রহস্যময় সংক্রমণের মুখে ভারতের এক রাজ্য

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
03 August, 2021, 12:55 pm
Last modified: 03 August, 2021, 05:05 pm
ড. স্বপ্নীল পারিখ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের ঊর্ধবগতির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে মূলত এখন সংক্রমণ কমিয়ে আনা যাচ্ছে না।

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় ৩৪ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, যা দেশটিতে নতুনভাবে আক্রান্তের মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। বিবিসির সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কেরালায় নতুনভাবে করোনা আক্রান্তের এই ঊর্ধ্বগতির কারণ উঠে এসেছে। ভারতে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এর সংক্রমণ কমে যাওয়ার কয়েক মাস পরও কেরালায় করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

গত বছরের জানুয়ারিতে রাজ্যটিতে প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হয়। চীনের উহান ফেরত এক মেডিকেল ছাত্রের শরীরে ধরা পড়ে ভাইরাসটি। এরপর থেকে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে যার ফলে কেরালা একটি হটস্পটে পরিণত হয়। 

তবে করোনা পরীক্ষা, ট্রেসিং, আইসোলেশন, এবং তৃনমূল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে কেরালা মোট আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পেরেছিলো। করোনার প্রথম ঢেউ যদিও দীর্ঘ সময় ধরে চলেছিলো, কেরালা এই ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিলো। সরকারি হিসাবমতে, রাজ্যটিতে এসময় মৃত্যুর হারও ছিলো কম।  

অথচ এই বছরের গ্রীষ্মে শুরু হওয়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কেরালার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। দেশটির অন্যান্য প্রান্তে মহামারির প্রভাব কমে গেলেও এই রাজ্যটিতে তা কমার কোনো লক্ষণ নেই। কেরালায় ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ বসবাস করে। কিন্তু দেশটিতে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি এই কেরালাতেই। 

কেরালায় এক মাসে মোট পরীক্ষিতদের মধ্যে ১০ শতাংশেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে। এ পর্যন্ত রাজ্যটিতে ৩৪ লাখ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুবরণ করেছে ১৬ হাজার ৮৩৭ জন।  

রাজ্যটিতে বর্তমানে করোনা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ানো পেয়েছে। এমনকি ভারতের অন্যান্য অংশের তুলনায় এখানে প্রতি ১০ লাখে দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ পরীক্ষা করা হচ্ছে। 

ভারতের প্রথম সারির একজন ভাইরোলজিস্ট ড. গঙ্গদীপ কাংয়ের মতে, "কেরালা করোনা পরীক্ষা করছে বেশি হারে। সংক্রমণের আসল সংখ্যা জানার জন্য কন্টাকট ট্রেসিং বেশ লাভজনক।"

বর্তমানের অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জরিপ অনুসারে, কেরালায় ৬ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ মানুষ সংক্রমণের সংস্পর্শে এসেছেন, যেখানে পুরো দেশজুড়ে এই হার ৬৮ শতাংশ। এছাড়াও, নতুন সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও কেরালায় হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। রাজ্যটিতে মৃত্যুহার ভারতের মোট হিসাবের এক-তৃতীয়াংশ হয়া সত্ত্বেও সেখানে করোনার জন্যে বরাদ্দ হাসপাতালে প্রায় অর্ধেক আসন খালি।

একইসঙ্গে, রাজ্যটির ২০ শতাংশের বেশি মানুষকে সম্পূর্ণভাবে টিকাদানের আওতায় আনা হয়েছে এবং ৩৮ শতাংশ মানুষ টিকার একটি ডোজ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষের বয়স ৪৫ এর উর্ধ্বে। এসকল কারণে মনে হতে পারে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কেরালা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রসংশনীয় কাজ করেছে।   

স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ড. রিজো এম জন এর মতে, কেরালা যে হারে টিকাদান কর্মসূচি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাতে করে ভবিষ্যতে আসা করোনার ঢেউগুলো অত প্রবলভাবে প্রভাব ফেলবেনা। 

তবুও মহামারি বিশেষজ্ঞদের মতে কেরালায় আসল পরিস্থিতির চিত্র আরও ভয়াবহ। অধ্যাপক গৌতম মেননের ধারণা, কেরালার জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনো ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকায় রাজ্যটিতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এছাড়াও, এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ভেতর এক-তৃতীয়াংশেরই আক্রান্ত পরবর্তী নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়, যার মধ্যে উপসর্গহীন রোগীও রয়েছেন। 

ড. স্বপ্নীল পারিখ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের ঊর্ধবগতির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে মূলত এখন সংক্রমণ কমিয়ে আনা যাচ্ছেনা। শনাক্ত হওয়া রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকা দুশ্চিন্তার একটি বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অনেকের মতে, কেরালায় আরও কঠোরভাবে লকডাউন দিতে হবে। এছাড়াও রাজ্যটি বিভিন্ন উৎসব পালনেরও অনুমতি দিয়েছে যেখান থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল। 

ভাইরোলজিস্টদের মতে, কেরালায় জিনোম সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার প্রয়োজন যাতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করার পাশাপাশি সংক্রমণের মূল উৎস নির্ণয় করা সম্ভব হয়। 

  • সূত্র: বিবিসি

    

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.