২০০ কোটি ডলার পাচ্ছে ফাইজার, বছরের শেষ দিকেই আসছে ভ্যাকসিন

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
22 July, 2020, 10:50 pm
Last modified: 22 July, 2020, 11:59 pm
আজ বুধবার (২২ জুলাই) চুক্তিটি সম্পর্কে জানায় মার্কিন সরকার। এর আওতায় অতিরিক্ত আরও ৫০ কোটি ডোজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির।  

কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের মজুদ বাড়াতে আবারও বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ফাইজার ইঙ্ক এবং বায়োএনটেক এসই- নামের দুইটি বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে এ বাবদ ১০ কোটি সম্ভাব্য প্রতিষেধক কেনার চুক্তি করা হয়, যার আর্থিকমূল্য ১৯৫ কোটি মার্কিন ডলার। 

তবে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের প্রথম চালান পাওয়ার পরই চুক্তিতে উল্লেখিত মূল্য পরিশোধ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে অবশ্য কোম্পানি দুটিকে তাদের উৎপাদিত সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের কাছ থেকে নিরাপত্তার সনদ নিতে হবে। ভ্যাকসিন দুটি চলতি বছরের শেষে- ডিসেম্বর নাগাদ শেষ পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফলভাবে শেষ হলে ব্যাপক উৎপাদনে যেতে পারবে। অগ্রিম চুক্তি থাকায় তখন অগ্রাধিকার পাবে যুক্তরাষ্ট্র। 

আজ বুধবার (২২ জুলাই) চুক্তিটি সম্পর্কে জানায় দেশটির সরকার। এর আওতায় অতিরিক্ত আরও ৫০ কোটি ডোজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। 

মার্কিন সরকারের সঙ্গে বড় অংকের সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার প্রথমদিকে ফাইজারের শেয়ারের মূল্য ৫ শতাংশ হারে বাড়ে। একইগতির, স্ফীতি লক্ষ্য করা গেছে বায়োএনটেকের শেয়ার লেনদেনে। 

এদিকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সক্ষম ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগেই তা অগ্রিম ক্রয় করা শুরু করেছে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যেই ৬ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। তাই মহামারির প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে বিপর্যস্ত অর্থনীতির চাকা সচল করতেই এখন ভ্যাকসিন মজুদ শুরু করেছে উন্নত বিশ্ব। 

সাম্প্রতিক চুক্তির আগে, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত আরেকটি ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেতে বিপুল বিনিয়োগ করে মার্কিন সরকার। ১২০ কোটি মার্কিন ডলার পুঁজি লগ্নি করা হয় অক্সফোর্ডের সম্ভাবনাময় প্রতিষেধক উৎপাদনে চুক্তিবদ্ধ ব্রিটিশ-সুইস যৌথ মালিকানার জৈব-প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা পিএলসি'তে। 

ভ্যাকসিন প্রতি মূল্য: 

১০ কোটি ডোজ কিনতে প্রায় দুইশ কোটি ডলারের চুক্তি করায়, ধারণা করা হচ্ছে ভ্যাকসিনের ডোজপ্রতি এখানে ২০ ডলারের কাছাকাছি মূল্য ধরা হয়েছে। সর্বশেষ মুদ্রাবাজার সূত্রে; বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য এক হাজার ৬৯৫ টাকা। ভ্যাকসিন ডোজের সম্ভাব্য মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত করেন ব্লুমবার্গের বাণিজ্যিক গোপনীয় তথ্য বিশেষজ্ঞ স্যাম ফাজেলি। 

ফাজেলি বলেন, ''ভ্যাকসিনের শুধুমাত্র একটি মাত্র ডোজ যদি করোনা প্রতিরোধে যথেষ্ট হয়, তাহলে ফাইজার দেড় হাজার কোটি ডলার মুনাফা করবে, বলে আমরা অনুমান করছি। সম্ভাব্য প্রতিষেধকের জন্য এ মূল্য এখন নির্ধারিত হলেও, পরবর্তীতে তা আরও কমতে পারে। তবে যদি শরীরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি করতে একাধিক ডোজের দরকার হয়, তাহলে খরচের পরিমাণ অনেকটাই বাড়বে।  

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ব্লুমবার্গের আর্থিক বিশেষজ্ঞ তাজিন আহমেদ অনুমান করেন, বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন প্রকল্প এক হাজার ১৭০ কোটি ডলার মূল্যের হতে পারে। কোম্পানিটির উৎপাদিত ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য ৩৬ ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ১২ ডলার এবং বাকি বিশ্বে বিক্রির জন্য ১২ ডলার বিক্রয়মূল্য হিসাব করে তিনি এ সম্পদমূল্য নির্ধারন করেন। 

গত জুনে ফাইজারের মুখ্য নির্বাহী অ্যালবার্ট বোরলা জানান, সম্ভাব্য চাহিদা এবং মূল্যের কারণে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় কোভিড ভ্যাকসিনের প্রকৃত দর নির্ধারণ করাটা বেশ কঠিন।

''অন্য যেকোনো প্রতিষেধকের দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়ার তুলনা করে সঙ্গে কোভিড ভ্যাকসিনের দর হিসাব করা সম্ভব নয়। উভয়ের ক্ষেত্রেই বাজারের মৌলিক উপাত্তগুলো একইভাবে কাজ করলেও, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। তবে বিশ্ব মানবতার স্বার্থে এমনভাবে দাম নির্ধারণ করা উচিৎ, যা বাণিজ্যিকভাবেও ন্যায়সঙ্গত হয়'' যোগ করেন তিনি। 

যোগান নিয়ে উদ্বেগ:

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশের ভ্যাকসিন ক্রয় দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য তৈরি করেছে এক প্রবল ঝুঁকি। ইতোমধ্যেই, শীর্ষ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন বাকি বিশ্বকে আরও দীর্ঘকাল করোনার ভ্যাকসিন ছাড়া আর্থিক সঙ্কট এবং মৃত্যুর মিছিলের নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। উন্নত বিশ্ব যখন একের পর এক ক্রয়চুক্তি করেই চলেছে, তখন দরিদ্র দেশগুলো তাদের প্রয়োজন মাফিক ভ্যাকসিন চালান আদৌ পাবে কিনা, তা নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়। 

ভ্যাকসিন মজুদে সবার চাইতে এগিয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্র অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছে মোট ১২০ কোটি ডলার। জনসন অ্যান্ড জনসন, মডের্না ইঙ্ক এবং অন্য কোম্পানির প্রতিষেধক গবেষণাতেও হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ রয়েছে দেশটির।  

যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে, ফাইজারের কাছ থেকে কেনা ভ্যাকসিনটি তারা জনগণের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করবে। এটি দেশটির নাগরিকদের জন্যেও সুখবর হলেও জনবহুল দরিদ্রতম অঞ্চলগুলোর জন্য কোনো আশার আলো দেখাচ্ছে না। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.