মহামারির দিনগুলোয় মারির উপন্যাস পাঠ

ইজেল

রিতু পারভি
17 July, 2020, 11:30 pm
Last modified: 18 July, 2020, 02:26 am
“এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে না... সব ধরনের থিয়েটার, প্রায় সব দোকান, রেস্তোরাঁ সবকিছু বন্ধ, রাস্তাগুলো সারাদিন শবযাত্রা আর সারারাত অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে ব্যস্ত।”

এই যে অনিশ্চিত সময়, বলা ভালো অদ্ভুত একটা সময় আমরা পার করছি এবং জীবন-মৃত্যুর রেখাচিত্রটির উঁচুনিচু ঢেউটাকে বাগে আনতে  বেশি বেশি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছি, ঠিক তখনই সাহিত্যে যোগ হচ্ছে কতগুলো শব্দ যেমন পলায়ন, স্বস্তি, আরাম আর সাহচর্য। শুনতে খারাপ লাগলেও এ-কথা সত্য যে অতিমারির গল্পের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বাড়ছেই। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, বিবিধ অতিমারি শিরোনাম সহায়ক পাঠ্যের মতোই পঠিত হচ্ছে।

এমন অনেক উপন্যাসে তো একেবারে ধারাবাহিক সময়ক্রম অনুযায়ী পুরো ঘটনার বাস্তবভিত্তিক বর্ণনাও আছে, ঠিক প্রাথমিক উপসর্গ থেকে শুরু করে একেবারে চুড়ান্ত অবস্থা এবং পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা পর্যন্ত। আর এর মাধ্যমে এটাই বলা হচ্ছে যে আমরা আগেও এমন মারির মুখোমুখী হয়েছি এবং জিতে ফিরেও এসেছি।

চসারের ক্যান্টাব্যারি টেইলসের পটভূমি ছিল ভয়াবহ ব্ল্যাক ডেথ

ড্যানিয়েল ড্যাফোর "১৭২২ অ্যা জার্নাল অব দ্য প্লেগ ইয়ার" বইয়ে ১৬৬৫ সালে লন্ডনে বুবনিক প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার এক ধারাবাহিক বর্ণনা দেয়া হয়। একের পর এক নাটকীয় ও ভূতুড়ে ঘটনার যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তা দেখে বর্তমান সময়ে নতুন ভাইরাসের যে ধাক্কা আর এর ভয়াবহ ক্ষুধা, তার কথাই মনে করিয়ে দেয়।

১৬৬৪-এর সেপ্টেম্বরে, হল্যান্ডে যখন আবার মড়ক শুরু হওয়ার একটা গুজব রটলো ঠিক সেখান থেকেই ড্যাফো তার গল্পটা শুরু করেছিলেন। এরপরে ডিসেম্বর, লন্ডনে প্রথম সন্দেহজনক মৃত্যু। এরপরেই এলো বসন্ত। কীভাবে ছোট ছোট এলাকাগুলোয় মৃত্যু তার ভয়াল থাবা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়েই চলেছে সেটা ড্যাফো তাঁর লেখায় বর্ণনা করেছেন। জুলাইয়ের মধ্যে লন্ডনে শুরু হয় নতুন আইন, যার মুখোমুখি আমরা এখন নিত্যদিন, লকডাউন বিধি। এই নিয়মের মধ্যে, "সব ধরনের গণভোজন বিশেষ করে শহরের কোন প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিবেশিত, যে কোন পাব-এ, ভোজশালায় নৈশভোজ এবং অন্যান্য আনন্দ উৎসব বন্ধ, এই আজ্ঞা সবাই মেনে চলবে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত...।''

ড্যাফো লিখেছেন, "নিজেদের ব্যাপারে বাসিন্দাদের আলস্য ও অবহেলার মতো ভয়াবহ ব্যাপার আর কোন কিছুই ছিলো না।যা শহরের এবং তা তাদের দীর্ঘ সতর্কতার সময়ে, তারাই তীব্র যন্ত্রণার মুখোমুখি হয় যারা এই উপদ্রুত সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বা অন্যান্য দরকারি জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে পারেনি, যেগুলো নিয়ে তারা তাদের গৃহে অন্তরীণ থাকতে পারতো, যা অন্য অনেকেই করেছে এবং তা প্রচুর পরিমাণে করেছে...।''

