ক্রিকেটরঙ্গ: বয়কটের কালো চোখ, মিয়াঁদাদের ক্যাচ ​​​​​​​

ইজেল

13 November, 2021, 10:40 pm
Last modified: 13 November, 2021, 11:00 pm
ক্রিকেটমাঠ ও মাঠের বাইরের বেশ কিছু মজার মজার ঘটনা নিয়ে এই লেখা। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।

রামচাঁদের সম্মানে ম্যাচ
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সাধারণত অবসর নেওয়া কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের সম্মানার্থে প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করে। টিকিটের টাকা এবং অন্যান্য আর্থিক লাভ পেয়ে থাকেন উক্ত খেলোয়াড়। ১৯৮০ সালে বোম্বে নগরীতে এমন এক প্রীতি ওয়ানডে ম্যাচ দেখার জন্য জড়ো হয় ৫০ হাজার দর্শক। কিংবদন্তি ভারতীয় খেলোয়াড় জি এস রামচাঁদের সম্মানে আয়োজিত হয়েছিল সেই ম্যাচটি। ভারতীয় একাদশের মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্ব একাদশ। বিশ্ব একাদশে ছিলেন গ্লেন টার্নার, ফ্রেড লিটমাস, প্যাট পোকোক, জাভেদ মিয়াঁদাদ, রোহান কানহাই, ইমরান খান, রিচার্ড হ্যাডলি প্রমুখ।

প্রথমে ব্যাট করে বিশ্ব একাদশ। বেশ বড় একটা স্কোর করে তারা। কিন্তু ভারতীয় একাদশ খানিকটা সমস্যায় পড়ে যায় রান তাড়া করতে গিয়ে। প্রতিভাবান অলরাউন্ডার কপিল দেব যখন উইকেটে আসেন, তখন আনন্দে সবাই করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। মাত্র ছয় রান করার পরই বাউন্ডারির ২০ মিটার ভেতরে তার ক্যাচ লুফে নেন জাভেদ মিয়াঁদাদ।

অথচ সবাই অবাক হয়ে দেখল—কপিল দেব ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন! তিনি যে আউট হয়েছেন, তাতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ ছিল না, কিন্তু হাবভাবে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তিনি উইকেট ছাড়বেন না। আবার অবস্থান নিতে শুরু করলেন তিনি, পরের বলটা মোকাবিলার উদ্দেশ্যে। ফ্রেড ছিলেন বোলার। তাঁর অনুরোধে আম্পায়ার কপিল দেবকে আউট ঘোষণা করেন। তারপরও কপিলের নড়াচড়ার নাম নেই!

অগত্যা খেলা যাতে চলে, সে জন্য আম্পায়ারকে নো-বল ডাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ পালিত হলো। শেষে কপিল দেব আরও গোটা পঞ্চাশ রান করে ম্যাচটা ভারতকে জিতিয়ে দেন।

কাজটা করার পেছনে কপিলের যুক্তি ছিল: দশর্কেরা যেহেতু তাঁর খেলা দেখতে এসেছে, তাই তিনি তাদেরকে হতাশ করতে চাননি।

ড্রাগের নেশা
অধিকাংশ স্পোর্টিং ইভেন্টে খেলোয়াড়েরা মাদক ব্যবহার করেছেন কি না, জানার জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষা করা হয়। নিশ্চিত করা হয়, যেন খেলোয়াড়েরা সততার সঙ্গে খেলতে নামেন, কোনো কারণে যেন তাঁকে অপমানিত না হতে হয়...কিংবা লম্বা সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞার ফাঁদেও পড়তে না হয়! এমন অনেক ঘটনা আছে, যেখানে খেলোয়াড়রা নিজের অজান্তে নিষিদ্ধ মাদক গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়। কিংবা হয়তো তাঁরা এমন কোনো ওষুধ নেন, যাতে নিষিদ্ধ মাদকের মতো কিছু একটা থাকে। অনেকেই অজ্ঞানতা কিংবা বাজে পরামর্শের শিকার হন আরকি।

পাকিস্তান ক্রিকেট দলটি বেশ কিছু মাদক-সম্পর্কিত অভিযোগ আর কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছিল বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে ১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ট্যুরের সময়। কানকথায় শোনা যায়, বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের কাছে কোনো-না-কোনো ধরনের মাদক ছিল! এসব অভিযোগের কারণে অনেকেই হাসিঠাট্টা শুরু করে দেয়। 

'পাকিস্তান ক্রিকেট দল দেখি ফিলিংস নিয়ে আকাশে উড়ছে!'

