রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার আইন ভঙ্গের দায়ে সু চি’র নামে মামলা 

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
02 April, 2021, 06:55 pm
Last modified: 02 April, 2021, 07:04 pm
ফ্রি বার্মা রেঞ্জার্স নামের একটি রিলিফ গ্রুপ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্তও মিয়ানমারের দক্ষিণপূর্ব কারেন প্রদেশে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী

মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রনায়ক অং সান সু চির নামে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার আইন ভঙ্গের দায়ে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবি। সেই সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার সামরিক জান্তা বিনা নোটিশেই হঠাৎ করে দেশজুড়ে সকল তারবিহীন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়।

মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে এটি সু চি'র বিরুদ্ধে দায়ের করা পঞ্চম গুরুতর মামলা। রয়টার্স জানায়, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদন্ড হতে পারে।

সামরিক বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দুই মাস ধরে মিয়ানমারের পথে পথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে দেশটির সাধারণ জনগণ। 

অভ্যুত্থানের পর থেকেই সু চি-সহ তার দল- লীগ ফর ন্যাশনাল ডেমোক্রেসি-এলএনডি'র নেতাকর্মীদের আটকে রেখেছে সামরিক জান্তা। সু চি'র বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আরো ৪টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আমদানি-রপ্তানি আইন ভঙ্গ এবং ভীতি বা উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে এমন তথ্য প্রচারের মদত দেয়ার অভিযোগে করা মামলা।

সু চি'র ব্যক্তিগত আইনজীবি খিন মং জ- বার্তা সংস্থা সিএনএনকে জানান, ২৫ শে মার্চ সু চি-সহ তার বন্দী অস্ট্রেলীয় অর্থ উপদেষ্টা শন টার্নেল ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের নামে মামলা করা হয়। তিনি আরো বলেন, তিনি মাত্র ৩ মার্চ এই নতুন মামলার কথা জানতে পেরেছেন। 
২০২০ সালের নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে সু চি'র দল। সেই সাথে ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের দিন বন্দী হবার পর থেকে সু চি'কে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার তার আইনজীবি খিন মং জ একটি ভিডিও কলের মাধ্যমে সু চি'র মামলার শুনানিতে অংশ নেন। খিন মং বলেন, সু চি'কে দেখে তার মনে হয়েছে তার শারীরিক অবস্থা ভালোই। 

খিন মং আরো জানান যে, সু চি নিজের আইনজীবিদের সঙ্গে একটি গোপন বৈঠকে বসার দাবি জানিয়েছেন যাতে পুলিশ বাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই তিনি তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।   

এদিকে শুক্রবার সকালে মিয়ানমারবাসী ঘুম ভেঙ্গেই সারা দেশে তারহীন ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার সংবাদ পেয়েছে। সেনাবাহিনী পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। 
  
টেলিকম কোম্পানি 'ওরিডো'র গ্রাহকরা নিজেদের ফোনে বার্তা পেয়েছেন যে পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের তারবিহীন ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকবে। এই নির্দেশনা ১ এপ্রিল থেকে প্রযোজ্য ছিল। মিয়ানমারের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই তারহীন ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে থাকেন। 

এছাড়াও, মানুষের মধ্যে যোগাযোগ কমাতে এবং তথ্য আদান-প্রদান প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করার লক্ষ্যে রাতের বেলা ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সেনাবাহিনী। সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক প্রযোজ্য এই শাটডাউনের ৪৭তম দিনে এসে এই ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নের খবর নিশ্চিত করেছে ইন্টারনেট মনিটর 'নেটব্লকস'। প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, ১৯ তম দিন থেকেই মোবাইল ডেটাও অসচল করা ছিল। 

এব্যাপারে সেনাবাহিনীর মন্তব্য নেওয়ার জন্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে সিএনএন। 

সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ:

মিয়ানমারে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর প্রতি নিন্দা জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের প্রতি একটি বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি)।

