সংক্রমিতের সংখ্যায় বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে ব্রাজিল, আদিবাসীদের মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি
ফুটবল আর সাম্বা নৃত্যের দেশ বলে পরিচিত ব্রাজিল। সেখানে এখন মরণনৃত্য শুরু করেছে কোভিড-১৯। গতকাল শনিবার দেশটিতে নতুন করে ১৬ হাজার ৫০৮ জন নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যা নিশ্চিত করে।
ফলে দেশটিতে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে তিন লাখ ৪৭ হাজার ৩৯৮ জনে। বার্তা সংস্থা সিএনএন নানা সূত্রের বৈশ্বিক তথ্যাবলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে এখন ব্রাজিলেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণ চলছে বলে জানায়।
অবশ্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এখবর লেখা পর্যন্ত ব্রাজিলের নতুন করে সংক্রমিতের তালিকা এখনও তাদের কোভিড-১৯ এর ডিজিটাল মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেনি। তবে আজ দিনের মধ্যেই সংখ্যাটি অন্তর্ভুক্ত করবে জনস হপকিন্স।
ব্রাজিলে করোনা সংক্রমণে সরকারি তথ্যানুসারে মারা গেছেন মোট ২২ হাজার ১৩ জন। এর মধ্যে বিগত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয় ৯৬৫ জনের। তবে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ব্রাজিলেই অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অরণ্যরাজি মহাবন আমাজন। আর এই বনের আদিবাসীদের মাঝে প্রথম থেকেই ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। খবর সিএনএনের।
দেশটির বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য সেবার অবকাঠামো ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা বঞ্চিত আদিবাসীরা এখন আশঙ্কাজনকহারে মারা যাচ্ছেন। তাদের সাহায্যে বর্তমান উগ্র ডানপন্থী ও বর্ণবাদি হিসেবে পরিচিত, প্রেসিডেন্ট জেইর বলসানারো ও তার সরকার এখন পর্যন্ত কোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়নি।
ফলে আদিবাসীদের মাঝে মৃত্যু হার এখন ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যার মাঝে করোনার মৃত্যুহারের চাইতে বেশি। এ তথ্য নিশ্চিত করে ব্রাজিলের আদিবাসী অধিকার গোষ্ঠী- আর্টিকুলেশন অব ইন্ডেজেনাস পিপলস অব ব্রাজিল (এপিআইবি)।
এপিআইবি সূত্রে জানা গেছে, ব্রাজিলে মাত্র ৯ লাখ আদিবাসী রয়েছেন। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮০ জন। সেই তুলনায় মারা গেছেন ১২৫ জন। অর্থাৎ মৃত্যুর হার ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। সেই তুলনায় ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যার মাঝে এই হার মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
তবে সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, মহাবনের গভীরে বসবাস করা অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় এখনও সরকারি তালিকার বাইরে। বাইরের পৃথিবীর ওষুধপত্র এবং টিকার সঙ্গে পরিচিতি কম থাকায় এমনিতেই ব্রাজিলের আদিবাসীদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নতুন রোগব্যাধির বিরুদ্ধে বেশ দুর্বল।
জেইর বলসানারোর সরকারের মদতে সাম্প্রতিক সময়ে অ্যামাজন উজাড়ের হারও বেড়েছে আশঙ্কাজনকহারে। নিজ বাসস্থান ও ভূমি হারিয়ে অনেক আদবাসী এর ফলে পাড়ি জমিয়েছেন নানা শহুরে বস্তিতে। এসব স্থানের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় নগরেও সংক্রমিত হচ্ছেন আদিবাসীরা।