‘আমি যতটুকু সম্ভব বিরক্তিকর উপায়ে বাঁচতে পছন্দ করি’

ইজেল

23 December, 2023, 12:50 pm
Last modified: 23 December, 2023, 01:04 pm
গত দশ ডিসেম্বর স্টকহোমের সুইডিশ একাডেমিতে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী নরওয়েজীয় লেখক জন ফসে পুরস্কার গ্রহণ করেন। এর ঠিক পাঁচ দিন আগে, ৫ ডিসেম্বর অসলোতে এল পায়েস পত্রিকার জন্য একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। 
গ্রাফিক্স: ইজেল

গত দশ ডিসেম্বর স্টকহোমের সুইডিশ একাডেমিতে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী নরওয়েজীয় লেখক জন ফসে পুরস্কার গ্রহণ করেন। এর ঠিক পাঁচ দিন আগে, ৫ ডিসেম্বর অসলোতে এল পায়েস পত্রিকার জন্য একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। 


শুরুতেই, নোবেলপ্রাপ্তির জন্য অভিনন্দন।

ধন্যবাদ। প্রায় এক দশক ধরে নোবেল প্রার্থীর তালিকায় আমার নাম এসেছে এবং গত কয়েক বছর অনেকে বাজিও ধরেছেন আমার নামে। এই ঘোষণাটির প্রতি আমি বরাবরই বিশেষ আগ্রহী ছিলাম, কিছুটা উত্তেজিতও, পুরস্কার ঘোষণার দিন ঠিক বিকেলের দিকটায়...কিন্তু খবরটা পাওয়া হতো না। এ বছর, আমি নিশ্চিত ছিলাম যে এবারও আমি পাচ্ছি না। এ এক বিস্ময় বটে! অক্টোবরের সেই দিন, আমি পশ্চিম নরওয়ের বার্গেনের উত্তরে শহরতলিতে ড্রাইভ করছিলাম, যে শহরে আমার বেড়ে ওঠা। শহরতলির রাস্তায় গাড়ি চালাতে আমি পছন্দ করি। হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠল, দেখি যে নম্বরটা থেকে কল এসেছে, সেটার শুরু প্লাস ফোর সিক্স দিয়ে, সুইডেনের কোড...

এবং তখনই বুঝতে পারলেন যে আপনি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন?

না, আমি ভেবেছিলাম সুইডেন থেকে কেউ আমাকে কল করেছে! হয়তো আমার এজেন্ট। তবে, হ‌্যাঁ, তারিখ এবং সময়ের কারণে– আর ওই ফোন নম্বর– আমি আঁচ করতে পেরেছিলাম, এটা সুইডিশ একাডেমিরও হতে পারে। কল করেছিলেন ম্যাটস মালম, একাডেমির স্থায়ী সচিব।

আপনার কাছে এই পুরস্কারের মানে? 

যখন জানতে পারলাম, খুব খুশি হয়েছিলাম। সত্যিই, দারুণ আনন্দ। তারপর, একটু ভয়ও পেয়েছিলাম, কারণ এর ফলে সামনে যা ঘটতে যাচ্ছে, সেসবের জন্য।

বাড়িতে আমার মায়ের কাছে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের উপন্যাসের বেশ কিছু সংগ্রহ আছে, ঢাউস সংগ্রহ যাকে বলে! মাঝেমধ্যে যখন সংগ্রহটার দিকে চোখ পড়ে, তাদের অনেক কটার নামও মনে অনুরণন তোলে না। 

আমার শ্বশুরের কাছেও এ রকম সংগ্রহ ছিল– সেসবের বেশ কিছু অবশ‌্য এখনো প্রাসঙ্গিক। বিস্মৃত হয়ে যাওয়াগুলো মোটাদাগে, প্রথম দিককার (পুরস্কারের)। যেমন ধরুন উনিশ শ তিন সালে পুরস্কারটি পান নরওয়েজীয় কবি, ঔপন‌্যাসিক, নাট‌্যকার বিঅর্নসজেন বিঅর্নসেন (Bjørnstjerne Bjørnson), অথচ তার সমসাময়িক সবচেয়ে স্মরণীয় এবং আলোচিত নাট‌্যকার-নাট‌্য পরিচালক হাইনরিখ ইবসেনের ভাগ্যে জোটেনি। আলফ্রেড নোবেল যেমনটি চেয়েছিলেন, ইবসেন তেমন আদর্শবাদী পদ্ধতিতেই লিখেছেন।

