দুবাইয়ে সম্পদ সরিয়ে নিচ্ছেন বিত্তশালী রাশিয়ানরা 

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
11 March, 2022, 03:45 pm
Last modified: 12 March, 2022, 12:56 pm
সম্প্রতি রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সাথে তাল মেলাতে অস্বীকার করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাই এখানেই যে রুশদের টাকাপয়সা সুরক্ষিত থাকবে, সে ব্যাপারে ইতোমধ্যেই নাগরিকদের ইঙ্গিত দিয়েছে মস্কো।
ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার খড়্গ অব্যহত রয়েছে। শিল্প-বাণিজ্য, প্রযুক্তি থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে রাশিয়াকে প্রায় একঘরে করে ফেলছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তাই ইউরোপ থেকে নিজেদের ধনসম্পদ দুবাইয়ে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বিত্তশালী রাশিয়ানরা। বিভিন্ন আর্থিক ও আইনি প্রতিষ্ঠান সূত্রে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র দুবাই দীর্ঘদিন যাবতই বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একটি প্রধান গন্তব্য। সম্প্রতি রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সাথে তাল মেলাতে অস্বীকার করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাই এখানেই যে রুশদের টাকাপয়সা সুরক্ষিত থাকবে, সে ব্যাপারে ইতোমধ্যেই নাগরিকদের ইঙ্গিত দিয়েছে মস্কো।

সত্যি বলতে, বিগত বছরগুলোতে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। পশ্চিমাদের সাথে সুর মিলিয়ে তারা রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ ব্যাপারে আলাদাভাবে কোনো নির্দেশিকা জারি করেনি।

এতদিন যাবত যেসব ধনাঢ্য রুশ নাগরিক তাদের অর্থবিত্ত সুরক্ষিত রাখতে সুইজারল্যান্ড কিংবা লন্ডনকে বেছে নিয়েছিলেন, তারা এখন দুবাইয়ের দিকে ঝুঁকছেন। সুইজারল্যান্ড ও লন্ডন, দুটি দেশই ইতোমধ্যে রুশ নাগরিক ও সংস্থাগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সুইজারল্যান্ডের একটি বড় বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা ও এক আইনজীবির বরাতে এ তথ্য জানায় রয়টার্স।

দুবাইভিত্তিক ওই আইনজীবি জানান, কত দ্রুত শত শত কোটি টাকার 'গুরুত্বপূর্ণ' তহবিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থানান্তর করা যাবে- জানতে চেয়ে তার প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেছে একাধিক রাশিয়ান সংস্থা।

বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত একজন প্রফেশনাল বলেন, "সংযুক্ত আরব আমিরাত একটা ভালো মাধ্যম। বিমানে মাত্র কয়েক ঘন্টায় সেখানে পৌঁছানো যায় এবং তা পশ্চিমাদের সাথে পূর্ণ অংশীদারিত্বে নিয়ন্ত্রিত নয়।"

রাশিয়া থেকে কি পরিমাণ অর্থ দুবাইয়ে আসছে, সে বিষয়ে দুবাই গণমাধ্যম কার্যালয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কিছু সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর রুশ ক্লায়েন্টরা এখন ওই একই ব্যাংকের সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখায়ও একাউন্ট খুলছেন।

চারদিক থেকে নিষেধাজ্ঞার চাপে ঝুঁকির মুখে আছে রাশিয়ার অর্থনীতি। টাকা সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ানরা রিয়েল এস্টেট খাতে এবং মালিকের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয় এমন তহবিল কেনার পেছনেও বিনিয়োগ করছেন। 

চোখ ধাঁধানো সব পর্যটন ও অবকাশ যাপনকেন্দ্রের জন্য রাশিয়ানদের কাছে দুবাই অত্যন্ত জনপ্রিয়। দুবাই ভ্রমণে আসা পর্যটক ও রিয়েল এস্টেটের শীর্ষ ক্রেতাদের তালিকায়ও আছে রাশিয়ানদের নাম। কিন্তু উপর্যুপরি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে সম্প্রতি রাশিয়ান মুদ্রার রেকর্ড পতন হয়েছে।

২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত 'গোল্ডেন' ভিসা প্রোগ্রাম চালু করে। এই প্রোগ্রামের আওতায় বিনিয়োগকারী ও পেশাদার ব্যক্তিরা ১০ বছর দেশটিতে থাকার অনুমোদন পাবেন।

ব্যাংকের সতর্কতা

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের অধিবেশনে সংযুক্ত আরব আমিরাত অনুপস্থিতি এবং উপসাগরীয় বিনিয়োগ তহবিলের রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা রাশিয়ান নাগরিকদের একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে বলে মনে করছে বিভিন্ন সূত্র।

এদিকে রাশিয়ার তহবিল দুবাইয়ে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত কোনো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়নি। তবে ব্যাংকারদের মতে, রাশিয়ার সাথে এই লেনদেনের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনাম ক্ষুণ্ণ হতে পারে। কারণ বিশ্বের অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এখন মস্কোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে।

তবে এক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধান কয়েকটি ব্যাংক। এর আগে ইরান ও সুদানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সঙ্গে একমত না হওয়ায় শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল ব্যাংকগুলোকে।

গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে 'ধূসর তালিকাভুক্ত' করেছে আর্থিক দুর্নীতি বিষয়ক ওয়াচডগ, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)। এর ফলে দেশটির উপর নজরদারি বৃদ্ধি করার এখতিয়ার তৈরি হয়েছে তাদের।

দুবাইভিত্তিক ওই আইনজীবি বলেন, "ধূসর তালিকাভুক্ত হওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতকে এখন আগের চেয়ে বেশি সাবধানী হতে হবে।"

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সাথে তাল মিলিয়ে রাশিয়ার সাথে লেনদেনে ব্যাংক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে কিনা, অথবা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত সম্পদ দুবাইয়ে রাখার ক্ষেত্রে কোনো প্রটোকল মানা হচ্ছে কিনা- এ বিষয়েও দুবাই গণমাধ্যম কার্যালয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

দুবাই ব্যাংকের এক সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ানদের কাছ থেকে আগত তহবিল সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য নেওয়া হচ্ছে না, তবে তারা ডিপোজিট একাউন্ট খুলতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট ওই সূত্র জানায়, "নীতিগতভাবে তারা এটা পারে।" কিন্তু রুশদের টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংককে অনেক কিছু খতিয়ে দেখতে হবে। টাকার উৎস এবং এর প্রমাণও দেখতে হবে।

সূত্র: রয়টার্স

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.