করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেও কিছু মানুষ কেনো কোভিডে আক্রান্ত হন না?
করোনভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির ভীতি সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, গবেষকদের ধারণা, অসংখ্যবার ধরন বদলানো ওমিক্রন প্রচলিত টিকার সুরক্ষা পর্যন্ত ভেদ করে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এরপরেও এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে বসবাস করেও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হন না। কিন্তু এটি কীভাবে সম্ভব?
নতুন এক গবেষণায় মিলেছে এই প্রশ্নের উত্তর।
গবেষণাটিতে দাবি করা হয়েছে, এই ধরনের লোকেরা অতীতে হয়তো করোনভাইরাসের (সার্স-কোভি-২) অন্যান্য ধরনের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ফলে তাদের টি-সেল (শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী কোষ) ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি তৈরি করে ফেলেছে। আর এ কারণেই তারা কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে এসেও আক্রান্ত হন না।
বিজ্ঞান বিষয়ক মাল্টিডিসিপ্লিনারি জার্নাল নেচারে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তাদের পরীক্ষিত টি-সেলগুলো শুধু ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকেই দমন করেনি বরং ভাইরাসটির মূল অংশ নিউক্লিওক্যাপসিডেও আক্রমণ চালিয়েছে।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৫২টি পরিবারের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ওপর চালানো হয়েছে এ গবেষণা। সার্স-কোভি-২ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পর, টি-সেলগুলো প্রথমদিকে কেমন ইমিউন রেসপন্স বা প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়া দেখায় তা তুলে ধরা হয়েছে গবেষণাটিতে।
সমীক্ষাটিতে বলা হয়েছে, "সার্স-কোভি-২ এর বিরুদ্ধে 'ক্রস-রিঅ্যাকটিভ ইমিউন রেসপন্স' মহামারির আগেই ভাইরাসটির সমগোত্রে পরিলক্ষিত হয়েছে এবং এটি হোস্ট শরীরের সুরক্ষাদানে অবদান রাখছে।"
গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, করোনভাইরাস পরিবারের অন্য সদস্য ভাইরাসগুলো মানবদেহে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অসুস্থতা সৃষ্টি করলেও এদের মধ্যে একই ধরনের কিছু বৈশিষ্ট্য (কমন ক্যারেক্টারিস্টিকস) রয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, মানবদেহ ভাইরাসটির সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে, তাদের গঠনগত একই ধরনের ওই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে শরীরের প্রতিরক্ষা কোষগুলো করোনভাইরাসটিকে চিনে ফেলে। এমনকি ভাইরাসটি পূর্বের তুলনায় ভিন্ন হলেও টি-সেল সেটিকে শনাক্ত করতে পারে।
প্রথম থেকে ছয় দিনের মধ্যে গবেষণায় অংশ নেওয়া ৫২ জনেরই রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছিল। পিসিআর টেস্টে যারা কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছেন তাদের তুলনায় যারা নেগেটিভ হয়েছেন তাদের শরীরে উচ্চ স্তরের টি-সেল মেমরির সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা।
টি-সেলগুলো কেবল ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন অংশকেই টার্গেট করেনি বরং ভাইরাসটির মূল অংশ 'নিউক্লিওক্যাপসিড', যা এর জেনেটিক উপাদানগুলো সংরক্ষণ করে, সে অংশকেও আক্রমণ করেছে বলে জানান গবেষকরা।
এদিকে, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ পিটার চিন-হং সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, টিকা নিয়েছেন এবং নেন নি এমন ব্যক্তিদের ওমিক্রনে আক্রান্তের ক্ষেত্রে ভিন্ন লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে খুব বেশি তথ্য এসে পৌঁছেনি; তবে আমি মনে করি, টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিরা আক্রান্ত হলেও খুব হালকা ধরনের লক্ষণ তাদের মধ্যে দেখা যায়। এমনকি অনেকের শরীরে কোনো লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে।"
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ার্স কলেজ অফ নার্সিং-এর অধ্যাপক ড. মায়া এন ক্লার্ক-কুটায়া জানিয়েছে, টিকাগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ওমিক্রনে সংক্রামিত হলে কেবল মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা এবং সামান্য জ্বরের কথা বলেছেন। অন্যদিকে, টিকা নেন নি এমন রোগীদের মধ্যে কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং ফ্লুর মতো বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
- সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস