করোনায় মারা যাচ্ছে গরিবরা, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
17 January, 2022, 11:45 am
Last modified: 17 January, 2022, 02:35 pm
মহামারিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর সম্পদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে অক্সফাম। করোনা মহামারি নতুন করে আরও ১৬০ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের মুখোমুখী করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা আরও ধনী হলেও, দরিদ্রদের অবস্থার উন্নতি হয়নি। বিশ্বের বেশিরভাগ স্থানে ধনী-গরিবের এই ব্যবধান বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে অক্সফামের গবেষণায়।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দাতব্য সংস্থাটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তিদের নিম্ন আয় প্রতিদিন অন্তত ২১ হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। অথচ ২০২০ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত, মহামারির মধ্যেও বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

অক্সফামের প্রতিবেদনটি ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার তালিকা এবং ক্রেডিট সুইস গ্লোবাল ওয়েলথের বার্ষিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যের সাহায্যও নিয়েছে অক্সফাম।

সুইজারল্যাডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকের শুরুতে 'বৈশ্বিক বৈষম্যের' ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে দাতব্য সংস্থাটি। এই ইভেন্টের প্যানেল আলোচনায় সাধারণত কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতা, সেলিব্রিটি, ক্যাম্পেইনার, অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা অংশ নিয়ে থাকেন। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন বিস্তারের কারণে গত বছরের মত চলতি বছরেও এ আলোচনাটি অনলাইনেই হবে। মহামারির সম্ভাব্য প্রভাব ও  টিকা বণ্টনের মত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে এবারের বৈঠকে।

সংস্থাটি সাধারণত প্রতি বছর অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক অভিজাতদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। 

অক্সফাম জিবি-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যানি শ্রীস্কন্দরাজাহ বলেন, "এ বছর যা ঘটছে তা সত্যিই অভাবনীয়। মহামারি চলাকালীন প্রায় প্রতিদিনই একজন করে নতুন বিলিয়নিয়ার তৈরি হয়েছেন। এদিকে লকডাউন, নিম্নগামী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পর্যটনের কারণে বিশ্বের প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষেরই আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।" 

এর ফলশ্রুতিতে বিশ্বে আরও ১৬০ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের মুখোমুখী হয়েছেন বলে জানান তিনি। এর কারণ হিসেবে তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ত্রুটিকে দায়ী করেছেন।

ফোর্বসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তি হলেন- ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, বার্নার্ড আর্নল্ট, বিল গেটস, ল্যারি এলিসন, ল্যারি পেজ, সের্গেই ব্রিন, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ বলমার ও ওয়ারেন বাফেট।

সামষ্টিকভাবে তাদের সম্পদ ৭০০ বিলিয়ন থেকে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেলেও, এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। মহামারির সময়ে ইলন মাস্কের সম্পদ ১,০০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে; অন্যদিকে, বিল গেটসের বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যথাযথ স্বাস্থ্যসেবার অভাব, ক্ষুধা, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাবে প্রতি চার সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হয় পৃথিবীতে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মহামারির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। তবে, সামাজিক ব্যয় বাড়ছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রেই তা হ্রাস পাচ্ছে। 

সেইসঙ্গে সমাজে ফিরে এসেছে লিঙ্গ অসমতা। ২০১৯ সালের তুলনায় এখন কর্মক্ষেত্রে অন্তত ১৩ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৩০ লাখ নারী কমেছে এবং ২ কোটিরও বেশি মেয়েশিশু আর কখনও স্কুলে ফিরতে পারবে কিনা তা অনিশ্চিত।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীও কোভিড-১৯ এর কারণে কঠিন সময় পার করছে বলে দাবি করা হয়েছে অক্সফামের প্রতিবেদনে। 


 

  • সূত্র: বিবিসি
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.