দৃশ্য, প্রতিমা, ওল্ড টেস্টামেন্ট

ইজেল

শ্যহর খালিফেহ; অনুবাদ: মাহমুদ আলম সৈকত
31 October, 2023, 05:55 pm
Last modified: 31 October, 2023, 05:55 pm

[ফিলিস্তিনি লেখক শ্যহর খালিফেহ (জন্ম ১৯৭১) একাধারে গল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং সম্পাদক। এ পর্যন্ত এগারোটি উপন্যাস রচনা করেছেন, যা ইংরেজি, ফরাসি, হিব্রু, জার্মান, স্প্যানিশ এবং অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাসের একটি 'ওয়াইল্ড থর্নস'  (১৯৭৬)। তিনি তার উপন্যাস 'দ্য ইমেজ', 'দ্য আইকন অ্যান্ড দ্য কোভেনেন্ট'-এর জন্য ২০০৬ সালে নাগিব মাহফুজ সাহিত্য পদকসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন।]


বিয়ের আসর থেকে আমার পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়েই এই গল্পের শুরু। আসলে আমার মামা এই বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেন, শতভাগ পারিবারিক বিয়ে যাকে বলে। পালিয়ে গিয়ে, শহরের বেশ খানিকটা দূরের এক বিস্মৃত গ্রামে আমি ঠাঁই নিই। কিন্তু আমার বিবেক তাতে দারুণভাবে বিচলিত হলো। আমি আমার শিল্পমনস্ক মামার জন্য যে আকাক্সক্ষা অনুভব করেছি, তা এমন এক অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্ম দিয়েছে যে মামার সব দুঃখ, তার হতাশা, তার অনুনয়গুলির জন্য নিজেকে দায়ী ভাবতে শুরু করলাম। মামা তার সমস্ত আশা-ভরসা আমাতেই লগ্নি করেছিলেন। তার কাজ-কারবারের প্রতি আমার অসম্ভব স্পৃহা দেখে, বা তিনি হয়তো আমাকে একভাবে পড়তে পেরেছিলেন, যার ফলস্বরূপ তিনি প্রায়ই বেজার মুখে বলতেন, 'ইশ্, তুই যদি আমার ছেলে হতি...তোর মধ্যে শিল্প টইটুম্বুর করছে রে!'

মামার ছেলেরা, মানে আমার মামাতো ভাইয়েরা একেকটা অকর্মার ঢেঁকি। ফলে মামা তার মেয়ে অর্থাৎ আমাকে মামাতো বোনের সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন অনেকটা 'সোনার টুকরো ছেলে'র স্বাদটা পুষিয়ে নেবেন বলে। মামাতো বোনের চোখ দুটো যেন দুধের পেয়ালায় চোবানো নীল মার্বেল! জিপসামে গড়া পুতুলের মতো। কিন্তু আমি আমার মামা, তার মেয়ে এবং জিপসামের পুতুলের কাছ থেকে পালিয়ে এসেছি। এর আগেও একবার আমি মাকে একা রেখে পালিয়ে গিয়েছিলাম, এবারে তাকে জেরুজালেমে আমার বোন সারার কাছে রেখে এলাম। ওই প্রত্যন্ত গ্রামে আমি সস্তা দামে হতাশাঘেরা একটা ঘর ভাড়া নিয়েছি। স্কুলের ছুটিছাটা আর ঈদ-পরবের ছুটির দিন ছাড়া আমি মা-বোনের কাছে বিশেষ বেড়াতে যাই না।