কিন্তু তারপর পরিস্থিতি পাল্টে গেল।

যখন আমি আগেকার বিজয়ীদের তালিকাটি দেখি, আমি অনেক লেখককেই নিজের জন‌্য গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখতে পাই। আমি ফকনারকে দেখি। বেকেটকে দেখি, পিটার হান্ডকেকে দেখি। অথবা পিরান্ডেলো বা মরিস মাতরলাঁক, ধরুন যদি শুধু নাট্যকারদের কথা বলি। একটি মিশ্র ব‌্যাপার বলতে পারেন, অনেককেই আমরা খুব মনে রেখেছি, আজও পড়ছি, অনেককেই আমরা ভুলে গেছি। ওহ, আবার অনেক লেখকই আছেন, যাদের আমি সব সময়, সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করি অথচ তাদের ঝুলিতে নোবেল নেই, যেমন গার্সিয়া লোরকা, প্রুস্ত বা কাফকা। অবশ‌্য তাদের কিছু মিলও আছে যে তারা অল্প বয়সে চটজলদি মারা গিয়েছিলেন। আমার বয়স নোবেল বিজয়ীদের গড় বয়স ষাটের কিছু বেশি। 

বা ঘুরিয়ে বললে, নোবেল পুরস্কার নিত‌্যতার নিশ্চয়তা দেয় না।

না, না। শুধু যে জিনিসটি নিশ্চিত করে, তা হলো পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকায় একটি স্থান। এবং বাড়িতে আপনার মায়ের সংগ্রহের তাকে একটু জায়গা করে নেওয়া। 

আপনি প্রচার-প্রচারণায় বা জনসমাগমে আসতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ‌্য বোধ করেন না...

খুব একটা পছন্দ করি না। আবার আমি এটিতেই বেশ অভ্যস্তও। আমার প্রথম উপন্যাস...রেড, ব্ল্যাক...চল্লিশ বছর আগে উনিশ শ তিরাশি সালে প্রকাশিত হয়েছিল। বার্গেনের পত্রপত্রিকায় আমার দুর্দান্ত সব আলোকচিত্র ছাপাল, হঠাৎই নিজেকে সর্বজনীন বোধ করতে শুরু করি। যখন আমার নাটকগুলো নানা দেশে ভ্রমণ করতে শুরু করে, তখন এই দিকটি আরও বেড়ে যায়। আমি বলতে পারি না যে বিষয়টি পছন্দ করি, তবে আমি এর সাথে বাঁচতে শিখেছি। যতটা সম্ভব একে নিয়ন্ত্রণ করি, প্রায়ই বিভিন্ন আমন্ত্রণ এবং সাক্ষাৎকার প্রত্যাখ্যান করি আমি। এসব ইভেন্ট, প্রিমিয়ার, অভ্যর্থনা ইত‌্যাদি নিয়ে আমি সত্যিই ক্লান্ত...যেখানে আমি সত্যিই কোনো ভূমিকা রাখতে পারব, ঠিক সেই মুহূর্তের জন্যই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পছন্দ করি। বাকিটা এড়িয়ে যাই।

আচ্ছা। আপনার জীবনচর্যা কেমন?

আমি যতটুকু সম্ভব বিরক্তিকর উপায়ে বাঁচতে পছন্দ করি। কারও সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ না করে, বাড়িতে পরিবারের সাথে শুয়েবসে সময় কাটিয়ে। কয়েক বছর ধরে আমি আমার সকালগুলো লেখালেখির জন্য উৎসর্গ করেছি। ভোর চারটায় উঠে, পাঁচটা থেকে নয়টা অবধি লিখি। যেকোনো সময় আমি লিখতে পারি না...যদি লিখিও, সেখানে ভুলচুক হয়ে যায়। লেখায় জুত ফিরে পেতে এবং ভাব ফিরিয়ে আনতে আমাকে বিরতি নিতে হয়। কিন্তু, আমি যখন লিখতে শুরু করি, তখন ওই ভাব ফিরে পেতে প্রায় সপ্তাহখানেক সময় লাগে। আমি গোটা 'সেপটোলজি' অস্ট্রিয়ায় বসে লিখেছিলাম, নরওয়েতে এক দিনের জন‌্যও পা রাখিনি, রোজ সকাল পাঁচটা থেকে নয়টা, টানা সেশনে।

আপনি খুব লিখতে পারেন।

আমি খুব দ্রুত লিখি...

