আগাথা ক্রিস্টির এরকুল পোয়ারোর পেছনে কে?

ইজেল

29 September, 2023, 01:55 pm
Last modified: 29 September, 2023, 02:03 pm
পোয়ারো আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাসে প্রথম আবিষ্কৃত হলেন ‘মিস্টেরিয়াস অ্যাফেয়ার্স’-এ ১৯২০ সালে আর ১৯৭৫ তার উপন্যাস ‘কার্টেইন’-এ মৃত্যুবরণ করলেন। মাঝখানে কেটে গেছে ৫৫ বছর। আবার এটাও জোর দিয়ে বলা হয়, আগাথার সৃষ্ট চরিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে তার প্রথম মহাযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে। জার্মান সৈন্যবাহিনী বেলজিয়াম দখল করে নিলে ইংরেজরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ে তাদের আশ্রয় দেন। তা না হলে হয়তো আগাথা ক্রিস্টির হাতে পোয়ারোর মতো চরিত্র সৃষ্টিই হতো না।

বহু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী আগাথা ক্রিস্টির এরকুল পোয়ারো। অত্যন্ত সময়ানুবর্তী তার গোয়েন্দাবৃত্তির যে জীবন, তার একেবারে শেষ পর্যন্ত তিনি একটি পকেটঘড়ি বহন করতেন, তিনি নিজেকে মানুষের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করতেন, যেন তারা তাকে অপরিচিত ও বোকাটে ভেবে আন্ডারএস্টিমেট করে থাকে। এই মানুষটি পুরোটাই কল্পলোকের, নাকি তার কাছাকাছি ধরনের কোনো মানুষ বাস্তব পৃথিবীতে বিচরণ করেছেন, এটা  কৌতূহল ও গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছিল।

আগাথা ক্রিস্টির জীবন ও লেখালেখি নিয়ে যারা চর্চা করেছেন, তাদের একজন ডেভনে অবস্থিত নৌঘাঁটিতে নৌসেনা কমান্ডার মাইকেল ক্ল্যাপ মনে করে যে মানুষটিকে কল্পনায় এনে আগাথা ফিকশন লিখে গেছেন, তিনি তাকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। মাইকেল ক্ল্যাপ বংশতত্ত্ববিদ (চৌদ্দ পুরুষের নাম-ঠিকানা যিনি খুঁজে বের করেন, কুর্সিনামা বিশারদ) হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

প্রথম মহাযুদ্ধের সময় বেলজিয়াম থেকে একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা জ্যাক হর্নোয়া প্রথম মহাযুদ্ধে যোগ না দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে চলে আসেন। আশ্রয় নেন ইংল্যান্ডের ডেভন উপকূলের ছোট শহর টর্কিতে। সেখানে আগে থেকেই বেলজিয়ান শরণার্থীদের একটি কলোনি গড়ে উঠেছিল। স্বদেশি অনেকেই থাকার কারণে বিভিন্ন পেশা ও বিভিন্ন পরিচিতির বহুসংখ্যক বেলজিয়ান সেখানে নিম্নমানের জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছিল। মানুষ যুদ্ধের কারণে অতিষ্ঠ ছিল ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল এবং বাজারে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের সংকট চলছিল, চ্যারিটির মাধ্যমে চাঁদা তুলে মানুষের জীবন বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল।

মঁশিয়ে হার্নোয়া সেখানে মিসেস পটস শ্যাটো নামের এক নারীর বাড়িতে অনেকটাই আশ্রিতের মতো থাকতে শুরু করেন। একই রাস্তার উল্টো দিকে কিছুটা ওপরের দিকে ছিল আগাথা ক্রিস্টি পরিবারের বসবাস। মাইকেল ক্ল্যাপ তার গবেষণায় একটি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় তুলে ধরলেন। মহাযুদ্ধকালীন অসহায় বেলজিয়ান শরণার্থীদের জন্য মিসেস পটস শ্যাটো খয়রাতি সাহায্য ওঠাবার একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন করেন। এই আয়োজনের সংবাদ স্থানীয় সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে এক তরুণী পিয়ানো বাজিয়ে শুনিয়েছে। আর গবেষণায় উঠে এসেছে সেই তরুণীই আগামী দিনের অন্যতম প্রধানও জনপ্রিয় লেখক আগাথা ক্রিস্টি। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত একমাত্র পুলিশ বা গোয়েন্দা হচ্ছেন মঁশিয়ে হর্নোয়া। কিন্তু এতে তো প্রমাণিত হয় না যে এরকুল পোয়ারোর পেছনের মানুষটি হচ্ছেন তিনি, বরং এটাকে বলা যায় কোইন্সিডেন্স, ঘটনাচক্রে সাক্ষাৎ।

