ভারতবর্ষে আরবের ঘোড়া
অশ্বারোহণে পারদর্শী শাসকেরা
মধ্য এশিয়ার তুর্কিদের প্রসঙ্গ উঠলে প্রথমেই মাথায় আসবে ঘোড়ার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আর এই রাজসিক প্রাণীগুলো ব্যবহারে তাদের দক্ষতার কথা। ভারতে আরবি জাতের ঘোড়া এসেছে এই তুর্কি, আরব বণিক ও গল্পকথক এবং ভাড়াটে সৈন্যদের হাত ধরে- জলপথে তো বটেই, স্থলপথেও! পরবর্তী অনেকগুলো শতাব্দীতেও আরবের এই ঘোড়া ব্যবসায়ীরা ভারতে আসা-যাওয়া করেছে ব্যবসার খাতিরে।
আরও কিছু জাতিও অবশ্য ঘোড়সওয়ার হিসেবে বিখ্যাত, যাদের মাঝে আছে দিল্লি সালতানাতের (১২০৬-১৫২৬) তুর্কিরা এবং মধ্য এশিয়ার মঙ্গোলরা, পরে যারা মোগল (১৫২৬-১৮৫৭) নাম ধারণ করে। তবে ভারতীয়রা এদের সবাইকে একটা নমেই ডাকত- তুর্কি। ঘোড়াগুলো তুর্কি কিংবা পারস্যের হলেও ভারতীয়দের কাছে পরিচিত হয় সেই 'আরবি' নামেই। সত্যি বলতে কী, আরবি ঘোড়ার সেরা বৈশিষ্ট্যগুলোর একটা হলো উত্তরসূরিদের মাঝে নিজেদের গুণ পৌঁছে দেওয়া। তাই তুর্কি কিংবা পারস্যের ঘোড়াগুলোর শরীরেও হয়তো আরবি ঘোড়ার রক্তই বইত, নিদেনপক্ষে দাবিটাকে উড়িয়ে দেওয়ার জো নেই!
মাহমুদ গজনবি (রাজত্বকাল: ৯৯৯-১০৩০) তার অশ্বারোহী বাহিনীর জন্য মধ্য এশিয়ার ঘোড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তার তুলনায় ভারতীয়দের ঘোড়ার মান ছিল একেবারেই নিম্ন পর্যায়ের! মুহাম্মদ বিন তুঘলক (রাজত্বকাল: ১৩২৫-৫১) পশ্চিম আর মধ্য এশিয়ার কাউকে চাকরি দেবার আগে তার ঘোড়া-চালনার দক্ষতা বাজিয়ে নিতেন। ভারতে পোলোর আগমন সম্ভবত তুর্কি বিজেতাদের হাত ধরেই। কুতুব আল-দিন আইবেক মারা যান এই খেলাটি খেলতে গিয়ে ঘোড়ার পিঠে থেকে পড়ে।
দিল্লি সালতানাত আর মোগল সাম্রাজ্যের আমলে ঘোড়ার ব্যাপারে বাস্তবিক তথ্য আর কাল্পনিক গল্পগাথা বিভিন্ন সংস্কৃতির কল্পিত সীমানার উভয় পাড়েই ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পারস্য ও আরবের ঘোড়া-সংক্রান্ত বিদ্যার ওপর সংস্কৃত 'অশ্বশাস্ত্র'-এর প্রভাব অনস্বীকার্য।
মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর (রাজত্বকাল: ১৫২৬-৩০) ঘোড়া খুব পছন্দ করতেন। ধারণা করা হয়, যতটা সময় না তার মাটিতে কাটত, তার চেয়ে অনেক বেশি সময় কাটত ঘোড়ার পিঠে।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আবুল ফজল (১৫৫১-১৬০২) মোগল বাদশাহ আকবরের শাসনামলের দিনলিপি 'আইন-ই আকবরি'তে সম্রাটের অশ্বশালার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। তার লেখা থেকে আমরা জানতে পারি: আকবরের ছিল অনেকগুলো জ্বলজ্বলে পোলো বল, যাতে রাতের বেলায়ও খেলতে পারে। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরও (রাজত্বকাল: ১৬০৫-১৭২৬) খেলাটার ভক্ত ছিলেন।
