ভিনসেন্ট ভ্যান গখ: উন্মাদনা থেকেই শিল্পের নতুন আঙ্গিক

ইজেল

07 November, 2021, 08:20 pm
Last modified: 07 November, 2021, 08:38 pm
কিন্তু তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পেতে চাইলে আরও পেছনে ফিরে যেতে হবে। কেবল মনোবিদ্যাকে আমলে নিলেই হবে না, তিনি যেসব উপন্যাস আর পেইন্টিং পছন্দ করতেন সেগুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা: পড়তে হবে তাঁর লেখা চিঠিগুলো।

দ্য ভ্যান গখ জাদুঘরে নতুন এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত প্রদর্শনীতে প্রখ্যাত এই শিল্পীর জীবনের শেষ দিককার কাজকে তাঁর 'উন্মাদনা'-সংক্রান্ত কিংবদন্তিগুলো থেকে আলাদা করে উপস্থাপন করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাঁর শিল্পকর্মগুলোর এই আঙ্গিক থেকে করা বিশ্লেষণের আড়ালে কি তাঁর চিন্তাভাবনার রহস্যময়তা ঢাকা পড়ে যাবে?

১৮৮৯ সালে ভিনসেন্ট ভ্যান গখ যখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান, তখন তাঁর চেহারার যেখানে আগে বাঁ-কানটা ছিল, সেখানে দেখা যাচ্ছিল একটা সাদা ব্যান্ডেজ। কিন্তু এটাও সত্য যে, ছাড়া পাবার পরপরই তিনি চলে যান দক্ষিণ ফ্রান্সের আর্ল শহরে, নিজের বাড়িতে। বাড়িটা ছিল একটা ক্যাফের পাশে। সেই বছর ভ্যান গখ যে ছবিটা আঁকেন তা দেখে মনে হয় এই পৃথিবীকে আঁকড়ে ধরে রাখার দৃঢ় প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি, জীবনের নিরেট তথ্যগুলোর ওপর মনোনিবেশ করে নিজের মনের ভেতর চলতে থাকা ঝড়কে শান্ত করতে চাচ্ছিলেন।

ভ্যান গখের কানে ব্যান্ডেজ বাধা সেলফ পোট্রেট

একটা পোক্ত কাঠের টেবিলকে ঘিরে তিনি তাঁর অস্তিত্বের নিরেট খুঁটিগুলোকে প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। ছবিতে চারটে পেঁয়াজ, একটা 'নিজেকে সাহায্য করো' ধরনের চিকিৎসা বিষয়ক বই, একটা মোম, পাইপ আর তামাক, ভাই থিয়োর লেখা চিঠি। একটা চায়ের কেতলি। এবং আরেকটা জিনিস: অ্যাবসিন্থের একটা বেশ বড়সড় খালি বোতল।

হাসপাতাল ছাড়ার পর থেকেই কি ভ্যান গখ অ্যাবসিন্থ ঢালতেন গলায়? নাকি ওটার খালি থাকা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে তিনি আর মদ স্পর্শ করতে চান না?

এই চিত্রকর্মের ব্যাপারে প্রথমেই যে কথাটি বলে নিতে হবে, তা হলো: ওটা যুগান্তকারী; নতুন এক ধরনের আর্ট বলা যায়। কিছু বস্তুকে এক করে ফুটিয়ে তোলা যে কারও আত্মার বর্তমান অবস্থার প্রতীক হতে পারে- এই ধারণাটাই তখন নতুন ছিল...যার উদ্ভাবন হয়েছে ভ্যান গখ কর্তৃক! পরের কয়েক মাসে এই স্বশিক্ষিত ডাচ শিল্পী, মধ্য-তিরিশে এসে, ১৮৮৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে, নতুন এক ধরনের শিল্পের জন্ম দেন, যার নাম হয়- এক্সপ্রেশনিজম তথা অভিব্যক্তিবাদ।

আর সেই কাজ করতে গিয়ে, নিজেকে তিনি উন্মাদনার দিকে ঠেলে দেন!

