মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে পুলিশের রাবার বুলেট

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
09 February, 2021, 02:50 pm
Last modified: 09 February, 2021, 04:16 pm
বৌদ্ধভিক্ষু, সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য, শীর্ষ ফুটবলার এবং চলচ্চিত্র ও সংগীত তারকারাও অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। ফলে এ বিক্ষোভকে এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সুসংহত মনে হচ্ছে।

মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিদোতে চলমান একটি বিক্ষোভে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।  

এর আগে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামানও ব্যবহার করা হয়েছিল। 

দেশটিতে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এই বিক্ষোভ চলছে আজ নিয়ে টানা চারদিন। 

বিক্ষোভ প্রতিহত করতে কারফিউ জারিসহ নানা ধরনের বিধিনিষেধ কার্যকরের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। 

সামরিক বাহিনী গণজমায়েতের ওপর  নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং কিছু শহরে রাত্রিকালীন কারফিউয়ের নির্দেশ বহাল রেখেছে। তবে আন্দোলনকারীরা ঠিকই চতুর্থ দিনের মত তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।  

সোমবার সেনা অভ্যুত্থানের নায়ক মিন অং হ্লেইং হুঁশিয়ারি জারি করে বলেন যে, কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়; তবে তিনি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন হুমকি প্রকাশ করেননি। 

তার এমন  বক্তব্যের পরে বার্মার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সম্প্রচারে উল্লেখ করা হয় যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটিতে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে  অবশ্যই 'ব্যবস্থা নেয়া হবে'।
 
পুলিশের প্রতিক্রিয়া
 
মঙ্গলবার নাইপিদোতে অবস্থানরত বিবিসির এক সংবাদদাতা জানান, পুলিশ জনতার উদ্দেশ্যে জলকামান ছুঁড়েছে। 

এরপর একজন বাসিন্দা সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানান, তারা প্রথমে আকাশের দিকে দু'বার সতর্কতামূলক গুলি চালায়, তারপরে তারা (প্রতিবাদকারীদের) উদ্দেশ্যে  রাবার বুলেট ছোঁড়ে।
 
"সামরিক স্বৈরতন্ত্রের পতন" বলে চিৎকার করছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। 
 
সোমবারের বিক্ষোভের ধারা অব্যাহত রেখে শিক্ষক, আইনজীবি, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং সরকারী কর্মীরা মঙ্গলবারেও সারাদেশে বড় শহরগুলোতে জড়ো হন।

তবে ছোটখাট আঘাতের কথা শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত সহিংসতার কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

বিবিসির বার্মিজ সংবাদদাতাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে বিক্ষোভকারীদের সাথে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও যোগ দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকেও তাদের পক্ষে যোগদানের জন্য  আহবান জানিয়েছিলেন। 

এছাড়াও বৌদ্ধভিক্ষু, সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য, শীর্ষ ফুটবলার এবং চলচ্চিত্র ও সংগীত তারকারাও অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন বলে জানান ইয়াঙ্গুনে বিবিসির সংবাদকর্মী। ফলে এ বিক্ষোভকে এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সুসংহত মনে হচ্ছে। 

সেনা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর সোমবারে টেলিভিশনে দেয়া প্রথম ভাষণে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেন, আটক নেতা অং সাং সু চি ও তার দলের নভেম্বর মাসের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ের ঘোষণা নিরপেক্ষ ছিল না।

ভাষণের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই জেনারেল অং হ্লেইং ব্যাখ্যা দেন কোন পরিস্থিতিতে তাকে এই অভ্যুত্থান করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নভেম্বরে নির্বাচনে অনিয়মের যেসব অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তবে কমিশন জানায়,  অনিয়মের কোন প্রমাণ তারা পাননি।

জেনারেল অং হ্লেইং খুব দ্রুতই নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের কথাও বলেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০১১ সালে পর্যন্ত ৪৯ বছর ধরে মিয়ানমারে যেভাবে সেনাশাসন চলেছে, তার অধীনে সবকিছুই তা থেকে ভিন্ন হবে।

ভাষণে মিয়ানমারে 'সত্যিকার সুশৃঙ্খল গণতন্ত্র' প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন হ্লেইং। 

এদিকে গত সপ্তাহের সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে মঙ্গলবার মিয়ানমারের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের সব ধরনের সম্পর্ক স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের নিউজিল্যান্ড সফরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। 

পহেলা ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করার এটিই আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত প্রথম বড় পদক্ষেপ।

  • সূত্রঃ বিবিসি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.