বস্তুত আমার ঘরটি এক কামরার বড় আকারের ঘর, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই তা এ যুগের না, ভিন্ন কোনো যুগে বানানো। সম্ভবত আকাশ থেকে ছিটকে পড়া কোনো বিশাল শিলাখণ্ড কুঁদে এটি বানানো, এবং সেই-সময় সিমেন্টের ব্যবহারও আবিষ্কার হয়নি। ছাদটা মসজিদের ছাদের মতো গম্বুজাকৃতির, জানালাগুলি এতই ছোট যে প্রায় কোনো আলোই ঢোকে না ঘরে। দিনরাত বাতি জ্বালিয়ে রাখতাম, যাতে করে ঘরের ভেতর হাঁটতে গিয়ে হোঁচট না খাই। পাথুরে মেঝেটার একপাশে দেয়াল ঘেঁষে লম্বা একটা বেদিমতো আছে, বেদির শেষ ভাগে বেসিনের মতো একটা খোঁদল। এই জায়গটায় একসময় অ্যাবিসিনিয়ান মোরগ-মুরগির জন্য জল, খাবার ও অন্যান্য পশুখাদ্য মজুত করে রাখা হতো। আমি জায়গাটায় কাঠের তক্তা এবং গদি দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম। কখনো সেটা আসন হিসাবে, কখনো জিনিসপত্র রাখার তাক হিসাবে, বাতিল মাল ডাই করে রাখার কাজে ব্যবহার করতাম। এবং এই মুরগির খাঁচাটাতেই আমার প্রায় অন্ধের জীবনযাপন, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে, চারপাশটাকে ভুলে থেকে।  

কেবল বসন্ত এলেই আমি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে আসতাম। ধীরে ধীরে উষ্ণতা ঘিরে ধরছে, পৃথিবী সবুজ হয়ে উঠেছে, কুঁড়িগুলো ফুল হয়ে ফুটে উঠছে, দেখতে পেতাম। তারপর আমি গ্রামের মোড়গুলো পার হয়ে, সর্পিল বাঁকগুলো পেরিয়ে হাঁটতাম টিলাগুলোর দিকে, এর আগে চড়া হয়নি এমন পাহাড়গুলোয় চড়তাম। কোনো একটা চূড়ায় বসে দিগন্তরেখায় আঁকা দূরের নেতানিয়া কিংবা জাফা কিংবা তেল আবিব উপকূলের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, একটা দীর্ঘ উপন্যাস লেখার স্বপ্ন দেখতাম, যেখানে এই ভূমি, এই প্রকৃতি এবং এর ইতিহাস ধরা থাকবে। এবং এটি আমাকে মামার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সাহায্য করবে; কেননা তিনিই আমাকে শিল্প ও সাহিত্যের সুরা পানে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, আমার সহজ-সরল যাপনটিকে আনন্দময় করে তুলেছিলেন। কিন্তু আমি আমার সংবেদন পুনরুদ্ধার করতে চাই; কারণ, তার মগজহীন মেয়েকে বিয়ে করতে আমার যে অস্বীকৃতি, তা আমাকে ভীষণ বিষণ্ন, পর্যুদস্ত এবং ক্লান্ত করে ফেলেছিল। ফলে আবার আমি ঘরে ফিরে আসতাম, দিনের পর দিন টানা সেখানে নিজেকে বন্দী করে রাখতাম, যতক্ষণ না বসন্ত ফিরে আসছে, আমি  বিষণ্নতা ঝেরে ফেলে উঠতে পারছি। ঘুমের ঘোরে, স্বপ্নে, আমি প্রাণ ভরে বাগানের ঘ্রাণ টেনে নিয়ে গ্রামের অলিতে-গলিতে হাঁটতাম, পাখিদের গান শুনে শুনে।

