ঢাকা এখন কফির শহর!

ইজেল

25 November, 2023, 08:00 pm
Last modified: 25 November, 2023, 08:06 pm

সদ্য ঢাকা কলেজ ছেড়েছি, পড়াশোনা তেমন হয়নি, স্কুল কেটেছে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরিতে, সেখানে যেটুকু শিখেছি, পুঁজি ততটুকুই, দেয়াল ডিঙিয়ে ঢাকা কলেজ, শরীরে সুগারের ঘাটতি না থাকলেও চায়ের দোকানিকে ঠকাতেই দু-চার চামচ বাড়তি চিনি কাপে ঢেলে চা নামের শরবত খাচ্ছি প্রায়ই। তখন দুধ চা-ই ছিল; লেবু চা, আদা চা এসব তখনো আসেনি। তবে মধুমেহগ্রস্ত কেউ কেউ রেস্তোরাঁয় এসে হাঁক দিতেন শুধু চায়ের লিকার। তাতে চিনি ও দুধ থাকত না। আবার দুধের লিকারও ছিল, কেবল পাতলা গরম দুধ। এর মধ্যে শোনা গেল কফির কথা। কোনো অভিজাত বাড়ির কফি নয়। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়িতে তো নয়ই। কেউ কেউ ফুলকপি, বাঁধাকপির সাথে সাথে কফিকে গুলিয়েও ফেলছে—কাপে নিয়ে কেমন করে খায়?

সত্তরের শেষ ভাগে এসে কথাটা ছড়িয়ে পড়ল: কফির রেস্তোরাঁ হয়েছে এই ঢাকা শহরেই। নাম কফিশপ, এলিফ্যান্ট রোডে, সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে শাহবাগের দিকে যেতে হাতের বাঁ দিকে। আমরা যদি পদধূলি দিয়ে ধন্য না করি, তাহলে কফিশপ চলবে কেমন করে?

স্কুলজীবনেই তো 'বাজে বই' পড়ার অভ্যাস তুঙ্গে উঠেছিল, টেক্সট বই কে পড়ে! এমন একটি বাজে বইতেই পড়লাম 'ওল্ড ওয়াইফ অ্যান্ড কোল্ড কফি'-র তুলনা হয় না।

কেবল কলেজ ডিঙিয়েছি। ওল্ড ওয়াইফ কোথায় পাব? নিউ ওয়াইফই তো ধীরে ধীরে বয়সের ভারে ওল্ড হয়ে থাকে। বয়স তো শুধু ওয়াইফের বাড়বে না, আমারটাও বাড়বে। কিন্তু কোল্ড কফি খাবার জন্য তত দিন অপেক্ষা করা কি ঠিক হবে? নিউ ওয়াইফই 'হনুজ দূর অস্ত'—এখনো অনেক দূরে।

হাজির হলাম সদ্য দরজা খোলা কফিশপে। বললাম, কোল্ড কফি খেতে চাই। জানালেন, এখনো ঠান্ডা কফি চালু হয়নি, কয়েক দিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে। গরম কফি খেয়েই প্রথম দফায় ফেরা। হরেক রকম কফি আজকাল ফুটপাতের চাকাওয়ালা ঠেলা দোকানেও পাওয়া যায়, আমি সাতমসজিদ রোডের এমন কয়েকটি 'ঠেলা কফিশপে' বহুবার কোল্ড কফি খেয়েছি। ঠেলা কফিশপে—কারণ দাম কম, কখনো কখনো স্বাদেও উত্তম। কফি অন দ্য হুইলস।

সত্তরের শেষ ভাগেই সদ্য নির্মিত বিএমএ ভবনের নিচতলায় পশ্চিম প্রান্তে, বর্তমান প্রেসক্লাবের উল্টোদিকে বাহারি নামের একটি আইসক্রিমের দোকান খোলা হলো, সাবনুরিয়ান। এতে আইসক্রিমই মূল আকর্ষণ, কোন আইসক্রিম; সাথে গরম কফিও মিলেছে। সাবনুরিয়ান হারিয়ে গেল। আফসোস নেই—গ্লোরিয়া জিনস, নর্থ এন্ড, ক্রিমসন কাপ, বারিস্তা এমন আরও অনেক আয়েশি ও বিলাসী ক্যাফে ঢাকা শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৩ সালে ১৩৯ মেট্রিক টন কফি বাংলাদেশে আমদানি হয়েছিল; আর ২০২২-এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৪৫ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ কফির চাষেও নেমেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও কক্সবাজার, টাঙ্গাইল, রংপুর, নীলফামারীতে কফির বাগান করা হয়েছে, সৌখিন নয়, বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কফি রপ্তানিতেও নামবে।