কিন্তু আগাথা ক্রিস্টি তার আত্মজীবনীতে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা-এই বিশেষ চরিত্রের জাতীয়তা এবং বৈশিষ্ট্যের যে বিতর্ক, তার কিছুটা সমাধান দিয়েছেন: 'তখন আমার মনে পড়ে বেলজিয়াম শরণার্থীদের কথা। টরে আমরা যে চার্চের অধীনে ছিলাম, তাতে বেশ একটা বেলজিয়ান কলোনি ছিল। তাহলে একজন বেলজিয়ান গোয়েন্দা নয় কেন? আমি ভাবলাম। কলোনিতে সব ধরনের শরণার্থী। সেই শরণার্থী পুলিশ অফিসার হলে কেমন হয়-অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার?'

আগাথা ক্রিস্টি

তাহলে কি মঁশিয়ে হার্নোয়াই মঁশিয়ে পোয়ারোর পেছনের মানুষটি নন? তরুণী বেলজিয়ান শরণার্থী হিসেবে সে সময় যাদের দেখেছেন, তিনি তাদেরই একজন। এর বেশি কিছু জানার সুযোগ নেই- মঁশিয়ে হার্নোয়া কেমন করে হত্যারহস্য উদ্ঘাটন করতেন? তিনি কি তার গোঁফে তা দিয়ে দুপ্রান্ত সুচালো করে রাখতেন?

এরকুল পোয়ারো

আগাথা ক্রিস্টি পরিবারের একটি বড় বাড়িতে বসবাস। স্পষ্টতই সেই বাসার সামনের রাস্তায় একটু নিচের দিকে উল্টো পাশের বাড়ির মিসেস পটস শ্যাটোর সাথে তাদের জানাশোনা ছিল। আগাথা সেই পুলিশ অফিসার এবং পোয়ারোকে নিয়ে বললেন, কত বড় ভুল আমি করেছি। শুরুতেই দেখা গেছে সেই পুলিশ অফিসার তেমন তরুণ নন। তাহলে তো আমার ফিকশনাল ডিটেকটিভের বয়স এত দিনে শতবর্ষ ছাড়িয়ে গেছে। ভুলভ্রান্তি যা-ই হোক, বেলজিয়ান গোয়েন্দার ওপরই আমার ফিকশনের গোয়েন্দাকে স্থাপন করেছিলাম। ঔপন্যাসিক সোফি হান্নাহ এরকুল পোয়ারোর বিশেষ ভক্ত। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে নিয়ে লেখা সব বই পড়েছেন। তিনি মনে করেন, হতে পারে বেলজিয়ান শরণার্থী কলোনিতে একজন মঁশিয়ে হার্নোয়া থাকতে পারেন কিন্তু তিনি কিছুতেই মঁশিয়ে পোয়ারোর মতো গোয়েন্দা নন। কোনো বাস্তব চরিত্রের প্রতিফলন মঁশিয়ে পোয়ারোর হতে পারেন না।

পোয়ারো আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাসে প্রথম আবিষ্কৃত হলেন 'মিস্টেরিয়াস অ্যাফেয়ার্স'-এ ১৯২০ সালে আর ১৯৭৫ তার উপন্যাস 'কার্টেইন'-এ মৃত্যুবরণ করলেন। মাঝখানে কেটে গেছে ৫৫ বছর।

আবার এটাও জোর দিয়ে বলা হয়, আগাথার সৃষ্ট চরিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে তার প্রথম মহাযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে। জার্মান সৈন্যবাহিনী বেলজিয়াম দখল করে নিলে ইংরেজরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ে তাদের আশ্রয় দেন। তা না হলে হয়তো আগাথা ক্রিস্টির হাতে পোয়ারোর মতো চরিত্র সৃষ্টিই হতো না।

মঁশিয়ে পোয়ারো ১৯৩৬ সালে আগাথার প্রকাশককে চিঠিতে নিজের সম্পর্কে জানিয়েছেন:

আমার জন্মভূমি বেলজিয়ামের গোয়েন্দা হয়ে কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। আপনারা জানেন যুদ্ধ শেষ হবার পর থেকে আমি কয়েকটি রুম নিয়ে আমার পুরোনো বন্ধু হ্যাস্টিংসের সাথে বাস করছি।

