শাওমিসহ বেশকিছু চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
15 January, 2021, 05:45 pm
Last modified: 16 January, 2021, 10:44 am
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ শাওমি সহ নয়টি প্রতিষ্ঠানকে এ তালিকাভুক্ত করে। প্রতিষ্ঠানগুলো চীনা মিলিটারি নিয়ন্ত্রিত এমনটাই অভিযোগ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের আর মাত্র কয়দিন বাকি থাকতেই চীনা স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শাওমি সহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ শাওমি সহ নয়টি প্রতিষ্ঠানকে এ তালিকাভুক্ত করে। প্রতিষ্ঠানগুলো চীনা মিলিটারি নিয়ন্ত্রিত এমনটাই অভিযোগ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ হওয়া ছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলোর মার্কিন বিনিয়োগ প্রাপ্তির পথও বন্ধ হলো এর মাধ্যমে।

সম্প্রতি অ্যাপলকে ছাড়িয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তর স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হওয়া শাওমির জন্য উদ্বেগজনক খবর হয়ে এসেছে নতুন এসব বিধিনিষেধ। নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পরই আজ হংকং-এ শাওমির শেয়ারের ১০ শতাংশ দরপতন হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল এয়ারক্র‍্যাফট করপোরেশন অব চায়নাও (কোম্যাক) আছে পেন্টাগনের এ তালিকায়।

চীনের সামরিক বাহিনীর সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক, যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো বেসামরিক বলে প্রতীয়মান হলেও তাদের উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চীনা সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দিয়ে থাকে, তাদের প্রতিহত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। 

নতুন এ বিধিনিষেধ যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার অপব্যবহার বলে মন্তব্য করেছে বেইজিং। 

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর। এসব নিষেধাজ্ঞাকে ট্রাম্প প্রশাসনের 'দ্বিচারিতামূলক আচরণ' বলে অভিহিত করেন তিনি।

চীনের অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিএনওসিসি-কে এরকম আরেকটি তালিকায় রেখেছে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। এ তালিকা অনুযায়ী মার্কিন সরবরাহ ও প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হবে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ প্রতিষ্ঠানটিও মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের তালিকায় ছিল।

চীনা সামরিক বাহিনীর মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণে থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাওমি। প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "শাওমি চীনা সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন নয়, এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা সম্পৃক্তও নয়। এটি কোনো 'কম্যুনিস্ট চাইনিজ মিলিটারি কোম্পানি' নয়।"

প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় শাওমি যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেও জানানো হয়।

সিএনওসিসি, কোম্যাক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এ সিদ্ধান্তসহ ট্রাম্প প্রশাসনের বেইজিং এর ওপর আরোপিত সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বাইডেন প্রশাসনের জন্য চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কও জটিল হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে শাওমির ওপর জরুরি ভিত্তিতে স্টক খালি করার চাপ পড়লেও, স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবেনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত বৃহস্পতিবারের আগেই হুয়াওয়ে ও চীপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসএমআইসি সহ ৩৫ টি চীনা প্রতিষ্ঠানকে মিলিটারি তালিকাভুক্ত করে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

চীনের সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এসএমআইসি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হুমকির কারণ হতে পারে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে হুয়াওয়ে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনটি চীনা টেলিকম কোম্পানিকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ।

গত ১৫ জানুয়ারি মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ শাওমিসহ নয়টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা'র ব্যাপারে শাওমি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, "শাওমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বিদ্যমান সকল আইন মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করে। শাওমি পুনঃর্ব্যক্ত করতে চায় যে তাদের পণ্য এবং পরিষেবা সর্ব সাধারণের বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্যই। শাওমি নিশ্চয়তার সাথে জানাতে চায় যে শাওমি চীনা সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত নয় কিংবা তাদের সাথে কোন ভাবে সংশ্লিষ্ট নয়; না তারা মার্কিন সরকারের এনডিএএ আওতাধীন 'কমিউনিস্ট চীনের সামরিক প্রতিষ্ঠান'। এমতাবস্থায় শাওমি তার ও তার শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। শাওমি বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব ও পরিণতিগুলি পর্যালোচনা করছে। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রয়োজনবোধে শাওমির পক্ষ থেকে আগামীতে আরো বিস্তারিত জানানো হবে।"

  • সূত্র: সিএনএন 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.