কফির বিশ্বচাহিদা কমার কোনো কারণ নেই। চাহিদা বেড়েই চলবে। জুলিয়াস সিজারের পরামর্শ: নেভার সে নো টু কফি—কফিকে কখনো না বোলো না।

আমি পরামর্শ মেনে নিয়েছি, কাপোচিনোতেও আছি, এসপ্রেসোতেও আছি।

ওরহান পামুকের 'মাই নেইম ইজ রেড' উপন্যাসের একটি চরিত্র সম্পর্কে বলা হচ্ছে: যখন সে কফি পান বন্ধ করে দিল, স্বাভাবিকভাবেই তার মস্তিষ্ক কাজ করা থামিয়ে দিল। একটি পঙ্ক্তিই যথেষ্ট। সবার জন্য ওয়ার্নিং: মস্তিস্ক সতেজ রাখুন, কফি পান করুন।

বিশ্ব কফিবাজারের আকার ২০২২ সালে ছিল ১২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছর থেকে ২০৩০ পর্যন্ত এই বাজারের চক্রবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৭২ শতাংশ।

ছবি: টিবিএস

যে তথ্যটি জানতেই হবে: ১৯৩২ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ৬৯ জন ক্রীড়াবিদকে পাঠানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য ব্রাজিলের ছিল না। ৫০ হাজার বস্তা কফিভর্তি একটি জাহাজে খেলোয়াড়দের তুলে দেওয়া হলো। বিভিন্ন বন্দরে বন্দরে বিক্রি করতে করতে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় টাকাটা উঠে গেল। তারা সাফল্যের সাথেই অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করলেন। দেড় শত বছর ধরে ব্রাজিলই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কফি উৎপাদনকারী দেশ।

ক্যাফেতে কোনটি খাবেন? কত রকম কফি ড্রিঙ্ক:

অ্যাফোগ্যাতো, এসপ্রেসো আমেরিকানো, ক্যাফে লাতে, ক্যাফে মোচা, ক্যাফে  আও লেইত, কাপ্পোচিনো, কোল্ড ব্রু কফি, ডাবল এসপ্রেসো বা ডোপিয়ো, এসপ্রেসো, এসপ্রেসো কন পান্না, এসপ্রেসো মাচ্চিয়াতো, ফ্ল্যাট হোয়াইট, ফ্র্যাপে, ফ্রিকশেইফ, আইস ল্যাটে, আইসড মোচা,  আইরিশ কফি, লাতে মাচ্চিয়াতো, এসপ্রেসো লুঙ্গো, রিসত্রেতো।

আরও আছে: ফ্রাপ্পোচ্চিনো, ক্যারামেল মাচ্চিয়াতো, টার্কিশ কফি, ক্যাফে ক্যুবানো বা কিউবান কফি, আইরিশ কফি, কর্তাদো, গুড ওল্ড প্লেইন কফি, ব্ল্যাক কফি, লং ব্ল্যাক, ড্রিপ কফি, ব্যাচ ব্রু, ইনস্ট্যান্ট কফি, অ্যারোপ্রেস কফি, ভ্যাকুয়াম কফি, ইমার্সন কফি, পিক্কোলো লাতে, জিব্রালটার, নাইট্রো কফি, জাপানিজ আইসড কফি, ভিয়েতনামিজ কফি, বুলেটপ্রুফ কফি, কাসকারা কফি, গেইশা কফি।

 প্যারিসের এই ক্যাফেতে বসতেন জ্য পল সার্ত্রে, জ্য জিরাদু, সিমন দ্যু বুভেয়ো, আলবেয়ার কামু, পাবলো পিকাসো, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে প্রমুখ।

 কফির সাথে বসবাস

কফির দানা বা কফি বিন মূলত চার ধরনের:

অ্যারাবিকা
রবুস্তা
এক্সেলসা
লাইবেরিকা

চার ধরনের দানা থেকে উৎপাদিত ও পরিবেশিত কফির স্বাদের সুস্পষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। অ্যারাবিকা সবচেয়ে জনপ্রিয় কফি। কফি বিন সুস্বাদু ও বিচিত্র। পৃথিবীতে ভোক্তারা যে পরিমাণ কফি গ্রহণ করে থাকেন, তার ষাট ভাগই অ্যারাবিকা থেকে আহরিত। দ্বিতীয় প্রধান চাহিদার কফি হচ্ছে রবুস্তা। উষ্ণ অঞ্চলে উত্তম মানের রবুস্তা জন্মায়। এতে ক্যাফেইনের মাত্রা অ্যারাবিকার প্রায় দ্বিগুণ। এটা চকোলেটগন্ধীও হয়ে থাকে। লাইবেরিকার দানা অত্যন্ত শক্ত, আকারেও বড়। গন্ধ ও স্বাদের ভিন্নতা সহজেই ধরা যায়। এক্সেলসাকে লাইবেরিকা গোত্রের মনে করা হলেও স্বাদ ভিন্ন।

ছবি: টিবিএস

অ্যারাবিকা উৎপাদনের পাঁচটি প্রধান দেশ: ইথিওপিয়া, ভারত, গুয়াতেমালা, কলম্বিয়া ও ব্রাজিল। রবুস্তা মূলত ভিয়েতনাম ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, উগান্ডা ও ভারতে উৎপাদিত হয়। এই পাঁচ দেশে মোট উৎপাদিত রবুস্তা দানার ৯০ ভাগই জন্মে। লাইবেরিকার জন্মসূচনা লাইবেরিয়াতে হলেও এখন তা সরে এসেছে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায়। লাইবেরিকা কফির ৭০ ভাগ জন্মে ফিলিপাইনে, এক্সেলসা ১৯০৩ সালে সেন্ট্রাল আফ্রিকাতে শনাক্ত করা হলেও এখন উৎপাদিত হচ্ছে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনে।

ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশন (আইসিও) নামে একটি আন্তদেশীয় সংস্থা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৯৬২ সালের আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণে ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বৈশি^ক কফি খাত শক্তিশালী করা এবং গ্লোবাল কফি ভ্যালু চেইনের সকল স্টেকহোল্ডারের স্বার্থ সংরক্ষণ করে কফি উৎপাদন ও কফি বাজার টেকসইভাবে সম্প্রসারিত করা। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এর কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। আইসিওর সদস্যদেশ ৭৫, এরমধ্যে রপ্তানিকারক সদস্য ৪২,  সদর দপ্তর লন্ডনের গ্রেজ ইন রোডে।

 অদ্ভুতুড়ে কফি

এলিফ্যান্ট ডাং কফি: থাইল্যান্ড থেকে রপ্তানি হওয়া ব্ল্যাক আইভরি কফির দর কিলোগ্রামপ্রতি ১১০০ মার্কিন ডলার। বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় এই কফির এক কাপের দাম ৫০ মার্কিন ডলার। হাতির গোবর থেকে কফি মানে ঠিক গোবরের বটিকা নয়। হাতিকে কফি দানা খাওয়ানো হয়, যা পরিপাকযন্ত্র পুরোটা সফর করে গোবরের সাথে নিঃসৃত হয়ে আসে। এটা একধরনের প্রক্রিয়াকরণ। এই গোবর ও কফি দানা কাজে লাগিয়ে ব্ল্যাক আইভরি কফি কোম্পানি মূল্যবান কফি প্রস্তুত করে থাকে।

হট বাটার্ড কফি: কফিতে ঝাঁজ মেশানো নতুন কোনা বিষয় নয়, আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে এবং হালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক ক্যাফেতেই মাখন মেশানো কফি সার্ভ করা হয়ে থাকে। বাটার্ড কফি নেশাকরও। আলোচনায় উঠে এসেছে বুলেটপ্রুফ কফি। এতে হাই অকটেন কফি দানা এবং ঘাস খাওয়া গরুর অলবণাক্ত মাখন ব্যবহার করে বুলেটপ্রুফ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ডেইভ এসপ্রে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর ব্র্যান্ড হিসেবে কফি বাজারজাত করেছেন।