আমি লন্ডনে একটি প্রাইভেট ডিটেকটিভ অফিস খুলেছি, গত জুন মাসে লন্ডনের নতুন সার্ভিস ফ্ল্যাট হোয়াইট হ্যাভেন ম্যানশনে উঠেছি, এই ভবনটি আমার পছন্দ করার কারণ এটি যথার্থ জ্যামিতিক অনুপাত মেনে নির্মাণ করা হয়েছে।

কিছু কিছু বিষয়ে আমার বাতিক রয়েছে। কোনো কিছুর সামান্য ওলট-পালট ও বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখলে তা আমার মেজাজ খারাপ করে দেয়। আমার বুকশেলফে সবচেয়ে লম্বা বইটা রাখি এক প্রান্তে, তারপর দ্বিতীয় দীর্ঘতম, তারপর তৃতীয় দ্বিতীয় দীর্ঘতম, এভাবেই। আমার ওষুধের বোতলগুলোও নিখুঁতভাবে মাপ অনুযায়ী সাজানো। আপনার নেকটাই যদি ঠিকমতো বাঁধা না হয়ে থাকে, এটা ঠিক করার জন্য নিজেকে প্রতিহত করা আমার পক্ষে একটি দুরূহ ব্যাপার।

শৃঙ্খলা এবং পদ্ধতিই হচ্ছে আমার ঈশ্বর। সকালের নাশতায় আমি কেবল টোস্ট খাই, কিন্তু তা ছোট ছোট নিখুঁত চৌকোণে কাটা হতে হবে, ডিম অবশ্যই দুটো হতে হবে এবং অবশ্যই একই আকৃতির।

আমি পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার একজন মানুষ। মাথাটা ডিম্বাকৃতির কিঞ্চিৎ বাম দিকে ঝুঁকিয়ে রাখি। বলা হয়ে থাকে, আমি যখন উদ্দীপিত হই, আমার চোখ সবুজাভ হয়ে ওঠে। আমার বুট মসৃণ প্যাটেন্ট চামড়ার, উজ্জ্বল ও স্মার্ট। আমার ঘড়িটা সোনাতে অ্যামবোশ করা। আমার ঘড়িটা আকারে বড়, একেবারে সঠিক সময় দেয়। আমার গোঁফ লন্ডনে সবচেয়ে সুন্দর...

আমি জানি, দৃশ্যমান সাক্ষ্যের প্রতি আমার কিছু অবজ্ঞা রয়েছে। আমি বসে ভাবতে ভালোবাসি-আমার পুরোনা বন্ধু হ্যাস্টিংস বলে মগজের 'ছোট ছোট ধূসর কোষগুলো কাজে লাগিয়ে' আমি রহস্য উদঘাটন করি। আমি আসলে যে কাজটা করি তা হচ্ছে, একটার পর একটা ঘটনা সাজাই, নিখুঁতভাবে এবং ঘটনার ক্রম অনুসারে।

আগাথা ক্রিস্টির বিবিসি সাক্ষাৎকার

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সর্বাধিক বিক্রিত গ্রন্থের লেখক হিসেবে ১ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়া শেক্সপিয়ারের পরই আগাথা ক্রিস্টির অবস্থান। তার নাটক 'মাউসট্র্যাপ' ১৯৫২-র ২৫ নভেম্বর ওয়েস্ট এন্ডের অ্যাম্বাসেডর থিয়েটারে প্রথম মঞ্চায়িত হয়। তারপর আর থামার সুযোগ ছিল না। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ নাটকটির ২৭,৫০০তম মঞ্চায়ন হয়েছে। এই রেকর্ড ভাঙার সুযোগ সম্ভবত আর নেই।

আগাথা ক্রিস্টির বিবিসি সাক্ষাৎকার

তিনি প্রায় সারা জীবনই সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেছেন, সাক্ষাৎকার দেননি। ৬৫ বছর আগে ১৯৫৫ সালে 'ক্রাইম' উপন্যাসের ডাচেস আগাথা ক্রিস্টি বিবিসি রেডিওকে একটি সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়েছিলেন। বিবিসি এই সাক্ষাৎকারে আগাথা ক্রিস্টির গোয়েন্দার মতোই তদন্ত করে তাকে বের করার চেষ্টা করেছে: কেমন করে তার গল্পের ধারণাগুলো শেষ পর্যন্ত চোখধাঁধানো বেস্ট সেলিং গ্রন্থে পরিণত হয়!

