ভ্যাকসিন কুক্ষিগত করার জাতীয়তাবাদি চেষ্টা মহামারি আরো দীর্ঘায়িত করবে

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
19 August, 2020, 12:35 am
Last modified: 19 August, 2020, 12:54 am
আগামী ৩১ আগস্ট হু’র উদ্যোগে গঠিত ‘‘কোভাক্স গ্লোবাল ভ্যাকসিন ফ্যাসিলিটি’’ জোটে যোগ দেওয়ার সর্বশেষ তারিখ।  এরমধ্যেই যদি ধনী দেশগুলো যোগ না দেয়, তাহলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টাটি ব্যর্থতায় রূপ নেবে।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নিজ নাগরিকদের জন্য বেশি বেশি ভ্যাকসিন কিনে রাখছে প্রভাবশালী কিছু দেশ। ফলে দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। প্রত্যক্ষভাবেই যা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠীগুলোকে বঞ্চিত করারই শামিল। 

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের এমন সমালোচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মহাসচিব টেড্রোস আঢানম ঘেব্রেইসুস- সকল দেশকে একটি আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোটে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন।

হু' মহাসচিবের এ আহ্বানকে; কোভিড-১৯ প্রতিষেধক নিয়ে সৃষ্ট বৈষম্যমূলক প্রতিযোগিতা নিরসনের শেষ চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শেষ চেষ্টা বলার কারণ, আগামী ৩১ আগস্ট হু'র উদ্যোগে গঠিত ''কোভাক্স গ্লোবাল ভ্যাকসিন ফ্যাসিলিটি'' জোটে যোগ দেওয়ার সর্বশেষ তারিখ। 

এরমধ্যেই যদি ধনী দেশগুলো যোগ না দেয়, তাহলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টাটি ব্যর্থতায় রূপ নেবে। জোটটিকে কার্যকর করতে ইতোমধ্যেই সদস্য ১৯৪টি দেশের কাছে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন হু' মহাসচিব ঘেব্রেইসুস। 

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সুইজারল্যান্ড যখন ভ্যাকসিনের বিপুল চালান কেনার জন্য নানা ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে, ঠিক তখনই কোভাক্স জোটের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে- এ আহ্বানটি জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধান।  

রাশিয়া আর চীনও বর্তমানে ভ্যাকসিন গবেষণা জোরদার করেছে। সবমিলিয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার এ প্রবণতা কোভিড-১৯ নির্মূলের বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে, বলেই আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠানটি। 

''ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ আমাদের যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে হবে। সীমিত সম্পদ (কোভিড ভ্যাকসিন) কৌশলগত পদ্ধতিতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ায় মধ্যেই সকল দেশের কল্যাণ নিহীত। মহামারি দমনে এর কোনো বিকল্প উপায় নেই'' জেনেভায় অবস্থিত সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে একথা বলেছেন ডক্টর টেড্রোস। 
 
এদিকে হু'র নেতৃত্বাধীন কোভাক্স জোটে অংশ নিলে বাড়তি সময় এবং অর্থ ব্যয় হবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন(ইসি)। তারা নিজ সদস্য দেশগুলোকে হু'র এ উদ্যোগকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।  

ইসির পরামর্শ; এতে ইউরোপের শ্রমবাজার এবং অর্থনীতিকে দ্রুত ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব নয়- তাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পণ্যের সরবরাহ সবার আগে নিশ্চিত করতেই হবে।

এর মধ্যে দিয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বের জনতার জীবনের নিরাপত্তাকে সত্যিকার অর্থেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে ইসি। 

অথচ নতুন করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করছে; ব্রাজিল, ভারত, বাংলাদেশসহ নানা উন্নয়নশীল দেশে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে ভারত। গত সপ্তাহে দেশটিতে একদিনে ৬৭ হাজার সংক্রমণ ধরা পড়ার রেকর্ড হয়। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুসারে মঙ্গলবার নাগাদ, বিশ্বজুরে আক্রান্ত হয়েছেন দুই কোটি ১৯ লাখ মানুষ। আর প্রাণ হারিয়েছেন ৭ লাখ ৭২ হাজার ৬৪৭ জন। 

সঙ্কটময় এ পরিস্থিতি উন্নত বিশ্বের চিরায়ত অবহেলা নতুন আলোকে তুলে ধরছে জনসম্মুখে।  

  • সূত্র: রয়টার্স 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.