আরেকটি হারে শেষ সব আশা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার লিগে টানা তিন হারের পরও বাংলাদেশের সেমি-ফাইনালে ওঠার সমীকরণ মেলানো হচ্ছিল। বাকি থাকা দুই ম্যাচে জিতে অন্য ম্যাচের ফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলকে। কিন্তু এই হিসাব এখন হাস্যকর মনে হতে পারে। যে দলটিকে নিয়ে এতো হিসাব-নিকাষ, ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লেখার প্রতিক্ষা; তারাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চরম হতাশার ব্যাটিং করে মেনে নিল আরেকটি হার।
মঙ্গলবার আবু ধাবিতে সুপার লিগে এক নম্বর গ্রুপের ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের। টানা চার ম্যাচে হার মানা বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটি এখন নিতান্তই নিয়ম রক্ষার। আগামী ৪ নভেম্বর দুবাইতে অজিদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি খেলবেন মাহমুদউল্লাহ-লিটনরা।
অন্যদিকে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেই চলেছে। পরের তিন ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে প্রোটিয়ারা। চার ম্যাচের তিনটি জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এক নম্বর গ্রুপের দুই নম্বর দল এখন টেম্বা বাভুমার দল। সুপার লিগের শেষ ম্যাচে ৬ নভেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেই সেমি-ফাইনালের টিকেট মিলে যেতে পারে তাদের। আবার তিন জয় নিয়েও শেষ চারে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। কাগিসো রাবাদা, আনরিক নরকিয়া, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, তাবরাইজ শামসিদের বোলিংয়ের সামনে আর ইনিংস গুছিয়ে তোলা হয়নি বাংলাদেশের। অচেনা ব্যাটিংয়ে ১৮.২ ওভারে ৮৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে বল হাতে তাসকিন আহমেদ, শেখ মেহেদিরা প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিলেও তা যথেষ্ট হয়নি। ১৩.২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় প্রোটিয়ারা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। দারুণ এক ডেলিভারিতে প্রোটিয়া ওপেনার রিজা হেনড্রিকসকে ফিরিয়ে দেন তিনি। শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন কুইন্টন ডি কক ও রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। পঞ্চম ওভারে ১৬ রান করা ডি কককে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন ডানহাতি স্পিনার শেখ মেহেদি।
কিছুক্ষণ পরই প্রোটিয়াদের চাপ বাড়ান দারুণ বোলিং করেন তাসকিন আহমেদ। এবার তার শিকার এই ডেন মার্করাম। এরপর আর বিপদে পড়তে হয়নি প্রোটিয়াদের। ভ্যান ডার ডুসেন ও অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ৪৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের একেবারে কাছে পৌঁছে দেন। এ সময় আউট হন ২২ রান করা ডার ডুসেন।
ডেভিড মিলারকে সঙ্গে নিয়ে জয় তুলে নেওয়ার কাজটি সারেন ২৮ বলে ৩টি চারও একটি ছক্কায় ৩১ রানে অপরাতি থাকা বাভুমা। মিলার ২ বলে একটি চারে ৫ রানে অপরাজিত থাকেন। হতাশার ম্যাচেও আলো ছড়ান তাসকিন আহমেদ। অসাধারণ বোলিংয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন ডানহাতি এই পেসার। এ ছাড়া শেখ মেহেদি ও নাসুম আহমেদ একটি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হতাশার বৃত্তে বন্দি ছিল। কেবলই আসা-যাওয়ার মিছিল চলেছে। দুঃসময়ে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়, সেটা দেখিয়েছেন কেবল স্পিনার শেখ মেহেদি ও লিটন কুমার দাস। ২৫ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ২৭ রান করেন মেহেদি। লিটন ৩৬ বলে একটি চারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন।
বাকিরা উইকেটে গেছেন আর ফিরেছেন। নাঈম শেখ ৯, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩, বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা শামীম হোসেন পাটোয়ারী ১১ ও তাসকিন আহমেদ ৩ রান করেন। শূন্য রানে সাজঘরে ফেলেন পাঁচজন ব্যাটসম্যান। তারা হলেন সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন ধ্রুব, নাসুম আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। ম্যাচসেরা রাবাদা ও নরকিয়া ৩টি করে উইকেট নেন। এ ছাড়া শামসি ২টি ও প্রিটোরিয়াস একটি উইকেট পান।