ভাষা ও বই নিয়ে তামাশা

ইজেল

21 February, 2022, 09:30 am
Last modified: 21 February, 2022, 12:37 pm
দুটো পত্রিকারই বাজার ভালো। একটার নাম ‘দ্য ট্রুথ’, একটার নাম ‘দ্য নিউজ’। অনুসন্ধিৎসু পাঠক ঠিকই বের করে ফেলেছেন ‘দ্য ট্রুথ’ নামের পত্রিকাটিতে খবর বলে কিছু নেই; আর ‘দ্য নিউজ’ নামের পত্রিকাটি সত্যের ধারেকাছেও নেই।

দুটো ভাষা জানা খুবই জরুরি

ইঁদুর তার গর্তে। বের হতে ইচ্ছ করছে কিন্তু মনে হচ্ছে গর্তের মুখেই বিড়ালটা বসে আছে।

বিড়ালটা সত্যিই বসে আছে কি না, পরীক্ষা করার জন্য ইঁদুর একটু নড়েচড়ে উঠল।

অমনি গর্তের মুখে শব্দ হলো- ঘেউ ঘেউ।

ইঁদুর নিশ্চিত হলো, তাহলে বিড়াল নয়, কুকুরটা বসে আছে। কুকুরের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। বরং মুড ভালো থাকলে কুকুর ইঁদুরদের সাহায্য করে।

নির্ভয়ে ইঁদুর বেরিয়ে আসতেই বিড়ালটা ঝাঁপিয়ে পড়ল। আহার পর্বটা সেরে বিড়াল গোঁফ নাড়তে নাড়তে বলল, দুটো ভাষা জানা খুবই জরুরি।

বিদেশি ভাষা

মা ইুঁদর আর বাচ্চা ইঁদুর সান্ধ্যভ্রমণে বের হয়েছে। দুষ্টু বাচ্চাটি মাকে ছেড়ে একটু দূরে যেতেই একটি বিড়াল তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দূর থেকে দেখেই মা ইঁদুর 'ঘেউ ঘেউ' করে ডেকে ওঠে। তাতে কাজ হয়। বাচ্চাকে ছেড়ে বিড়াল দৌড়ে পালিয়ে যায়। মা তখন বাচ্চাটাকে বলল, এ জন্যই বলি পড়াশোনা কর, বিদেশি ভাষা রপ্ত কর। একটা বিদেশি ভাষা জানতাম বলেই তোকে বাঁচাতে পেরেছি।

নয়টা ভাষায় সাহায্যের আবেদন

দুজন দোভাষী জাহাজে মাঝ-সমুদ্রে। নিজ নিজ মক্কেলের হয়ে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত দুজন নিজেদের ব্যক্তিগত সময়ে কাছাকাছি আসার সুযোগ পেল।

তখন সমুদ্র উত্তাল। জাহাজ কেবলই দুলছে।

একজন অন্যজনকে জিজ্ঞেস করল, সাঁতার জানো তো?

কেন?

জাহাজ যেভাবে দুলছে, ভয় হচ্ছে, যদি...

আমার ভয় নেই। আমি সাঁতার জানি না ঠিকই, কিন্তু অবস্থা বেগতিক হয়ে পড়লে আমি ৯টা ভাষায় সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে পারব।

শর্ট ওয়েভ রেডিও-ও ভাষা

এক আফ্রিকান রাজা ওয়াশিংটন এয়ারপোর্টে পা রাখতেই সাংবাদিকেরা তাকে ঘিরে ধরল। সন্ধ্যায় তার সম্মানে হোয়াইট হাউসে ডিনার। প্রথম প্রশ্ন, ভ্রমণটা কেমন হয়েছে?

রাজা বললেন,, 'স্ক্রিচ, স্ক্র্যাচ, ঘ্যাচ, হুইসললল, জিজিজি আই হ্যাড এ নাইস ফ্লাইট।'

পরের প্রশ্ন : এক্সেলেন্সি, হোয়াইট হাউসের ডিনার ছাড়া আপনার কী কর্মসূচি? 

রাজা বললেন, 'স্ক্রিচ, স্ক্র্যাচ, ঘ্যাচ, হুইসল, জিজিজ'...বিশুদ্ধ মার্কিনি উচ্চারণে যা বললেন তার মানে আমি কেনেডি সেন্টার, ওয়াটারগেট হোটেল, পেন্টাগন ও নাসা ভিজিট করব।

এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, এক্সেলেন্সি আপনি এমন চমৎকার ইংরেজি কোথায় শিখলেন?

