কারস্টেনের ক্লাস থেকে যা শিখলেন ক্রিকেটাররা

খেলা

শান্ত মাহমুদ
05 August, 2020, 09:00 pm
Last modified: 05 August, 2020, 09:24 pm
গত কয়েক মাসে অনলাইনে ৭-৮টি সভায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সেটারই ধারাবাহিকতায় বুধবার একটি সভা ছিল। সাধারণ সভা হলেও একজন মানুষের উপস্থিতিতে এটা হয়ে ওঠে বিশেষ।

করোনাভাইরাসের কারণে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে অনলাইনেই সভা করতে হচ্ছে বিসিবিকে। গত কয়েক মাসে অনলাইনে ৭-৮টি সভায় অংশ নিয়েছেন ক্রিকেটাররা। সেটারই ধারাবাহিকতায় বুধবার একটি সভা ছিল। সাধারণ সভা হলেও একজন মানুষের উপস্থিতিতে এটা হয়ে ওঠে বিশেষ। এই সভায় যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বজয়ী কোচ গ্যারি কারস্টেন। 

স্বদেশী রাসেল ডমিঙ্গোর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল আড্ডায় মেতেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানো দক্ষিণ আফ্রিকান এই কোচ। সভা হলেও আড্ডার ছলেই নিজের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ক্রিকেটার, কোচদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন কারস্টেন। 

দল হিসেবে উন্নতি করতে ঠিক কোন জায়গাটায় বেশি জোর দিতে হবে, সেই পরামর্শ দিয়েছেন কারস্টেন। কারস্টেনের কাছ থেকে পরামর্শ-উপদেশ নেওয়ারও সুযোগ ছিল তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের। অনেকেই প্রশ্ন রেখেছিলেন বিশ্বজয়ী এই কোচের কাছে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

কারস্টেনের সঙ্গে কেমন ছিল সভা? এটা জানতে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। এসব ক্রিকেটারের ভাষ্যমতে, টিম স্পিরিটের প্রতি বেশি জোর দিয়েছেন কারস্টেন। এ ছাড়া নতুনকে গ্রহণ করার মানসিকতা ও সব সময় ইতিবাচক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শচিন, ধোনি, কোহলিদের সাবেক এই কোচের অভিজ্ঞতা, তার পরামর্শ ভবিষ্যতে কাজে দেবে বলে বিশ্বাস সভায় অংশ নেওয়া ক্রিকেটারদের।  

রুবেল হোসেন (ডানহাতি পেসার): জাতীয় দলের বাইরে যারা আমরা পুলের ভেতরে আছি, তাদের সঙ্গে কথা হয়, কাজ করা হয়। প্রধান কোচ ডমিঙ্গোর আগের একটা সেশনেও ছিলাম। এবার কারস্টেন যোগ দিয়েছেন। তার মতো কিংবদন্তি কোচ এসে কথা বলেছেন, এটা অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। ক্রিকেট বিষয়টাই এ রকম যে, অভিজ্ঞতাগুলো শুনলেও আপনার দিন দিন উন্নতি হবে। এই সেশনগুলো এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

এনামুল হক বিজয় (ডানহাতি ব্যাটসম্যান): গ্যারি কারস্টেন আজ আমাদের সাথে মিটিংয়ে যোগ দিয়েছিলেন। নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি ভারতের বিশ্বকাপজয়ী কোচ। তার অভিজ্ঞতা অনেক। তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। তার কথায় এমন অনেক কিছু ছিলো, যা আমাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। দলের সিনিয়র সদস্যরা তাকে নানা রকম প্রশ্ন করেছেন। গ্যারি অনেক গুছিয়ে উত্তর দিয়েছেন।

এর মধ্যে খুব বেসিক এবং একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটা ছিলো, তা হলো চ্যাম্পিয়ন দল হতে হলে টিম স্পিরিটের কোনো বিকল্প নেই। টিম মানে শুধু খেলার মাঠের একটা দল নয়, বরং একটা পরিবার। যেখানে সবার দায়িত্বই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আমাদের এটা বুঝিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, টিমের প্রতিটি সদস্যের লক্ষ্য এক থাকতে হবে। চেষ্টা এক রকম হতে হবে। টিম মানে কেবল খেলোয়াড়রা নন, টিম মানে কোচিং স্টাফের সদস্য বা দলের অন্যান্য দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাও।

