পুতিনের ‘অনন্য’ অস্বাভাবিক বিশালাকৃতির টেবিলের মিস্ত্রী কে? এক ইতালীয়?
সম্প্রতি ইউক্রেন উত্তেজনার মাঝেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। রাশিয়ার ক্রেমলিনে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে ব্যবহৃত টেবিলটি নজরে এসেছে বিশ্ব মিডিয়ার। আকারে অস্বাভাবিক বড় অনন্য এই টেবিলটি বানানোর দাবি করেছে ইতালির 'ওএকে ফার্নিচার' নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইউক্রেন উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে ওই টেবিলে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মাধ্যমে শান্তি ফিরে আসতে পারে, এমন আশায় গর্ববোধ করছেন ইতালীয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান রেনেটো পোলোগ্না।
বার্তাসংস্থা এএফপি-কে তিনি বলেছেন, "টেবিল কেবল মানুষের খাওয়া-দাওয়ার কাজেই ব্যবহৃত হয় না, বরং যুদ্ধের সিদ্ধান্ত, যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর বা শান্তি আনায়নের সিদ্ধান্ত আলোচনায়ও ব্যবহৃত হয়।"
"আমার প্রত্যাশা, এই টেবিলের আলোচনা সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসুক; যুদ্ধের উত্তেজনা কমিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনুক", বলেন পোলোগ্না।
সোনার পাতা দিয়ে সাজানো ৬ মিটার (২০ ফুট) লম্বা সাদা এই টেবিলেই গত সপ্তাহে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এবং এরপর জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
করোনাভাইরাসের প্রটোকল মানতেই রাশিয়ার নেতা ও তার অতিথিদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে যেকোনো আলোচনায় বা বৈঠকে বসার জন্য বিশেষ এই টেবিলটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে টেবিলের অস্বাবাভিক আকৃতি তীব্র বিতর্ক সৃষ্টির পাশাপাশি ইন্টারনেট জগতে উপহাসের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই টেবিলের আকার ও পুতিনের অধিক সতর্কতা নিয়ে ট্রল করছেন ইন্টারনেট দুনিয়ায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই টেবিলটিকে স্কেটিং রিং কিংবা 'দ্য লাস্ট সাপার' চিত্রকর্মের দৃশ্য বানিয়ে উপহাস করেছেন।
পোলোগ্না জানিয়েছেন, অনন্য এই টেবিলটি ১৯৯৫ সালে ক্রেমলিনকে ডেলিভারি দিয়েছিল তার প্রতিষ্ঠান। সেই থেকে এই টেবিলই ছিল ওএকে ফার্নিচারের সবচেয়ে বড় অর্ডার।
টেবিলটির দাম কত?
পোলোগ্না বলেন, "এটি তখন (ইতালীয়) লিরাতে দাম ধরে বিক্রি করা হয়েছিল … আজকের দিনে এটির মতো একটি টেবিলের মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ইউরো (১ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৫ মার্কিন ডলার)।" যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি টাকার সমান।
কেবল পোলোগ্নার ওএকে ফার্নিচার একাই টেবিলটি বানানোর দাবি করেনি। স্পেনের মন্ত্রিপরিষদের আসবাব নির্মাতা ভিসেন্তে জারাগোজার দাবি, ২০০৫ সালের দিকে তিনিই ক্রেমলিনে টেবিলটি পাঠিয়েছিলেন।
স্প্যানিশ রেডিও কোপকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জারাগোজা বলেন, "এটি আল্পস পর্বতের বিচবৃক্ষ দিয়ে তৈরি টেবিল।" টেলিভিশনের ছবি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি টেবিলটিকে চিনতে পেরেছেন।
অন্যদিকে, ইতালির পোলোগ্নাও কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে দাবি করেছেন টেবিলটি তার প্রতিষ্ঠানই তৈরি করেছে। ৬৩ বছর বয়সী পোলোগ্না বলেন, "আমি যা দাবি করছি, সে ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত।"
তবে বিতর্ক এড়াতে তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করি, স্পেনে তারা যে দাবি করছেন হয়তো তারা এর অনুরূপ একটি টেবিল তৈরি করেছিলেন; হতে পারে সেটি এই টেবিলের রেপ্লিকা, আমি ঠিক জানি না।"
১৯৫০'র দশকে ওএকে ফার্নিচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পোলোগ্নার বাবা। এরপর থেকে আজ অন্তত ৫০ জন কর্মী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কাজ চলছে। ক্লাসিক্যাল এবং সমসাময়িক আসবাবপত্র তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানটি ইতালির উত্তরাঞ্চলে প্রসিদ্ধ। এছাড়া, বেশকিছু বিদেশি ক্লায়েন্টও রয়েছে তাদের।
মধ্যপ্রাচ্যে ওএকের সুপরিচিত ক্লায়েন্টদের মধ্যে ছিলেন লিবিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং ইরাকের সাদ্দাম হোসেন।
- সূত্র: আল জাজিরা