রাজা বললেন, স্ক্রিচ, স্ক্র্যাচ, ঘ্যাচ, হুইসল, জিজিজি শর্ট ওয়েভ রেডিওতে ভয়েস অব আমেরকিা শুনে শুনে।

একটি দোভাষী গল্প

এক দোভাষী ভদ্রমহিলা দোভাষীর কাজ করে সংসারের খরচ মেটান। বিদেশিরা এসে হোটেলে ওঠেন, তখন তার ডাক পড়ে। একদিন পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়েই গেলেন হোটেলে। তাকে চুপচাপ বসে থাকতে বলে তিনি বিদেশি ভদ্রলোকের সঙ্গে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করলেন। একসময় ভদ্রলোক তাকে টাকা দিলেন, মেয়ে তা দেখতে পেল।

মেয়ে জিজ্ঞেস করল, কিসের টাকা। 

তোমাদের থাকা, খাওয়া, স্কুলে যাওয়াসহ সব কাজের জন্য এই টাকা।

মেয়ে বলল, এখন বুঝতে পেরেছি। 

কদিন পর ক্লাসে জিজ্ঞেস করা হলো, কার বাবা-মা কী করেন? 

মেয়েটি বলল, বাবা নেই। মা হোটেলে যায়, ফরেনার পুরুষদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে। তখন তারা তাকে টাকা দেয়। সেই টাকায় আমাদের সংসার চলে।

ভাষা সুবচন

অনেক ভাষায় মুখ খুলতে পারা একটি অসাধারণ ও মূল্যবান যোগ্যতা। কিন্তু যেকোনো একটি ভাষায় মুখ বন্ধ করে রাখতে পারার কোনো তুলনাই নেই।

অনুবাদ

যখন পাজেরো অস্ট্রেলিয়াতে বাজারজাত করা হলো, অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের নাগরিকগণ পাজেরো নামটি পছন্দ করেন না। পাজেরোর স্প্যানিশ মানে হচ্ছে হস্তমৈথুনকারী।

'পাফ' টিস্যু জার্মানিতে বাজারজাত করার সময় একই সমস্য দেখা দিল। জার্মান আঞ্চলিক ভাষার পাফ মানে পতিতালয়।

চীনে যখন পেপসি পানীয় বাজারজাত শুরু হলো জনপ্রিয় স্লোগান-'পেপসি ব্রিঙ্গস ইউ ব্যাক টু লাইফ।' চীনা ভাষায় অনুবাদ করে যখন বিলবোর্ড লেখা হলো, তখন মানে দাঁড়াল 'পেপসি আপনার পূর্বপুরুষদের কবর থেকে তুলে আনে।'

অনুবাদক

খদ্দের: একটি পাতা ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দিন।

অনুবাদক: রেখে যান, এক সপ্তাহ লাগবে।

খদ্দের: কেবল একটি পাতা অনুবাদে এক সপ্তাহ! ঈশ্বর তো ষাট সেকেন্ডে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।

অনুবাদক: সেই জন্যই তো পৃথিবীতে এত গ্যাঞ্জাম, ঈশ্বর রিভিশন দেওয়ার সময় পাননি। 

সংবাদপত্রের ভাষা

দুটো পত্রিকারই বাজার ভালো। একটার নাম 'দ্য ট্রুথ', একটার নাম 'দ্য নিউজ'।

অনুসন্ধিৎসু পাঠক ঠিকই বের করে ফেলেছেন 'দ্য ট্রুথ' নামের পত্রিকাটিতে খবর বলে কিছু নেই; আর 'দ্য নিউজ' নামের পত্রিকাটি সত্যের ধারেকাছেও নেই।

তোতা পাখির ভাষা

চাইনিজ দম্পতির স্বামী বেশ সাধ করে ফরমায়েশ দিয়ে উঁচু জাতের একটি তোতা কিনে আনে। তারপর চলে তোতার ওপর স্পিচ থেরাপি। সাফল্য সন্তোষজনক। ঘটনাটি জুন, ২০০১-এর। স্ত্রী এক মাসের সফরে বাবার বাড়ি চলে গেলে চাইনিজ স্বামী তার এক ইংরেজ বান্ধবীর সঙ্গে টেলিফোন প্রেমালাপ জমিয়ে তোলে। পাখিটি এত দিন চাইনিজ শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিল। নতুন ভাষা গৃহকর্তার মুখে। ক্রিং ক্রিং বাজলেই গৃহকর্তা ফোন ধরে এবং দীর্ঘক্ষণ কথা বলে।

