দুই স্নায়ুযুদ্ধ: নতুন স্নায়ুযুদ্ধ কি কারণে আলাদা!

আন্তর্জাতিক

জোনাহ গোল্ডবার্গ
18 March, 2022, 12:15 pm
Last modified: 18 March, 2022, 12:29 pm
অরওয়েলের ১৯৪৫ সালের প্রবন্ধ ‘ইউ অ্যান্ড দ্য অ্যাটম বম্ব’- এ তিনি লিখেছিলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমাদের বিরোধ ছিল পারমাণবিক যুগের ফলাফলমাত্র। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ভবিষ্যতেও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে যুদ্ধে লিপ্ত হবে দেশগুলো।
ছবি- বিজনেস ইনসাইডার

গত মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর পর থেকেই দেশ বিদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে 'নতুন স্নায়ুযুদ্ধ'। তবে, এবারের স্নায়ুযুদ্ধে রাশিয়ার সাথে যুক্ত হয়েছে আরেক পরাশক্তি- চীন।

যদি কৌশলগত প্রতিযোগিতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে ইতোমধ্যেই একটি 'স্নায়ুযুদ্ধ' চলছে।

ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রতিবাদ হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ ঘোষণা ছাড়া প্রায় সবই করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা। অন্যদিকে, চীনের সাথে বিষয়গুলো এতটা উত্তেজনাপূর্ণ না হলেও অনেক আমেরিকানের মতে- বিশেষ করে রিপাবলিকানদের মতে, চীনের বিপরীতে 'স্নায়ুযুদ্ধ' সম্পর্কিত শব্দের ব্যবহার আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রীয় বিষয় হওয়া উচিত।

এমনকি, যারা এই চিন্তাধারার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন, তারাও বিশ্বাস করেন যে আমেরিকা ইতোমধ্যেই চীনের সাথে স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।

আমি একমত যে রাশিয়া এবং চীনের সাথে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ একই সাথে প্রয়োজনীয় এবং এটি কারো কাম্য নয়। কিন্তু আমি উদ্বিগ্ন যে, ঐতিহাসিক স্নায়ুযুদ্ধ এবং এই নতুন স্নায়ুযুদ্ধের শব্দার্থগত বিভ্রান্তি আমাদের সমস্যায় ফেলতে পারে।

জর্জ অরওয়েল 'পলিটিক্স অ্যান্ড দ্য ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ'-এ লিখেছেন, "মানুষের চিন্তা যদি ভাষাকে কলুষিত করে, ভাষাও চিন্তাকে কলুষিত করতে পারে। শব্দার্থগত বিভ্রান্তি ঐতিহ্য এবং অনুকরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।"

এমনকি অরওয়েলের ১৯৪৫ সালের প্রবন্ধ 'ইউ অ্যান্ড দ্য অ্যাটম বম্ব'- এ তিনি লিখেছিলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমাদের বিরোধ ছিল পারমাণবিক যুগের ফলাফলমাত্র। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ভবিষ্যতেও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে যুদ্ধে লিপ্ত হবে দেশগুলো।

বলার অপেক্ষা রাখে না, পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় এখনও আমাদের পদক্ষেপকে কিছু অংশে নিয়ন্ত্রণ করে। আমি আশা করি আমাদের প্রতিপক্ষরাও সেই ভয় পান। তবে আগের স্নায়ুযুদ্ধ এবং আজকের মধ্যে রয়েছে বেশ পার্থক্য।

হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের পাশাপাশি কোরিয়ান এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল তখনকার স্নায়ুযুদ্ধের অংশ। সেসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক অত জোরদার না হওয়ায় তা ছিন্ন করাও ছিল বেশ সহজ। এমনকি সমসাময়িক রাশিয়ার সাথেও আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের খুব কমই উন্নতি হয়েছে।

পারমাণবিক পরাশক্তি হলেও অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে আছে তারা। বর্তমানে রাশিয়ার মাথাপিছু জিডিপি ক্যালিফোর্নিয়ার আট ভাগের এক ভাগ।

অন্যদিকে, চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি বৈশ্বিক ম্যানুফেকচারিং পাওয়ারহাউস। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে, সেই একইভাবে তাইওয়ান আক্রমণের জন্য চীনের সাথে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করবে- এমন কোনো আশঙ্কা আপাতত নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে চীন হংকংয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, উইঘুরদের বন্দী শিবিরে রাখছে। কিন্তু এতে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

সোভিয়েতরা বিশ্বকে পুঁজিবাদ, 'বুর্জোয়া' গণতন্ত্র এবং ধর্ম থেকে 'মুক্ত' করার শপথ করেছিল। এমনকি সেসময় আমেরিকার কমিউনিস্ট-বিরোধী নীতির যথেষ্ট বিরোধিতা করে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পক্ষ।

আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকাকে 'ইশ্বরহীন কমিউনিস্টদের' থেকে আলাদা করার জন্য আমেরিকার রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের অঙ্গীকারে যুক্ত করা হয় 'ঈশ্বরের অধীনে' নীতি। এই আইন প্রবর্তনের সময় হোমার ফার্গুসন বলেছিলেন, "আমি বিশ্বাস করি অঙ্গীকারের এই পরিবর্তনটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মুক্ত বিশ্ব এবং কমিউনিস্ট বিশ্বের মধ্যে প্রকৃত মৌলিক পার্থক্যগুলোর একটিকে তুলে ধরে- যা হলো ঈশ্বরে বিশ্বাস।"

সেসময় হাউস বা সিনেটের কেউ এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করেনি।

কিন্তু আজকের এই দিনে এরকম কিছু অসম্ভব বলেই মনে হবে। ধর্ম এখন আর জাতিকে আগের মতো একত্রিত করেনা। এছাড়া, অতীতের মতো এখন আর স্বাধীনতা রক্ষা করার আর্তনাদ নেই কোনো জাতির মাঝেই।

অরওয়েল যুক্তি দিয়েছিলেন যে, কিছু বাক্যাংশ আমাদের কাছে 'প্রিফ্যাব্রিকেটেড হেন-হাউস' এর মতো করে আসে এবং আমাদের চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে। যদিও আমরা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারি, অতীতের স্নায়ুযুদ্ধের আদর্শ থেকে বের হয়ে আমাদের উচিত বর্তমানের যুদ্ধ নিয়ে নতুন করে ভাবা।

  • দ্য ডিসপ্যাচ থেকে অনুদিত

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.