'অন দ্য ভার্জ অভ ইনস্যানিটি: ভ্যান গখ অ্যান্ড হিজ ইলনেস' শিরোনামে আমস্টারডামের দ্য ভ্যান গখ মিউজিয়ামে যে প্রদর্শনীটা হতে যাচ্ছে, তা যে কোনো বিচারেই অন্য রকমের চটকদার। সেখানে দেখানো হবে মরচে পড়া সেই বন্দুকটাকে যা দিয়ে- জাদুঘর ৮০ শতাংশ নিশ্চিত যে- ৩৭ বছর বয়সী এই শিল্পী আত্মহত্যা করেছিলেন! সেইসঙ্গে আরও আছে এমন কিছু অভাবনীয় কাগজপত্র যা এমন এক লোকের গল্প শোনায়, যিনি তাঁর ক্রমাগত খারাপ হতে থাকা মানসিক স্বাস্থ্যকে সহ্য করতে না পেরে...কিংবা উত্তরণের আর কোনো উপায় নেই ধরে নিয়ে হতাশায় নিজেকে শেষ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। প্রদর্শনীটি ভ্যান গখের জীবনের শেষাংশের একটা প্রাঞ্জল গল্প তুলে ধরে আমাদের সামনে।

যে রিভলভার দিয়ে ভ্যান গখ নিজেকে গুলি করেছিলেন বলে ভাবা হয়।
 

উক্ত জাদুঘরের কিউরেটররা যে ব্যাপারটাকে সামনে আনতে চান তা হলো: 'উন্মাদনার' মাঝেই ভ্যান গখ তাঁর প্রতিভাকে খুঁজে পেয়েছিলেন; তিনি ভ্রমে আচ্ছন্ন হয়ে আঁকতেন এবং অসুস্থতা থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করতেন। আরডি লেইঙ্গের মতো প্রগতিবাদী মনোচিকিৎসকরা যে দাবি করতেন- উন্মাদ সমাজে মানসিক অসুস্থতাই আসলে সুস্থ প্রতিক্রিয়া- তারও বহু দশক পেরিয়ে গেছে। মিশেল ফুকো তাঁর 'ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ' বইতে প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করেছে ভ্যান গখের একটা শিল্পকর্ম; সেখানে বৃথাই চক্রাকারে ঘুরছে একদল বন্দি, একটা গুমোট ও প্রাচীরঅলা প্রাঙ্গণে। ছবিটা ভ্যান গখ এঁকেছিলেন অ্যাসাইলামে থাকার সময়। গুস্তাভ ডোরের আঁকা নিউগেট প্রিজনের একটা নকলের ওপর ভিত্তি করে তিনি এঁকেছিলেন ছবিটা; ডোরের সেই চিত্রকর্মও আছে প্রদর্শনীতে।  

ভ্যান গখের এক্সপ্রেশনিজম বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে উত্তর ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় 'আধুনিক শিল্প-আন্দোলন'-এর রূপ নেয়; তাঁর উন্মাদনা গভীরভাবে মিশে যায় এক্সপ্রেশনিজমের সঙ্গে। জার্মান এক্সপ্রেশনিস্ট লুডভিগ কার্চনার নিজেকে ১৯১৫ সালে উপস্থাপন করেন আহত এক সৈনিক রূপে, যে তার কাটা হাতটাকে ধরে ছিল। কার্চনারের আঘাত ছিল মানসিক, শারীরিক নয়। এবং তিনি ভ্যান গখের আঁকা নিজের ছবি- ব্যান্ডেজঅলা কানসহ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেন। ১৯২২ সালে মনোচিকিৎসক হান্স প্রিঞ্জহর্ন প্রকাশ করেন 'দি আর্ট অভ দ্য ইনসেইন', যেখানে তিনি তাঁর রোগীদের পেইন্টিং এবং ড্রয়িং জড়ো করেন। তাতে উল্লেখ করেন যে তিনি সৃষ্টিশীলতার অনন্য একটি রূপ দেখতে পাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে তাঁর এই বিশ্বাসের পেছনে ছিল এক্সপ্রেশনিজম এবং উন্মাদনার কাল্টটির, যার শুরু হয়েছিল ভ্যান গখ থেকে। প্রিঞ্জহর্নের ধারণাগুলো আজও 'বহিরাগতদের শিল্প' দুনিয়ায় ব্যাপক প্রভাবশালী।

