ভারতে সরকারি হিসাবের চেয়ে ১০ গুণ মৃত্যু হয়েছে মহামারিকালে: গবেষণা

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
21 July, 2021, 02:05 pm
Last modified: 21 July, 2021, 09:48 pm
সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের প্রাণহানির সংখ্যা মাত্র চার লাখ ১৪ হাজার। তবে গবেষকদের মতে, মহামারিকালে ভারতে অতিরিক্ত মৃতের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
ছবি: রয়টার্স

কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ প্রতিবেশী ভারতে। কিন্তু, সরকারি হিসাবে দৈনিক আনুষ্ঠানিক যে মৃতের সংখ্যা দেওয়া হয়, শুরু থেকেই অভিযোগ ছিল তা বাস্তব সংখ্যার চেয়ে অনেকগুণ কম। সাম্প্রতিক এক গবেষণাও দিচ্ছে একই ইঙ্গিত। 

সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের প্রাণহানির সংখ্যা মাত্র চার লাখ ১৪ হাজার। তবে গবেষকদের মতে, মহামারিকালে ভারতে অতিরিক্ত মৃতের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

এ হিসাবে 'অতিরিক্ত মৃত্যু' নির্ণয়ে মহামারিকালের সঙ্গে পূর্ববর্তী কয়েক বছরের সাধারণ মৃত্যুহারকে তুলনা করা হয়। আগের বছরগুলোর অনুপাতে যতজনের মৃত্যু প্রত্যাশিত ছিল, তার চাইতে বেশি হলে সেটাকে কোভিড প্রভাবিত বা 'অতিরিক্ত মৃত্যু' হিসাব করা হয়।    

তবে এটি মহামারির প্রভাবে সামগ্রিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান, এরমধ্যে কতজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন তা স্পষ্ট করে বলা বেশ কঠিন।

বৃহৎ অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের মুষ্টিমেয় যে কয়টি দেশে মহামারি কালের অতিরিক্ত মৃত্যু নিরূপণ করা হয়নি, ভারত তার মধ্যে অন্যতম। এ নিয়ে সরকারি প্রচেষ্টাও অনুপস্থিত।

তাই যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গ্লোবাল ডেভলপমেন্ট সেন্টারের গবেষকরা চলতি বছরের গত ২১শে জুন পর্যন্ত মহামারির সময় ভারতের অতিরিক্ত সমস্ত কারণের মৃত্যুর অনুমান করতে তিনটি ভিন্ন তথ্য উৎস ব্যবহার করেছিলেন।

প্রথমত, ভারতের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যার বাস যে সাতটি রাজ্যে, সেখানকার কর্তৃপক্ষের দেওয়া মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্য তারা সংগ্রহ করেন। এর প্রধান কারণ, ২০১৯ সালের পর ভারতে মৃত্যুহার নিয়ে সরকারি জরিপ আর করা হয়নি।

দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯ সংক্রমণে বয়স-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মৃত্যুহারের সঙ্গে ভারতজুড়ে পরিচালিত দুটি অ্যান্টিবডি টেস্ট কর্মসূচির তথ্যের সঙ্গে মেলান গবেষকরা।  

ছবি: রয়টার্স

তৃতীয়ত, এক লাখ ৭৭ হাজার পরিবারের আট লাখ ৬৮ হাজার সদস্যের মধ্যে পরিচালিত এক ভোক্তা জরিপের তথ্যও তারা নেন। এ জরিপে অংশ নেওয়ারা বিগত চার মাসের মধ্যে পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেছেন কিনা তা জানিয়েছিলেন।  

এ তিনটি তথ্যসূত্র মিলিয়ে মহামারির পর থেকে মোট অতিরিক্ত মৃত্যু ন্যূনতম ৩৪ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৪৭ লাখ পর্যন্ত হওয়ার হিসাব করেছেন গবেষকরা। যা সরকারিভাবে দেওয়া কোভিড-১৯ মৃত্যুসংখ্যার চাইতে ১০ গুণ বেশি। ""

মহামারি বিশেষজ্ঞরা এর আগে ভারতে সরকারি হিসাবের বাইরে সাতগুণ মৃত্যুর অনুমান করেছিলেন, কিন্তু নতুন গবেষণায় তার চেয়েও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি মৃত্যু তুলে ধরা হলো। 

"এই সমস্ত মৃত্যুই কোভিড -১৯ এর কারণে ঘটেনি এবং রোগের প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন হবে," বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও গবেষণার অন্যতম লেখক অরবিন্দ সুব্রমনিয়ান।

গবেষক দলটি অবশ্য ভারতের সংক্রমণের সংখ্যাকে কোভিড -১৯ সংক্রমণের পর মৃত্যুর সম্ভাবনা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গবেষণা থেকে পাওয়া হিসাব সেখানে প্রয়োগ করেছিল।

ছবি: রয়টার্স

বৈশ্বিক প্রাণহানির এ হারকে বিভিন্ন বয়স শ্রেণি অনুসারেও গ্রহণ করা হয় এবং তার সঙ্গে ওই বয়সী কতজন ভারতীয় আক্রান্ত হচ্ছেন তার তুলনা করা হয়েছে। 

ড. সুব্রমনিয়ান জানান, এভাবে হিসাব করে তারা মহামারির কারণে ভারতে ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যুর চিত্র পেয়েছেন।

  • সূত্র: বিবিসি
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.