স্ত্রী ফিরে আসার পর স্বামী যথেষ্ট সতর্ক। কিন্তু পাখির এত দিনকার শেখা বোল বদলে গেছে। এখন তিনটি কথা পাখির মুখে। ফোন বাজলেই পাখি বলে, 'আই লাভ ইউ' 'ডিভোর্স' এবং 'বি প্যাসেন্ট'। তোতাবচন শুনে স্ত্রী গবেষণায় মন  দেয়। শেষ পর্যন্ত ডিকোড করতে সমর্থ হয়। স্বামী ইংরেজ বান্ধবীকে বলেছে, আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি আমার পুরোনো স্ত্রীকে তালাক দেব এবং দয়া করে তুমি একটু ধৈর্য ধরো।

মুখরা স্ত্রী আরও খেপে গেল। স্বামীকে আদালতে তুলল। এ রকম অবিশ্বস্ত লোকের সঙ্গে ঘর করা যায় না। সুতরাং ডিভোর্স চাই। স্ত্রী তোতাকে ধন্যবাদ দিল, ভাগ্যিস পাখিটা ছিল। 

স্বামীও দোষ স্বীকার করে ডিভোর্স সম্মতি জানাল এবং পাখিকে ধন্যবাদ দিল, ভাগ্যিস পাখিটা দ্রুত বিদেশি ভাষা শিখেছে।

লেখকদের প্রায়শ্চিত্তের মাস

আফটার অল লেখকেরাও তো মানুষ। লেখকরা কবিরাহ ও সগিরাহ- গুরু ও লঘু দুই ধরনের গুনাহ জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে করে থাকেন। গুনাহগারির কাজ কেবল অভিনয়শিল্প কিংবা আইনজীবী কিংবা অন্য কোনো পেশাজীবীর ওয়ারিশি অধিকার, তা নয়।

লঘু পাপের উদাহরণ: নিজের জীবনের দুষ্কর্মের কাহিনি অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে অন্যকে পাঠকের কাছে হেয় করা।

প্রায়শ্চিত্তের দরজা কখনো বন্ধ হয় না। লেখকেরা প্রায়শ্চিত্ত করে থাকেন মূলত ফেব্রুয়ারি মাসে। এটিকে বঙ্গীয় ঐতিহ্য মনে করা ঠিক হবে না। ঐতিহ্যটি রোমান, আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে লালন করছি।

রোমান ক্যালেন্ডারেই দ্বিতীয় মাস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে ফেব্রুয়ারি, এতদিনকার পাপাচার থেকে মুক্তির জন্য এ মাসেই বলি দেয়া হয়, আয়োজন করা হয় বিশাল ভোজের। প্রায়শ্চিত্তের মাস ফেব্রুয়ারি। এ মাসে লেখকেরা আবার বলির পাঁঠাও হয়ে থাকেন। এটাও প্রায়শ্চিত্তের। পাপী লেখকদের সেই ভোজ-অনিয়ন্ত্রিত গ্রন্থরাজি।

পাপীরা অধিকতর পাপী লেখকদের দিয়ে তাদের গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করিয়ে থাকেন। মোড়ক উন্মোচনী হাততালির পর বৃদ্ধ পাপী নবীন লেখকের প্রশংসায় মুখর হয়ে বলেন, আমার বই যেমন কেটেছে, বৎস তোমার বই যেন তার চেয়ে বেশি কাটে।

এমন অমৃত বচন শুনে প্রকাশক পুলকিত হন, লেখক ইয়া আলী বলে বুকে ফুঁ দিয়ে দ্বিতীয় গ্রন্থখানি রচনার রোডম্যাপ এঁকে ফেলেন। আর লেখক ও প্রকাশক যদি একই ব্যক্তি হন তাহলে তো কথাই নেই-বাকুম বাকুম ডাক ছেড়ে চরমানন্দ শিহরণ অনুভব করতে থাকেন।

মোড়ক উন্মোচকের কথাই সত্যি হলো। উইপোকা তার যে কয়টা বই কেটেছে, তার চেয়ে ঢের বেশি কেটেছে তার উত্তরসূরির। উইপোকাদের অবজ্ঞা করতে নেই। লেখক ফেব্রুয়ারিতে উইদের যত বেশি খাবার জোগান দেবেন তত বেশি পাপমুক্ত হবেন। 

দুনিয়াজুড়ে দুশ্চিন্তার  নহর বয়ে যাচ্ছে- ইন্টারনেট যেভাবে পড়তে জানা মানুষকে গ্রাস করে নিচ্ছে, তাতে প্রকাশনাশিল্পের বারোটা বাজা কে ঠেকাবে?

