ভারতের আইসিটি আইন: টুইটারের দিকেই কেন অভিযোগের তীর?

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
26 June, 2021, 05:00 pm
Last modified: 26 June, 2021, 05:14 pm
নিজেদের প্ল্যাটফর্মে কোনো পোস্ট শেয়ারের অভিযোগে কোনো কোম্পানির নির্বাহীদের সমন করা একটি বিরল ঘটনা।

গত সপ্তাহে টুইটার ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে সমন জারি করে রাজধানী দিল্লীর পাশেই অবস্থিত গাজিয়াবাদ শহরের পুলিশ।

এরপর থেকেই তিনি শাস্তি রদের সাময়িক স্থগিতাদেশের মধ্যে থাকলেও, মামলা এখনো চলছে।  

ঘটনার মূলে রয়েছে টুইটারে শেয়ার করা একটি হেট ক্রাইম ভিডিও, যেখানে দেখানো হয়েছে যে ৭২ বছর বয়সী এক মুসলমান বৃদ্ধকে পেটানো হচ্ছে এবং তার দাড়ি কেটে ফেলা হচ্ছে। খ্যাতনামা সাংবাদিকসহ আরো অনেকেই এই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।  

তবে পুলিশের দাবি, এখানে ধর্মের বিষয়টি মূখ্য ছিলনা এবং বৃদ্ধ লোকটি অপরাধীদের কাছে একটি তাবিজ বিক্রি করেছিলেন, যা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল আক্রমণকারীরা। এ ঘটনায় পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। 

শুধু তাই নয়, ভিডিওটি শেয়ারের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাওয়ার অভিযোগে টুইটারের ভারত শাখা, সংবাদ ওয়েবসাইট 'দ্য অয়্যার' এবং বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির তিন রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অপরাধ মামলাও দায়ের করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ছয়জন ব্যক্তিই মুসলমান, যদিও অমুসলিমরাও ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। 

নিজেদের প্ল্যাটফর্মে কোনো পোস্ট শেয়ারের অভিযোগে কোনো কোম্পানির নির্বাহীদের সমন করা একটি বিরল ঘটনা। ফোন কোম্পানিগুলোর মতো এসব প্রতিষ্ঠানও 'মধ্যস্থতাকারী' হিসেবে বিবেচিত হয়। সাইটে কোনো পোস্টের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় আইনে কোনো শাস্তির বিধান নেই, তবে আইনগতভাবে যখন প্রয়োজন তখন সেই পোস্ট সরিয়ে দিতে তারা বাধ্য। 

কিন্তু এই মুহূর্তে ভারত সরকার বলছে, টুইটার ভারতে তাদের 'মধ্যস্থতাকারী' অবস্থান হারাতে পারে, কারণ গেল ফেব্রুয়ারিতে জারি করা নতুন আইসিটি আইনের সঙ্গে তারা খাপ খাওয়াতে পারছে না।  

ইনফরমেশন টেকনোলজি রুলস নামক এ আইনে বলা হয়েছে, কোনো বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালাতে হলে তাদের অবশ্যই তিনজন কার্যনির্বাহী নিয়োগ দিতে হবে। এদের একজনের কাজ হবে কার্য প্রতিপালন করা বা নিয়মসমূহের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করে চলা, দ্বিতীয়জনের কাজ হবে ব্যবহারকারীদের অভিযোগসমূহ খতিয়ে দেখা এবং তৃতীয়জনের কাজ হবে আইন প্রয়োগকারী বিষয়গুলোর সাথে প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় করা।  

ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, টুইটারের নিয়োগ দেয়া দুজন কর্মকর্তা আসলে তাদের কর্মী নন, তাদের কার্যালয়ের যে ঠিকানা দেয়া তা আসলে একটি আইনি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় এবং নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয়জনের ব্যাপারে টুইটার কোনো তথ্য দেয়নি। বস্তুত, নিয়ম মেনে না চলার অপরাধের দায় পড়ার কথা তৃতীয়জনের ঘাড়েই।

আইসিটির নিয়মাবলির মধ্যে আরো বলা হয়েছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে আইনি নির্দেশ দেয়ার ৩৬ ঘন্টার মধ্যে যেকোনো কন্টেন্ট মুছে ফেলতে হবে এবং 
পর্নোগ্রাফির মত আপত্তিকর কন্টেন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে ফেলতে হবে। 

গত ২১ জুন টুইটার ৫০ টি টুইট সরিয়ে দিয়েছে, যার অধিকাংশই ছিল ভারতের বিতর্কিত ভিডিও। টুইটারের ভারত শাখার প্রধান ভিডিওতে ভারতীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করতে চেয়েছেন, কিন্তু পুলিশ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে। তার বদলে পুলিশ তাকে সশরীরে দেখা করতে বলে আরেকটি নোটিশ পাঠিয়েছে।

সাংবাদিক ও ডিজিটাল অধিকার কর্মী নিখিল পাহওয়া বলেন, 'টুইটারকে দিয়ে ভারত সরকার সব বিদেশী কোম্পানিকে একটা শিক্ষা দিতে চাইছে। চীনের প্রতি তাদের হিংসা আছে। তারা চায় ভারতের ইন্টারনেট দুনিয়ার বিদেশী কোম্পানিগুলোর উপর আরো কর্তৃত্ব জারি করতে।'   

'মধ্যস্থতাকারী' অবস্থান হারানো যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টিকে থাকার লড়াই অত্যন্ত কঠিন করে তুলতে পারে। ভারতে ধর্মীয় অনুভূতি সহজেই আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হিন্দুদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত পশু, গরু নিয়ে কোনো কার্টুন আঁকলে; তার জের ধরে কোনো প্লাটফর্মের বিরুদ্ধে হাজার হাজার অভিযোগ আসতে পারে। এই তালিকায় টুইটারই সর্বপ্রথম পা রাখতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

অন্তর্বর্তী একজন প্রধান কমপ্লায়েন্স অফিসার রাখা হয়েছে এবং টুইটার ভারতের নতুন আইনগুলো মেনে চলার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলে সংক্ষিপ্ত একটি বিবৃতি জারি করা ব্যতিরেকে নিয়ম না মানার বিষয়ে টুইটার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।     

  • সূত্র: বিবিসি
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.