ভ্যান গখের দ্য গার্ডেন অফ দ্য অ্যাসাইলাম চিত্রকর্ম।

কিন্তু দ্য ভ্যান গখ জাদুঘর তাঁকে কোনোভাবেই 'বহিরাগত' শিল্পী বলে মানতে রাজি নয়। নতুন এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যও অনেকটা তাঁর কাজগুলোকে এহেন নাটকীয় দৃষ্টিভঙ্গির হাত থেকে উদ্ধার করা। 

ভ্যান গখের জীবনের শেষ দিককার দৃশ্যগুলো দারুণ মর্মস্পর্শী করে তুলে ধরা হয়েছে প্রদর্শনীতে। এমনকি মৃত্যুশয্যায় শায়িতাবস্থায় প্রখ্যাত শিল্পীর একটা ড্রয়িংও আছে তাতে। তাঁর লেখা শেষ চিঠিতে- যেটা থিয়ো লাশের পকেটে পেয়েছিলেন- একটা দাগ ছিল। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা এখনও সেই দাগ নিয়ে দ্বন্দ্বে আছেন। ওটা যে রক্তের দাগ, সেটা যেমন প্রমাণ করতে পারেননি- তেমনি ওটা রক্তের দাগ না, সেটাও প্রমাণ করতে পারেননি!

কিন্তু কথা হলো, প্রদর্শনীটি বেশ বড় একটা ব্যাপার অগ্রাহ্য করেছে। সেটা হলো: ভ্যান গখের শিল্পের বিশালত্বের ওপর তাঁর সমস্যাক্লিষ্ট জীবনের কতটুকু প্রভাব আছে?

লেইং কিংবা ফুকোর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত না হয়েই যে-কেউ ধরতে পারবে, এই প্রদর্শনীটা ভ্যান গখের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা-বিজ্ঞান সংক্রান্ত আঙ্গিকের ওপর একটু বেশিই গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে। ভ্যান গখ ডাক্তার আর অ্যাসাইলামের চক্কর কাটা শুরু করেন ১৮৮৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর নিজের কান কেটে ফেলার পর। ওই বিস্ময়কর গল্পটা পরিষ্কারভাবেই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করা আছে! 

প্রদর্শনীতে দেখা যাবে ডা. ফেলিক্স রে-র পোর্ট্রেট, যিনি এই ভয়নাক আত্মক্ষতি করার পর ভ্যান গখের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। এছাড়াও দেখা যাবে আর্লের অনেক প্রতিবেশীর অনুরোধপত্র; যাতে এই বিদেশি, ভয়ানক আর অদ্ভুত শিল্পীকে আটকে রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। অ্যাসাইলামে তার সঙ্গে যেসব রোগী ছিল, তাদের ভয়ানক পোর্ট্রেটও আছে, যার মধ্যে একচোখা এক লোককে দেখা যায়...

...ভ্যান গখের নিচের এক কান কেটে ফেলার সঙ্গে সেই একচোখা লোকের ভয়ানক মিল খুঁজে পাওয়া কি খুবই দুষ্কর?

ভ্যান গখের ট্রি রুটস চিত্রকর্ম।

সমস্যা হলো, মানসিকভাবে তিনি অসুস্থ- এই ব্যাপারটা নির্ধারিত হবার অনেক আগে থেকেই তাঁর সমস্যা শুরু হয়েছিল। আজও কেউ জানে না তাঁর মূল রোগটা কী ছিল। নানা মুনির নানা মতের মতো এখানেও রয়েছে পরস্পরবিরোধী সব তত্ত্ব। মৃগী, সিফিলিস, স্কিজোফ্রেনিয়া থেকে শুরু করে আরও অনেক রোগের নামই এসেছে- যা তুলে ধরা হয়েছে প্রদর্শনীতেও। 