ড্যাফো লিখেছেন, "অগাস্টের মধ্যে প্লেগ ভয়াবহ এবং দুর্বিষহ হয়ে উঠে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছে। এই সময় পুরো পরিবার, কোন কোন সড়কের সমস্ত পরিবার একসাথে ভেসে গেছে প্লেগের মৃত্যু বন্যায়। ডিসেম্বরের মধ্যে মহামারি ক্লান্তিকর পর্যায়ে পৌঁছায়। এর সাথে ক্ষিপ্র গতিতে চলে আসে শীত। তীক্ষ তুষারপাতের সাথে পরিষ্কার ঠাণ্ডা হাওয়া... যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তাদের বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলো। এর সাথে পুরো শহরের স্বাস্থ্য ক্রমশ ভালো হতে থাকে।অবশেষে শহরের সড়কগুলো আবার মানুষ সমাগমে মুখর হয়ে উঠতে থাকে...মানুষ রাস্তায় নেমে আসে আর ঈশ্বরকে তাদের মুক্তির জন্য ধন্যবাদ জানাতে থাকে।''

শহর-লোকালয় উজাড় হওয়ার কথা পাওয়া যায়, কিন্তু নিরাময়ের ওষুধ নাই কোনো

প্লেগের এমন ধারাবাহিক চিত্রবর্ণনার চেয়ে নাটকীয় আর কী হতে পারে, যখন দুশ্চিন্তা আর আবেগের সাথে সাথে বাঁচার প্রেরণা এক সাথে পদাঘাত করে? অতিমারির এমন বাস্তবসম্মত বর্ণনা কেবল ড্যাফো এবং পরবর্তিতে আলবেয়ার কামু'র মত বাস্তববাদি ঔপন্যাসিকের দ্বারাই সম্ভব। কামু'র "দ্য প্লেগ"-এ আলজেরিয়ার ওরান শহর বন্ধ করে দেয়া হয় কয়েক মাসের জন্য যেখানে প্লেগের কারণে গণহারে মারা যাচ্ছিল মানুষ (উনিশশতকে ওরান শহরে যা ঘটেছিল), ভয়াবহতার দিক থেকে যা বর্তমান সময়ের প্রায় সমান্তরাল। শুরুতে যখন প্লেগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে রাস্তায় রাস্তায় ইঁদুর মরে পড়েছিল তখন স্থানীয় নীতিনির্ধারকগণ ব্যাপারেগুলো একদমই স্বীকার করেননি। "এই জঘন্য পঁচতে থাকা দেহগুলো যে মানুষের জন্য মৃত্যুর মিনার তৈরি করছে তা কী আমাদের নগরপিতারা অবগত আছেন?" একজন কলামলেখক স্থানীয় পত্রিকায় এমন প্রশ্ন তুলেছেন। বইটির বর্ণনাকারী লেখক ড. বার্নার্ড রিক্স তুলে ধরেছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরব বীরত্ব। "সামনে কী অপেক্ষা করছে সে সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই, এমন কী সব শেষ হলে কী হবে তাও জানি না, এই মুহূর্তে যা জানি তা হলো এই অসুস্থ মানুষগুলোর যত্ন দরকার," এটা একজন স্বাস্থ্যকর্মীর বিবৃতি। সবশেষে প্লেগ থেকে বেঁচে ওঠা একজন তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে যা শিখলেন তা হলো, ''তারা এখন জানে, এ-ই একমাত্র জিনিস যা একজন মানুষ সবসময় আকাঙ্ক্ষা করতে পারে এবং যা কখনো কখনো অর্জনও করে,  তা হলো মানুষের ভালোবাসা।''

আলবেয়ার কামুর প্লেগ। আজকের করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে প্লেগের সময়ের আশ্চর্য মিল

