যেভাবে চলছে কোভ্যাক্সের ভ্যাকসিন সরবরাহ কার্যক্রম
করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে সারা বিশ্বে ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রক্রিয়া চলছে।
ধনী ও দরিদ্র দেশগুলো যাতে ন্যায্য উপায়ে ভ্যাকসিন পায়, সেই লক্ষ্যে গত বছরই 'কোভ্যাক্স স্কিম' নামক একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ চালু করার হয়; যদিও বিশ্বের বর্তমান অবস্থা এখনো প্রায় আগের মতোই।
এখন পর্যন্ত কোভ্যাক্সের অধীনে ৭৭ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ বিতরণ করা হয়েছে।
কিন্তু আগামী বছরের মধ্যে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন প্রদান নিশ্চিত করার জন্য কোভ্যাক্স এর আরো ৩৫-৪৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস।
ডব্লিউএইচও, গ্লোবাল ভ্যাকসিন এলায়েন্স (গাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ারডনেস ইনোভেশনস (কেপি) এর সঙ্গে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনিসেফের চিলড্রেন'স ফান্ডের সম্মিলিত প্রোগ্রামই হলো কোভ্যাক্স।
ভ্যাকসিন স্কিম কেন প্রয়োজন?
করোনাভাইরাস মহামারির আক্রমণে বিশ্বজুড়ে তিন মিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছে।
ডব্লিউএইচও'র প্রধান এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা সারা বিশ্বেরই এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
কোভ্যাক্স তৈরির উদ্দেশ্য ছিল বৈশ্বিক ভ্যাকসিন প্রদান প্রচেষ্টাকে জোরদার করা এবং এমন একটি প্রক্রিয়া তৈরি করা যাতে ধনী দেশগুলো খুব কম মূল্যে দরিদ্র দেশগুলোকে ভ্যাকসিন দিবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঘানা প্রথম দেশ হিসেবে কোভ্যাক্স এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করে। এর পর থেকে ছয়টি মহাদেশে হাজার হাজার মিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাশা করছেন, চলতি বছরের মধ্যেই আরো দুই বিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ দেয়া সম্ভব হবে।
তবে তেদরোস ধনী দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেছেন, তারা নিজেদের প্রয়োজনের চাইতে বেশি ভ্যাকসিন অর্ডার করে বৈশ্বিক ভ্যাকসিন সরবরাহকে গ্রাস করে নিচ্ছে এবং কোভ্যাক্স প্রোগ্রামকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
গেল এপ্রিলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বের মোট ভ্যাকসিনের মাত্র ০ দশমিক ৩ শতাংশ নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে গিয়েছে।
ভারতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটার ফলে এ মাসের মধ্যেই কোভ্যাক্সের আরো ২০ মিলিয়ন বাড়তি ডোজ প্রয়োজন।
সুইডেন মে মাসের শুরুতে এক মিলিয়ন অ্যাস্ট্রাজেনেকা ডোজ প্রদানের মাধ্যমে কোভ্যাক্সকে সাহায্য করে।
কোভ্যাক্স কোন ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে?
এখন পর্যন্ত ডব্লিউএইচও ৫টি ভ্যাকসিনকে জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে, যা কোভ্যাক্স প্রোগ্রামে ব্যবহারেরও পূর্বশর্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মডার্না কোভ্যাক্সের সঙ্গে সর্বনিম্ন দামে ৫০০ মিলিয়ন ডোজ দেয়ার চুক্তি করে। তবে এর সিংহভাগ ডোজ ২০২২ সালের আগে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
আফ্রিকায় আলজেরিয়া, মালাওয়ি ও উগান্ডা, মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক ও ইরান, আমেরিকা অঞ্চলে এল সালভাদর, নিকারাগুয়া ও বারবাডোসের মতো নিম্ন আয়ের দেশগুলো ভ্যাকসিন ডোজ পেয়েছে।
যদিও বেশিরভাগ প্রথম ডোজই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বিতরণ করা হবে, তবে এর কিছু কিছু কানাডার মতো উচ্চ আয়ের দেশেও যাবে, যারা কিনা কোভ্যাক্স ভ্যাকসিন নেয়া সম্পর্কে নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে জোর দিয়েছে।
- সূত্র- বিবিসি