নাজমুল হোসেন শান্ত (বাঁহাতি ব্যাটসম্যান): আজকের সভাটা বেশ ভালো ছিল। উনি তো অনেক অভিজ্ঞ। বড় দল, বড় ক্রিকেটারের সঙ্গে কাজ করেছেন। ভারতকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। তো ২০১১ বিশ্বকাপের পুরো সফরের অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তিনি। তার কাছ থেকে পরামর্শ বা উপদেশ নেওয়ার সুযোগ ছিল। অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। আমি প্রশ্ন করিনি। আমার যে প্রশ্ন ছিল অন্যরা করে দেওয়ায় আর করিনি। তার পরামর্শ, অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে আমাদের কাজে দেবে বলে আমার বিশ্বাস। 

আবু জায়েদ রাহি (ডানহাতি পেসার): উনি অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১১ বিশ্বকাপ সম্পর্কে আমরা প্রশ্ন করেছিলাম যে, বিশ্বকাপে উনি কী কী করেছেন, কীভাবে বিশ্বকাপ জিতলেন কিংবা টিম স্পিরিট কেমন থাকা উচিত। এসবই মূলত উনি আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। 

উনি টিম স্পিরিট নিয়ে কথা বলেছেন। বেশি জোর দিয়েছেন ফিটনেস নিয়ে। পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করার কথা বলেছেন। পেসারদের মানসিকতা আরও দৃঢ় করার কথা বলেছেন। ক্যারিয়ারে অনেক কিছুই হবে, কিন্তু কোনো কিছুতেই হতাশ হওয়া যাবে না। 

বড় কিছু হতে হলে, বড় কিছু করতে হলে, বড় মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এখন খেলা নেই, আপাতত আমরা ফিটনেসসহ মানসিক দিক থেকে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। কারস্টেনের শেয়ার করা অভিজ্ঞতা কাজে দেবে আমাদের। তিনি বিশ্বাস বা আত্মবিশ্বাস রাখতে বলেছেন, কোনো সময়ই এটা হারানো যাবে না। স্বাভাবিক কথা হলেও হয়তো এটাই কারও মনে গেঁথে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে কাজে দেবে। 

নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান): উনি আমাদের সঙ্গে অনেক কিছু শেয়ার করেছেন। ২০১১ সালে উনি ভারতের সঙ্গে ছিলেন। ওই মুহূর্তগুলো কেমন ছিল, সেসব আমাদের জানালেন। ধোনি-কোহলিরা কীভাবে প্রস্তুতি নেন, সেসবও জানালেন। দ্রাবিড় বা শচিনের সঙ্গে উনি যখন কাজ করেছেন, উনি পশ্ন করেছেন তাদের কী পরিকল্পনা। এরপর উনি পরিকল্পনা সাজাতেন। 

দেশের বাইরে আমরা অন্যরকম পরিবেশ পাই। দেশের বাইরের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতেন, এসব নিয়ে প্রশ্ন করেছি আমরা। রিয়াদ ভাই প্রশ্ন করেছিলেন টিম স্পিরিটির জায়গা থেকে কীভাবে উন্নতি করা যায়। এটার উত্তরে বলেছেন, উনি যখন ভারতের দায়িত্ব নেন, তখন হয়তো ৬-৭ জন অনুশীলন করেছেন। কিন্তু সিনিয়ররা ওয়ার্ম করেননি বা নিজেদের মতো করে নিয়েছেন। কিন্তু উনি সবার জন্য এক ধরনের অনুশীলন নিশ্চিত করেছেন। মূলত এসব নিয়েই কথা হয়েছে। 

নাঈম হাসান (ডানহাতি স্পিনার): খুবই কাজের একটা সভা ছিল। অনেক অভিজ্ঞ উনি। অনেক বড় বড় খেলোয়াড়ের সঙ্গে উনি কাজ করেছেন। কীভাবে কাজ করেছেন, কোন দিকে জোর দিয়েছেন এসব আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। আমাদের উন্নতিতে কী করতে হবে, সেসব নিয়েও কথা বলেছেন। বড় ভাইয়েরা প্রশ্ন করেছেন। উনি যে উত্তর দিয়েছেন, সেসব ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারলে যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য ভালো হবে।

হাসান মাহমুদ (ডানহাতি পেসার): সভাটা ভালোই ছিল। অনেক ইতিবাচক আলোচনা শুনলাম। উনি তো অনেক বড় কোচ। অভিজ্ঞতায় অনেকের চেয়ে এগিয়ে। উনার অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। উনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কী করলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের আরও উন্নতি হবে, বিদেশের মাটিতে আরও ভালো করা যাবে কীভাবে। 

টিম স্পিরিট বা ক্রিকেটারদের ঠিক কোথায় জোর দিতে হবে, এসব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সিনিয়ররা প্রশ্ন করেছেন। আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি। উনি বলেছেন, যে অবস্থাই আসুক, ইতিবাচক থাকতে হবে। নতুনকে গ্রহণ করার মানসিকতা রাখতে বলেছেন। সব সময় আরও বেশি সাহসী ও শক্তিশালী থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.