলিংটনে শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে দুই দল। ম্যাচ তিনটি ২৮, ৩০ মার্চ ও ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে।