বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: সময় কি ফুরিয়ে যাচ্ছে

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
05 November, 2021, 09:30 pm
Last modified: 05 November, 2021, 09:44 pm
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উন্নত রাষ্ট্রগুলো প্যারিস চুক্তিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে কপ-২৬-এর সাফল্যের উপর। মানবতা রক্ষার সর্বশেষ সেরা সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এই সম্মেলনকে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় এড়াতে পুরো বিশ্ব রয়েছে এক নজিরবিহীন চাপের মধ্যে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হওয়া দেশগুলো গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর মাধ্যমে বিশ্বের তাপমাত্রাকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু সেই যুগান্তকারী চুক্তির পরেও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ক্রমাগত বেড়েছে; সেইসঙ্গে বেড়েছে জলবায়ু বিপর্যয়ের তীব্রতাও।

চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে গ্লাসগোতে শুরু হয়েছে ১২ দিনব্যাপী জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন, কপ-২৬। জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যন্ত দরিদ্র দেশগুলো তাকিয়ে আছে এই সম্মেলনের দিকে। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উন্নত রাষ্ট্রগুলো প্যারিস চুক্তিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষার যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে কপ-২৬-এর সাফল্যের উপর। মানবতা রক্ষার সর্বশেষ সেরা সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এই সম্মেলনকে।

জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনৈতিক প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন ধনী ও দরিদ্র উভয় অর্থনীতিকেই করে দিতে পারে পঙ্গু। সেপ্টেম্বরে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত ৫০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় যেমন- বন্যা, খরা ও তাপদাহের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। আর এই বিপর্যয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৩.৬৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের বৃহত্তম পুনর্বীমাকারী সংস্থা সুইস রি ইনস্টিটিউটের মতে, চলতি শতাব্দীতে যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের তুলনায় ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ১৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) ও মিথেনের মতো বিষাক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস, বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আকটে পড়ে। আর এই আটকে পড়া তাপই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। তবে নাইট্রাস অক্সাইডের (N2O) মতো অনেক গ্রিনহাউস গ্যাস প্রাকৃতিকভাবে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলেও, অন্যান্য গ্যাস নির্গমনের জন্য মানুষের ক্রিয়াকলাপ দায়ী। তাপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বনাঞ্চল উজার, পরিবহণ ও কলকারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি মনবসৃষ্ট কারণে প্রকৃতিতে মিশে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টন বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড। বিশ্বের শীর্ষ তিন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারীরা হলো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। প্রতি বছর বিশ্বের মোট কার্বন নির্গমনের ৭০ শতাংশের বেশি নির্গমন হয় কেবল শক্তি উৎপাদনে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমাণ

১৮৮০ সাল থেকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঠিক রেকর্ড রাখা শুরু হয়। সেই রেকর্ড অনুসারে, ১৮৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত মানুষের কর্মকান্ডে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এই পরিমাণ খুবই কম; তবে বিজ্ঞানীদের মতে, ১৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই পরিমাণ অস্বাভাবিক। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন, আগামী দুই দশকে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তর থেকে ১.৫ ডিগ্রি বাড়তে পারে। এবং চলতি শতাব্দীতে বাড়তে পারে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াল, যা পৃথিবীর জন্য ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়।

অন্যদিকে, গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকায় জমে থাকা বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। হিমবাহ গলা এই পানি সমুদ্রের উচ্চতাকে কয়েক মিটার বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ফলে সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলো পড়েছে সবচেয়ে বিপদে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সম্পূর্ণভাবে ডুবে যেতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ। এছাড়া, অনেক দেশেই বৃদ্ধি পাবে জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা।

চীনের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে বিশ্বব্যাপী মোট ব্যবহৃত কয়লার অর্ধেকের বেশিই ব্যবহৃত হয় চীনে। কয়লা বিশ্বের সবচেয়ে দূষণকারী ও সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমনকারী জীবাশ্ম। কয়লার ব্যবহার বাতাসের গুণমানকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি বায়ুমণ্ডের তাপমাত্রাও বাড়ায়। আর এই দুটি ঘটনাই জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখে। ১৯৫১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চীনের মূল ভূখন্ডের গড় তাপমাত্রা প্রতি দশকে ০.২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, যা বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির গড় পরিমাণের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া, ভারী বৃষ্টিপাতের দিনের সংখ্যা, ১৯৬১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রতি দশ বছরে বেড়েছে ৩.৮ শতাংশ হারে। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সম্পদ ও অবকাঠামো, সেইসঙ্গে প্রভাবিত হচ্ছে কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে চীনের লড়াই

চীন বিশ্বের মোট কার্বন নির্গমনে অবদান রাখে প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে চীন সরকারের দাবী, ২০৬০ সালের মধ্যে দেশটি শূন্য নির্গমনের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। এর অর্থ হলো, বায়ুমণ্ডল থেকে যে পরিমাণ অপসারণ করা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি নির্গমন করা হবে না।

জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর চীনা শিল্পখাতের জন্য এই লক্ষ্য অর্জন বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভশীলতা বাড়াতেও প্রাথমিকভাবে চীনের জীবাশ্ম জ্বালানি প্রয়োজন।

  • সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.