সফল অবতরণের পর বিস্ফোরিত হলো ইলন মাস্কের রকেট

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
04 March, 2021, 04:45 pm
Last modified: 04 March, 2021, 04:45 pm
টেস্ট ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে মাত্র ছয় মাইলের কিছু বেশি উচ্চতা দিয়ে উড়ে আসার পর ঠিকঠাক মত ল্যান্ডিংও করেছিল রকেটটি। কিন্তু বিধি বাম! মাটিতে অবতরণের আট মিনিট পরেই স্পেসক্রাফটটি বিস্ফোরিত হয়।

ভবিষ্যতে চাঁদ এবং মঙ্গলগ্রহে পাঠানোর বাসনা নিয়ে একটি বিশেষ ধরনের স্টারশিপ রকেট তৈরি করেছিল ইলন মাস্ক এর মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্স। টেস্ট ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে মাত্র ছয় মাইলের কিছু বেশি উচ্চতা দিয়ে উড়ে আসার পর ঠিকঠাক মত ল্যান্ডিংও করেছিল রকেটটি। কিন্তু বিধি বাম! মাটিতে অবতরণের আট মিনিট পরেই স্পেসক্রাফটটি বিস্ফোরিত হয়, ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে সাউথ টেক্সাসে এর লঞ্চিং সাইট জুড়ে। যদিও রকেটে কেউই ছিলনা এবং কোনরকম হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে যতবার উড্ডয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, ততবারই রকেটটি সজোরে ভূমিতে এসে আঘাত করে বিস্ফোরিত হয়েছে। কিন্তু এবার 'নাম্বার টেন বা এসএন-১০' নামের যে রকেটটি পাঠানো হয় তা বেশ স্বচ্ছন্দেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করেছিল। এটি স্থানীয় সময় ৬ টা ১৪ মিনিটে উড্ডয়ন করে এবং পরে আনুভূমিকভাবে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। রকেটের ডানাগুলো এসময় একে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। 

এরপর রকেটটি বামদিকে ঘুরে নিজের তিনটি ইঞ্জিন রিফায়ার্ড করে আস্তে আস্তে ধূলা ও ধোঁয়ার মেঘের মধ্য দিয়ে ভূমিতে অবতরণ করে।
 
তৃতীয়বারের মাথায় এই সফলতায় আনন্দে উদ্বেল হয়ে স্পেসএক্স এর প্রিন্সিপাল ইন্টেগ্রেশন ইঞ্জিনিয়ার জন ইনস্প্রুকার বলেছিলেন, 'থার্ড টাইম ইজ আ চার্ম! এত সুন্দর একটি ল্যান্ডিং হলো অবশেষে।'
  
কিন্তু জন তখনো জানতেন না যে এই সুন্দর অবতরণই শেষ নয়। রকেটটি তখনো সমানে ধোঁয়া নির্গত করে চলছিল এবং স্পষ্টতই নিম্নমুখী হচ্ছিলো। আট মিনিট পর নাটকীয়ভাবে রকেটটি নিজেকে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে একটা উল্কার মত বিস্ফোরিত হয়। আর বিস্ফোরণের কারণটা ছিল ফুয়েল লিকেজ।

গত বছরের ডিসেম্বরে এসএন-৮ এবং গত মাসেই নিক্ষেপিত এসএন-৯ এর ভাগ্যেও একই দশা হয়েছিল বলা যায়।

তবে স্পেসএক্স কিন্তু এই ঘটনায় দমে যাওয়ার পাত্র নয়। ইনস্প্রুকার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে এসএন-১১ তৈরি হয়েই আছে ভবিষ্যতে উড়াল দেয়ার জন্য।

স্পেসএক্স এর জন্য স্টারশিপ টেস্ট ক্যাম্পেইন এখন আর শুধুই বাহন উড়াতে আর অবতরণ করতে শেখার ব্যাপার নয়, এটি এখন নাসার জন্য এক ধরনের অডিশনের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বর্তমানে স্পেসএক্স চেষ্টা করে যাচ্ছে নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে নাসার নভোচারীদের নিয়ে চাঁদে অবতরণ করার মত একটি স্পেসক্রাফট বানাতে। গতবছর ডাইনেটিকস ও জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনের সাথে স্পেসএক্সও প্রাথমিকভাবে এই চুক্তির জন্যে নির্বাচিত হয়েছিল। বাকি দুই কোম্পানিকে নাসা আগামী মাসেই হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণে সক্ষম একটি স্টারশিপ প্রটোটাইপ স্পেসএক্সকে প্রতিযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে রাখতে পারতো। এদিকে নাসার লিডারশিপও আর্টেমিস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে স্পেসএক্স এর কর্মদক্ষতা  রিভিউ করবে। কংগ্রেস থেকে প্রাপ্ত ফান্ডিং এর দ্বারা ট্রাম্প প্রশাসনের দিয়ে যাওয়া উচ্চাকাঙ্ক্ষী সময়সূচির মধ্যে প্রোগ্রামটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা তাও তারা যাচাই করবে। 

তবে স্পেসএক্স জানিয়েছে, এ বছরের মধ্যেই তারা পৃথিবীর কক্ষপথে স্টারশিপ পাঠাতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা করছে। সেই সাথে তারা একজন জাপানি বিলিওনিয়ার ইউসাকু মায়িজাওইয়াসহ একদল ক্রু কে চাঁদে ভ্রমণে পাঠাবে। ২০২৩ এর মধ্যে হতে যাওয়া এ মিশনকে অন্যরা প্রায় অসম্ভব মনে করলেও ইলন মাস্ক এ ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী। 

মেক্সিকো উপসাগরের পাশে টেক্সাসের দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিশাল ফাঁকা জমিকে স্পেসএক্স তাদের স্টারশিপ অপারেশনের বেজ ক্যাম্প বানিয়েছে। এতদিনে সেই ক্যাম্প আরো বহুগুণ বিস্তৃত হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় মাস্ক জানান যে স্পেসএক্স টেক্সাসকে একটি স্টারবেজ শহর তৈরি করছে। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.