‘রক্তে আঁকা ভোর’: বাঙালির শ্রেষ্ঠ সময়ের সবচেয়ে সুবিন্যস্ত আখ্যান

ইজেল

09 March, 2022, 08:15 pm
Last modified: 09 March, 2022, 08:15 pm
ইতিহাসকে গল্পাকারে পরিবেশনের ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এটি যে কী ভয়ানক দুঃসাহসিক তথা দুঃসাধ্য কাজ, সে একমাত্র লেখকই ভালো জানেন। আনিসুল হক এমন দুঃসাধ্যকে সাধন করেছেন। একবার নয়, ছয়বার। 

৫৮৪ পৃষ্ঠায় '৭১-এর উত্তাল সময়কে এর আগে কেউ সিনেম্যাটিক আঙ্গিকে এত সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন বলে আমার মনে হয় না। ইতিহাসকে গল্পাকারে পরিবেশনের ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এটি যে কী ভয়ানক দুঃসাহসিক তথা দুঃসাধ্য কাজ, সে একমাত্র লেখকই ভালো জানেন। আনিসুল হক এমন দুঃসাধ্যকে সাধন করেছেন। একবার নয়, ছয়বার। 

'যারা ভোর এনেছিল' উপন্যাসধারায় এ পর্যন্ত ছয়টি বই বের করেছেন লেখক। 'যারা ভোর এনেছিল', 'উষার দুয়ারে', 'আলো-আঁধারের যাত্রী', 'এই পথে আলো জ্বেলে', 'এখানে থেমো না'; এ সিরিজের সর্বশেষ বই 'রক্তে আঁকা ভোর'। বঙ্গবন্ধুর জন্মকাল থেকে প্রথম উপন্যাসের পটভূমি রচিত হয়েছে। 

কাহিনি এগিয়েছে বঙ্গবন্ধু ও দেশমাতৃকার স্বাধীনতাকে কেন্দ্র করে। 'রক্তে আঁকা ভোর' শুরু হয়েছে '৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের ঘটনাগুলো চিত্রিত করার মধ্য দিয়ে। উপন্যাসটির সমাপ্তি ঘটেছে '৭২-এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটির কাহিনি বর্ণনা করে।

'রক্তে আঁকা ভোর'-এ আনিসুল হক শুধু ঐতিহাসিক কাহিনি বর্ণনা করে গেছেন, কথাটি এভাবে বললে ভুল হবে। নীরস ইতিহাসও অনেক সময় অলংকারাশ্রয়ী সাহিত্যের ছোঁয়ায় সরস ও মাধুর্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। আর '৭১ অবশ্যই কোনো বাঙালির কাছে নীরস বা অগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়। তবুও যারা কাঠখোট্টা ইতিহাস পড়তে আগ্রহ পান না, তাদের জন্য আনিসুল হকের এই বই বা সিরিজ নিঃসন্দেহে অবশ্যপাঠ্য।

কী নেই বইটিতে! কারা নেই বইটিতে! অসংখ্য চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়েছেন লেখক। তাঁদের মধ্যে অবশ্যই বঙ্গবন্ধু প্রধান চরিত্র। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রত্যেক সদস্য, প্রতিবেশী, গৃহপরিচারিকা, চার নেতা, আওয়ামী লীগের নেতারা, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠদের কয়েকজন, পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা, সামরিক শাসক ও তার স্টাফরা, ইন্দিরা গান্ধী, ভারতীয় সেনা ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সেই সদস্যরা, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও তার উপদেষ্টারা, চীন ও অন্য কয়েকটি আন্তর্জাতিক মহলের নীতিনির্ধারকেরা, বাঙালি সামরিক কর্মকর্তারা, মাঠপর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধা, মহতী বীরাঙ্গনারাসহ সমাজের প্রতিটি মানুষকে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। 

ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার একটি সমস্যা হলো কাহিনি ও চরিত্র নির্মাণে লেখকের পুরোপুরি স্বাধীনতা থাকে না। ফলে বিষয় বা প্রেক্ষাপটটি অনেক সময় রসহীনই থেকে যায়। আনিসুল হকেরও পুরোপুরি স্বাধীনতা ছিল না। তবুও তিনি প্রত্যেকটা চরিত্র খুব সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব বুঝে তারপর তার মুখে সংলাপ আরোপ করেছেন। ডায়লগ পড়লেই বোঝা যায় কার কতটুকু প্রজ্ঞা আর কতটুকু হীনতা। 

