ভারতে সাংসদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা তরুণীর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
26 August, 2021, 03:25 pm
Last modified: 27 August, 2021, 01:45 am
গত সপ্তাহে দিল্লিতে সুপ্রীম কোর্টের সামনেই গায়ে আগুন দেন ২৪ বছরের ওই তরুণী ও তার বন্ধু। হেনস্থা ও বিচার না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে এই পথ বেছে নেন তারা।

দীর্ঘ এক সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হেরে গেলেন বিচার না পেয়ে গায়ে আগুন দেওয়া নির্যাতনের শিকার তরুণী।

ভারতের বারাণসীতে বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) সাংসদ অতুল রাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছিলেন তিনি। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার কাছে হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে গত সপ্তাহে দিল্লিতে সুপ্রীমকোর্টের সামনেই গায়ে আগুন দেন ২৪ বছরের ওই তরুণী।

ভারতে নারীদের করুণ অবস্থাকেই পুনরায় সামনে নিয়ে এল এই ঘটনা।

গত ১৬ আগস্ট একজন ছেলে বন্ধুকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন তিনি। এরপর দুজনেই গায়ে পেট্রোল ঢেলে নিজেদের শরীরে আগুন দেন। সংকটজনক অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত শনিবার তার ছেলে বন্ধু মারা যায়। মঙ্গলবার বিকালে মেয়েটিও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে তারা দুজন রাজধানী দিল্লিতে আসেন। হেনস্তা ও বিচার না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাদের বেছে নেওয়া এই পন্থা দেখে আঁতকে উঠেছে পুরো ভারত।

২০১৯ সালের মে মাসে বারাণসীতে এমপি অতুল রাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছিলেন ওই তরুণী।

অতুল রাই সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও এক মাস পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত দু'বছর ধরে ধর্ষণের মামলায় তিনি কারাগারে রয়েছেন।

গত নভেম্বর মাসে অতুল রাইয়ের ভাই তরুণীর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন। প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। কিন্তু, চলতি মাসের শুরুতে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ভারতের একটি আদালত।

ফেসবুকের শেষ লাইভ ভিডিওটিতে তিনি এমপির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হেনস্তার অভিযোগ আনেন।

অতুল রাইয়ের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন বিচারকের নামও উল্লেখ করেন তারা।

"তারা আমাদের যেখানে পাঠাতে চেয়েছিল, আমরা সেখানে পৌঁছে গেছি। আমাদের এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে তারা গত দেড় বছর ধরে চেষ্টা করে গেছে," বলেন তরুণী।

লাইভে তার বন্ধু বলেন, "২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে কর্তৃপক্ষ আমাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলছে। আমরা চাই উত্তর প্রদেশ এবং ভারতের মানুষ আপনারা সবাই আমাদের কথা শুনুন।"

"আমরা যা করতে যাচ্ছি তা মর্মান্তিক ও ভয়াবহ। আমাদেরও ভয় লাগছে, তবে এই ভয় এখন অর্থহীন," গায়ে আগুন দেওয়ার কয়েক মিনিট আগে বলেন তিনি।

উত্তর প্রদেশ প্রশাসন জানিয়েছে তারা দুই অফিসারকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করেছে। এছাড়া, ঘটনার তদন্ত চলমান।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির বাসে গণধর্ষণের শিকার হওয়া ২৩ বছরের 'নির্ভয়া'র মৃত্যুর পর ভারতে ধর্ষণ এবং যৌন অপরাধের ঘটনাগুলো সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

বিশ্বব্যাপী নির্ভয়ার ঘটনায় ক্ষোভ সৃষ্টি হলে যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নে বাধ্য হয় ভারত সরকার। দিল্লির ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। গতবছর চার ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

  • সূত্র: বিবিসি

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.