'হ্যাঁ, তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে টলমল করছে।'

'চারজন পাকিস্তানি খেলোয়াড় বিমান ল্যান্ড করার বিশ মিনিট পর এসেছে দেখে কাস্টম অফিসিয়ালরা অবাক হয়ে গেছে!'

'হ্যাঁ। আর পাকিস্তান টিমের ক্যাপ্টেন ওয়াসিম আকরাম, ইয়ান বোথামকে অনুরোধ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে আসতে। দুজনে মিলে ঘাস পরীক্ষা করে দেখবেন।' (ঘাস বলতে গাঁজা বোঝানো হয়েছে, বোথাম স্বীকার করেছিলেন যে অতীতে তিনি গাঁজা সেবন করেছেন।)

বয়কটের 'কালো চোখ'
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৭৮ সালে ওয়েলিংটনের প্রথম টেস্টে ঐতিহাসিক জয় পায় নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওটাই তাদের প্রথম টেস্ট জয়।

প্রথম ইনিংসে বয়কট ব্যাটিং করেন। ৭৭ রান করেছিলেন সৌভাগ্যের ডানায় ভর করে। ব্যাটিংয়ের সময় হ্যাডলির করা বাউন্সার আঘাত হানে বয়কটের ডান চোখের ওপর। ম্যাচ শেষ হবার আগেই তাঁর চোখ কালো হয়ে যায়।

খেলা শেষ হবার পর নিউজিল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে গিয়ে কিউইদের অভিনন্দন জানান ইংরেজ খেলোয়াড়েরা। বয়কট আসেন বাকিদের চেয়ে একটু দেরি করে, পরনে ছিল তাঁর ইংলিশ ব্লেজার।

একজন ঠাট্টা করে বলেন, 'মাসকারা দেখি চোখ থেকে বেয়ে বেয়ে পড়ছে!'

বয়কট জবাব দেন, 'ইংল্যান্ডে এসো আগে, আমাদেরও কিছু দ্রুতগতির বোলার আছে!'

কঠিন নীরবতা ভর করল কামরায়, প্রসঙ্গটা নিয়ে আর কেউ কোনো কথা বলল না।

ইচ্ছেমতো খরচ
জেরেমি কনির ব্যাপারে এই গল্পটা জানা গেছে ল্যান্স কেয়ার্নসের কাছে। আশির দশকে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন কনি। ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে জেরেমি ভার্নন কনি অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে যোগ দেন দলের সঙ্গে;

আহত ব্যাটসম্যান গ্লেন টার্নারের আঙুল ভেঙে যাওয়ায় তাঁর বদলি হিসেবে।

সে সময় কনি ছিলেন নিছক এক ছাত্র, তালঢ্যাঙা। কাঁধ পর্যন্ত অগোছালো লম্বা চুল তাঁর। জিন্স, টিশার্ট আর স্যান্ডেল পরতেন। তাঁর ক্রিকেট খেলার জুতোজোড়া, যেগুলো বহু বছর পরিষ্কার করা হয়নি, সাদা টেপ

দিয়ে কোনোক্রমে এক করে রাখা হয়েছে। ব্যাটিং করার গ্লাভস প্রাচীন মডেলের, তাতে ফুটো হয়ে গেছে। ক্লাবের কাছ থেকে ব্যাট ধার করে এনেছেন!

বব ভ্যান্স ছিলেন নিউজিল্যান্ড টিমের ট্যুর ম্যানেজার, সেই সঙ্গে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট কাউন্সিলের সদস্য। বদলি খেলোয়াড়ের চেহারাসুরত তাঁর খুব একটা পছন্দ হলো না। তাই সরাসরি বলেন কনিকে: যত দ্রুত

সম্ভব তিনি যেন নিজেকে গুছিয়ে নেন। নইলে আর কখনো নিউজিল্যান্ড দলের হয়ে খেলা হবে না তাঁর। এমনিক চুল কেটে নতুন কিছু পোশাক আর ক্রিকেট সরঞ্জাম কেনার জন্য এক শ ডলারও দেন।

জেরেমি কনির নতুন চেহারা দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন দলের সবাই। সাগ্রহে তাঁর ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তারা। চার ঘণ্টা পর দেখা দিলেন কুনি, তবে তখনো তার পরনে জিন্স, টিশার্ট আর স্যান্ডেলই। চুল কাটার জন্য পাঁচ ডলার খরচ করে বাকি ৯৫ ডলার দিয়ে কিনা তিনি ১২ তারের একটা গিটার কিনেছেন!

