ভ্যাকসিন নিয়েও কালোবাজারি!

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
29 March, 2021, 03:30 pm
Last modified: 29 March, 2021, 03:40 pm
ইন্টারনেটে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে ভ্যাকসিনের জাল সনদ; ভ্যাকসিন গ্রহণ না করেও অনেকে এসব টিকা কার্ড বা সনদ বাগিয়ে নানা সুবিধা নিতে চান।

কথায় বলে, টাকায় বাঘের দুধও নাকি মেলে! আর এ তো নিছক জাল টিকা আর তা গ্রহণের জাল সনদ।  

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন মানুষের হাতে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু এখানেও দুর্নীতি আর অসততা জায়গা করে নিতে সময় লাগল না! 

ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন ভ্যাকসিন গ্রহণের জাল সনদ বা কার্ড সুলভ হয়ে উঠেছে। 'ডার্ক ওয়েবে' এসব নকল পণ্য বিক্রয়ের জন্য মিলছে! মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে  এটি বলা হয়েছে। 

ডার্ক ওয়েব ইন্টারনেটের এমন এক অংশ যেখানে সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন প্রবেশ করতে পারে না। এটি একধরনের লুকায়িত নেটওয়ার্ক যেখানে প্রবেশ করতে নির্দিষ্ট সফটওয়্যার, কনফিগারেশন বা অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ফলে অপরাধীরা প্রায়শই ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ড্রাগস থেকে শুরু করে সাইবার হাতিয়ারের মত অবৈধ উপকরণ লেনদেন করে থাকে। এ তালিকায় এখন যুক্ত হলো করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট পণ্য। 

সাইবারসিকিউরিটি সংস্থা চেক পয়েন্ট সফটওয়্যারের নিরাপত্তা গবেষকেরা জানিয়েছেন যে, ডার্ক ওয়েবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের মতো বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির ভ্যাকসিনের তালিকার হদিস পেয়েছেন তারা। ডোজপ্রতি কোথাও কোথাও এসব ভ্যাকসিনের দাম ১০০০ ডলার আবার ২০০ ডলারে মিলবে ২০টির মত নকল ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট। 

চেক পয়েন্টের একজন মুখপাত্র জানান, ভ্যাকসিনগুলো আসল কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে প্যাকেজিং এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখে আপাতদৃষ্টিতে 'তাদের বৈধ মনে হয়েছে'। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত তিন মাসে ডার্ক ওয়েবে ভ্যাকসিনের বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
 
দেদার বিকিকিনি চলছে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট নিয়েও। ভ্যাকসিন গ্রহণ না করেও অনেকে এসব টিকা কার্ড বা  সার্টিফিকেট বাগিয়ে নানা সুবিধা নিতে চান। ডার্ক ওয়েবের বিক্রয়কর্মীদের শুধু নাম এবং যে তারিখের সার্টিফিকেট চান সেটি উল্লেখ করলেই হবে। এক্ষেত্রেও আসল নাকি নকল সেটি খালি চোখে দেখে বোঝার জো নেই বলে জানিয়েছে চেক পয়েন্ট।

জরুরি বিদেশ ভ্রমণ, সীমান্ত পাড়ি, নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগ কিংবা এমন কোন কিছু যেখানে টিকা গ্রহণের প্রমাণ দেখাতে হবে-এসব কাজেই মূলত এ সকল নকল পণ্যের চাহিদা রয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের টিকা কার্ডের কথাই ধরুন। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) লোগো, সাথে উপরে ডানপাশের কোণায় ঈগলের ছবি-দেখে কে বলবে এটি নকল!  
 
চেক পয়েন্টের মুখপাত্র জানান, তারা ধারণা করছেন প্রতিদিন কয়েক হাজার জাল টিকা কার্ডের লেনদেন চলছে।

তবে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন, ভ্যাকসিন কার্ড এবং ডিজিটাল পাসপোর্টের নকল বাজার গড়ে ওঠা আজকের পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক।

এবিআই রিসার্চের সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ মাইকেলা মেন্টিং বলেন, "সবার টিকা গ্রহণের একই রকম সামর্থ্য নেই। অনেক দেশে এখনো টিকাদান কর্মসূচী ধীর গতিতে চলছে। তাছাড়া অনেক স্থানেই মানুষ দিনের পর দিন কারফিউ এবং লকডাউন দেখে হাঁপিয়ে পড়েছে"। 

"তারা যদি কেবল একটা নকল কার্ড বা সার্টিফিকেট দেখিয়েই এসব বিধিনিষেধের সীমা কাটাতে পারে, তাহলে তারা তো সে সুযোগ নেবেই। ফলে এসব পণ্যের অবৈধ, কালো বাজারও ফুলেফেঁপে উঠবে"।

মার্কিন সরকারী সংস্থাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষকে তাদের  ভ্যাকসিন কার্ডের ছবি শেয়ার করতে মানা করার পরপরই ডার্ক ওয়েবে ভ্যাকসিন সামগ্রী বিক্রির এই সংবাদ প্রকাশিত হলো। 

  • সূত্র- সিএনএন 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.