লেখায় বিরাম চিহ্নের ব্যবহার কম করেন বলেই হয়তো। তরতর করে পাঠ করা যায়...

আমার কোনো কোনো উপন্যাসে সময়কাল নেই। আবার, কোনো কোনোটায় এই সময়কালের আবির্ভাবও ঘটে। প্রশ্নটা তাল-লয়-ছন্দের।

তাহলে কি বলব এটিই আপনার লেখার ধরনের সঠিক চিত্রণ?

আমার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফর্ম। গীতিময়তা। এমনকি বিষয়বস্তুর কথাও যদি বলি, সেটাও ফর্মের অংশ, লেখকের চাইতেও একজন সুরকার হিসেবে আমি কাজ করতে পছন্দ করি। যৌবনে, একদিন বাদ‌্যযন্ত্র বাজানো বন্ধ করে দিয়ে লিখতে শুরু করি...কিন্তু আমি লেখালেখিতেও একই পরীক্ষা-নিরীক্ষা জারি রেখেছিলাম। পুনরাবৃত্তি, রূপান্তর। আর আজ আমি যতটুকুন, তা এর জন্যই।

সংগীত, কবিতা...

এবং থিয়েটার। গার্সিয়া লোরকা সম্ভবত এমন কিছু বলেছিলেন, 'নাটক হচ্ছে দণ্ডায়মান কবিতার মতো।' লেখার সময় আমি ঠিক যেমনটি অনুভব করি, এটি তার নিখুঁত বর্ণনা। কবিতার মতো তীব্রতা থিয়েটারের জন‌্য প্রয়োজনীয় নয়– এর জন্যও প্রতিক্রিয়া দরকার। তবুও থিয়েটারের জন্য সেই কাব্যিক আতিশয্যের প্রয়োজন আছে। এবং আমার কাল্পনিক আখ‌্যানে, এটি সাযুজ‌্যপূর্ণ, যেমন সেপটোলজিকে একটি দীর্ঘ গদ্য কবিতা হিসেবেও দেখা যেতে পারে। উপন্যাস, আবার তা দীর্ঘ কবিতাও।

কিছু পাঠক আপনার লেখার ধরনকে দুরূহ মনে করেন।

আমার কাছে দুরূহ মনে হয় না। কেউ কেউ দুরূহ মনে করেন এবং বাকিরা খুব সহজ বলে মনে করেন।

আমি মনে করি দুটোই সঠিক। আসলে যা বলা হয়েছে, তা খুব স্পষ্ট, কিন্তু সম্মোহনী শৈলীর কারণে তার কাছে পৌঁছানো ততটা সহজ নয়।

এটা আমারও বিশ্বাস। লেখালেখির শুরু থেকে দেখেছি, এমন অনেকেই আছেন যারা আমার লেখাকে ভালোবাসেন আবার অনেকেই ঘৃণা করেন। এটি সংগীতের মতো: আপনি যদি সাংগীতিক ব‌্যক্তি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি এটা পছন্দ করবেন। আবার এমন অনেকেই আছেন, যারা বিষয়টা ধরতে পারছেন না। কিংবা গণিতের মতো, এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা প্রতীক ব‌্যাপারটা খুব ভালো বোঝেন, অনেকে বোঝেন না। অনেকেই আমার প্রথম উপন্যাস পছন্দ করেননি, বটেই এবং সময়ের সাথে সাথে তারা আমার শৈলীর সাথে খাপ খাইয়েও নিয়েছেন।

আপনি কিসে লেখালেখি করেন? মানে শারীরিকভাবে লেখালেখির কথা বলছি...