ভারতে ঘোড়ার আমদানি
দিল্লি সালতানাত ও মোগল সাম্রাজ্যের দলিল-দস্তাবেজে সে সময় ভারতে ঘোড়া আমদানির গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে সেনাবাহিনীর জন্য তখন বিপুল পরিমাণে ঘোড়ার দরকার হয়েছিল। সেসব ঘোড়ার অধিকাংশই- এবং সেরাগুলো ছিল আমদানিকৃত। আবুল ফজল জানান, 'প্রায় সময়ই ঘোড়া আমদানি করা হতো। ইরাক, তুরস্ক, তুর্কিস্তান থেকে ভালো মানের ঘোড়া এনে বিক্রি করত বণিকেরা। আরও আসত কিরগিজ, তিব্বত, কাশ্মীর এবং অন্যান্য দেশ থেকে। ইরান-তুরান থেকে একের পর এক পশু ব্যবসায়ী আনাগোনা করত রাজসভায়। মহামান্য সম্রাটের অশ্বশালায় এখন বারো হাজার ঘোড়া আছে।' আকবরের বাহিনীতে দেড় থেকে দুই লক্ষ অশ্বারোহী ছিল, সেই সঙ্গে সম্রাটের নিজস্ব সাত হাজারের দল তো ছিলই।
আকবর মূলত নিজের অশ্বারোহী বাহিনীর জন্য ঘোড়া আমদানি করলেও কখনো কখনো সেগুলো রাজনৈতিক উপহার হিসেবেও ব্যবহার করতেন। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক তার অনুগত সম্ভ্রান্তদের মাঝে ফি বছর 'দশ হাজার আরব ঘোড়া এবং অন্য জাতের আরও অনেক ঘোড়া উপহার বিতরণ করতেন।'
জাহাঙ্গীর নিজের স্মৃতিকথায় এমন এক পারস্যের ঘোড়ার কথা উল্লেখ করেছেন: 'একই মাসের পনেরো তারিখে আমার সেরা ঘোড়াটাকে রাজা মান সিংহকে উপহার দিলাম। শাহ আব্বাস এই ঘোড়াটা আরও অনেক উপহারের সঙ্গে সম্রাট আকবরের জন্য পাঠিয়েছিলেন। রাজা ওই ঘোড়াটা পেয়ে এত খুশি হয়েছিল যে তাকে একটা রাজত্ব উপহার দিলেও বোধ হয় এতটা খুশি হতো না। ঘোড়াটা যখন এ দেশে আসে, তখন ওটার বয়স চার। হিন্দুস্তানেই বেড়ে উঠেছে। রাজসভার সব দাস, মোগল আর রাজপুত...সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছে- ইরাক থেকে হিন্দুস্তানে এমন ঘোড়া আর দ্বিতীয়টা আসেনি।'
ঘোড়াটা 'হিন্দুস্তানে বেড়ে উঠলেও' সম্ভবত পারস্যে জন্মেছে, কিংবা সেটাকে জন্ম দিয়েছে পারস্যের কোনো স্ট্যালিয়ন। হিন্দুরাও উপহার হিসেবে আমদানিকৃত ঘোড়া ব্যবহার করত। পাঞ্জাবি এক গল্পে উল্লেখ করা হয়েছে- 'রাজারা ব্রাহ্মণদের অনেক উপহার আর গরু দিতেন এবং চারণকবি ও বংশ-বৃত্তান্তবিদদের দান করতেন তুর্কি ও আরব ঘোড়া।'