মাতাল মৌমাছির কফি: ইউনিভার্সিটি অব হাইফা, ইসরায়েলের গবেষকেরা মৌমাছির ওপর গবেষণা চালিয়ে বের করেছেন—কফির ক্যাফেইনের স্বাদ যে মৌমাছি পেয়েছে, সে কালক্রমে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং ঘুরেফিরে কফিগাছের কাছেই ফিরে আসে। কফির পরাগায়নে মৌমাছির ভূমিকা তাই গুরুত্বপূর্ণ।

ছবি: টিবিএস

ক্যাফেইন পাউডার থেকে কফি: ক্যাফেইন পাউডারের বিক্রি বেড়ে যাওয়া আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক চামচ পাউডার খাওয়াতে ২৫ কাপ কফি খাওয়ার সমান ক্যাফেইন শরীরে প্রবেশ করে। সাধারণ কফিতে ৪০ থেকে ৮০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। চার ঘণ্টা সময়ে শরীরে ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন প্রবেশ করা আতঙ্কের, কারণ এর বেশি হলেই তা শরীর বিষিয়ে তুলবে, হৃদ্যন্ত্রের অস্বাভাবিকতা বেড়ে যাবে। হৃৎস্পন্দন বাড়বে, স্বাভাবিক বুদ্ধি লোপ পাবে, ফিট হয়ে যাবার আশঙ্কা বাড়বে এবং মৃত্যুও ঘটতে পারে—ক্যাফেইন পাউডারের ব্যবহার এবং স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অতিরিক্ত কফি পান সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।

কফির দানা একটি ফল। এই ফলে ক্ষারীয় (অ্যালকালয়েড) উপাদান হচ্ছে ক্যাফেইন, কফির তিক্ত স্বাদ ক্যাফেইন থেকেই উদ্ভূত। ক্যাফেইন চা, কফি কোকো তিনটিতেই বর্তমান। মানুষের শরীর ও স্বাস্থ্যের ওপর ক্যাফেইনের ভালো-মন্দ উভয় ধরনের প্রভাবই রয়েছে। মানসিক সতর্কতা, মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, স্মৃতিসহায়তা, স্থূলতামুক্তি, প্রতিযোগিতামূলক খেলায় ভালো ফল লাভ—সবটাতেই ক্যাফেইনের ব্যবহার রয়েছে। হাঁপানি, পিত্তাশয়ের রোগ, মনোযোগহীনতা, নিম্ন রক্তপাত, বিষণ্নতাতে ক্যাফেইন ওষুধের কাজ করে; ফুসফুসের রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্মৃতিধারণেও ক্যাফেইন চাই। ক্যাফেইন বেদনানাশক পেইন কিলার। সীমিত পরিমাণ ক্যাফেইন উদ্বেগ, বাইপোলার ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে সুফল দেয়। তবে ক্যাফেইন সিজোফ্রেনিয়া প্ররোচিত করে থাকে।

ক্যাফেইন নেশা বা অ্যাডিকশন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ক্যাফেইন নেশা মানসিক বিপর্যয়ও ঘটায়।

কফি বোমা

কফি বোম্ব ধ্বংসাত্মক বোমা নয়। দেখতে পিনাট বাটার কাপের মতো কিন্তু তার চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর উপাদানে তৈরি। এর মধ্যে থাকে অর্গানিক কোকো, অর্গানিক সিলনিজ দারুচিনি, অর্গানিক ভ্যানিলা, মসল্লা, মরিচ। সাথে আরও থাকে অর্গানিক নারকেল তেল, ঘাস খাওয়া গরুর দুধের মাখন, হেম্প প্রোটিন। ব্লেন্ডারে ৮ থেকে ২২ আউন্স তরলে (কফি, পানি কিংবা পছন্দের দুধ) কফি বোমা ছেড়ে দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করতে হবে। তারপর কাপে নিয়ে পছন্দের তরল মিশিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে চুমুক দিন। কফি বোমা সকালের নাশতার বিকল্প নয়, পরিপূরক। শিশুদেরও খাবার উপযোগী। সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর মন ভালো করে দেওয়া এই বোমা উপেক্ষিত হবার নয়।

কফিটা সত্যিই ভালো

যখন কফিতে কয়েক চুমুক দেবার পর এই কথাটা বলি—দারুণ। এটা অবশ্য অসম্পূর্ণ মন্তব্য। কফিটা সত্যিই ভালো—আমরা আসলে কি বোঝাতে চাই? কফিটা ভালো না মন্দ তার বিচারে জেনেই হোক কিংবা না জেনেই হোক—আমরা কোন সূচকের ওপর নির্ভর করেছি? আমরা পাঁচটি সূচক সামনে আনি—এর পরিমাপ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে এক না-ও হতে পারে। কফি খাওয়ার পর কিছুটা সময় পার হলে যেসব বিবেচনায় আনতে হয়, তা হচ্ছে:

১. সুঘ্রাণ

২. স্বাদ

৩. অম্লতা

৪. মুখের অনুভূতি

৫. কফি সেবনোত্তর অবস্থা

একমাত্র অম্লতার ব্যাপারটিই এখানে অস্পষ্ট। আসলে কফিতে এসিড বা অম্ল থাকে—বিভিন্ন ধরনের অম্ল। যেমন সাইট্রিক এসিড। এখানে কিন্তু অম্লতার স্তর বা প্রকরণের কথা বলা হচ্ছে না। এটা অনুভূতি ও স্বাদের মিশ্রণ; টক নয়, অতিরিক্ত তিতকুটে নয়—এমনটা ভালো মন্তব্য।

কফি ক্যাপসুল

কফি ক্যাপসুলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। চলতি দশকের শেষে কফি ক্যাপসুলের বাজার প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে। ১৯৮০-এর দশকের শেষে নেসপ্রেসো ক্যাপসুল বাজারে আসে। মেশিন থেকে কফি বের করে এয়ারটাইট ছোট পাত্র বা পডে ঢুকিয়ে লিড সিল করে দেওয়া হয়। নেসলে কোম্পানির প্রকৌশলী এরিক ফাভরে ১৯৭৫ সালে ইতালির এসপ্রেসো বার ক্যাফেতে এসে বুঝলেন, বারিস্তা দানা এসপ্রেসো মেশিনে যেভাবে কফি বের করে আনছে, তার একটি রেডি মেড মিনি ভার্সন দরকার। বছর দশেক কাজ করে তিনি সফলভাবে কফি বের করে ক্যাপসুলে পুরতে শুরু করলেন। ১৯৮৬ সালে এর পেটেন্ট রেজিস্টার্ড করালেন এবং বাজারে ছাড়লেন। তিনি চেয়েছিলেন এটা সুলভ ও সহজ ব্যবহার্য একটি কফি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু তার পরপরই এই বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করা জ্যা-পল গেইলার, তিনি নেসপ্রেসোকে লাক্সারি কফি হিসেবে রিব্র্যান্ড করলেন এবং দাম বাড়িয়ে দিলেন ৫০ ভাগ। তাতে বরং নেসপ্রেসো ক্যাপসুলের আবেদন বেড়ে গেল এবং আরও কোম্পানি কফি ক্যাপসুল বানাবার উদ্যোগ নিল। এল গ্রিন মাউন্টেন, কফি রোস্টার কোম্পানি, কেউরিগ, সিঙ্গল সার্ভ ক্যাপসুল। ২০২০ সালে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে প্রায় ৪০০ ব্র্যান্ডের কফি ক্যাপসুল এসে গেছে। হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ ক্যাপসুল সিঙ্গেল সার্ভিং নেসপ্রেসো কফি খাওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ মিনিটে ২৪ হাজার ক্যাপসুলে ২৪ হাজার মগ/কাপ কফি খাওয়া হচ্ছে। অন্য কোনো ব্র্যান্ড নেসপ্রেসোর কাছাকাছি আসতে পারেনি, এর বাজার বিশ্ববাজারের অর্ধেকেরও বেশি। হিসাবে উঠে এসেছে, মিনিটে ৩৯ হাজার হাজার কফি ক্যাপসুল উৎপাদন করা হচ্ছে। দ্বিতীয় জনপ্রিয় কেউরিগ বিক্রি ২০২২ সালে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ইতালির ব্র্যান্ড লাভাৎজা ক্যাপসুল একচেটিয়া ইতালির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। জার্মানদের প্রিয় একটি ব্র্যান্ড হচ্ছে ক্যাফিটলে। আর ঢাকার রাস্তায় অলিগলিতেও এখন ভ্যানে কি ভ্রাম্যমাণ কফি বিক্রেতার কথা তো শুরুতেই বলেছি। ঢাকায় কফির জয় জয়কার চলছে, তরুণদের হাত ধরেই। অধিকাংশ কফি শপের আড্ডারত মুখ তারাই।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.