আরেকটি বিষয় এখানে লক্ষ করার মতো। রূপকথার ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমীকে লেখক উপন্যাসের দ্বিতীয় অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন। ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমী ত্রিকালদর্শী পাখি। তারা আগের উপন্যাসগুলোতেও ছিল। তাদের বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বটগাছে। ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমীর কথোপকথনের ভেতর দিয়ে লেখক অনেক ঐতিহাসিক তথ্য প্রকাশ করেছেন। এদের উপস্থিতি উপন্যাসকে সিনেম্যাটিক রূপ দান করেছে। পর্দার আড়ালের ইতিহাস যেগুলো সাধারণ মানুষ সে সময় জানতে পারেনি, সেগুলো জেনেছিল ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমী। এ ধরনের চরিত্রের অবতারণা লেখকের দক্ষতা ও রসবোধের প্রমাণ।  

১২৭টি অধ্যায়ে রচিত হয়েছে 'রক্তে আঁকা ভোর'। আজকালকার দিনের উপন্যাসের তুলনায় এটি একটি মহাকায় উপন্যাস। ১২৭টি অধ্যায় রচনা ও সন্নিবেশনের ক্ষেত্রে লেখক পুরোপুরি ক্রনোলজি বা পারম্পর্য মেনটেন করেছেন। এটিও, প্রশংসার দাবিদার। 

নবরসের সবগুলো রসেরই সমাহার ঘটেছে 'রক্তে আঁকা ভোর'-এ। করুণ রসের কথা যেমন এসেছে, সূক্ষ্ম হাস্যরসও বাদ যায়নি। ব্যঙ্গমার জবানিতে টিক্কা খানকে ২৫ মার্চে শেখ মুজিবের গ্রেপ্তারির খবর দিচ্ছেন লে. কর্নেল জেড এ খান। ব্যঙ্গমার জবানিতে—

'জেড এ খান বুট ঠুইকা স্যালুট মারলেন। মনে মনে কইলেন, আমি হালায় গোলাগুলির মধ্যে অ্যাকশন কইরা আইলাম, আর আপনে আরাম কইরা চেয়ারে বইসা গুনগুন কইরা গান গাইতেছেন। দেই আপনের শান্তি নষ্ট কইরা।

'টিক্কা খান জিগায়, শেখ মুজিবরে অ্যারেস্ট করছ?

'আমি তো ঠিক শিওর না। একটা লোকরে আনছি। দেখতে মজিবরের মতন। কিন্তু মজিবরই কিনা কেমনে কই? বাঙালিরা বিচ্ছু জাত, মজিবরের মতো দেখতে বসায়া রাইখা মজিবররে সরায়া রাখতে পারে।

'টিক্কা খান সিট থাইকা ছিটকায়া পড়ল।' 

টুকরো-টুকরো ইতিহাসকে মন্থন করে তারপর জুড়ে দিয়ে এই বৃহদায়তন উপন্যাস লিখেছেন আনিসুল হক। সে কৈফিয়ত তিনি শুরুর দিকেই দিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে মৌখিক ইতিহাস বা ওরাল হিস্ট্রিকে কেন্দ্র করে প্লট নির্মাণ করেছেন। সে কারণে ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি উপেক্ষিত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে রেণু হিসেবে উল্লেখ করেছেন লেখক। রেণুর ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা কী সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। 

চার নেতা বিশেষ করে তাজউদ্দীন আহমেদ কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে জড়ালেন, তার নাটকীয় বর্ণনা তুলে ধরেছেন লেখক। তাদের পরিবারের সদস্যদের তখনকার বলা না-বলা কথাগুলো এইখানে বলা হয়েছে। লেখক নিশ্চয়ই সেই জায়গাগুলোয় নিজেকে হাজারবার দাঁড় করিয়েছেন। পাশাপাশি শিশুমনে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীকায়ন উপন্যাসটিকে আলাদা একটি মাত্রা দান করেছে।

'রক্তে আঁকা ভোর'কে কেউ একটি আন্তর্জাতিক উপন্যাসের তকমা দিলে অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভারত-পাকিস্তানের '৭১ সালের যুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষের অবস্থানকে নাটকীয় ঢঙে আনিসুল হক উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব উপন্যাসটি পড়লে যথাযথাভাবে বোঝা যাবে। পর্দার আড়ালের হিসাবনিকাশ বা টেবিলে যে কাটাকুটির খেলা চলেছে চরিত্র অনুযায়ী, যথাযথভাবে সেটি লেখক ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। 

