ফাইজার, অক্সফোর্ডের টিকা নেওয়ার ৩ মাসের মধ্যে অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে আসতে পারে: গবেষণা

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
27 July, 2021, 09:05 pm
Last modified: 27 July, 2021, 09:15 pm
তবে গবেষকরা বলছেন, অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে আসা কেমন ভূমিকা রাখতে পারে তা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে অ্যন্টবডির মাত্রা কমে আসবে তা আগেও ধারণা করা গিয়েছিল, এবং এরপরও গুরুতর অসুস্থতা ঠেকাতে টিকা কার্যকর ভূমিকা রাখে। 

ফাইজার/বায়োএনটেক ও অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকার পূর্ণ ডোজ টিকা নেওয়ার ছয় সপ্তাহ পর থেকে শরীরের অ্যান্টবডির মাত্রা কমতে থাকে। দশ সপ্তাহ পর থেকে অ্যান্টিবডির মাত্রা এমনকি ৫০ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেকই কমে যেতে পারে। সম্প্রতি জনপ্রিয় গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) গবেষকরা জানিয়েছেন, এ হারে অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে যেতে থাকলে টিকার প্রভাব কমে যেতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিরুদ্ধে কেমন প্রভাব রাখবে তা নিয়েই উদ্বেগ বেশি।

তবে তারা আরও জানিয়েছেন, কতো দ্রুত এমনটা হবে তা এখনই আন্দাজ করে বলা কঠিন।

গবেষণাটিতে আরও উঠে এসেছে, দুই ডোজ নেওয়ার পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তুলনায় ফাইজারের টিকায় অধিক পরিমাণ অ্যান্টিবডির মাত্রা লক্ষ্য করা গেছে।

সংক্রমিৎ হওয়ার ফলে যে সব ব্যক্তিদের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে তার তুলনায় টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের দেহে অ্যান্টিবডির মাত্রা বেশি ছিল বলে জানান গবেষকরা। 

"ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ নেওয়ার পর শুরুর দিকে অ্যান্টিবডির মাত্রা অনেক বেশি থাকে। একারণেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেও টিকা নেওয়া থাকলে গুরুতর অসুস্থতা থেকে মুক্তি মেলে," বলেন ইউসিএল ইনস্টিটিউ অব হেলথ ইনফরমেশনের মধুমিতা শ্রোত্রি। 

"তবে আমরা লক্ষ্য করেছি দুই থেকে তিন মাস সময়ের ব্যবধানে অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে আসতে থাকে," 

১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী ৬০০ জন মানুষের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের বয়স, গুরুতর অসুস্থতা ও লিঙ্গভেদে গবেষণার ফলাফল একই ছিল বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। 

গবেষকরা বলছেন, অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে আসা কেমন ভূমিকা রাখতে পারে তা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে আসবে তা আগেও ধারণা করা গিয়েছিল, এবং এরপরও গুরুতর অসুস্থতা ঠেকাতে টিকা কার্যকর ভূমিকা রাখে। 

ফাইজারের টিকার ক্ষেত্রে ২১-৪১ দিনের মধ্যে অ্যাটিবডির মাত্রা প্রতি মিলিলিটারে ৭৫০৬ ইউনিট করে কমতে থাকে, ৭০ দিন বা এর বেশি সময়ের মধ্যে প্রতি মিলিমিটারে ৩৩২০ ইউনিট করে কমে। 

অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকায় প্রথম ২০ দিনের মধ্যে অ্যান্টিবডির মাত্রা প্রতি মিলিলিটারে ১২০১ ইউনিট হ্রাস পায়, ৭০ বা তার বেশি দিনের মধ্যে এ পরিমাণ প্রতি মিলিলিটারে ১৯০ ইউনিট। অর্থাৎ প্রায় ৫ গুণ কমে যায়।

ইউসিএল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইনফরম্যাটিক্সের প্রফেসর রব অলড্রিজ বলেন, "যখন আমরা বুস্টার ডোজগুলির জন্য কাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত সে সম্পর্কে ভাবছি, গবেষণার তথ্য বলছে যারা আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন তাদের দেহে অ্যান্টিবডির মাত্রা সবচেয়ে কম দেখা গেছে।"

গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসায় গবেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন যাদের বয়স ৭০ বছরের বেশি বা যারা শারীরিকভাবে দুর্বল, কোনো অসুস্থতা আছে, তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। 

এছাড়াও, যাদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়েছিল তাদের দেহে ফাইজার ভ্যাকসিনের চেয়ে অ্যান্টিবডির মাত্রা অনেক কম থাকতে পারে বলে গবেষকরা উল্লেখ করেন। 

অধ্যাপক রব অলড্রিজ এক বিবৃতিতে বলেন, "বুস্টার ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে কাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এই গবেষণার তথ্য সে কাজে সাহায্য করবে।"

তবে গবেষণাটির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। কিছু নির্দিষ্ট গ্রুপের ক্ষেত্রে নমুনার সংখ্যা কম হওয়া এর মধ্যে অন্যতম। 

তারা জানান, প্রতিজন অংশগ্রহণকারীর মাত্র একটি নমুনা নেওয়া হয়েছে, তাই সব মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির মাত্রা কতো দ্রুত কমে যেতে পারে এব্যাপারে তারা এখনও নিশ্চিত নন।

তারা আরও উল্লেখ করেন, প্রতিটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার মাত্রাও আলাদা হবে। অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে গেলেও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দিতে সক্ষম বলেও জানান তারা। 

গুরুতর অসুস্থতা থেকে সুরক্ষায় নির্দিষ্ট মাত্রার অ্যান্টিবডির প্রয়োজন কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলতে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন গবেষকরা। 

  • সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.