পাঠকের ওপর ভরসা করে তো আর বইয়ের ব্যবসা করা যায় না। ভরসা করতে হয় উইয়ের ওপর। ইন্টারনেটের মুখে ছাই দিয়ে অনলাইন গ্রন্থেও মুখে জ¦লন্ত অঙ্গার দিয়ে প্রকাশনা জগতের সীমানা শনৈ শনৈ বেড়ে যাচ্ছে। লেখকের আশঙ্কার কারণ নেই, প্রকাশকেরও নয়। ফেব্রুয়ারিতে যত দিস্তা কাগজ লেখক খসাবেন, যত ফর্মা প্রকাশক নামাবেন, সে হারেই পাপাঙ্ক নির্ধারিত হবে। অবশ্য উইদেরও সামান্য বাছবিচার আছে- হুমায়ূন আহমেদের বই খেতে চায় না, ফলে মানুষকেই খেতে হয়। হক নাম ভরসা করে লিখুন, উই ভরসা করে প্রকাশকের হাতে পান্ডুলিপি তুলে দিন, বই কাটবেই। 

বইয়ের আবেদন, যে যাই বলুন, সার্বজনীন। বইয়ের প্রয়োজন সর্বকালীন। গ্রন্থ ন্যায়পাল প্রকাশনাশিল্পের স্বার্থ বিবেচনা করে বেশ কয়েকটি সেক্টরে বইয়ের ব্যবহার জায়েজ করেছেন, বৈধ ঘোষণা করেছেন। এসব সেক্টরে বইয়ের কমবেশি ব্যবহার আগে থেকেই ছিল, হালে কেবল বৈধতা পেয়েছে।

ব্যবহার ১: চার থেকে দশ বছর বয়সী শিশুদের কমোডে নিরাপদ আসন নিশ্চিত করতে বই ব্যবহার করা যাবে। কমোডের পাশে বিভিন্ন সাইজের বইয়ের সিঁড়ি তৈরি করুন। উঠতে কাজে লাগবে, পা-দানি হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

ব্যবহার ২: পুরু পলিথিনে ৫০ কেজি ওজনের বই ঢুকিয়ে ওয়াটারপ্রুফ প্যাকেট করে এর সঙ্গে ১০০ কেজি ওজনের বাটখারা বেঁধে পানিতে ছেড়ে দিন। এতে ওয়াটার লেভেল একটু বাড়বে। যত বেশিসংখ্যক প্যাকেট নিক্ষেপ করবেন পানি তত ওপরে উঠবে।

ব্যবহার ৩: শক্ত মলাটের বই গোটা শরীরে সুপার গ্লু দিয়ে আটকে রাখুন। লাইন অব কনফ্রন্টেশনে ক্রসফায়ারে পড়লে বেঁচেও যেতে পারেন। 
ব্যবহার-৪: প্রেমিক প্রেমিকার কাছ থেকে সটকে পড়তে চাইলে জন্মদিনে কিংবা সাধু ভ্যালেন্টাইন দিবসে 'অরিজিন অব স্পিসিস' জাতীয় বই উপহার দিতে পারেন। 

ব্যবহার-৫: বাইডেন সাহেবকে দিয়ে নিজ দেশ আক্রান্ত দেখতে চাইলে বইয়ের মলাটে লাল কালিতে ডব্লিউএমডি (উইপন অব মাস ডেসট্রাকশন) লিখে হোয়াইট হাউজের ঠিকানায় পোস্ট করে দিন। কাজ হবে। 

ব্যবহার-৬: বুড়িগঙ্গা ভরাটের কাজে ভূমিদস্যু ডেভেলপারদের কাছে ৫০% কমিশনে বিক্রি করতে পারেন। 

ব্যবহার-৭: জঙ্গি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে বিভিন্ন মাপের একশ বই লাল টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে খাটের নিছে লুকিয়ে রাখতে পারেন। পুরু বই বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে। 

অনুমোদিত আরও কিছু ব্যবহার রয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য একুশের বইমেলা থেকে ৩০% কমিশনে কেনা ভারী বই ছুড়ে মারতে পারেন।
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.