একসময় টাইপরাইটারে লিখতাম। তারপর, আমি ম‌্যাক ব‌্যবহার করা শুরু করি। নরওয়ের প্রথম ম্যাক ব্যবহারকারীদের একজন আমি। কম্পিউটারে লিখতে পছন্দ করতাম, স্ক্রিনে শুধরে নিতে পারতাম, প্রিন্ট নেওয়া যায়, হরফ পরিবর্তন করা যায়...গ্যারামন্ড, প্যালাটিনো...টাইপরাইটারে লেখার পর সেটির কাটাকুটি  সমেত পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া ইত‌্যাদি খুব মজার। কম্পিউটার ব‌্যবহারে আমি দারুণ উৎসাহী ছিলাম। আমি এখনো তা ব্যবহার করি কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমি কিছুটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।

তাহলে এখন?

এখন, এই যে দেখতে পাচ্ছেন (কালির দাগ লাগা আঙুলের গিঁট দেখিয়ে), আমি কালিতে আগ্রহী। আমার কাছে ফাউন্টেন পেনের একটা বড় সংগ্রহ রয়েছে– প্রায় তিন শ ফাউন্টেন পেন এবং সমস্ত সম্ভাব্য রঙের বিভিন্ন কালি, প্রায় দেড় শ রকমের। টিপ কলমেও লিখতে পছন্দ করি, অনেকটা পেইন্টব্রাশ ব্যবহার করার মতো। সেপটোলজি ম্যাকে লেখা হয়েছিল এবং হাতে-কলমে সংশোধন করা হয়েছিল। আবার এ শাইনিং শুরু থেকেই হাতে লেখা।

আপনার বেশির ভাগ রচনাই অন্তরঙ্গ এবং অসীম। সাহিত্যকে কি সমাজের সমস্যা নিয়ে কাজ করা উচিত নয়?

মোটেই না। সাহিত্য যেমন সমাজের সাথে সম্পর্কিত, তেমনি সংগীতও সমাজের সাথে সম্পর্কিত। সমাজে শিল্পের ভ'মিকা রয়েছে এবং তাই রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। গার্সিয়া লোরকার মতো, যার ভেতর প্রবল রাজনৈতিক প্রভাব ছিল, তবুও তার রচনাসমূহ রাজনৈতিক সমস্যাসমূহের সঙ্গে মোকাবিলা করেনি। আমি মনে করি, আপনি যদি রাজনৈতিক বার্তা বা ধর্মীয় বার্তা বা যা-ই হোক– খুব স্পষ্টভাবে সামনে আনার চেষ্টা করেন, আপনি সম্ভবত খারাপ বা যাচ্ছেতাইভাবে লেখাটা শেষ করবেন। অন্তত আমি বিষয়টিকে এভাবে দেখি। এমন কোনো রচনার কথা আমি মনে করতে পারি না, যেটা একই সঙ্গে সাহিত‌্যমানও উতরেছে এবং ধর্মপ্রচারের কাজটাও করেছে।  

প্রশ্ন: খানিক আগে, আমরা সেইন্ট ওলাভ ক্যাথেড্রাল থেকে ঘুরে এসেছি, সেখানে আপনি আপনার ধর্মাচার পালন করলেন। আপনি ক্যাথলিকে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। ওদিকে নরওয়েজীয়দের বেশির ভাগই লুথারান– বিষয়টি খুব মামুলি নয়।

আমাদের মধ্যে প্রায় চার-পাঁচ হাজার জাতিগত ক্যাথলিক নরওয়েজীয় আছে। সেখানে পোলিশ বা ফিলিপিনো অভিবাসী (যারা ক্যাথলিক) আছে, কিন্তু আদি নরওয়েজীয়দের খুব কমই ক্যাথলিক আছেন। আপনি যে চার্চের কথা বললেন, সেখানে প্রায় চল্লিশটি জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। 

প্রশ্ন: সেপটোলজিতে, আপনি ভিন্ন মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা অন্বেষণ করেন। আপনি কি অন্য কেউ হতে পছন্দ করতেন?

সত্যি বলতে কি আমি নিজের প্রতি খুব একটা খুশি নই।

প্রশ্ন: আপনি কিন্তু নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন!