১৯৭৬-এ তার মৃত্যুর পর ৪৪ বছর পেরিয়ে গেছে, এখনো তার বই আউট অব প্রিন্ট থাকছে না, এখনো তার কাহিনির অনুবাদ হচ্ছে। তাকে এখনো বলা হয় 'দ্য কুইন অব ক্রাইম' কিংবা 'দ্য ডাচেস অব ডেথ'। তিনি সর্বকালের সর্বাধিকসংখ্যক পাঠকের প্রিয় দুটো চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। মিস ম্যার্পল আর এরকুল পোয়ারো। তার সেরা রচনার মধ্যে রয়েছে: 'দ্য মার্ডার অব রজার আর্করয়েড', 'হোয়াই ডোন্ট দে আস্ক ইভান্স', 'উইটনেস ফর দ্য প্রসিকিউশন', 'ডেথ অন দ্য নাইল', 'মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস' এবং 'মাউসট্র্যাপ'।

তিনি বলেছেন, 'আমি দেখতাম মাথার ভেতর গল্প তৈরির কাজ চলছে এবং কোনো কোনো অংশে আমি অভিনয়ও করছি, আমার বয়স ১৬ কি ১৭-তে পৌঁছতেই আমি বেশ কটা গল্প লিখি, বিষণ্ণতায় ভরা একটি উপন্যাসও বয়স একুশে পৌঁছতেই লিখে ফেলি। আর এই সময়ে আমার প্রকাশিত বইটি লেখার কাজও শেষ করি 'দ্য মিস্টেরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অব স্টাইলস', আমি দু-একজন প্রকাশকের কাছে পাঠালাম, তারা আমার বই নিতে রাজি হলেন না। তারপর পাঠালাম জন লেইনের কাছে। প্রায় এক বছর অপেক্ষার পর শুনলাম পাণ্ডুলিপি গৃহীত হয়েছে। এভাবেই শুরু।'

পরের অংশ তো ইতিহাস। তিনি হয়ে উঠলেন শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক।

'আমি তারপর ৫৫টি উপন্যাস ও অনেক গল্প লিখেছি।'

আগাথা ক্রিস্টির মঁশিয়ে এরকুল পোয়ারো

১৯২০ সালে এরকুল পোয়ারো যখন ছাপার অক্ষরে মুদ্রিত গ্রন্থে আবির্ভূত হন, কেউ ভাবেননি তিনি বিশ্বখ্যাতি পাবেন। তিনিও নিজেও জানতেন না তার মৃত্যুর পর নিউইয়র্ক টাইমস তাকে নিয়ে 'অবিচুয়ারি' লিখবে।

মৃত্যুর সময় তার বযস কত ছিল? তা-ও গবেষণাসাপেক্ষ ৬৫ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে।

'কার্টেন' উপন্যাসে বলা হয়েছে, ক্যাপ্টেন হ্যাস্টিংসের সাথে সাক্ষাতের (জুন ১৯৯৬) তেত্রিশ বছর পর ১৯৪৯-এর অক্টোবরে তার মৃত্যু হয়। আগাথা ক্রিস্টির ৩৩টি উপন্যাস ঘেঁটে, যার প্রত্যেকটিতে এরকুল পোয়ারো রয়েছেন, একটি বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে যে ১৮৫৩ থেকে ১৮৮৩- এই সময়ের মধ্যে তিনি জন্মলাভ করেছেন, ৪৩ থেকে ৬৩ বছর বয়সের কোনো এক সময় জার্মান আক্রান্ত স্বদেশ বেলজিয়াম ছেড়ে ইংল্যান্ডে শরণার্থী হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। অনেকের মতে, ৭৬ থেকে ৯৬ বছর বয়সের মধ্যে তার মৃত্যু ঘটেছে।

রহস্য উপন্যাসের চরিত্রের মৃত্যুতেও অবিচুয়ারি লেখা হতে পারে, এই গোয়েন্দা তা দেখিয়ে দিলেন।

আগাথা ক্রিস্টির ৩৩টি উপন্যাস ১টি নাটক এবং ৫০টির বেশি গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র তিনি। এরকুল পোয়ারো চরিত্রে যারা অভিনয় করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন অস্টিন ট্রেভর, জন মোফাত, আলবার্ট ফিনে, স্যার পিটার উস্তিনভ, স্যার আয়ান হোম, টনি র‌্যাানডেল আলফ্রেড মলিনা, অরসন ওয়েলস, কেনেথ ব্রানাগ, ও  ডেভিড সুচে।

