২০৩৫ সালের মধ্যে পেট্রোল ও ডিজেল গাড়ি বিক্রয় বন্ধের লক্ষ্য ইউরোপের

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
06 August, 2021, 01:55 pm
Last modified: 06 August, 2021, 01:59 pm
ইউরোপ ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রথম জলবায়ু নিরপেক্ষ মহাদেশ হতে চায়।

২০৩৫ সালের মধ্যে পরিবেশ দূষণকারী যানবাহন বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এটি একটি উচ্চভিলাষী লক্ষ্য, যার ফলে হাইব্রিড গাড়িগুলো বিপন্নের তালিকায় চলে যাবে, এবং নাটকীয়ভাবে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক মডেলের দিকে নিয়ে যাবে।

গত বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানায়, তারা ২০৩০ সালের মধ্যে অটো ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে নতুন গাড়ির গড় দূষণ নির্গমন ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে চায়। আর, ২০৩৫ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনার অর্থ হলো, সে বছর থেকে নিবন্ধিত নতুন গাড়ির দূষণ নির্গমনের পরিমাণ অবশ্যই শূন্য হতে হবে।

২০১৮ সালে ইইউ'র নির্ধারিত লক্ষ্য ছিল ২০৩০ সালের মধ্যে এ ধরনের যানবাহন ৩৭.৫ শতাংশ কমিয়ে আনা। সেক্ষেত্রে নতুন নির্ধারিত লক্ষ্যটি একটি উল্লেখযোগ্য ধাপ হিসেবে কাজ করবে।

নতুন প্রস্তাবিত নিয়ম পরিবর্তনগুলো একটি বৃহত্তর প্যাকেজের অংশ, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ১৯৯০ সালে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসের তুলনায় ২০৩০ সালে কমপক্ষে ৫৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, ইউরোপ ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রথম জলবায়ু নিরপেক্ষ মহাদেশ হতে চায়।

ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লিয়েন এক বক্তব্যে বলেন, 'জীবাশ্ম জ্বালানী অর্থনীতি তার সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে একটি সুস্থ গ্রহের পাশাপাশি ভালো চাকরি এবং উন্নতিকে ছাড়িয়ে যেতে চাই, যা আমাদের প্রকৃতির ক্ষতি করবে না।'

বৈদ্যুতিক গাড়িতে স্থানান্তরের সুবিধার্থে ২৭টি ইইউ সদস্য রাষ্ট্রে গাড়ির চার্জিং ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। প্রধান মহাসড়কে প্রতি ৬০ কিলোমিটারে (৩৭.৩ মাইল) চার্জিং কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, এবং পেট্রোল ও ডিজেল জ্বালানির নূন্যতম করের হার বাড়ানো হবে।

লবি গ্রুপ ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক উইলিয়াম টডস বলেন, 'এটি অটো শিল্পের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট এবং ড্রাইভারদের জন্য একটি সুখবর।'

মোট দেশীয় উৎপাদনের ৭ শতাংশ এবং ১৪.৬ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে অটো শিল্প ইউরোপের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কিন্তু পরিবহন সেক্টরে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বেড়েই চলেছে এবং ২০১৭ সালে রাস্তার যানবাহনগুলো ২১ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমনের জন্যে দায়ী।

কারিগরদের মধ্যে অনেকেই ইলেকট্রিক যানবাহনের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। অপরদিকে, বিনিয়োগকারীরা উচ্চভিলাষী কোম্পানিগুলোকে তাদের শেয়ারের দাম বাড়িয়ে পুরস্কৃত করছে।

অডি এবং পোর্শ-সহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের মালিক ভক্সওয়াগন (ভিএলকেএএফ) মঙ্গলবার জানায়, তারা ২০৩০ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ৫০ শতাংশ বিক্রয় করতে চায়। ২০৪০ সালের মধ্যে ইউরোপের সর্ববৃহৎ গাড়ির প্রতিষ্ঠান তাদের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে শুধুমাত্র শূন্য গ্যাস নির্গমনকারী যানবাহন বিক্রি করতে চায়, এবং এই বাজারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনও রয়েছে।

ফোর্ড (এফ) ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপে শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক যাত্রীবাহী যান বিক্রির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। রেনল্ট (আরএনএলএসওয়াই), ভলভো (ভিওএলএএফ), বিএমডব্লিউ (বিএমডব্লিউওয়াইওয়াই) এবং মার্সিডিজ বেঞ্জের মালিক ডাইমলার (ডিডিএআইএফ) পরিষ্কার গাড়ি তৈরি বাড়ানোর জন্য নিজেদের পরিকল্পনা সাজিয়েছে।

তবু, বিশ্বের অনেক গাড়ি নির্মাতাদের ইইউ'র লক্ষ্য পূরণে তাদের পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করতে হবে। হাইব্রিড ও অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনসহ ২০৩০ সালে উৎপাদিত নির্গমনের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার জন্য কারিগরদের বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করতে হবে।

বার্কলেজ বিশ্লেষকরা সাম্প্রতিক একটি গবেষণাতে লিখেছেন, এই লক্ষ্যগুলো গাড়ি নির্মাতাদের কাছে বিস্ময়কর হওয়া উচিত নয়, যদিও তাদের স্পষ্টভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যানবাহনের দিকে ত্বরান্বিত পরিবর্তন প্রয়োজন।

ভক্সওয়াগন অর্থায়নের প্রধান আর্নো অ্যান্টলিটজ বলেছেন, কোম্পানির অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন ব্যবসা সফটওয়্যার, স্বায়ত্তশাসিত ড্রাইভিং এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের উৎপাদন প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় মুনাফা এবং নগদ প্রবাহ তৈরিতে সাহায্য করবে। ভক্সওয়াগন ২০২৫ সালের মধ্যে প্রযুক্তির বিকাশের জন্য ৭৩ বিলিয়ন পাউন্ড (৮৬ বিলিয়ন ডলার) নির্ধারণ করেছে। 

ইইউ বিধি কার্যকর হওয়ার জন্য বেশ কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি ইইউ পার্লামেন্ট এবং ইইউ কাউন্সিলের আইন প্রণেতাদের মাধ্যমে পাঠ, সংশোধন ও অনুমোদন করা প্রয়োজন। 

গত বছর ব্রিটেন ঘোষণা করেছিল, তারা ২০৩০ সাল থেকে নতুন পেট্রোল ও ডিজেল গাড়ি বিক্রয় নিষিদ্ধ করবে। একইসঙ্গে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত কিছু হাইব্রিড গাড়ির বিক্রয় চলমান রাখবে।

জলবায়ু সংকট সমাধানে সহায়তার জন্য গাড়ি নির্মাতাদের এগিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে টডস বলেন, 'সমস্যা হলো, গাড়ি নির্মাতাদের ২০৩০ সালেই এসব পরিষ্কার গাড়ি বিক্রি শুরু করতে হবে। অটো শিল্পের বেশি কথা কিন্তু কাজ কম হওয়ার এই অবস্থা আমাদের গ্রহ আরও নয় বছর সহ্য করতে পারবে না।'


  • সূত্র: সিএনএন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.