হ্যাঁ, কিন্তু আমি যখন লিখি, তখন নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করি না। নিজের থেকে পালানোর চেষ্টা করি। আমি যখন গান করতাম, তখনো বিষয়টা একই রকম ছিল– পালানোর জন্য। অথবা যখন আমি গার্সিয়া লোরকার কবিতা পড়ি, তাকে পুনরায় কোথাও উৎকলিত করার জন্য পড়ি। কিন্তু, যদি আমি একজন সুখী মানুষ হতাম– আমার মোবাইল ফোনটার সাথে আনন্দিত, উৎফুল্ল এবং ভাগ্যবান বোধ করতাম– আমি মনে করি তখন হয়তো আমি লিখতাম না। কিংবা, হয়তো একটা বই লিখতাম, ওটাই একমাত্র থাকত।

প্রশ্ন: আপনি আসলেই খুব নাখোশ মানুষ, যার ফলস্বরূপ অনেক লিখেছেন।

সেই অসন্তোষই আমাকে আমার সারা জীবন লেখালেখি করতে বাধ্য করেছে। আমার মধ্যে কিছু ঝামেলা আছে এবং সেসব নিয়েই আমি পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কিত।

প্রশ্ন: সময়ের পরিবর্তন কি আপনাকে প্রভাবিত করে?

আমি বেশ সন্তুষ্ট। বয়সে যত বুড়ো হচ্ছি, জীবনে ততই ভালো বোধ হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, আপনার যদি স্বাস্থ্যগত সমস্যা না থাকে– যেমন অনেকেরই থাকে...তা না থাকলে বয়স্ক হওয়া খারাপ কিছু নয়। সেপটোলজিতে যে রকম– আমি সময়ের সাথে খেলি। আমি এগোই, পিছোই, প্রসারিত হই– ঠিক যেমন নানা উপাদান থেকে কোনো উপন্যাসের সৃষ্টি হয়। 

প্রশ্ন: একসময় মদে আসক্ত হয়ে ভুগছিলেন। মদ‌্যপান প্রায়ই শিল্পীর সৃজনশীলতার সাথে যুক্ত বলে মনে করা হয়

আমি বিষয়টিকে সত্য মানি। প্রাচীনকালে, রোমানরা তাদের আশেপাশের মাতাল কবিদের সম্পর্কে প্রায়ই অভিযোগ দায়ের করত। কিছু সংযোগ তো রয়েছে বটেই, কারণ, সুরাপান সেই নির্দিষ্ট সীমারেখাটিকে শিথিল করে দেয়, ঠিক ততক্ষণ, যতক্ষণ না আপনি এটির অপব্যবহার করছেন। আমি জীবনে বহুবার বেহেড মাতাল হয়েছি, কিন্তু আমাকে থামতে হয়েছে। আর মদ‌্যপান ছেড়ে দেওয়াতে আমার লেখালেখিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং উল্টো ঘটেছে। আরও ভালো লিখতে শুরু করলাম। লেখালেখিতে আরও সময় পেয়েছি। আমি পান করতে পছন্দ করতাম এবং আড্ডাবাজিÑকিন্তু এসব যদি ব‌্যাপক করে ফেলেন, তাহলে সেটি খুব একটা কাজের নয়। সে জন্যই ছেড়ে দিয়েছি।

প্রশ্ন: মানবজাতির ভবিষ্যৎ খুব ভালো ঠেকছে না। আগামীর এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সঙ্গে আপনি কীভাবে মুখোমুখি হবেন?

আমরা খুব বিপজ্জনক সময়ে বাস করছি, দ্বিমত নেই। যেমন ধরুন চলমান ইউক্রেনের যুদ্ধটা খুবই বিপদজনক। পশ্চিমারা যত বেশি অংশ নেবে, আমরা পারমাণবিক বিপর্যয়ের আরও কাছাকাছি হব।

প্রশ্ন: গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আপনার অনুভূতি?

এই সংঘর্ষটা খুবই দুঃখজনক। হামাস শিশু এবং বৃদ্ধদের ওপর হামলা করেছে, এটি আসলেও ভয়াবহ, এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং কিছু জিম্মিও করেছে। আমি বুঝতে পারি যে ইসরায়েলকে এই ঘটনার একটা তৎক্ষণাত প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়েছিল...কিন্তু সেই প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ইসরায়েল যা ইচ্ছা তা করতে পারে না।


সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: সার্জিও ফঁজুল। অনুবাদ: মাহমুদ আলম সৈকত

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.