দিল্লি সালতানাতের শাসকেরা স্থানীয় জাতের ঘোড়াগুলোকে আরবি ঘোড়ার তুলনায় তুচ্ছ মনে করতেন। সাধারণ ভারতীয় ঘোড়াগুলোকে তারা উপহারের যোগ্যই মনে করতেন না, কিংবা ব্যবহার করতে চাইতেন না যুদ্ধাশ্ব হিসেবে ব্যবহার করতে। জিয়া-আল-দিন বারানি (১২৮৫-১৩৫৭), যিনি দিল্লি সালতানাতের শুরুর দিককার ইতিহাসবিদ ছিলেন, বলেন: 'ঘোড়া ব্যবসায়ীরা হিন্দি কিংবা বালাদাসতি (আফগান ও মধ্য এশিয়া থেকে আগত) ঘোড়াগুলোকে অশ্বারোহী তিরন্দাজদের নিকট আরবি কিংবা গালফ পারসিয়ান বলে চালিয়ে দেয়।'
বিদেশিদের দৃষ্টিতে ভারতীয় ঘোড়া
তবে হ্যাঁ, ভারতীয় উপকূলের উত্তর-পশ্চিম এবং পশ্চিম দিক থেকে প্রাপ্ত দেশি ঘোড়াগুলোকেও দিল্লির সুলতানরা প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখতেন। সে সময়ের কথা বলছি, যখন সংকরায়ণের মাধ্যমে তাদের গুণগত মান বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া শুরু হয়নি। তুর্কিদের হামলারও অনেক আগে উত্তর ভারতে সফলভাবে ঘোড়া সংকরায়ণের কাজ চলত, চলেছে এমনকি মোগল আমলেও। আবুল ফজল মন্তব্য করেন, 'এই এলাকায় ঘোড়াগুলো সাধারণত তিরিশ বছর বাঁচে।'
পাঞ্জাবে, বিশেষ করে ইন্দুজ আর ঝিলমের মাঝে, সানুজি নামের এক জাতের ঘোড়া পালা হতো। দেখতে ওগুলো ইরাকি ঘোড়ার মতো। ভারতের উত্তর দিককার পাহাড়ের দিকে ছোট কিন্তু শক্তিশালী এক জাতের ঘোড়ার কথা আমরা জানতে পারি, যার নাম গাট। এদিকে বঙ্গে শক্তিশালী আর পোক্ত যে ঘোড়া পাওয়া যেত, তার নাম তঙ্গন।
শেষের এই দুই জাতের ঘোড়াগুলো তাদের সহিষ্ণুতার জন্য বিখ্যাত, পাহাড়ি পথে মাল ও মানুষ পরিবহনের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। ১৬৩০ থেকে ১৬৬৮ সালের মাঝে পারস্য ও ভারতে আসা-যাওয়া করতেন ফরাসি বণিক জাঁ বাপ্টিস্ট টাভেরনিয়ের। তিনি লেখেন, 'গোরক্ষপুরের স্থানীয় ঘোড়াগুলো জন্মগতভাবেই ছোটখাটো, এতটাই যে কেউ ওগুলোর ওপর চড়লে পা একেবারে মাটি স্পর্শ করত! কিন্তু মারাত্মক শক্তিশালী ছিল ওগুলো, একেকবারে বিশ লিগের (তিন মাইলে এক লিগ হয়) মতো ছুটতে পারত। কিন্তু দানা-পানি লাগত না বললেই চলে...।'
বারানি বলেন, 'উত্তম মানের যুদ্ধাশ্ব...ভালো ভারতীয় ঘোড়া পাওয়া যেত পূর্ব পাঞ্জাবে, মুসলিমরা এলাকা দখল করার আগেই। সেগুলোর পালনখরচও এত কম ছিল যে মোগলদের এলাকা থেকে ঘোড়া আমদানি করার দরকারই পড়ত না।' তিনি এ-ও বলেন যে পাঞ্জাব আর তার চারপাশের পাহাড় থেকে থেকে প্রাপ্ত ঘোড়াগুলো 'ভারতের সেরা জাতের ঘোড়ার মাঝে অন্যতম এবং যে কেউ চাইলেই এই উত্তম মানের ঘোড়া পালতে পারত...যথেষ্ট খাবার থাকলেই।' আবুল ফজল তো বলেন, সবচাইতে ভালো জাতের ঘোড়া পালন করা হয় পাঞ্জাব, মেওয়ার, আজমির আর বিহারের নিকটবর্তী বঙ্গে।