১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লুয়ে পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয় এবং সেইসাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বলি এক কোটি মানুষ পৃথিবীকে নতুন ছাঁচে গড়েছিল। হাস্যকর এবং নাটকীয় ভাবে ফ্লু'র যে বৈশ্বিক প্রভাব তা ঢেকে যায় বিশ্বযুদ্ধের আরো বেশি নাটকীয় ঘটনার দ্বারা এবং তা অসংখ্য উপন্যাসকে প্রভাবিত করেছিল। এখন যেমন মানুষ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী লকডাউনে কাহিল হয়ে পড়েছে, প্রায় একই রকম অনুভূতি প্রকাশ করে স্প্যানিশ ফ্লু দ্বারা প্রভাবিত ক্যাথরিন অ্যান পর্টারের ১৯৩৯-এর উপন্যাস 'পেইল হর্স, পেইল রাইডার' যেখানে স্প্যানিশ ফ্লু'র ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক চিত্র বর্ণনা করা হয়েছে... " এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে না... সব ধরনের থিয়েটার, প্রায় সব দোকান, রেস্তোরাঁ সবকিছু বন্ধ, রাস্তাগুলো সারাদিন শবযাত্রা আর সারারাত এম্বুলেন্সের শব্দে ব্যস্ত," গল্পের নায়িকা মিরান্ডা ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত হওয়ার কিছুক্ষণ পর বন্ধু এডাম তাকে এই কথাগুলো বলে।

মিরান্ডার জ্বর এবং পথ্য, সপ্তাহজুড়ে অসুস্থতা এবং সেরে উঠা, ফ্লু এবং যুদ্ধের ক্ষতি থেকে নতুনভাবে প্রস্তুত পৃথিবীতে মিরান্ডার ফিরে আসার আগ পর্যন্ত ঘটনার বিবরণ উপন্যাসে চিত্রিত করেছেন পর্টার।

পর্টার নিজেও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্লেগ থেকে মরতে মরতে বেঁচে উঠেছেন। ১৯৬৩ তে দ্য প্যারিস রিভিও-এ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমি অদ্ভুত এক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছিলাম। সেই অবস্থা থেকে বেরুতে এবং পুনরায় বাইরের পৃথিবীতে ফিরে আসতে আমার অনেক সময় লেগেছে। সত্যিকার অর্থে আমি সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম।''

একবিংশ শতাব্দীর মহামারি – ২০০২ সালের সার্স, ২০১২ সালের মার্স, ২০১৪ সালের ইবোলা—প্লেগ পরবর্তী বিষন্নতা, এর বিস্তার, পরিত্যক্ত শহর এবং বিস্তৃত বিধ্বস্ত ভূ-চিত্রের পটভূমিতে অনেক উপন্যাস লেখা হয়েছে।

মার্গারেট অ্যাটউডের ২০০৯ সালের উপন্যাস দ্য ইয়ার অব দ্য ফ্লাড, ভাইরাসে উজাড় করে দিয়েছে দুনিয়া

মার্গারেট অ্যাটউডের দ্য ইয়ার অব দ্য ফ্লাড (২০০৯) মহামারী পরবর্তী পৃথিবীতে মানুষের প্রায় বিলুপ্তির কথা বলা হয়েছে, যেখানে ''পঁচিশ বছর আগেই বেশিরভাগ মানুষ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল 'জলহীন বন্যা' নামের ভয়াবহ এক প্লেগে 'যা পাখায় ভর করে বাতাসে ভেসে চলে, আর আগুনের মত শহরের পর শহর পুড়িয়ে ফেলে''।

অ্যাটউড বেঁচে থাকা কিছু মানুষের ভয়াবহ একাকিত্বের চিত্র ধারণ করেছেন তাঁর উপন্যাসে। বাগানের মালি টবি একটা পরিত্যক্ত স্পা'য় তাঁর বেঁচে যাওয়া ছাদ বাগান থেকে দিগন্তে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন "নিশ্চয় কোথাও বেঁচে যাওয়া কোন মানুষ আছে...সে এই গ্রহে একা হতে পারে না। অবশ্যই অন্যরা কোথাও আছে। তারা কী বন্ধু না শত্রু? যদি সে কাউকে দেখতে পায় তাহলে কীভাবে সে বুঝবে শত্রু নাকি বন্ধু?" এক সময়ের ট্রাপিজ শিল্পী রেন, যে কি না ...''শহরের একজন নিখুঁত দুষ্ট চরিত্রের নারী"—বেঁচে গেছেন যেহেতু তাঁর ক্লায়েন্টের সংক্রমণের কারণে তিনি সঙ্গরোধে ছিলেন। তিনি তাঁর নাম বার বার লিখছেন কারণ,"তুমি যদি খুব বেশি একা থাকো তাহলে নিজেকে হারিয়ে ফেলবে।''