একদিন অজান্তেই আমার পা গ্রামের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে নিয়ে গেল, সেখানে আমি নতুন কিছু খুঁজে পেলামÑএকটি কবরখানা, যা এর আগে আমার নজর এড়িয়ে যায়। এখানকার কবরগুলোর বেদি একটু নিচু এবং সমতল, বেশ কয়েকটাতে ক্রুস কাঠ দেওয়া এবং কিছু কিছুতে উদ্ভট রকমের ফলক। নামগুলোও কেমন খাপছাড়া মিশেল, অঁতন, অ্যান্তইনেত্তে, সিমোন। কাছেই একটা গির্জায় ঘণ্টা বাজছে, শুনতে পেলাম, বুঝতে পারলাম কেন প্রতি রবিবার গ্রামের অর্ধেক জনসংখ্যা অদৃশ্য হয়ে যায় এবং গ্রামের অর্ধেক দোকান বন্ধ হয়ে যায়। অরেকটি স্কুলঘরের অস্তিত্ব আবিষ্কার করলাম। স্কুলটা সরকারি স্কুল না, বা ত্রাণ সংস্থা দ্বারাও পরিচালিত না, এটির পরিচালনায় গির্জা কতৃপক্ষ। পরিচালনা কমিটির প্রধান স্বভাবতই একজন পাদ্রি, তেকোনা ছাটের বাহারি দাড়িঅলা এক বৃদ্ধ। তিনি শুদ্ধ উচ্চারণে চোস্ত আরবি বলতে পারতেন। আসলে তিনি আমার চেয়েও লাগসই টীকা-টিপ্ননীসমেত খুতবা পাঠ করতেন, আরবদের ইতিহাসকে উদাহরণে টেনে এনে টেনে, প্রাক্-ইসলামি যুগের আখ্যানসমূহ আবৃত্তি করতে পারতেন। তিনি তার ছাত্রদের বেশ কিছু দেশাত্মবোধক গান শিখিয়েছিলেন, যা গাওয়ামাত্রই বা শুনলে পরে হৃদয়ে অপার দেশপ্রেম বয়ে যেত। আমি নিজেও তার কাছ থেকে সেই গানগুলো শিখেছি এবং আমার নিজের ছাত্রদের মন দিয়ে শিখিয়েছি।

অর্থাৎ আমি নিজেকে এমন একটি সমাজের সাথে একাত্ম করতে শুরু করেছি, যা আমার নিজের মধ্েযই বিদ্যমান, যে সমাজের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে, রকম আছে, এর অনন্য কিছু ব্যাপার আছে। এবং আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে এই সমাজটি আমি ঠিক যে রকমটি জানতাম, তার চেয়েও বেশি পরিমার্জিত, দারুণ মনোরম, আর তা এতটাই যে প্রায়ই আমার মনে হতো আমার নিজের কোনো দেশ নাই; ফলে আমি যদি আমার শিকড়গুলো এই মাটিতে পুঁতে দিতে পারতাম! গির্জার আঙিনা আর কবরখানাটা ঠিকঠাক দেখা যাবে, এ রকম যুতসই একটা টিলা বেছে নিয়ে, ওটার চূড়ায় পাথুরে চাঁইটাতে বসে প্রতি রবিবার উজ্জ্বল বাহারি পোশাকের হাস্যোজ্জ্বল তরুণ-তরুণীদের গির্জার পথে আসতে দেখতাম। তাদের পিছনে খানিকটা দূরত্ব রেখে বৃদ্ধারা হেঁটে আসত, কালো গাউন আর মাথায় ফোলা ফোলা টুপি চাপিয়ে। দূর থেকে দেখে মনে হতো ধান-ভুসির টুকরি থেকে ভরপেট খেয়ে একদল নাদুসনুদুস হাঁস দুলতে দুলতে চলছে। ধীরে ধীরে জপের সম্মিলিত তান কণ্ঠে কণ্ঠে বেজে উঠত, নারী-পুরুষ কণ্ঠের মিশেল সুরের এমন একটা ধারা তৈরি করত, যা গির্জার টাইলের ছাদ পেরিয়ে, জলপাইগাছের সারি ফেলে, পাইনের মেঘের ওপরে ভেসে বেড়াত। যেন মিলিত কণ্ঠের স্তম্ভটি দিগন্ত ছাড়িয়ে বৃত্তাকারে আকাশের ওপারে  চলে যাচ্ছে। এবং আমি অনুভব করতাম আমার আত্মাও যেন ঊর্ধ্বমুখী হয়ে মেঘের ওপরে পাখির মতো উড়ছে। 

ঠিক জানি না, কখন কীভাবে আমি মরিয়মকে ভালোবাসতে শুরু করি। সম্ভবত ওই নির্মল পরিবেশ, ওই দৃশ্যের পটভূমিতে কেমন জাদুময় একটা ব্যাপার, একটা অস্পষ্ট মুগ্ধতা...সবকিছু মিলিয়ে বিষয়টা হয়ে গেল। কিংবা হয়তো মরিয়ম নিজেই এর কারণ, সম্ভবত সে এবং তার ব্যক্তিত্ববিষয়ক চাউর হওয়া অদ্ভুত গল্পগুলো আমার কল্পনাকে জর্জরিত করার জন্য দায়ী ছিল। ঘটনার কোনো ক্রম, কোনো পরম্পরা ছাড়াই আমি তার প্রেমিক হয়ে উঠলাম।