এই সমস্যার একটাই সমাধান হতে পারে: ভারতীয় ঘোড়াগুলো (অন্যভাবে বলতে গেলে কিছু ভারতীয় ঘোড়া) আসলে আরবি ঘোড়ারই বংশধর। তাই দুয়ের মাঝে কোনো প্রতিযোগিতাই নেই। তাই পারস্য ও তুর্কিদের ভারতে অবস্থানের প্রেক্ষিতে সাধারণ মন্তব্য হলো: কাথিয়াওয়ার এবং মারওয়ারের ঘোড়াগুলো মরুভূমির বুকে লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম, কিন্তু আকারে ছোট এবং গতি কম হওয়ার কারণে সামরিক বাহিনীতে কিংবা কুচকাওয়াজে ব্যবহারের যোগ্য নয়। প্রতি জাতের ঘোড়ারই আসলে বিশেষ কোনো-না-কোনো বৈশিষ্ট্য আছে এবং নির্দিষ্ট কাজের জন্য সেই জাতটাই সবচাইতে উপযুক্ত।
অথচ এই ক্ষেত্রে আমরা একটা পরিষ্কার শ্রেণিবিভেদ দেখতে পাই। দিল্লির সুলতান, মোগল সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশ রাজের আমলে ঘোড়াদের মাঝে একরকমের বর্ণপ্রথা ছিল- এ কথা বলাই যায়। ভারতীয় সমাজব্যবস্থার সঙ্গে তাল রেখে 'অশ্বশাস্ত্রে' এই ধরনের একটা শ্রেণিবিভেদ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে: 'যুদ্ধের জন্য যেসব ঘোড়া উপযুক্ত, তাদের মাঝে সেরাগুলো পালিত হয় কাম্বুজা, সিন্ধ, আরাত্ত আর বানায়ুতে (বর্তমান ইরান)। মাঝামাঝিতে আছে ভালিয়া, পাপেয়া, সৌরভ আর তিতালার ঘোড়াগুলো। বাকিরা সব নিম্নমানের।'
সোমেশ্বর মোট আটত্রিশটি প্রজাতির উল্লেখ করে সেগুলোকে সেরা, মাঝারি এবং নিম্ন- এই তিন ভাগে ভাগ করেন। আবুল ফজলও নিজের মতো করে শ্রেণিবিভেদ করেন ঘোড়ার। সেরাদের কাতারে রাখেন তিনি আরবি ঘোড়াদের, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পারস্যে জন্ম নেওয়াদের। তৃতীয় ভাগটা তুর্কি কিংবা পারসিয়ান গেল্ডিংয়ের জন্য বরাদ্দ, যেগুলো সেরা পারসিয়ান ঘোড়ার মতো উত্তম না। চতুর্থ শ্রেণির ঘোড়াগুলো আসে তুরিন থেকে, যেগুলো শক্ত এবং পোক্ত হলেও তৃতীয় শ্রেণির পারসিয়ান ঘোড়ার মতো না। পঞ্চম শ্রেণির ঘোড়াগুলো ভারতীয়, শক্তি কিংবা আকার কোনোটাই নেই।
এককথায় বলতে গেলে, ভারতীয় শাসকেরা বিশ্বাস করতেন যে আমদানিকৃত ঘোড়ার জাত সাধারণত ভালো হয় এবং সেগুলো সম্ভ্রান্তদের ব্যবহারের উপযুক্ত। বারানি বলেন, চতুর্দশ শতাব্দীর দিল্লিতে 'মুসলিম রাজারা এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতেন না যে কাফের, পৌত্তলিক, মূর্তি পূজারি আর গো পূজারিরা প্রাসাদের মতো বাড়ি বানাচ্ছে, জাঁকালো পোশাক পরিধান করছে আর আরবি ঘোড়ায় চড়ছে।' এ থেকে বোঝা যায়, অমুসলিম ভারতীয়রাও আরবি ঘোড়ায় চড়ত।
তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে কিছু প্রখ্যাত ব্যক্তি ভারতের বিশেষ বিশেষ এলাকার ঘোড়ার জাতের প্রশংসা করলেও অধিকাংশের কাছে আরবি ঘোড়ার কদর ও চাহিদাই ছিল বেশি।