কীভাবে ক্ষমতাসীন কর্পোরেশনগুলো তাদের পরিচালিত বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক আর মনুষ্য পৃথিবীর মধ্যে যে ভারসাম্য ধ্বংস করা হয় এবং কীভাবে টবির মত পরিবেশকর্মী যুদ্ধ করে ফিরে আসে, অ্যাটউড তার বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্যের মাধ্যমে। বিজ্ঞানের ক্ষতিকর দিকগুলোর প্রতি সর্বদা সতর্ক থেকে অ্যাটউড তাঁর নির্মাণটি সব দিক থেকে বিশ্বাসযোগ্য একটা কাঠামোর উপর রেখে 'দ্য ইয়ার অব দ্য ফ্লাড' একটি ভীতিকর দূরদর্শী কাজ হিসেবে তৈরি করেছেন।'

যে জিনিসটা মহামারির কাহিনীগুলোকে চিত্তাকর্ষক করে তোলে তা হলো সঙ্গবদ্ধভাবে মানুষ যুদ্ধ করে এমন এক শত্রুর সাথে যারা মানুষ নয়। সেখানে কোন ভালো মানুষ বা মন্দ মানুষ নেই, পরিস্থিতি থাকে খুব সূক্ষ্ম। প্রতিটি চরিত্রের বাঁচা মরার সুযোগ সমান সমান। প্রতিটি চরিত্র চরম পরিস্থিতি যেভাবে মোকাবেলা করে তা ঔপন্যাসিক এমনকি পাঠকেরও কৌতুহলের বিষয়।

লিং ম্যা-এর সিভিয়ারেন্স (২০১৮), লেখক নিজেই যেটাকে 'দাপ্তরিক রহস্যোপন্যাস' হিসেবে আখ্যায়িত করছেন, সেখানে তিনি ক্যান্ডেইস চেন নামে একজন অভিবাসীর জীবন কাহিনী বর্ণনা করেছেন যিনি বিগত সহস্রাব্দের মানুষ এবং বাইবেল ছাপানোর এক ফার্মে কাজ করেন এবং তাঁর নিজস্ব একটি ব্লগ আছে। তিনি বেঁচে যাওয়া নয়জন মানুষের একজন যিনি ২০১১ সালের সন্দেহজনক 'শেন জ্বর' মহামারীর সময় নিউইয়র্কে পালিয়ে গিয়েছিলেন। লিং ম্যা শহরটাকে চিত্রিত করেছেন এমন একটা সময়ে যখন তার অবকাঠামো ভেঙে পড়েছিল, ইন্টারনেট ব্যবস্থা অতলে ডুবে গিয়েছিল এবং বিদ্যুত ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

ক্যান্ডেইস একটা গ্রুপের সাথে রোড ট্রিপে যোগ দেয় যাদের পরিকল্পনা শিকাগো উপশহরের একটি মলে অবস্থান নেয়ার। তারা পুরো যাত্রাপথে সংক্রমিত বাসিন্দাদের সাক্ষাৎ পায় যারা..." পরিণত হয়েছিল অভ্যাসের দাসে, পুরোনো জীবনের রুটিন, আচার-আচারণ শুধু অনুকরণ করে যাচ্ছিল"... যতক্ষণ না মৃত্যু আসে। যারা বেঁচে যাচ্ছে তারা সবাই কী রোগটার প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করছে? নাকি দৈবক্রমে কেউ কেউ পাচ্ছে সেই ক্ষমতা? ক্যান্ডেইস খেয়াল করেন, কিছু সংখ্যক মানুষ যারা তাদের ধর্মীয় নেতা ববের দ্বারা চালুকৃত নিয়ম কঠোরভাবে পালন করছে শুধু তারাই নিরাপত্তার সুবিধা পাচ্ছে, বব হলেন একজন স্বেচ্ছাচারী, প্রাক্তন আইটি টেকনিশিয়ান। তাঁর জন্য বিদ্রোহ করা ছিল তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

