ভারত হতে যাচ্ছে করোনার পরবর্তী বৈশ্বিক হটস্পট?

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
09 July, 2020, 04:50 pm
Last modified: 09 July, 2020, 04:56 pm
ভারতে করোনা শনাক্তের সংখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এর অন্যতম কারণ হলো, সেখানে টেস্টের স্বল্পতা এবং অস্বাভাবিক কম মৃত্যুহার।

বিশ্বের দ্বিতীয় জনসংখ্যাবহুল দেশ ভারতে বেশ ধীরেই প্রবেশ করেছিল চীনের উহান থেকে ছড়ানো প্রাণঘাতী ভাইরাস কোভিড-১৯। তবে মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে বিশ্বের বহু দেশকে পেছনে ফেলে সংক্রমণের তালিকায় ভারতের অবস্থান এখন তিন নম্বরে। 

করোনার পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৫০ জনের শরীরে যার মধ্যে মারা গেছেন ২১ হাজার ১৫১ জন।

১৩৮ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা করেছে ১ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার জনের, জনসংখ্যার বিচারে যা অনেকটাই কম। 

দেশটিতে করোনা শনাক্তের সংখ্যা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এর অন্যতম কারণ হলো, সেখানে টেস্টের স্বল্পতা এবং অস্বাভাবিক কম মৃত্যুহার।

ভারতের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিবিসি তাদের একটি প্রতিবেদনে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছে। পাঠকদের জন্য সেগুলো এখানে তুলে ধরা হল। 

শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে

কঠোর লকডাউনের শেষে সম্প্রতি ভারতে হুহু করে বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। পুরো জুন মাস জুড়েই এই গ্রাফ ছিলো উর্ধ্বমূখী। গত ৬ জুন প্রথমবারের মতো দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা দশ হাজার ছড়ায় ভারতে। এরপর তা প্রতিদিনই বাড়তে বাড়তে গতকাল ৮ জুলায় ২৫ হাজার ৫৭১ জনে পৌঁছায়।  

বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ভারতে শনাক্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৬৯ হাজার দেখালেও দেশটির ভাইরোলজিস্ট শাহিদ জামিলের মতে, জনগণের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণের সঠিক পরিমাণ এখনো বেশ ঘোলাটে।

গত মে মাসে ভারতের ২৬ হাজার নাগরিকের কাছ থেকে 'র‍্যান্ডম স্যাম্পলিং' পদ্ধতিতে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে সরকার যাতে দেখা যায় নমুনা প্রদানকারীদের মধ্যে শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই স্বল্পতা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও ডা. জামিলের মতে, পুরো দেশের চিত্র বুঝতে হলে এটিই একমাত্র পদ্ধতি।

বিবিসিকে তিনি বলেন, "গোটা ভারতের জনসংখ্যার হিসাবে যদি এই নমুনা পরীক্ষার ফলাফলকে বিবেচনা করি তবে দেখা যেতো, মে'র মাঝামাঝি সময়েই ভারতে সংক্রমিতের পরিমাণ হতো প্রায় ১ কোটি।"

ডা. জামিলের মতে, শনাক্ত করা রোগীর সংখ্যা আর প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য বিশ্বের সব দেশেই আছে, কিন্তু সেটা ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়।

তিনি বলেন, "যত বেশি পরীক্ষা করবেন, তত বেশি শনাক্ত রোগী পাবেন।"

একই ঘটনা ঘটেছে ভারতেও। সম্প্রতি সপ্তাহগুলোতে সরকার কোভিড পরীক্ষার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যাও।

পর্যাপ্ত পরীক্ষা ভারত সরকার করায় না

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু মাথাপিছু জনসংখ্যা হিসেবে এই পরিমাণ খুবই অল্প। জনসংখ্যার হিসেবে ভারতে যে পরিমাণ আক্রান্ত, সারা বিশ্বের জনসংখ্যার হিসেবে আক্রান্তের হার ভারতের তিনগুন। 

ডা. জামিলের মতে, ভারতে মাথাপিছু করোনা শনাক্তের সংখ্যা এতো কম হওয়ার কারণ হলো এখানে খুবই অল্প পরীক্ষা করানো হয়।

যেসব দেশে করোনা শনাক্তের পরিমাণ অনেক বেশি সেসব দেশে জনসংখ্যার বিবেচনায় কোভিড পরীক্ষার পরিমাণও ভারতের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ১৪৩ কোটি জনসংখ্যার দেশ চীন যেখানে ৯ কোটি চার লাখ মানুষের কোভিড পরীক্ষা করেছে সেখানে ১৩৮ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত পরীক্ষা করেছে মাত্র ১ কোটি ৭ লাখ মানুষের। 

৩৩ কোটি জনসংখ্যার দেশ যুক্তরাষ্ট্র, সাড়ে ১৪ কোটি জনসংখ্যার দেশ রাশিয়া এমনকি ৬ কোটি ৭৮ লাখ জনসংখ্যার দেশ যুক্তরাজ্যও ভারতের চেয়ে বেশী কোভিড টেস্ট করেছে। 

ভারতের সুস্থতার হার আশাব্যাঞ্জক 

তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ভারতের সুস্থতার হারও বেশ দ্রুত বাড়ছে। শনাক্ত ৭ লাখ ৬৯ হাজার রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন  ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৬৫ জন। 

সুস্থতার এই পরিসংখ্যান বেশ গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে ডা. জামিল বলেন, এটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা কতোটুকু তা নির্ধারণ করে দেয়। 
তিনি বলেন, বর্তমানে রোগী শনাক্ত হওয়া বা  শনাক্ত রোগী সুস্থ হওয়ার তুলনায় মৃত্যুহার বেশ ধীর গতিতে বাড়ছে। তবে এই হার দ্রুত হলে এটার চাপ হাসপাতালগুলোর ওপর বড় আকারে পড়বে।

বিশ্বজুড়ে কোভিড রোগীদের সুস্থতার গ্রাফ অন্যান্য দেশের তুলনায় উর্ধ্বমূখী। এ ধরণের গ্রাফ ইতিবাচক। 

তবে ভারতে করোনা থেকে সুস্থ হিসেবে তাদেরই ধরা হয় যারা একবার পজিটিভ আসলে পরবর্তী টেস্ট করলে পরের টেস্টে নেগেটিভ আসে তাদের। কিছু দেশে শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে যারা সুস্থ হয়ে উঠেন তাদেরই সুস্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

ভারতে মৃত্যুহার খুবই কম

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২১ হাজার ১৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্তের দিক থেকে সারা বিশ্বে ভারতের অবস্থান ৩ নম্বরে হলেও মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে তা ৮ নম্বরে। ভারতের জনসংখ্যা বিবেচনাও এই সংখ্যাটি অনেকটাই কম।

এ বিষয়ে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ফেলো এবং অর্থনীতিবিদ শামিকা রাভি বলেন, "পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় এই সংখ্যা কয়েকভাগের এক ভাগ মাত্র।"

ভারতে এতো কম মৃত্যুহারের সংখ্যা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। ভারতের মতো এমন কম মৃত্যুহার এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনসংখ্যাবহুল দেশগুলোতেও রয়েছে। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.