অভারতীয়দের চোখে ভারতীয় ঘোড়ার অবস্থান তো আমরা জানতে পারলাম, এবার ভারতীয়দের নজরে বিদেশি ঘোড়ার মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করা যাক। স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে, যারা তাদের 'তুর্কি' বলে চেনে, তাদের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল এই ঘোড়া। অনেক হিন্দু আচার ও কিংবদন্তিতে আরবি ঘোড়া এবং সেই সঙ্গে বা আলাদাভাবে মুসলিম আরোহীর উল্লেখ আছে। দিল্লি সালতানাত এবং মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল বলে সেই সময়ের ভারতীয় গল্পে আমরা আরবি ঘোড়া এবং মুসলিম অশ্বারোহীদের ভালো হিসেবেই দেখতে পাই। তত দিনে ভারতে মুসলিমদের বসবাসের অনেকগুলো শতক পেরিয়ে গেছে, তাই তাদের নিছক রাজনৈতিক ক্ষমতাধারী শক্তি হিসেবে দেখা হতো না।
আরবি ঘোড়ার গল্পের অনেক প্রভাবই আছে ভারতীয় ঘোড়ার আখ্যানের ওপর। অনেক ভারতীয় গল্পেই বীরোচিত 'তুর্কি' ঘোড়া এবং ঘোড়সওয়ারের উল্লেখ আছে। তাদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য কিংবদন্তি হলো: মুত্তাল রাভুত্তান নামের এক মুসলিম অশ্বারোহী বীর। তামিলনাড়ুর দক্ষিণের জেলাগুলোতে তাকে পূজো করা হয়। আলফ হিলবেইটেল আমাদের জানান: 'মুত্তাল রাভুত্তান নামের দ্বিতীয় অংশটি এসেছে এসন একটা শব্দ থেকে, যার অর্থ মুসলিম অশ্বারোহী, ঘোড়সওয়ার বা সৈনিক। বোঝাই যাচ্ছে, এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঘোড়ার পিঠে চড়া এক মুসলিম যোদ্ধা; এমন একজন সুফি সৈনিক, যিনি ঘোড়ায় চড়ে তার অনুসারীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কিংবা কোনো অভিযানে একটা সেনাদলের প্রধান বা নেতা ছিলেন।'
একটা পাথুরে ফলকে ঘোড়ায় আসীন আরোহীর (রাভুত্তান) প্রতিকৃতিতে মুত্তাল রাভুত্তানের ছবিকে পূজো করে হিন্দুরা, ভেট হিসেবে চড়ায় উদ্ভিজ্জ বস্তু। কখনো কখনো তার জন্য বানানো সমাধি-মন্দিরের বাইরে কাদামাটির ঘোড়া রেখে দেওয়া হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, ঘোড়াটা সাদা এবং বাতাসে উড়তে পারে। চিন্না সালেম-এ মুত্তাল রাভুত্তান ভেট হিসেবে পান গাঁজা, আফিম আর চুরুট- তবে এসবই নিজের জন্য। আর ঘোড়ার জন্য পান কুলথি ডাল। তিনি আসলে কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন, তা বলা মুশকিল: 'মুত্তাল রাভুত্তানকে যেমন "রাজপুত"দের মতো করে পাল্টে নেওয়া হয়েছে, তেমনই নেওয়া হয়েছে "আফগান"দের মতো করেও। একটা মন্দিরে তাকে ডাকা হয় "মুত্তাল রাজা", কিন্তু আরেক জায়গায় "মুহাম্মাদ খান"।'