যুক্তরাজ্যের ২৬১ বছরের পুরোনো খেলনার দোকানের নতুন স্বপ্নদ্রষ্টা ভারতের মুকেশ আম্বানি

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
13 April, 2021, 04:25 pm
Last modified: 13 April, 2021, 04:36 pm
ভারতে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশ শিশুর বয়স ১৪ বছরের নিচে। তবে বিশ্ববাজারের ৯০ বিলিয়ন ডলারের খেলনা ইন্ডাস্ট্রির মাত্র ১ শতাংশ বিক্রি হয় ভারতে। 

যুক্তরাজ্যের ২৬১ বছরের পুরোনো খেলনার দোকান- হ্যামলেস। ব্যবসায় ভরাডুবির পর ব্রিটিশ এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবার পুনর্জীবনের স্বপ্ন দেখছে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানীর হাত ধরে। 

খেলনার বাজারে প্রতিযোগী বাড়তে থাকায় একসময় আর নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি ব্রিটেনের সবচেয়ে পুরনো এই খেলনার চেইন স্টোর। তবে মহামারীর ভেতরেও এখন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এই শতবর্ষী প্রতিষ্ঠানটি। আগামী তিন বছরের মধ্যে ভারতে পাঁচশোর বেশি দোকান খোলার পরিকল্পনা করেছে হ্যামলেস। এক সাক্ষাতকারে এমনটিই জানালেন মুকেশ আম্বানীর রিলায়েন্স ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দর্শন মেহতা। ভারতের পাশাপাশি হ্যামলেস শাখা খুলবে ইউরোপ, আফ্রিকা ও চীনেও।  

২০১৯ সালে হ্যামলেসের স্বত্ব কিনে নেন ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি (৬৩)। এ ক্রয়ের মধ্য দিয়ে সেসময় ভারতের খুচরা বাজারে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় থাকা অ্যামাজন ও ওয়ালমার্টের বিপক্ষে আম্বানির রিলায়েন্সের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়।    

ভারতে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশ শিশুর বয়স ১৪ বছরের নিচে। তবে বিশ্ববাজারের ৯০ বিলিয়ন ডলারের খেলনা ইন্ডাস্ট্রির মাত্র ১ শতাংশ বিক্রি হয় ভারতে। 

তবু ভারতেই এই ধুঁকতে থাকা ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান হ্যামলেসের নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পান আম্বানি।  

ভৌগলিক পরিবর্তন এবং ধরন মাথায় রেখে নতুনভাবে এই খেলনা কোম্পানি সাজানোর পরিকল্পনা করছেন তারা বলে জানালেন মেহতা।  

হ্যামলেসের দোকানে ঢুকলে মনে হবে যেন কোন কার্নিভালে চলে এসেছেন। বলা যায়, এটিই অনেকটা পর্যটন আকর্ষণের মত। শুধু খেলনা কেনা নয়, শিশুরা এই দোকানে নানা ধরনের খেলায় অংশ নিতে পারে। খেলনা গাড়ির রেস থেকে শুরু করে সত্যিকার ট্রেনের মডেলও আছে দোকানের ভেতর। এমনকি এখানকার কর্মীরা বিনোদনের উদ্দেশ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নানান কস্টিউম পরে থাকে।  

ভারতের মত ঘন জনবসতির একটি দেশে এমনিতেই বিনোদনের সুযোগ কম। মহামারীতে তা আরও সীমিত হয়ে পড়েছে। শিশুদের সারাদিন ঘরবন্দী সময় কাটে। ফলে অনেক অভিভাবক মহামারীকালে শিশুদের মানসিক বিকাশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই দোকান সেদিক থেকে শিশুদের বেশ আনন্দ দেবে বলে ভাবা হচ্ছে। 

তাছাড়া দর্শন মেহতার মতে, হ্যামলেস একটি 'ইলাস্টিক ব্রান্ড', ফলে এর খেলনা সামগ্রী যেকোন আয় সম্পন্ন ভারতীয় উপভোগের সুযোগ পাবেন।  

মহামারীর মধ্যে বিশ্বের একের পর এক ব্যবসা গতি হারাচ্ছে, ভারতের অর্থনীতির চাকাও স্থবির হয়ে আছে, তবু মেহতার আশা এই খেলনার দোকানটি মন্দাকালীন সময়ে জ্বলে উঠবে। কারণ, অনেক অভিভাবকের কাছে যেকোন কিছুর বিনিময়ে তাদের শিশুর হাসির মূল্য অধিক।    

উইলিয়াম হ্যামলে ১৭৬০ সালে এই ব্রিটিশ খেলনা কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। গত দশ বছরে অন্তত তিনবার এর মালিকানা বদলেছে- আইসল্যান্ডের ব্যাংক, ফরাসী কোম্পানি আর তারপর চীনা ফ্যাশন রিটেইলারের হাত বদল হয়ে এর অধিগ্রহণ করেন মুকেশ আম্বানী।

২০১৯ সালে প্রায় ৯ মিলিয়ন পাউন্ড লোকসানের কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। সে বছরই আম্বানি ৮৯ মিলিয়ন ডলার দিয়ে এর অধিগ্রহণ করেন। 

ব্রিটেন জুড়ে এই হ্যামলেসের ২১টি আউটলেট বলা যায় শূন্যই পড়ে থাকত। ১৮৮১ সালে চালু হওয়া লন্ডনের রিজেন্ট স্ট্রিটে এর সাততলা ফ্ল্যাগশিপ স্টোর, যা একসময় শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল, সেটিও মহামারী শুরুর পর  লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে বন্ধ রাখা হয়। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি এর এক-চতুর্থাংশ কর্মী ছাঁটাই করে দেয়।  

বাণিজ্যে পুরোপুরি গতি আসার আগে এ বছর ভারতে অন্তত ৫০টি শাখা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে রিলায়েন্সের। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কেটে গেলে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের ফ্রান্স, ইতালির মত পর্যটন 'হটস্পট' গুলোতে নিজেদের শাখা বিস্তার করবে রিলায়েন্সের নির্বাহী জানান। 

এদিকে ইন্ডিয়ান রিটেইল কনসালটেন্সি টেকনোপাক অ্যাডভাইজারসের চেয়ারম্যান অরবিন্দ সিংহল বলেন, ভারতে হ্যামলেসের বেশ বড় বাজার গড়ে উঠবে। দেশটিতে প্রতি বছর ২৬০ লাখ শিশু জন্ম নেয়। জনসংখ্যার শতকরা ৫ ভাগও যদি নিয়মিত এই দোকানটির খেলনা ক্রয় করে, তবুও এর কখনো ক্রেতার কমতি হবে না। 

তিনি বলেন, "খেলনা এমন একটি বস্তু যা মাঝে মাঝে আপনার আর্থিক দীনতাকে ছাপিয়ে আবেগকে বড় করে তোলে। খুচরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুকেশ আম্বানির দিক থেকে এটি সেরা একটি বিনিয়োগ হয়েছে। ভারতে হ্যামলেসের অভাবনীয় সম্ভাবনা রয়েছে"। 

  • সূত্র-ব্লুমবার্গ

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.