হেনরি কিসিঞ্জার ও নিক্সনের বার্তালাপ, মিসেস গান্ধীর নিক্সন কর্তৃক অপমানিত হওয়া, চৌধুরী চরণ সিংয়ের ডায়লগগুলো, জাতিসংঘে উত্তেজনা ইত্যাদি নানা বিষয় পাঠককে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধকে দেখতে বিশেষ সহায়তা করবে। 

ইন্দিরা গান্ধী এই উপন্যাসে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তার মমতাময়ী আচরণ এবং তার পেছনের প্রখর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা লেখক কি সূক্ষ্মভাবে তুলে আনতে পেরেছেন। শ্যাম মানেকশ ইন্দিরা গান্ধীকে পরামর্শ দিচ্ছেন নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে জড়াতে। কারণ, তখন চীন সীমান্তে বরফ পড়বে, পাকিস্তানকে চীন সাহায্য করতে পারবে না। আবার চরণ সিং ও মানেকশ পরামর্শ করছেন কীভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করা যায়। ভারতের জটিল রাজনৈতিক অবস্থানকে এত নাটকীয়ভাবে এর আগে কোনো বাঙালি সাহিত্যিক তুলে ধরেননি। 

একই সাথে পাকিস্তানি রাজনৈতিক মহলের কুশীলবদের ঘৃণ্য আচার-আচরণও প্রকাশ পেয়েছে। এক পাকিস্তানি সেনা অফিসার যখন তার অধস্তন সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকদের বলেন যে এই বাঙালি কওমের চেহারা বদলে দিতে হবে। এই কথার মাধ্যমে তিনি যখন তার সেনাসদস্যদের ধর্ষণে উদ্বুদ্ধ করেন, তখন তাদের প্রকৃত স্বরূপটি প্রকাশ পায়। এক দুই লাইনের ইতিহাস পড়ে পুরো পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়। উপন্যাসটিতে ঘটনাগুলোর প্রামাণিক ভিত্তিতে চিত্রায়ন ঘটানো হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চরিত্রগুলো মানসরূপে ফুটে উঠেছে। 

কে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধকে দেখেন এবং কার যুদ্ধে আসার মূল চেতনাটি কোন জায়গায়, সেটিও লেখক তুলে ধরতে সংকোচ বোধ করেননি। লে. কাইয়ুমের সাথে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের সংলাপটি— 

'না স্যার। জমিজমা কিছু নাই স্যার।... বাবা তো দিনমজুর করে খায়।...দেশ স্বাধীন হলে তোমাদের অভাব থাকবিনে। কারও অভাবই থাকবে না। আমিও তো সিপাহি হয়েই গিয়েছি। দেশ স্বাধীন হলে স্যার মানুষ কি আর না খেয়ে কষ্ট পাবি স্যার?'

সূক্ষ্মভাবে আনিসুল হক এ বিষয়গুলোর অবতারণা করে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন যে মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ করে শুরু বা শেষ হয়নি। 

'রক্তে আঁকা ভোর'-এর একটি ডায়লগ আমার খুব ভালো লেগেছে। দেরাদুন সার্কিট হাউসে মাওলানা ভাসানী ও তাঁর তত্ত্বাবধারক ব্রিগেডিয়ার লবরাজের স্ত্রী জয়া লবরাজের কথোপকথনটি—

ভাসানী সকালের নাশতার টেবিলে বললেন, 'স্বাধীনতা সংগ্রাম যত দীর্ঘস্থায়ী হয়, ততই মঙ্গল।'

জয়া বললেন, 'সে কী কথা দাদু। স্বাধীনতা সংগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী হওয়া মানে আরও বেশি মানুষের মৃত্যু, বেশি মানুষ উদ্বাস্তু, বেশি বাড়িঘর পুড়ে যাওয়া, বেশি কষ্ট, বেশি অশ্রু।'

ভাসানী হাসলেন।

'না দাদু, হাসলে চলবে না। বলুন। ব্যাপারটা কী?'