যে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না

আগাথা ক্রিস্টির এরকুল পোয়ারোর মৃত্যুসংবাদ

তাকে সৃষ্টি করার কৃতিত্ব যেমন আগাথা ক্রিস্টির, তার মৃত্যুর দায়ও তারই। তিনি এরকুল পোয়ারো।

বহু বছর আগেকার নিউইয়র্ক টাইমস আর্কাইভ থেকে তার 'অবিচুয়ারি' বের করে এনে এখানে একটি সাদামাটা ভাষান্তর উপস্থাপন করা হলো। সংবাদপত্র অবশ্য যুক্তি দিয়ে তার মৃত্যুর ব্যাখ্যা দিয়েছে, কিন্তু যুক্তি না-মানা কোটি মানুষ তা মানতে পারেনি, কেন, এটা তাদের বোধগম্য হয়নি:

খ্যাতিমান বেলজিয়ান গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো মারা গেছেন ১৯৭৫ সালের ৬ আগস্ট।

আন্তর্জাতিক খ্যাতির অধিকারী বেলজিয়ান গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি কত বছর বয়সে মারা গেলেন তা অজানাই রয়ে গেছে।

১৯০৪ সালে বেলজিয়ামের পুলিশ বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি প্রাইভেট গোয়েন্দা হিসেবে ফের সুনাম অর্জন করেন। ডেইম আগাথা ক্রিস্টি তার জীবনকাহিনি নিয়ে অত্যন্ত সফল কিছুসংখ্যক উপন্যাস রচনা করেছেন।

আগাথা ক্রিস্টির এরকুল পোয়ারোর মৃত্যুসংবাদ

জীবনের শেষভাগে এসে তিনি বাতরোগে আক্রান্ত হন এবং তার হৃদ্যন্ত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। তাকে সব সময়ই হুইলচেয়ারবন্দী থাকতে হতো। তাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে এসেক্সের স্টাইলেস কোর্ট নার্সিং হোমে যখন আনা হতো, পাবলিক লাউঞ্জে তাকে দেখে আগের মতোই লাগত। বয়স তার অহংকারে ঘা দিচ্ছিল বলে তিনি তা গোপন করতে পরচুলা পরতেন আর ভুয়া গোঁফ লাগাতেন। তার সক্রিয় দিনগুলোতে কিন্তু তিনি থাকতেন নিখুঁত পোশাকের সদা ধোপদুরস্ত একজন হিসেবে।

মিস্টার পোয়ারো, পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা, এই মানুষটি প্রথম মহাযুদ্ধের সময় শরণার্থী হিসেবে বেলজিয়াম থেকে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন। স্টাইলেস থেকে অনতিদূরে, একটি ছোট্ট শহরে বেশ বড় আকারের একটি গ্রামীণ ধরনের বাড়িতে তিনি তার প্রথম গোয়েন্দা মামলাটি গ্রহণ করেছিলেন। তার মৃত্যুর খবর সকলকে জানিয়েছেন আগাথা ক্রিস্টি নিজেই।

পোয়ারো আসলে অনেকটাই মৃত্যুর কাছাকাছি এসে গেছে, গত মে মাস থেকেই শোনা যাচ্ছিল, কাজেই তার মৃত্যু আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত নয়। আগাথার প্রকাশক ডড, মিডও তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন: যে উপন্যাসে তার শেষ দিনগুলোর বর্ণনা রয়েছে, ১৫ অক্টোবর, সে উপন্যাসটি প্রকাশনার মধ্য দিয়ে তার জীবনের যবনিকা টানা হবে।

শেষ উপন্যাসে এরকুল পোয়ারো প্রকৃত আকর্ষণীয় সেই কর্মচঞ্চল গোয়েন্দার কেবল একটি ছায়া হয়ে এসেছিলেন। এতে তিনি ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলেন, ভীষণ তার অহংকার, ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য উপন্যাসে অসংখ্য রহস্যের সমাধান করেছেন, অনেক ছোটগল্পেও তিনি রহস্য উদ্ঘাটনে আবির্ভূত হয়েছেন। কিন্তু শেষ উপন্যাসে তিনি যেন অবগুণ্ঠিত। তিনিই কি মঁশিয়ে হার্নোয়া?

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.