কিন্তু চিকিৎসাধীন সময়কালের ওপর মনঃস্থির করলে আমরা দেখতে পাব, আর্লের ইয়েলো হাউসে সমকালীন শিল্পী পল গগ্যাঁর সঙ্গে ঝামেলা হবার আগ পর্যন্ত ভ্যান গখ ছিলেন একজন যৌক্তিক মানসিকতার মানুষ। তিনি মানসিকভাবে 'সুস্থ' ছিলেন, যিনি পরবর্তী 'অসুস্থ' হয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পেতে চাইলে আরও পেছনে ফিরে যেতে হবে। কেবল মনোবিদ্যাকে আমলে নিলেই হবে না, তিনি যেসব উপন্যাস আর পেইন্টিং পছন্দ করতেন সেগুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা: পড়তে হবে তাঁর লেখা চিঠিগুলো। দ্য ভ্যান গখ মিউজিয়াম এসব চিঠি এক করে প্রকাশ করেছে। তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে এই চিঠির লেখক এমন একজন মানুষ যিনি সহজেই উত্তেজিত হয়ে যেতেন, বাস্তবতাকে গ্রাহ্য করতেন না, দারুণ একরোখা ছিলেন, একাকিত্বে থাকতেন প্রায়ই...এবং নারীদের সঙ্গে আনন্দে ভরা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারতেন না বলে নিজেও হতাশ থাকতেন।

এজন্যই কি তাঁকে পাগল বলা যাবে? নাহ। তিনি ছিলেন অসুখী, একগুঁয়ে আর তাঁর প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের পুরোটা ছিল হতাশায় ভরা। আমরা কিন্তু তাঁর জীবনের ব্যাপারে জানতে পারি থিয়োকে লেখা চিঠিগুলো থেকে। তখন ভ্যান গখ আর্ট ডিলার হিসেবে লন্ডনে কাজ করতেন। অচিরেই তিনি ঝামেলায় পড়ে যান। 

লালচুলো এই শিল্পী ব্রাইটনের যে বাড়িতে থাকতেন, তার মালকিনের মেয়ের প্রেমে পড়ে বিব্রতকর উপায়ে সেই ভালোবাসা প্রকাশ করেন। তারপর চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতার চেষ্টা করেন। পরে সিদ্ধান্ত নেন মিশনারি হবেন এবং উপশহরের অধিবাসীদের ধর্মীয় জ্ঞানদান করেন!

ভ্যান গখ যখন আর্লে পৌঁছান, তখন তিনি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পুরোপুরি থিয়োর ওপর নির্ভরশীল। তাঁর ভাই তত দিনে প্যারিসে ডিলার হিসেবে কাজ করছেন, বেশ সুনামের সঙ্গেই। এদিকে ভ্যান গখের পরিবারের কেউ তখন আর আশাই করত না যে তিনি একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবেন কিংবা বিয়ে করবেন। 

ভাইয়ের সাহায্য না পেলে সম্ভবত কোথাও মরে পড়ে থাকতেন ভিনসেন্ট ভ্যান গখ, এমনকি হয়তো আরও আগেই আত্মহত্যা করে বসতেন! ভিনসেন্ট নিজেই চিঠিতে বলতেন- এমনকি কোনো মেডিক্যাল প্রফেশনালের কাছে যাওয়ার আগেই- যে, তিনি 'তারছেঁড়া'! তাই তাঁকে একজন বুদ্ধিদীপ্ত, কঠোর পরিশ্রমী শিল্পী হিসেবে তুলে ধরার যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে- যিনি ১৮৮৮ সালের শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন- তা আসলে ভুল। তিনি সবসময়ই আগ্রহভরে পথ থেকে সরে ভিন্ন পথে পা বাড়াতেন। এই ধরনের মানুষকে কী বলা যায়? ম্যানিক? বোহেমিয়ান?