কিন্তু আমি হঠাৎ করেই সম্বিত ফিরে পেলাম, সজাগ হয়ে উঠলাম; কেননা, আমি এমন এক স্বপ্নদ্রষ্টা, যার কোনো কিছুতেই দৃষ্টি বা চিন্তা নিবদ্ধ নয়। আমি বিচ্ছিন্ন, উদ্বেগ-আক্রান্ত, সন্তাপ আর দুঃখে পরিপূর্ণ যেসবের যৌক্তিক কোনো কারণও আমি জানি না। আমি তাকে কাছে থেকে দেখিনি, তার কণ্ঠ শুনিনি, তার সাথে কথা বলিনি; এমনকি আমার অস্তিত্ব বা আমি কে, তা জানতেও মরিয়মের হয়তো মাসের পর মাস লেগে যাবে। সেই মাসগুলো, সেই বসন্ত, আর সেই ফুলেরা, আর কবিতারা, গির্জার সেই সমবেত কণ্ঠধ্বনিÑসম্ভবত এরা সবাই-ই আমার দুর্দশার জন্য দায়ী ছিল। অথবা হতে পারে পাহাড়ের চূড়ায় সূর্যাস্তের জাদুকরী প্রভাব, আকাশে ভেসে বেড়ানো সুর আর গোধূলির লাল আভা কিংবা পৃথিবী থেকে ঠিকরে ফিরে আসা আলো, আলোটার ছায়ায় কালো আলখাল্লায় মোড়া ফ্যান্টমের মতো তার জেগে ওঠা অথবা পুরোনো কবর ছেড়ে। ইতিহাসের একরত্তি বিন্দুর মতো ছিল সে, সন-তারিখহীন। যেনো ক্রুশ কাঠের মতো, যেন রোমানীয় স্তম্ভের অবশিষ্টাংশ, যেনো যিশুর বয়সি প্রাচীন জলপাইগাছ, যার ছায়ায় নুর আল-দিন আল-যানকি যখন আল-কুদসকে মুক্ত করার প্রচারাভিযান শুরু করেন...এতটাই প্রাচীন। পৃথিবীটা স্বর্গে পরিণত হওয়ার পথে সমস্ত কিছু কীভাবে একে অন্যেতে মিশে যায়, গোপন প্রার্থনালয়, আমার স্বপ্নের মতো স্বর্গ, আমার কবিতা, আমার কিংবদন্তিরা আর পঞ্চাশের দশকের গল্পকারদের গল্পের মতো দেখা দেয়?