বিশ্বকাপ
ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপটা অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডে, ১৯৭৫ সালে। সারা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়েরা জড়ো হন তাতে অংশ নিতে, সর্বসেরা দল কোনটা তা দেখার জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অস্ট্রেলিয়া—এই দল দুটোর দিকে মনোযোগ ছিল সবার। লর্ডসে ফাইনাল ম্যাচ খেলার জন্য এই দুই দলই হাজির হয়! জয়লাভ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব লাভ করে।

যেসব দল জড়ো হয়েছিল বিশ্বকাপে অংশ নেবার জন্য, তাদের মাঝে মিনোজ শ্রীলঙ্কা সবার দৃষ্টি কাড়ে। কারণ ছিল মূলত একটাই—তারা টেস্ট খেলুড়ে দেশ নয়। তাদের সামলাতে অন্য দলগুলোকে বেশ বেগই পেতে হয়েছিল বলা চলে।

যাই হোক, ওভালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কানরা। লিলি আর টমসনের মুখোমুখি হতে হয় তাদের, আগে কখনো সেই অভিজ্ঞতা হয়নি। পিচটা ফ্ল্যাটই ছিল, শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা দুজনকে বেশ ভালোভাবেই সামাল দেন। একমাত্র ব্যাতিক্রম ছিলে দুলিপ মেন্ডিজ। জেভ টমসনের বাউন্সারের আঘাত খান মাথায়। বেশ অনেকক্ষণ শুশ্রূষার পর আম্পায়াররা মেন্ডিজকে জিজ্ঞেস করেন: তিনি রিটায়ার্ড হার্ট হতে চান, নাকি খেলতে চান?

'আমি খেলব,' দুলিপ জানান।

আরও কয়েকটা বল মোকাবিলা করার পর টমসনের দ্রুতগতির একটা ইয়র্কার ছোবল মারে মেন্ডিজের পায়ে। প্রচণ্ড ব্যথায় মাটিতে আছড়ে পড়েন মেন্ডিজ। অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়েরাও ঘিরে ধরেন তাঁকে, চেহারায় স্পষ্ট দুশ্চিন্তা। আম্পায়াররা তাঁকে দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করার আগেই মেন্ডিজ জবাব দেন, 'এখন যাচ্ছি!'

কথাটা বলেই হনহন  করে মেন্ডিজ ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।

ভিড় সামলানো
বেশির ভাগ সফররত খেলোয়াড়ের মতো রিচার্ড হ্যাডলিও অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকদের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। কখনো কখনো 'হ্যাডলি দ্য ওয়াইঙ্কার' টিপ্পনি শুনেও অগ্রাহ্য করেছেন। কিন্তু ১০ বছর বয়সী এক বাচ্চার মুখে 'হ্যাডলি তো মংগ্রেল (সঙ্কর)' শোনার পর আর চুপ করে থাকতে পারেননি।

ছেলেটাকে খুঁজে বের করে তিনি জানিয়ে দেন, এই ধরনের কথাবার্তা বলা অনুচিত এবং যদি ভদ্রতা না শেখে তো বড় হলে তাকে বিপদে পড়তে হবে। এ কারণে অসি সমর্থক আর মিডিয়া হ্যাডলিকে অনেক কটুকথা শোনায়।

প্রতিভাবান কিন্তু বিতর্কিত অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার গ্রেগ ম্যাথুস নিউজিল্যান্ড সফরে যান। তখন পাল্টা হিসেবে তাঁকেও অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছিল! ১৯৮৬ সালে বেসিন রিজার্ভে ব্যাট করতে নামার সময় দর্শকেরা তাঁকে শুনিয়ে দেয়: 'অসি আর ওয়াইঙ্কার!' এমনকি এক দর্শক তাঁকে লক্ষ্য করে ডিমও ছুড়ে মারে! আউট হয়ে ফেরার পথেও একই দর্শক তাঁকে আবার ডিম মারে...তবে ততক্ষণে ১৩০ রান করে ফেলেছেন তিনি!

অধিকাংশ খেলোয়াড়েরই এহেন পরিস্থিতি কোনো-না-কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে গ্রেগ কয়েক মিনিটের মাঝে আবার হাজির হলেন। দর্শকদের মাঝে বসে প্রায় ১৫০টি অটোগ্রাফ দিলেন। এ ঘটনায় এবার ফেরার পথে দর্শকেরা হাততালি দিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানাল।

আসলে কতটা ভালো ছিলেন ইয়ান স্মিথ?
অত্যন্ত দক্ষ উইকেটকিপার এবং কাজ চালাবার মতো ব্যাটসম্যান ছিলেন ইয়ান স্মিথ। পরবর্তীতে দক্ষ টিভি ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেন। মুচকি হাসি, রসবোধ আর মার্জিত আচরণ দিয়ে খুব সহজেই দর্শকদের মন জিতে নিতে পারতেন।

