যুক্তরাষ্ট্রের ইউটায় সন্তান জন্মদানের অর্ধেক খরচ পুরুষকেই দিতে হবে

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
07 April, 2021, 03:25 pm
Last modified: 07 April, 2021, 03:38 pm
এ ধরনের আইন যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম, আইনটির সমর্থকরা বলছেন এই আইন আমেরিকান নারীদের মাতৃত্বকালীন অর্থনৈতিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা অঙ্গরাজ্যের পুরুষরা এখন থেকে তাদের স্ত্রীর গর্ভকালীন সময় ও সন্তান জন্মদান সম্পর্কিত মেডিক্যাল খরচের অর্ধেক খরচ বহন করতে আইনীভাবে বাধ্য। 

এ ধরনের আইন যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম, আইনটির সমর্থকরা বলছেন এই আইন আমেরিকান নারীদের মাতৃত্বকালীন অর্থনৈতিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। 

ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় দলের সমর্থনের আইনটি পাস হয়, তবে দেশটিতে প্যারেন্টিং এর এর খরচ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে আইনটি পাস হওয়ার পর। 

আইনটিতে কী আছে?

মেডিক্যাল খরচ সম্পর্কিত এই আইনে একজন নারীর সন্তানের জন্মদাতা পিতাকেই তার গর্ভধারণকালীন সময়ে ইন্সুরেন্স প্রিমিয়ামের অর্ধেক খরচ, মাসিক হেলথ ইন্সুরেন্স খরচ এবং সন্তান জন্মদানসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রক্রিয়ার অর্ধেক খরচ বহন করতে হবে। 

হেলথ অ্যাফেয়ার্স জার্নালের এক গবেষণা অনুযায়ী, যেসব মার্কিন নারীদের ইন্সুরেন্স করানো আছে তাদের সন্তান জন্মদানে গড়ে ৪ হাজার ৫০০ ডলার খরচ হয়। 

তবে যাদের ইন্সুরেন্স করানো নেই, তাদের এই হিসাবের অর্ধেরকেরও বেশি খরচ হতে পারে, প্রায় ১০ হাজার ডলার। 

শিশুর পিতৃপরিচয় নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে ওই পুরুষ পরিচয় নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত খরচ প্রদানে অপেক্ষা করতে পারবেন। 

তবে খরচ দেওয়ার বিষয়টিও মায়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল, শিশুর ভরণপোষণের খরচের মতোই মা সহযোগিতা না চাইলে বাবাকে খরচ বহনের নোটিশ দেওয়া হবে না। 

অন্যদিকে, একজন নারী গর্ভপাত করাতে চাইলে আর এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না। গর্ভপাতের ক্ষেত্রে খরচ বহন করতে পুরুষ বাধ্য হবেন না। তবে ধর্ষণের কারণে নারী অন্তঃসত্ত্বা হলে কিংবা গর্ভধারণের কারণে তার জীবন নাশের আশঙ্কা থাকলে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না, সেক্ষেত্রে ওই পুরুষকে খরচ বহন করতে হবে।  

প্ল্যানড প্যারেন্টহুডের তথ্যমতে, ইন্সুরেন্স না থাকলে গর্ভপাতের খরচ প্রায় এক হাজার ডলার। 

এ বছরের ৫ মে থেকে আইনটি কার্যকর হবে। সিনেটে উভয় দলীয় সমর্থের আইনটি পাস হলেও হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিভে ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতার মুখে পড়ে। 

আইনটি এলো কীভাবে? 

আইনটির বিলের একজন স্পন্সর স্টেট কংগ্রেসম্যান ব্র্যাডি ব্র্যামার বলেন, তিনি এমন একটি বিল পাস হোক চাইছিলেন যা প্রকৃতপক্ষেই জীবন রক্ষাকারী। দেশটিতে সম্প্রতি গর্ভপাত বিরোধী বিলের দিকেই ইঙ্গিত করেন। 

"আপনি গর্ভপাতের বিষয় ছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতক শিশুদের সাহায্য করতে পারেন," বিবিসিকে বলে ব্যক্তিগতভাবে গর্ভপাত বিরোধী এই রিপাবলিকান। 

২০১৯ সাল থেকে তিনি বেশ কয়েকটি গর্ভপাত বিল পাসের সাক্ষী হন। তার ভাষ্যে, "প্রতিবারই ব্যাপারটি বিতর্কিত হয়। তবে বিষয়টির গভীরে চিন্তা করলে, বাস্তব জীবনে কেউ এমন এক কঠিন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন যেখানে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়," 

"হয়তো আমরা এই অবস্থার কিছুটা উন্নতিতে কাজ করতে পারি," 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান গাটম্যাচার ইনস্টিটিউটের যুক্তরাষ্ট্রের ২৪ শতাংশ নারী ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে অন্তত একবার গর্ভপাত করান। তবে তাদের মধ্যে অর্ধেক নারীই দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করেন। 

সমালোচনা কী নিয়ে? ​

গর্ভপাতবিরোধী আন্দোলনকারী ও অধিকারবাদী কর্মীরা বলছেন, তারা গর্ভধারণ ও শিশুর ভরণ-পোষণের খরচ কমানোর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করলেও এই আইন উপযুক্ত প্রক্রিয়া নয়, প্ল্যানড প্যারেন্টহুডের মুখমাত্র ক্যাটরিনা বারকার জানান এনবিসি নিউজকে।

"সম্প্রসারিত মেডিক্যাল সেবা, উন্নত ইন্সুরেন্স সেবা, গর্ভধারণকালীন চিকিৎসা সেবার পরিসর বৃদ্ধি ও বেতনসহ ছুটি- নীতি নির্ধারকরা এসব তো করতেই পারতেন," বলেন ক্যাটরিনা। 

এই আইন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুর লালন-পালনের অর্থনৈতিক চাপ খুব একটা কমাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের তথ্যমতে, ২০১৫ সালেও জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর লালন-পালনে একটি পরিবারের গড়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬১০ ডলারের মতো খরচ হয়। শিশুর উচ্চশিক্ষার খরচও এর বাইরে। 

কংগ্রেসম্যান ব্র্যামার এই আইন জীবন রক্ষাকারী হবে এব্যাপারে জোর দেওয়া সত্বেও অঙ্গরাজ্যটিতে গর্ভপাতের অধিকার থাকার বিষয়ে বিতর্ক চলছে। 

২০১৯ সালে গর্ভধারণের ১৮ সপ্তাহ পর ঐচ্ছিক গর্ভপাত নিষিদ্ধের প্রস্তাব পাস হয়। ১৮ সপ্তাহের আগে কেউ গর্ভপাত করাতে চাইলে তাকে এবিষয়ে সরাসরি কাউন্সেলিং করতে হবে। 

  • সূত্র: বিবিসি 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.