গল্পের শুরুটা হয়েছিল এক রবিবারে। যথারীতি পাহাড়ের চূড়ায় বসে পুণ্যার্থীদের আনাগোনা দেখছিলাম। সরু রাস্তাটা পার হয়ে সবাই গির্জার উঠানে জড়ো হওয়ার পর সবাই পাদ্রির হাত থেকে সেবা গ্রহণ করল। সেবাদানের পর পাদ্রি জপের সুর তুললেন। একে একে সবাই সেই জপে কণ্ঠ মেলাল, জপধ্বনিটি বসন্তের সুবাস হয়ে পাইনগাছের ছায়ায় মিশে যাওয়ার পরে; গির্জার অন্য সেবায়েতরা সূর্যাস্তের নিভতে থাকা আলোয় মিশে যেতে যেতে, আমি এক অলৌকিক কায়াকে ভিড় থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়ে কবরখানার দিকে একা হেঁটে যেতে দেখলাম। একটি নির্দিষ্ট কবরের সামনে এসে থমকে দাঁড়াল অবয়বটি। চোখে আটকে রইল দৃশ্যটি, একটা কালো বিন্দু পরম নীরবে চলছে। সেবায়েতদের কণ্ঠস্বর, তাদের ছায়া আর ফিরতি অভিবাদন সবই মিলিয়ে গেল, শুধু অবয়বটি লালিমার গায়ে কালো বিন্দু হয়ে আছে। ভেতরে ভেতরে একধরনের বিভ্রান্তি অনুভব করলাম। এটা কি কোনো অজানা খাদের কিনারায় দাঁড়ানোর বার্তা? অস্পষ্ট আভাস, বাতাসের মায়াবী খেলা, নির্জনতার বিষণ্নতা বা নতুন কোনো আকাক্সক্ষা? নাকি স্রেফ আমার কল্পনা? সে কাঁদছিল না। তার হাতে ধরা ছোট বই থেকে সে কিছু একটা পড়ছিল, একটা ছোট ঘেরের জপমালা তার কবজি থেকে ঝুলছে। ক্রসটাও দেখতে পাচ্ছিলাম, ছোট্ট প্রজাপতির মতো। ভেবেছিলাম এই গির্জারই কোনো একজন নান হবে হয়তো, হয়তো সদ্যই যোগ দিয়েছে এইখানে। আমি আমাদের মধ্যকার দূরত্বটি অতিক্রম করতে চেয়ে, টিলা থেকে দ্রুত নেমে এসে সে ঠিক যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখানেই পৌঁছে তাকে বলতে চেয়েছিলাম: তুমি মূলত ছবি। অথবা কবিতা, কিংবা দেবী, বা একটি প্রেমের গল্প, যা বেঁচে থাকার  সাহস দেয়Ñতাই চলো, এখনই, চলো পালাই। কিন্তু কোথায় পালাব, কিসের থেকে পালাব, কীভাবে? কে এই নারী? কী তার গল্প, সে কাকে হারিয়েছে? তার নাম কি সালমা? ফাদওয়া? নাকি নাজওয়া, হয়তো...

মরিয়ম। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারলাম তার নাম মরিয়ম। এবং এ-ও জানলাম যে সদ্যই সে তার ছোট ভাইকে হারিয়েছে, তার জন্যই এই শোক। এবং সে এখানে একা তার অন্ধপ্রায় মায়ের সাথে থাকে, তার বড় ভাইয়েরা ব্রাজিলে অভিবাসী। এই দুজনের পরিবারটি ভাইদের, আত্মীয়স্বজনের সাহায্য-সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। একসময় এরা অবস্থাসম্পন্ন যৌথ পরিবারেরই সদস্য ছিল, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একদা যাদের প্রচুর জমি-জিরেত ছিল। জলপাইয়ের বন আর আঙুরের বাগান। ডুমুর, ডালিম, নাশপাতির বাগান। পাহাড়ের ঢালে তার পূর্বপুরুষদের পেল্লায় বাড়ি ছিল। হাঁস-মুরগি আর গবাদি পশুর পাল, ভাঁড়ারে আনাজের ভরভরন্তি। বাজারের লাগোয়া একটা জলপাইয়ের তেলের কল। 

এত সব আমি কোত্থেকে জানতে পেলাম? গ্রামের মুদিখানা থেকে, মুদিখানায় জড়ো হওয়া গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন বয়সীদের কাছ থেকে। আপনাকে যা করতে হবে সেটা হলোÑমুদির দোকানের সামনের চাতালে বসে কফি পান করতে হবে, কিছুক্ষণ পর এক বোতল পেপসি স্ট্রসহ। কান সজাগ রেখে কেবল শুনে যাবেন, কথার চড়াই-উতরাই মেনে গুড়গুড় করে পেপসি টানবেন। ওই মানুষটা মারা গেল...বুড়িটা এখনো বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে...মানুষটা একে বিয়ে করেছিল...পরে অবশ্য তালাকও দিয়ে দেয়...না দিয়ে কি করবে? একটার পর একটা শুধু মেয়ে বাচ্চাই জন্ম দিচ্ছিল...কী তারপর? ওদের মেয়েটার ব্যাপারে? তুমি কিছু জানো না? খোদা রহম করুন তোমাকে! বদ হাওয়া থেকে রক্ষা করুন! সে যদি আমার বোন হতো বা মেয়ে হতোÑআমি নিজের হাতে তার গলা টিপে দিতাম, চিরতরে ওর নিশানা মুছে দিতাম। কী অবস্থা করেছে গ্রামটার! এই গ্রামে এখন টেকা দায়। 

[আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ: মেরিলিন বুথ]

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.