রিচার্ড হ্যাডলির বই 'রিদম অ্যান্ড সুইং' প্রকাশ করার সময় বক্তৃতা দেন ইয়ান স্মিথ। তিনি বলেন: 'রিচার্ড হ্যাডলির ব্যাপারে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি বলে খুবই খুশি খুশি লাগছে। হাজার হলেও উইকেটের পেছনে থাকতাম বলে অন্য যে কারও চাইতে তাকে অনেক বেশি দেখেছি। আপনারা কি জানেন, ডেভিড বুন '৮৭ সালের গ্যাবা টেস্টে বল ফাইন লেগে পাঠিয়ে যে রানটি নেন, সেটা ছিল রিচার্ড হ্যাডলির টেস্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রদত্ত ৮ হাজার ৯২৪তম রান? অথচ আজ আমাদের এখানে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে হচ্ছে: দারুণ বোলার ছিলেন তিনি! গব ভাই—ওয়াল্টার হ্যাডলি, মার্টিন হ্যাডলি, ব্যারি হ্যাডলি, ডেইল হ্যাডলি এবং নিকোলাস ও ম্যাথিউ হ্যাডলিরা মিলেও এত রান করতে পারেননি!' 

জবাবে রিচার্ড হ্যাডলি বলেন—ইয়ান স্মিথ যদি আরও কয়েকটা ক্যাচ না ফেলতেন, তাহলে হয়তো ইয়ান বোথামের ৩৭৩ উইকেটের বিশ্বরেকর্ডটা কমপক্ষে মাস ছয়েক আগেই ভেঙে দিতেন!

এ কথা শুনে স্মিথ পাল্টা জবাব দেন তৎক্ষণাৎ: 'সত্যি বলতে কী, আমি না থাকলে তুমি ওই বিশ্বরেকর্ডের মালিক হতেই পারতে না। কমপক্ষে দশজন ব্যাটসম্যানকে আমি চুরি করে আউট করেছি!'

এ কেমন খেলোয়াড়?
বাজে ফর্ম যেকোনো ক্রিকেটারের দুঃস্বপ্ন। ব্যাটসম্যানের জন্য বাজে ফর্ম হলো রান করতে না পারা, আর বোলারের জন্য উইকেট নিতে না পারা। প্রতিপক্ষের মাইন্ড গেমের শিকার হয়ে মাথাটা সন্দেহ আর দুশ্চিন্তায় ভরে ওঠে। সে ভাবতে থাকে: 'রানটান করতে আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?' কিংবা 'পরের উইকেটটা পাব কবে?' এসব বাজে দুশ্চিন্তার কারণে ফর্ম ফিরে পেতে আরও দেরিই হয় শুধু।

প্রতিপক্ষ সাধারণত ব্যাপারটা টের পেয়ে যায়। তারা বুঝতে পারে, কোন খেলোয়াড়টার ফর্ম ভালো না, আর ভালো খেলতে তাকে বেগ পেতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে স্লেজিং করে তার দশা আরও বেহাল করে তোলে তারা।

১৯৮৫-৮৬ সালের অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে দারুণ এক দ্বৈরথ দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব: হ্যাডলি বনাম ডেভিড বুন। রান পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন বুন। এই ম্যাচে খারাপ খেললে হয়তো দল থেকে বাদ পড়তে হবে তাঁকে। উইকেট পড়লে ডেভিড বুন, যাকে আদর করে সবাই ব্যাবস (বেবুন) বলে, উইকেটে পা রাখেন। নিউজিল্যান্ড দল পরিষ্কার বুঝতে পারে, কী দারুণ চাপে আছে ব্যাবস। অবস্থা বুঝে হ্যাডলি তাঁর ক্যাপ্টেন জেরেমি কনিকে বলেন, তিনটা স্লিপ, একটা গালি, ব্যাট-প্যাড আর শর্ট কাভারে ফিল্ডার রাখতে। হ্যাডলি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে বুনকে রানের খাতাই খুলতে দেবেন না। ক্যাপ্টেনকে জানালেন, রানের জন্য খাটাতে হবে তাঁকে।

হ্যাডলির পেছন থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে এল, 'হায় রে! বুন বড়জোর দুই কি তিন বল খেলবে। সে জন্য এত কষ্ট?' কথাটা শুনে হেসে ফেলল নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। সন্দেহ নেই, বনিও শুনেছিলেন কথাটা।

কয়েক বল পরই আউট হয়ে যান তিনি। মাত্র দুই রান করে লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হন।

তবে দ্বিতীয় ইনিংসেই বুন ৮০ রান করে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ জিতিয়ে দেন। ক্যারিয়ারে তাঁর মোট রানসংখ্যা ছিল ৮০০০-এর বেশি।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.