ভাসানী বললেন, 'বেশি যুদ্ধ মানে বেশি কষ্ট। বাংলার প্রত্যেক ঘরে অন্তত একজন মারা যাউক। তাহলে মানুষ বুইঝবে স্বাধীনতার মূল্য। তখন স্বাধীনতা পাইলে সেইটারে মুক্তিতে রূপান্তরিত করতে চেষ্টা করব। তা না হইলে মানুষ সোনা হইব না। না পুড়লে মানুষ খাঁটি হয় না।'

সাধারণত ঐতিহাসিক উপন্যাসের একটি দুর্বল দিক থাকে। সেখানে নিম্নবর্গের মানুষজন বা সাবঅল্টার্ন পিপল উপেক্ষিত হয়। 'রক্তে আঁকা ভোর'-এ এমনটি হয়নি। এ ক্ষেত্রে লেখক প্রধানত ওরাল হিস্ট্রিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের বর্ণনা খুব পরিপাটিভাবে দেওয়া হয়েছে। প্লেন দেখে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া, মিত্রবাহিনীর সাথে মানুষের শুভেচ্ছা বিনিময় ইত্যাদি ছোটখাটো বিষয়গুলোও লেখক বাদ দেননি। 

আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। ভাষায় আঞ্চলিকতা রক্ষা করা। বাংলাদেশি চরিত্রগুলোর মুখে সার্বিকভাবে পূর্ববঙ্গীয় বাংলা ভাষা স্থান পেয়েছে। আঞ্চলিক চরিত্রগুলোতে সেখানকার আঞ্চলিক ভাষা যতটুকু আনা যায় লেখক নিয়ে এসেছেন। ডোম বা লাশবাহকদের ভাষা, পুরান ঢাকার অধিবাসীদের ভাষা, ফরিদপুর বা গোপালগঞ্জ এলাকার মানুষদের ভাষার মতো বাংলা ভাষার সব ডায়ালেক্টকে লেখক সচেতনভাবে রক্ষা করে গেছেন। এটি উপন্যাসের একটি বিশেষ দিক। 

আরেকটি বিষয় বলতে হবে লেখকের নিরপেক্ষতার ব্যাপারটা। এ ধরনের লেখাগুলো প্রায়ই অভিযোগের স্বীকার হয় যে এখানে ঐতিহাসিক তথ্যের সঠিক বা নিরপেক্ষ উপস্থাপন হয়নি। লেখক এ ব্যাপারে প্রথম আলো বন্ধুসভার আড্ডায় একটি কৈফিয়ত দিয়েছেন। আনিসুল হক বলছেন যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সাথে দেখা হওয়ার পরে তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, 'স্যার, আমি এই লেখাটি নির্ভয়ে লেখব নাকি সভয়ে লিখব?' আনিসুজ্জামান তাঁকে নির্ভয়ে লিখতে বলেন। উল্লেখ্য, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান নিজেও এই উপন্যাসের একটি চরিত্র। উপন্যাসটি প্রকৃতই নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে রচিত হয়েছে। 

নতুন পাঠকদের কেউ কেউ বলতে পারেন উপন্যাসটি আকারে অনেক বড়। '৭১ বাঙালির মানসে ছোট কোনো বিষয় নয়। আর বহির্বিশ্বের কথা বললে আরও অনেক কথা বলতে হবে। সে হিসাবে ৫৮৪ পৃষ্ঠা কোনো বিষয়ই নয়। একবার উপন্যাসটি পড়া শুরু করলে কোনো পাঠকই বিরক্ত হবেন না। ইতিহাস ও রাজনৈতিক সাহিত্যপ্রেমীরা সময়জ্ঞান হারাবেন—এ আমি হলফ করে বলতে পারি।

১২৭টি অধ্যায়ে পুরো মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করা আসলে সম্ভব নয়। উপন্যাস জীবনের কথা বলে। পুরো জীবনের সমস্ত ঘটনার কথা কি কোনো উপন্যাস বলতে পারে? সে কি সম্ভব? আনিসুল হক তাঁর সে দীনতার কথা উপন্যাসের শুরুতেই উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, '১৯৭১ সাল এত বড় একটা ব্যাপার যে লক্ষ পৃষ্ঠা লিখলেও এর পরিপূর্ণ অবয়বের একটা রেখাচিত্রও সম্পূর্ণভাবে দাঁড় করানো যাবে না। সাড়ে সাত কোটি মানুষ যদি সাড়ে সাত কোটি গ্রন্থ রচনা করেন, তাহলেও বহু কথা না-বলাই থেকে যাবে। তারপরও বলব, নতুন প্রজন্মের সদস্যরা যদি "রক্তে আঁকা ভোর" পড়েন, তাহলে তাঁরা আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিপুল মহাসমুদ্রের বিশালতা সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করতে পারবেন।' এটিই আসল কথা।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.