মিয়ানমারে চলমান আন্দোলনের মধ্যে নিরস্ত্র সাধারণ জনতার উপর গুলি চালিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে ব্যাপক মারপিট, আটক ও রাতের বেলা হামলা চালানোর মত জঘন্য অপরাধ করেই চলেছে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এরই মধ্যে অন্তত ৫৪৩ জন মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্স নামের একটি অধিকার গোষ্ঠী।  

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জানায়, "নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের উপর সেনাবাহিনীর অব্যাহত সহিংসতা এবং শত শত নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানায়।" মিয়ানমার সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিষদের সদস্যরা।

তবে রাশিয়া ও চীনের মত দেশগুলোর সহায়তা পাবার উদ্দেশ্যে ইউএনএসসি'কে এই বিবৃতির ভাষা বদলে ফেলতে হয়েছে। চূড়ান্ত বিবৃতিতে মিয়ানমারের উপর অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা বা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘের এক কূটনীতিবিদ জানান, বিবৃতিতে নিষেধাজ্ঞা বোঝাতে 'পরবর্তী পদক্ষেপ নেবার প্রস্তুতি' কথাটি রাখতে চাইলেও মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় রক্ষক চীন এই শব্দগুচ্ছ  বাদ দেওয়ার দাবি জানায়। 

এছাড়া, রাশিয়া মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যুর নিন্দা জানাতে চায় যা চূড়ান্ত বিবৃতির অনুমোদনকে বেশ কয়েকবার বিঘ্নিত করে বলেও এই কূটনীতিক জানান। 

বুধবার নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের প্রতি শিগগির কোন পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত না নিয়েই সভা শেষ করার পর এ বিবৃতি দেয়। 

জাতিসংঘের কূটনীতিকরা এখনও পর্যন্ত মিয়ানমার ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কথা বলার দাবি জানিয়েছেন। তবে দেশটির জান্তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বিপক্ষে থাকা রাশিয়ার একজন কূটনীতিবিদের মতে, নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তা জাতিসংঘের একটি সদস্য দেশের উপর অনধিকার চর্চা করা হবে। 
        
বিমান হামলা চলছে: 

ফ্রি বার্মা রেঞ্জার্স নামের একটি রিলিফ গ্রুপ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্তও মিয়ানমারের দক্ষিণপূর্ব কারেন প্রদেশে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী। যদিও একই দিনে সেনাবাহিনী জানিয়েছিল যে তারা একতরফা অস্ত্রবিরতিতে যাবে। 

বিমান হামলা অব্যহত থাকায় সেনাবাহিনী ও কারেন রাজ্যে সশস্ত্র আদিবাসী বাহিনীগুলোর মধ্যকার উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। হাজার হাজার বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে কিংবা প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছে। 

এদের মধ্যে বেশিরভাগ গ্রামবাসীই উল্লেখযোগ্য সশস্ত্র আদিবাসী বাহিনী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ ) এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কেএনইউ মিয়ানমারে আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিয়ে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে অন্যতম।
  
ফ্রি বার্মা রেঞ্জার্স বাহিনী জানায়, গ্রামবাসীরা পালিয়ে থাকায় এই বিমান হামলায় কারো মৃত্যু ঘটেনি। বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকেও তাদের টুইটার বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার আরো দুটি বিমান হামলার খবর নিশ্চিত করে।

কেএনইউ এর সদস্যরা পাপুন জেলার একটি ছোট শহর ডুয়ে লো এর একটি স্বর্ণখনিতে বিমান হামলার ভিডিও সিএনএন'কে দেখায়। ভিডিওতে হামলার পর মাটিতে পড়ে থাকা বেশকিছু মৃতদেহ দেখা গেছে। 

বৃহস্পতিবারের বিমান হামলার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। 

এর আগে গত বুধবার সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে সশস্ত্র বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান যে, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অভিযান বন্ধ রাখা হবে। তবে দেশ, সরকার, জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে তারা ভুলবেন না।  

  • সূত্র: সিএনএন                                
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.