মামলার মাধ্যমে ট্রাম্প যে কৌশলের আশ্রয় নিলেন

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
05 November, 2020, 06:55 pm
Last modified: 05 November, 2020, 07:07 pm
ট্রাম্প অনেক আগে থেকেই এ কৌশলের অংশ হিসেবে, জাল ভোট নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। কারণ, তিনি জানতেন ডাকযোগেই ভোট দেবেন কোভিড-১৯ মহামারি সম্পর্কে সচেতন বিপুল সংখ্যক ডেমোক্রেট সমর্থক।  ইলেক্টোরাল ভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে হারের মুখে তাই ভোট গণনা বন্ধ ও পুনঃগণনার দাবিতে মামলা করেছে ট্রাম্প শিবির।

নির্বাচনের রাতেই আসা ভোট হিসাবের প্রেক্ষিতে বিজয় ঘোষণা করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, একমাস আগে থেকেই এমন আভাস দিয়ে এসেছেন। শেষ মুহূর্তের সভা-সমাবেশেও দেন একই ইঙ্গিত। তারপরও, পরের দিন বুধবার সকাল তার বিজয় ঘোষণা অনেক পর্যবেক্ষককে আতঙ্কিত করে।

বিভাজিত মার্কিন জাতিকে এমন প্রচারণা সংঘাতের মুখে ঠেলে দেবে, আশঙ্কা তাদের। 

শুধু মিথ্যে বিজয়ের দাবি করেই ক্ষান্ত দেননি রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি। হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুম থেকে দেওয়া ওই ঘোষণায় তিনি কিছু অঙ্গরাজ্যের বিরুদ্ধেও ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে মামলার হুমকি দেন।  

ভোটগ্রহণ নির্বাচনের দিবাগত রাতের প্রথমদিকেই যুক্তরাষ্ট্রে শেষ হয়। নতুন করে ভোট দিচ্ছে না কেউ। জালিয়াতি তাহলে হচ্ছে কীভাবে ?

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণাতে যারা ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছেন, তারা সঙ্গেসঙ্গেই বুঝতে পারেন ডাকযোগে পাওয়া ভোট গণনার দিকেই প্রেসিডেন্টের ইশারা। 

ডাকে পাওয়া এসব ভোটের কোনোটাই নির্বাচনের আগে গণনা করা হয়নি। আর অনেকে আগে ভোট দিলেও পোস্ট সার্ভিস গ্রাহক অনুরোধের প্রেক্ষিতে ভোটগুলো পাঠিয়েছে নির্বাচনের দিন। সেগুলোও ছিল হিসাবের বাইরে। 

ট্রাম্প শুরু থেকেই বলে আসছিলেন ডাকের মাধ্যমে পাওয়া ভোটে তার নিশ্চিত বিজয় হারিয়ে যেতে পারে। তাই জর্জিয়া, মিশিগান এবং পেনিসেলভানিয়া রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভোট গণনা বন্ধ এবং তা পুনরায় হিসাবের দাবিতে মামলা করেছেন। 

ট্রাম্প অনেক আগে থেকেই এ কূট-কৌশলের অংশ হিসেবে জাল ভোট নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। কারণ, তিনি জানতেন ইলেক্টোরাল ভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ডাকযোগেই ভোট দেবেন কোভিড-১৯ মহামারি সম্পর্কে সচেতন বিপুল সংখ্যক ডেমোক্রেট সমর্থক। 

এজন্যেই নির্বাচনের রাতে ডাকে পাওয়া ভোট গণণা শুরুর আগে নির্ধারণী কিছু রাজ্যে ট্রাম্প বাইডেনের চাইতে কিছুটা এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু, বুধবার সকাল থেকেই সে জয় মলীন হতে শুরু করে, ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যান জো বাইডেন। মিশিগান, জর্জিয়া এবং পেনিসেলভানিয়ায় বিরুদ্ধে মামলার কারণ-এসব প্রদেশে বাইডেনের বিজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়া। 

মামলার মাধ্যমে পুনঃগণনার যে দাবি ট্রাম্প শিবিরের পক্ষে করা হয়েছে, তা আসলে ডাকে পাওয়া অনেক ভোট বাতিলের একটি চেষ্টা। সামান্য ব্যবধানের রাজ্যগুলোতে আদালত এমনটি করার নির্দেশ দিলে-তার ফলে ট্রাম্প এগিয়ে যাবেন বলে আশা করছেন। এটাই তার মূল কৌশল। 

একারণেই বুধবার সারাদিন তিনি টুইটে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে অসংখ্য বার্তা দেন। টুইটার তার অধিকাংশই 'মিথ্যে প্রচারণার' ট্যাগ লাগায়। 

এব্যাপারে বাইডেন নির্বাচনী শিবিরের মুখপাত্র আন্ড্রু বেটস বলেন, ''বিজয়ী কোনো পক্ষই আইনি লড়াইয়ের দিকে যেতে চায় না। ট্রাম্পের নাটকগুলো ন্যাক্কারজনক। যেসব রাজ্যে তিনি ইতোমধ্যেই হেরে গেছেন সেখানে ভোট পুনঃগণনার দাবি করেছেন। তাছাড়া, চলমান ভোট গণনায় বাধা দেওয়ার অনেক চেষ্টাই তিনি করছেন সমর্থকদের লেলিয়ে দিয়ে। বিশেষ করে, এই মুহূর্তে যেসব রাজ্যে তিনি পরাজয়ের মুখে রয়েছেন- সেখানেই ভোট গণনা বন্ধে নির্বাচন কর্মীদের উপর অহেতুক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।'' 
  
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক শতকের বেশি সময়ের মধ্যে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি নাগরিক ভোট দিয়েছেন। মহামারির কারণেই এবার অধিকাংশ রাজ্যে ডাকে পাঠানো ফিরতি ব্যালটের স্তূপ জমেছে। সেগুলো সঠিকভাবে গণনা করা সময় ও শ্রমসাধ্য ব্যাপার। 

ডাকে পাঠানো ভোটেও এবার নতুন রেকর্ড হয়। প্রায় ১০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিনী এবার সংক্রমণ এড়াতে ডাকযোগে বা স্বশরীরে এসে ব্যালট জমা দেন, যা ২০১৬ সালের নির্বাচনে মোট ভোটের ৭৪ শতাংশ।   

  • সূত্র: এপি, দ্য ইন্টেলিজেন্সার 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.