স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত মেশিনগানের মাধ্যমে পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা, দাবি ইরানের

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
07 December, 2020, 01:45 pm
Last modified: 07 December, 2020, 01:57 pm
ইসলামিক রেভুল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) মুখপাত্র সেকেন্ড ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রামাজান শরিফ জানিয়েছেন, স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের সাহায্যে অ্যাডভান্সড ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমেই তাকে হত্যা করা হয়।

স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত ডিভাইস, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও ফেসিয়াল রিকগনিশনের সাহায্যেই ইরানের শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানী-কে হত্যা করা করা হয়েছে, ইরানের সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো।  

গত ২৭ নভেম্বর ইরানের রাজধানী তেহরানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার গাড়ি বহরে গুলিবর্ষণ করে তাকে হত্যা করা হয়। হামলার প্রকৃতি সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও ইরানের বেশিরভাগ সূত্র জানিয়েছে, গুলিবর্ষণ ও আকস্মিক বিস্ফোরণের মাধ্যমেই তাকে হত্যা করা হয়। 

ইসলামিক রেভুল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) মুখপাত্র সেকেন্ড ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রামাজান শরিফ জানিয়েছেন, স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের সাহায্যে অ্যাডভান্সড ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমেই তাকে হত্যা করা হয়। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ইরানিয়ান স্টুডেন্টস নিউজ এজেন্সি (আইএসএনএ) এ খবর জানায়। 

আইআরজিসির ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ সরদার আলি ফাদাভি জানিয়েছেন, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। ইরানের আরেক রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা ইয়াং জার্নালিস্টস ক্লাব (ওয়াইজেসি) এ খবর জানায়।

ফাদাভি জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে কোনো আক্রমণকারী ছিল না, স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দিয়ে ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে ফখরিজাদেহের ছবি ব্যবহার করে তাকে লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ফাদাভি বলেন, "স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান ব্যবহারের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছি আমরা, ঘটনাস্থলের আশেপাশে কোনো অপরাধীর চিহ্ন ছিল না।" 

তবে দূর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহারের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তিন জন বিশেষজ্ঞ সিএনএন-কে জানান, দূর নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় যতো সুবিধাই থাকুক, এধরণের অভিযানে আরও বেশি ভুল-ত্রুটির আশঙ্কা থাকে। 

দূর নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির সাহায্যে গুলিবর্ষণের উপযোগী যানবাহন বাস্তবে থাকলেও একজন মানুষকেই যোগাযোগের ব্যবস্থা, স্যাটেলাইট রিসিভার ও অস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে; জানান বিশেষজ্ঞরা। মেশিনগানের কোনো সমস্যা, যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতা এক্ষেত্রে পুরো অভিযানই ব্যর্থ করে দিতে পারে। 

শুরু থেকেই এ হত্যাকান্ডের জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করে আসছে ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ইরান বদ্ধপ্রতিকর বলেও জানিয়েছে ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী। এখন পর্যন্ত এ অভিযোগের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি ইজরায়েল সরকার।

ইজরায়েলের অভিবাসন মন্ত্রী তাজাচি হানেগবি ঘটনার দিন জানান, এব্যাপারে তার কোনো ধারণাই নেই। এ ঘটনা ইরানের জন্য বিব্রতকর এমন মন্তব্যও করেন তিনি। 

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ ঘটনার পেছনে ইজরায়েলের হাত ছিল বলে জানান। তবে এব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন আগে থেকেই কিছু জানতো কিনা বা সাহায্য করেছিল কিনা এসংক্রান্ত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, ইজরায়েল ইতোপূর্বে তাদের গোপন অভিযানের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে বিভিন্ন তথ্য জানাতো। তবে ফখরিজাদেহ হত্যাকান্ডের ঘটনায় এমনটা হয়েছে কিনা এব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। ইরানের শীর্ষ এ পরমাণুবিজ্ঞানী দীর্ঘদিন ধরেই ইজরায়েলের লক্ষ্য ছিল বলেও জানান তিনি। 

ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনার লক্ষ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা এমনটাই দাবী করে এসেছে দেশটি। তবে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ করছে এমন অভিযোগ ইজরায়েল সহ অন্যান্য দেশগুলোর। এ বোমা তৈরির পরিকল্পনার শীর্ষস্থানীয় পরিকল্পনাবিদ ফখরিজাদেহ এমনটাই অভিযোগ তাদের। 

গত সপ্তাহে ইরান সরকারের মুখপাত্র আলি রাবি জানান, ফখরিজাদেহের হত্যার কয়েক মাস এবং কয়েক দিন আগেও ইরানের মিনিস্ট্রি অব ইনটেলিজেন্স এধরণের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল সরকারকে। 

  • সূত্র: সিএনএন 
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.