থিয়োর সাহায্যে আর্লেতে পৌঁছে ভ্যান গখ তাঁর লেখাপড়া সমাপ্ত করেন। যেসব শিল্পীর সঙ্গে তাঁর মোলাকাত হয় তাঁদের মাঝে আছেন টল্যুই লাউট্রেক, সিউরাত আর এমিল বার্নার্ড। এমনকি বার্নার্ড, যিনি ভ্যান গখের প্রতিভার ওপর চরম আস্থা রাখতেন, একসময় তাঁর সঙ্গে এসে যোগ দেবার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছিলেন, গগ্যাঁ তো চলেই আসেন।

এই শিল্পীরা নিজেদেরকে নতুন এক বিপ্লবের সূচনাকারী বলে কল্পনা করতে শুরু করেন। তাঁরা এমন কয়েকজন মানুষ, যাঁরা নতুন এক ধরনের শিল্পের সূচনা করার জন্য শারীরিক ও মানসিক ঝুঁঁকি নিতেও প্রস্তুত। যে বাতাসে তাঁরা শ্বাস নিতেন, তাতেই মিশে ছিল পাগলামির গন্ধ। বিপদের একটা নাম ছিল সিফিলিস- মন্যে মারা গেছিলেন এই রোগে ভুগে। ভ্যান গখের আরেক পছন্দের লেখক, মোপাসাঁও সম্ভবত আক্রান্ত ছিলেন তাতে। আধুনিক শিল্পীদের মাঝে পাগলামিকে দেখা হতো ব্যক্তিগত ঝুঁঁকি হিসেবে: 'দ্য মাস্টারপিস' উপন্যাসে ভ্যান গখের পছন্দের লেখক জোলা এমন এক ই¤েপ্রশনিস্ট পেইন্টারের কথা লেখেন যার নতুনত্বের খোঁজ পাগলামি আর মৃত্যুর পথ উন্মোচিত করে। 

ভ্যান গখের সেলফ পোট্রেট

এদিকে দক্ষিণের হাওয়া-বাতাসে শ্বাস নেবার সঙ্গে সঙ্গে যেন ভ্যান গখের প্রভিতা আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে। এতগুলো বছর শিল্পের ব্যাপারে যে জ্ঞান তিনি অর্জন করেছেন, তা পুরোপুরি বদলে দেয় তাঁকে। তিনি জানতেন যে তাঁর কাজ এখন আগেকার যেকোনো কাজের চাইতে ভালো হচ্ছে। রং ব্যবহার করে অনুভূতি প্রকাশের একেবারে আনকোরা একটা উপায় আবিষ্কার করেছেন- সেটাও বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু সেইসঙ্গে ঝুঁকির মুখে পড়ছিল তাঁর স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতাও। অন্তত চিঠিগুলোতে আমরা সেটাই জানতে পারি। 

সানফ্লাওয়ার্স যখন আঁকেন, তখন কি তিনি 'পাগল'? একদম না- মানে তখনও তাঁকে ডাক্তাররা রোগাক্রান্ত বলে সাব্যস্ত করেননি। তবে ভ্যান গখ তখন তাঁর উত্তেজনাকে রঙের রূপ দিচ্ছিলেন তাঁর নিজস্ব পদ্ধতিতে।

তাঁর লড়াইটাকে তাই একজন মানসিকভাবে সুস্থ মানুষের পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবার মতো ভয়ানক রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে হারার হতাশাজনক আখ্যান বলা ভুল হবে- যেটা এই প্রদর্শনী বোঝাতে চাইছে। আরও মনোযোগ দিয়ে তাঁর চিত্রকর্ম আর চিঠিগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, তিনি নিজের অন্ধকার দিকটাকে ফুটিয়ে তোলার অনিশ্চিত প্রয়াস চালিয়েছিলেন। তাঁর নিজের ছিল বাড়াবাড়িতে ভেসে যাবার প্রবণতা...

...আার তা করতে গিয়ে এমন সব শিল্পকর্মের জন্ম তিনি দিয়েছিলেন যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় প্রত্যেক দর্শককেই!
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.