আমাদের বর্তমান অবস্থা এমন চরম না হলেও এ-র কাছাকাছি ভয়াবহতার মুখোমুখি। লিং ম্যা একটা খুব বাজে ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হন যা ভাগ্যক্রমে আমরা হচ্ছি না। মহামারী যখন প্রায় শেষের দিকে তখন তাঁর উপন্যাসে তিনি দেখছেন তাঁর কল্পনার জগতে কী ঘটছে । সবচেয়ে খারাপ অবস্থার পর কে দায়িত্ব নেবে পুরো সম্প্রদায়কে তাদের সংস্কৃতি পুনর্গঠন করাতে? একদল বেঁচে যাওয়া মানুষের মধ্যে, উপন্যাস নিজেই জিজ্ঞেস করছে কে ঠিক করবে যে কার ক্ষমতা আছে? কে ঠিক করবে ধর্মীয় নিয়মাবলী? কীভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ধরে রাখবে?

এমিলি জন ম্যান্ডেল ২০১৪ সালে লিখেন স্টেশন ইলাভেন উপন্যাস। তার উপন্যাসের কাহিনি ভাইরাস আক্রমণের পর বিরান পৃথিবীতে মানুষ কীভাবে আবার জেগে উঠবে, সেই কাহিনি

এমিলি সেন্ট জন মেন্ডেলের ২০১৪ সালে প্রকাশিত ধারাবাহিক বর্ণনামূলক উপন্যাস "স্টেশন ইলাভেন"-এ, রিপাবলিক জর্জিয়ায় একটা ভয়াবহ ছোঁয়াচে ফ্লু যেটা একটা নিউট্রন বোমার মত পৃথিবীর ভূ-তলের উপর বিস্ফোরিত হয়েছিল যার ফলে পৃথিবীর জনসংখ্যা থেকে নিরানব্বই ভাগ মানুষ একবারে মুছে যায়, সেই ঘটনার আগের, পরের এবং সেই সময়টার মধ্যে যা যা ঘটেছিল তাঁর বর্ণনা দিয়েছেন। মহামারী শুরুর রাতে কিং লিয়ার নাটকের একজন অভিনেতা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মঞ্চেই মারা যায়। তাঁর স্ত্রী কাল্পনিক বিজ্ঞানের কমিক লেখক 'স্টেশন ইলাভেন" নামে একটি গ্রহের প্লট গ্রহন করেন যেটা আরো বিশ বছর পরের সময়ের। যেখানে দেখানো হয় অভিনেতা আর গানের একটা দল " ছোট ছোট শহরপুঞ্জে"র মধ্যে পরিত্যক্ত কোন মলে কিং লিয়ার আর মিডসামার নাইট'স ড্রীম অভিনয় করে যাচ্ছে। "স্টেশন ইলাভেন" চসারের ক্যান্টারবারি টেইলের একটা প্রতিধ্বনি যেন, চতুর্দশ শতাব্দীর এলোমেলো গল্প বলার যে ধারা তাকে ব্ল্যাকডেথের পটভূমিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

ম্যান্ডেলের প্রশ্ন, কে বা কারা শিল্পের সংজ্ঞা ঠিক করে? বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বের সেলিব্রিটি চর্চা কী জরুরী? অদৃশ্য ভাইরাস থেকে মুক্তির পর আমরা কীভাবে পুনর্গঠন করবো? কীভাবে শিল্প এবং সংস্কৃতি পরিবর্তিত হবে? আমাদের বর্তমান অবস্থার উপরেও উপন্যাস আছে কোন সন্দেহ নাই। আমাদের গল্প লেখকরা কীভাবে সামনের দিনগুলোতে এই মহামারিকে গল্পে চিত্রিত করবেন? কীভাবে তারা সাজাবে জনগোষ্ঠীর অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে, আমাদের মধ্যেই থাকা অগণিত বীরযোদ্ধাদের?

এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা দরকার যখন আমরা আমাদের পড়ার সময় বাড়িয়েছি এবং নতুন একটা পৃথিবী প্রস্তুত হচ্ছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.